• ঢাকা
  • শুক্রবার, ২৯ মার্চ, ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০
আবুল হাসানের বাছাইকৃত কবিতা

তোমার চিবুক ছোঁব, কালিমা ছোঁব না


ঝিনুক নীরবে সহো আগস্ট ৪, ২০২১, ০৪:৪২ পিএম
তোমার চিবুক ছোঁব, কালিমা ছোঁব না

ছবি : নিঃসঙ্গতার কবি আবুল হাসান

ঝিনুক নীরবে সহো

ঝিনুক নীরবে সহো
ঝিনুক নীরবে সহো, ঝিনুক নীরবে সহে যাও
ভিতরে বিষের বালি, মুখ বুজে মুক্তা ফলাও!

নিঃসঙ্গতা

অতটুকু চায় নি বালিকা!
অত শোভা, অত স্বাধীনতা!
চেয়েছিল আরো কিছু কম,

আয়নার দাঁড়ে দেহ মেলে দিয়ে
বসে থাকা সবটা দুপুর, চেয়েছিল
মা বকুক, বাবা তার বেদনা দেখুক!

অতটুকু চায় নি বালিকা!
অত হৈ রৈ লোক, অত ভিড়, অত সমাগম!
চেয়েছিল আরো কিছু কম!

একটি জলের খনি
তাকে দিক তৃষ্ণা এখনি, চেয়েছিল

একটি পুরুষ তাকে বলুক রমণী!


তোমার চিবুক ছোঁব, কালিমা ছোঁব না

এ ভ্রমণ আর কিছু নয়, কেবল তোমার কাছে যাওয়া
তোমার ওখানে যাব, তোমার ভিতরে এক অসম্পূর্ণ যাতনা আছেন,
তিনি যদি আমাকে বলেন, তুই শুদ্ধ হ’, শুদ্ধ হব
                                                              কালিমা রাখব না!

এ ভ্রমণ আর কিছু নয়, কেবল তোমার কাছে যাওয়া
তোমার ওখানে যাব; তোমার পায়ের নিচে পাহাড় আছেন
তিনি যদি আমাকে বলেন, তুই স্নান কর
পাথর সরিয়ে আমি ঝর্নার প্রথম জলে স্নান করব
                                                              কালিমা রাখব না!

এ ভ্রমণ আর কিছু নয়, কেবল তোমার কাছে যাওয়া
এখন তোমার কাছে যাব
তোমার ভিতরে এক সাবলীল শুশ্রূষা আছেন
তিনি যদি আমাকে বলেন, তুই ক্ষত মোছ আকাশে তাকা—
আমি ক্ষত মুছে ফেলব আকাশে তাকাব
                                                              আমি আঁধার রাখব না!

এ ভ্রমণ আর কিছু নয়, কেবল তোমার কাছে যাওয়া
যে সকল মৌমাছি, নেবুফুল গাভির দুধের সাদা হেলেঞ্চা শাকের ক্ষেতে
যে রাখাল আমি আজ কোথাও দেখি না—তোমার চিবুকে
                                                              তাঁরা নিশ্চয়ই আছেন!

তোমার চিবুকে সেই গাভির দুধের শাদা, সুবর্ণ রাখাল
তিনি যদি আমাকে বলেন, তুই কাছে আয় তৃণভূমি
কাছে আয় পুরনো রাখাল!
আমি কাছে যাব আমি তোমার চিবুক ছোঁব, কালিমা ছোঁব না!


গোলাপের নিচে নিহত হে কবি কিশোর

গোলাপের নিচে নিহত হে কবি কিশোর আমিও ভবঘুরেদের প্রধান ছিলাম।
জ্যোৎস্নায় ফেরা জাগুয়ার চাঁদ দাঁতে ফালা ফালা করেছে আমারও প্রেমিক হৃদয়!
আমিও আমার প্রেমহীনতায় গণিকালয়ের গণিকার কাছে ক্লান্তি সঁপেছি
বাঘিনীর মুখে চুমো খেয়ে আমি বলেছি আমাকে উদ্ধার দাও।
সক্রেটিসের হেমলক আমি মাথার খুলিতে ঢেলে তবে পান করেছি মৃত্যু
                                                            হে কবি কিশোর
আমারও অনেক স্বপ্ন শহিদ হয়েছে জীবনে কাঁটার আঘাত সয়েছি আমিও।
হৃদয়ে লুকানো লোহার আয়না ঘুরিয়ে সেখানে নিজেকে দেখেছি
                                                পাণ্ডুর খুবই নিঃস্ব একাকী!
আমার পায়ের সমান পৃথিবী কোথাও পাই নি অভিমানে আমি
                                                            অভিমানে তাই
চক্ষু উপড়ে চড়ুইয়ের মতো মানুষের পাশে ঝরিয়েছি শাদা শুভ্র পালক!
হে কবি কিশোর নিহত ভাবুক, তোমার দুঃখ আমি কি বুঝি না?
আমি কি জানি না ফুটপাতে কারা করুণ শহর কাঁধে তুলে নেয়?
তোমার তৃষ্ণা তামার পাত্রে কোন কবিতার ঝিলকি রটায় আমি কি জানি না
তোমার গলায় কোন গান আজ প্রিয় আরাধ্য কোন করতলও হাতে লুকায়
আমি কি জানি না মাঝরাতে কারা মৃতের শহর কাঁধে তুলে নেয়?
আমারও ভ্রমণ পিপাসা আমাকে নারীর নাভিতে ঘুরিয়ে মেরেছে
আমিও প্রেমিক ত্রæবাদুর গান স্মৃতি সমুদ্রে একা শাম্পান হয়েছি আবার
সুন্দর জেনে সহোদরাকেও সঘন চুমোর আলুথালু করে খুঁজেছি শিল্প।
আমি তবু এর কিছুই তোমাকে দেবো না ভাবুক তুমি সেরে ওঠো
তুমি সেরে ওঠো তোমার পথেই আমাদের পথে কখনো এসো না,
                                                            আমাদের পথ
                                                ভীষণ ব্যর্থ আমাদের পথ।


কল্যাণ মাধুরী

যদি সে সুগন্ধি শিশি, তবে তাকে নিয়ে যাক অন্য প্রেমিক!
আতরের উষ্ণ ঘ্রাণে একটি মানুষ তবু ফিরে পাবে পুষ্পবোধ পুনঃ
কিছুক্ষণ শুভ্র এক স্নিগ্ধ গন্ধ স্বাস্থ্য ও প্রণয় দেবে তাঁকে।
একটি প্রেমিক খুশি হলে আমি হব নাকি আনন্দিত?

যদি সে পুকুর, এক টলটলে সদ্য খোঁড়া জলের অতল।
চাল ধুয়ে ফিরে যাক, দেহ ধুয়ে শুদ্ধি পাক স্মৃতিরা সবাই।
একটি অপার জাল, জলের ভিতর যদি ফিরে পায় মুগ্ধ মনোতল।
এবং গাছের ছায়া সেইখানে পড়ে, তবে আমি কি খুশি না?

যদি সে চৈত্রের মাঠ-মিলিত ফাটলে কিছু শুকনো পাতা তবে
পাতাকুড়োনিরা এসে নিয়ে যাক অন্য এক উর্বর আগুনে।
ফের সে আসুক ফিরে সেই মাঠে শস্যবীজে, বৃষ্টির ভিতরে।
একটি শুকনো মাঠ যদি ধরে শস্য তবে আমি লাভবান।

যদি সে সন্তানবতী, তবে তার সংসারের শুভ্র অধিকারে
তোমরা সহায় হও, তোমরা কেউ বাধা দিও না হে
শিশুর মুতের ঘ্রাণে মুগ্ধ কাঁথা ভিজুক বিজনে,
একটি সংসার যদি সুখী হয়, আমিও তো সুখী

আর যদি সে কিছু নয়, শুধু মারী, শুধু মহামারী!
ভালোবাসা দিতে গিয়ে দেয় শুধু ভুরুর অনল।
তোমরা কেউই আঘাত করো না তাকে, আহত করো না।
যদি সে কেবলি বিষ—ক্ষতি নেই—আমি তাকে বানাব অমৃত!

সোনালীনিউজ/এসএন

Wordbridge School
Link copied!