• ঢাকা
  • শুক্রবার, ০৫ ডিসেম্বর, ২০২৫, ২০ অগ্রহায়ণ ১৪৩২
SonaliNews

গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকার অনুমোদিত নিউজ পোর্টাল

ইতিহাস, সংস্কৃতি ও মানুষের মিলনভূমি-বাহাদুর শাহ পার্ক


কবি নজরুল কলেজ প্রতিনিধি নভেম্বর ১, ২০২৫, ০৩:৪১ পিএম
ইতিহাস, সংস্কৃতি ও মানুষের মিলনভূমি-বাহাদুর শাহ পার্ক

ছবি: প্রতিনিধি

পুরান ঢাকার প্রাণকেন্দ্রে দাঁড়িয়ে থাকা বাহাদুর শাহ পার্ক শুধু একটি পার্ক নয়-এটি ইতিহাস, সংস্কৃতি ও জনজীবনের এক মিলনমেলা। প্রায় দেড় শতাব্দী ধরে ঢাকার সামাজিক, রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক জীবনের সঙ্গে ওতপ্রোতভাবে জড়িয়ে আছে এই পার্ক।

একসময় এই স্থানটি ‘আন্টাঘর ময়দান’ নামে পরিচিত ছিল। ১৮৫৮ সালে ব্রিটিশ মহারানী ভিক্টোরিয়ার শাসনভার গ্রহণ উপলক্ষে নাম বদলে রাখা হয় ‘ভিক্টোরিয়া পার্ক’। পরে, ১৯৫৭ সালে সিপাহী বিদ্রোহের শতবর্ষে এখানে একটি স্মৃতিসৌধ নির্মাণ করে এর নামকরণ করা হয় মুঘল সম্রাট বাহাদুর শাহের নামে।

দুপুরে অফিসগামী মানুষের বিশ্রামের জায়গা, বিকেলে তরুণ–তরুণীদের আড্ডাস্থল, আর সন্ধ্যায় সবার বিনোদনের কেন্দ্র-দিনভর নানা বয়সের মানুষে মুখর থাকে পার্কটি। চারপাশে পুরান ঢাকার ঐতিহ্যবাহী খাবারের দোকান, ফুচকা–চটপটির স্টল ও বাচ্চাদের খেলাধুলার সরঞ্জাম-সব মিলিয়ে এখানে যেন শহুরে সংস্কৃতির প্রাণস্পন্দন মিশে আছে।

বাহাদুর শাহ পার্কের ইতিহাসের সঙ্গে জড়িয়ে আছে ১৮৫৭ সালের সিপাহী বিদ্রোহ। সেই বছরের ২২ নভেম্বর ইংরেজ মেরিন সেনারা লালবাগ কেল্লায় দেশীয় সেনাদের নিরস্ত্র করার চেষ্টা করলে সংঘর্ষ বেঁধে যায়। আহত ও পালিয়ে যাওয়া সিপাহিদের ধরে এনে ‘আন্টাঘর ময়দানে’ প্রকাশ্যে ফাঁসি দেওয়া হয়। জনমনে ভয় সৃষ্টি করতে তাদের লাশ গাছে গাছে ঝুলিয়ে রাখা হয়েছিল বহুদিন।

১৯৫৭ সালে সিপাহী বিদ্রোহের ১০০ বছর পূর্তি উপলক্ষে ‘ঢাকা ইমপ্রুভমেন্ট ট্রাস্ট’ (বর্তমান রাজউক) এখানেই নির্মাণ করে চারকোনা একটি স্মৃতিস্তম্ভ, যা আজও পার্কের ভেতরে দাঁড়িয়ে আছে-ইতিহাসের নীরব সাক্ষী হয়ে।

আঠারো শতকের শেষ দিকে এখানে আর্মেনীয়রা বিলিয়ার্ড ক্লাব তৈরি করেছিল, যা স্থানীয়ভাবে ‘আন্টাঘর’ নামে পরিচিত ছিল। নবাব আবদুল গণি ও নবাব আহসান উল্লাহ ছিলেন এর পৃষ্ঠপোষক। তখন ইংরেজরা এখানে বিলিয়ার্ড, টেনিস ও ব্যাডমিন্টন খেলতেন, আড্ডা দিতেন, নানা সামাজিক আসর বসাতেন।

পার্কটি ডিম্বাকৃতি, চারদিকে লোহার রেলিংয়ে ঘেরা। পূর্ব ও পশ্চিম পাশে দুটি প্রধান ফটক রয়েছে। রেলিং ঘেঁষে তৈরি করা হয়েছে হাঁটার পথ। সদরঘাট থেকে লক্ষ্মীবাজারে প্রবেশ করলেই চোখে পড়ে এই ঐতিহাসিক পার্ক।

বাহাদুর শাহ পার্ককে ঘিরে সাতটি রাস্তা একত্র হয়েছে। উত্তরে আছে সেন্ট থমাস চার্চ ও ঢাকায় প্রথম পানি সরবরাহের ট্যাংক, উত্তর–পূর্ব কোণে কবি নজরুল সরকারি কলেজ ও ইসলামিয়া হাই স্কুল, পূর্ব পাশে সরকারি মুসলিম হাই স্কুল, দক্ষিণ–পশ্চিমে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়। পশ্চিমে শাঁখারি বাজার, দক্ষিণে সদরঘাট, উত্তরে রায় সাহেব বাজার ও কলতা বাজার—সব মিলিয়ে পার্কটি যেন পুরান ঢাকার হৃদস্পন্দন।

আজও বাহাদুর শাহ পার্ক কেবল অতীতের স্মৃতি নয়, এটি পুরান ঢাকার মানুষের প্রতিদিনের জীবনের অংশ। কোলাহলের এই শহরে এটি এক টুকরো শান্তি, যেখানে মানুষ হাঁটে, বসে, কথা বলে, আর শহরের গল্পগুলো নতুন করে বুনে যায় প্রতিদিন।

এসএইচ

Wordbridge School
Link copied!