• ঢাকা
  • শুক্রবার, ২৯ মার্চ, ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

আহমদ ছফা : একজন প্রতিষ্ঠানবিরোধী বুদ্ধিজীবী


সাহিত্য ডেস্ক জুলাই ২৮, ২০২১, ১২:৫৫ পিএম
আহমদ ছফা : একজন প্রতিষ্ঠানবিরোধী বুদ্ধিজীবী

ছবি : প্রতিষ্ঠানবিরোধী বুদ্ধিজীবী আহমদ ছফা

ঢাকা : ‘আমার কাছে ঈশ্বর-চিন্তা আর মানুষের অমরতার চিন্তা সমার্থক। কেউ যদি আমাকে আস্তিক বলেন বিনা বাক্যে মেনে নেব। আমি আস্তিক। যদি কেউ বলেন নাস্তিক আপত্তি করব না। আস্তিক হোন, নাস্তিক হোন, ধর্মে বিশ্বাস করুন আর নাই করুন, আমি কোনো বিবাদের হেতু দেখতে পাইনে। আমার অভীষ্ট বিষয় মানুষ, শুধু মানুষ। মানুষই সমস্ত বিশ্বাস, সমস্ত মূল্যচিন্তা, সমস্ত বিজ্ঞানবুদ্ধির উৎস।’

কথাগুলো যিনি বলেছেন তাকে বলা হয় বাংলাদেশি জাতীয় অধ্যাপক আব্দুর রাজ্জাক ও সলিমুল্লাহ খানসহ আরও অনেকের মতে, মীর মশাররফ হোসেন ও কাজী নজরুল ইসলামের পরে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বাঙালি মুসলমান লেখক। তিনি হচ্ছেন আহমদ ছফা। যার লেখায় প্রাধান্য পেয়েছে বাংলাদেশি জাতিসত্তার পরিচয়। তিনি একাধারে ছিলেন লেখক, ঔপন্যাসিক, কবি, চিন্তাবিদ ও গণবুদ্ধিজীবী। এই বহুমুখী প্রতিভাসম্পূর্ণ মানুষটির প্রয়াণ দিবস আজ।

তিনি ১৯৪৩ সালের ৩০ জুন চট্টগ্রাম জেলার চান্দনাইশ থানার গাছ বাড়িয়া গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। তার পিতা ছিলেন হেদায়েত আলী এবং মা মরহুমা আসিয়া খাতুন। দুই ভাই চার বোনের মধ্যে আহমদ ছফা ছিলেন বাবা-মার দ্বিতীয় সন্তান।

আহমদ ছফা বাংলাদেশের বুদ্ধিবৃত্তিক জগতের মানচিত্র অঙ্কন করেছেন। করেছেন বুদ্ধিজীবীদের ব্যর্থতায় বাংলাদেশের কী দুর্দশা হতে পারে তার সম্পর্কে ভবিষ্যদ্বাণী। তিনি বাংলাদেশের স্বাধীনতার অব্যবহিত পরে রচিত ‘বুদ্ধিবৃত্তির নতুন বিন্যাস’ প্রবন্ধগ্রন্থে উন্মোচন করেছেন সুবিধাবাদিতার নগ্ন রূপ। তার রচিত প্রতিটি উপন্যাসই ভাষিক সৌকর্য, বিষয়বস্তু ও রচনাশৈলীর অভিনবত্বে অনন্য। মানসিক, সাংস্কৃতিক ও আর্থসামাজিক সূক্ষ্মাতিসূক্ষ্ম অনুষঙ্গসহ ছফার চরিত্র সৃষ্টির তথা কাহিনীকথনের সৃষ্টিকরণ ছিলো অসামান্য।

তিনি ছিলেন বাংলা সাহিত্যজগতের অনুপ্রাণিত একজন স্রষ্টা। যার কর্মের মাধ্যমে লেখক, শিল্পী, বুদ্ধিজীবী, চলচ্চিকরসহ অনেকে উৎসাহ পেয়েছেন প্রতিনিয়ত। যদি নাম বলা হয় তার মধ্যে অন্যতম আছেন হুমায়ূন আহমেদ, ফরহাদ মজহার, মুহম্মদ জাফর ইকবাল, তারেক মাসুদ, সলিমুল্লাহ খানসহ অনেকে। তাকে বলা হয় স্বাধীন বাংলাদেশের সর্বোত্তম ও সর্বশ্রেষ্ঠ বুদ্ধিজীবী।

আহমদ ছফা তার প্রথা বিরোধিতা, স্পষ্টবাদিতা, স্বকীয় দৃষ্টিভঙ্গীর জন্য লেখক ও বুদ্ধিজীবী মহলে বিশেষ আলোচিত ও বিতর্কিত ছিলেন জীবদ্দশায়। অনেকে তাকে বিদ্রোহী, বোহেমিয়ান, উদ্ধত, প্রচলিত ব্যবস্থার প্রতি শ্রদ্ধাহীন ও বিতর্কপ্রবণ বলেছেন। তবুও লিখে গিয়েছেন প্রতিনিয়ত।

তার রচিত গ্রন্থগুলো হলো- বুদ্ধিবৃত্তির নতুন বিন্যাস, বাঙালি মুসলমানের মন, ওঙ্কার, একজন আলী কেনানের উত্থান-পতন, অলাতচক্র, গাভী বিত্তান্ত, অর্ধেক নারী অর্ধেক ঈশ্বরী, পুষ্প বৃক্ষ এবং বিহঙ্গ পুরাণ, যদ্যপি আমার গুরু, ফাউস্ট’সহ ইত্যাদি উল্লেখযোগ্য। প্রতিষ্ঠানবিরোধী আহমদ ছফা নিজকর্মের জন্য ভূষিত হওয়া ১৯৭৫ সালের শিবির পুরস্কার ও ১৯৯৩ সালে বাংলা একাডেমীর সাদত আলী আখন্দ পুরস্কার প্রত্যাখ্যান করেছিলেন। সাহিত্যে অবদানস্বরূপ ২০০২ সালে বাংলাদেশ সরকার তাকে মরণোত্তর একুশে পদক প্রদান করেন। এই প্রতিভাধর বুদ্ধিজীবী মাত্র ৫৮ বছর বয়সে ২০০১ সালের ২৮ জুলাই মৃত্যুবরণ করেন।

সোনালীনিউজ/এসএন

Wordbridge School
Link copied!