• ঢাকা
  • শনিবার, ২৭ এপ্রিল, ২০২৪, ১৪ বৈশাখ ১৪৩১

কবি ফিরোজা সামাদের এক গুচ্ছ কবিতা


ফিরোজা সামাদ জানুয়ারি ১৫, ২০২৩, ১২:১৪ পিএম
কবি ফিরোজা সামাদের এক গুচ্ছ কবিতা
আলোকিত মানুষ হও

প্রতিদিন হও আলোকিত ভোর
রেশমি লালে তুমি, 
জ্বলজ্বল করবে সূর্যের মতোই 
সকল দিবস যামি !!
 
ফুলের মতো ফুটে উঠে তুমি
সুবাস ছড়িয়ে দাও,
শাদা কাগজের পাতায় পাতায় 
কাব্যে ভরিয়ে নাও !! 

পাখির মতো স্বাধীনতায় তুমি
কলকাকলীতে মাতো,
হেসে খেলে বাঁচো নির্মলতায়
বিশুদ্ধ বাতাসের মতো !! 
 
সোঁদা মাটির গভীর থেকে
ফুঁড়ে ওঠো বৃক্ষ হয়ে, 
সবুজে সবুজে ভরে দাও ধরা
তোমার শুদ্ধ মমতায় !! 

অনিন্দ্য প্রেমে বয়ে যাও তুমি
সহস্র নদীর মতো,
ধুয়ে মুছে সব জলাঞ্জলি দাও
আছে কালিমা যতো !! 

খরস্রোতা হয়ে নিয়ে যাও ওই
সাগরের অতল বুকে,
তোমার জন্য বাঁচুক ধরণী  
শুদ্ধ নিঃশ্বাসে সুখে !! 

রাতকে ভাসাও জোছনার জলে
শতবর্ষের সুর তানে,
নির্মল হও ওই আকাশের মতো
ভেসে যাও গানে গানে !! 

সহস্র প্রদ্বীপ জ্বালিয়ে গাও
অনিয়ম ভাঙার গান,
যে গানের সুরে উঠবে জেগে
লক্ষ মানবিক প্রাণ !! 


ক্ষমিও মম অপরাধ 

ভেবে নাও আমি কোথাও নেই আর
নেই খাবারের টেবিলে, চায়ের আসরে
নেই রাজপথে মানব বন্ধনের কর্মসূচিতে
নেই আশ্বীনের কোজাগরী পূর্ণিমার ভরা জোছনায়, 
নেই হেমন্তের কাঁচাসোনা ধানক্ষেতের আলপথে 
নেই হাতিরঝিলে সোনালি আলোয় প্রভাত ভ্রমনে 
নেই একঝাঁক উড়ন্ত পাখির কলকাকলিতে 
নেই অমাবস্যায় বিজলি বাতির নিয়ন আলোর ঝলকানিতে || 

ভেবে নাও আমি কোথাও নেই আর
নেই আমার কবিতায়, গল্প বা গানের জলসায়,
নেই অমর একুশে জাতীয় গ্রন্থমেলায় ও
বাড়ির আঙিনায় রোপিত থরে থরে সাজানো 
গাছে ফোটা অজস্র ফুলের সমাহারে  
নেই মিথ্যে কোনো আশায় বুক বেঁধে 
নেই ভার্চুয়াল জগতের কোথাও 
কোথাও পাবেনা খুঁজে ফেসবুক, হোয়াটসঅ্যাপ, 
ম্যাসেঞ্জার, ইমো বা টুইটারেও ||

না! না!
আমি মরে যাইনি, সুস্থ ও জীবন্ত আমি
আমি মানসিক ভারসাম্যও হারাইনি
আমি সম্পূর্ণ সুস্থ মানসিকতায় আছি
আমি থুরবুরে বুড়ি হয়েও যাইনি, 
আমি প্রাণখুলে প্রচন্ড হাসতে ও হাসাতে পারি 
ছোটোবড়ো সবাইকে 
বন্ধুত্বে মাতিয়ে রাখতে পারি সব মানুষকে, 
আমি গান গাই আপনমনে,নিজের সনে
আমি কবিতা পড়ি আমার জন্যে,
আমি গল্পে মাতি কঁচিকাঁচাদের সনে ||

তাহলে? 
হ্যা এখানেই যতো অসঙ্গতি আমার 
আমার অতীত ও বর্তমান অবস্থান 
আজ আকাশ আর মাটির ব্যবধান
আর এখানেই আমি বড্ড বেশি বেমানান 
আমার আচরণ বিরূপ প্রভাব পড়ে 
তোমাদের তৈরি সমাজের যাপিত জীবনে 
শুধু তুমিই আমায় তৈরি করেছো এমনভাবে 
সকল পর্যায়ের মানুষের জন্য! 
সুখ যেনো আজ আমার হাতের মুঠোয় খেলা করছে ||

তারপরেও মনে হচ্ছে আমি আর থেকেও নেই
নেই তোমাদের আড্ডায় চায়ের আসরে
নেই তোমাদের হাসি তামাশায়
সেখানে আমার উপস্থিতি বড্ড অসহায় 
কিন্তু ; আমি আর পারছিনা ! 
মানাতে মানাতে ভীষণ ক্লান্ত ও পরিশ্রান্ত এই আমি ||

একটু বিশ্রামের বড্ড প্রয়োজন আমার!  
আমি একটু বিশ্রাম চাই ! বিশ্রাম! 
নির্জনে নীরবে একা থাকতে চায় আমার মন 
কারণ,আমি সত্যি সত্যি আর কোথাও নেই 
আমার উপস্থিতি প্রদর্শণ করতে চাইনা ! চাইনা! 
তাই মিনতি করছি তোমাদের কাছে
ক্ষমিও মম অপরাধ এই অক্ষম আমায় 
শুধু তোমাদের বিশাল মনের উদারতায় !! 


মানবতার শুদ্ধতায় 

আমি আজ চেয়ে আছি সেদিনের আশায় ! 
যেদিন ভোরের আলো ফুটবে ভালোবাসা ও মানবতার শুদ্ধতায় ! 
চেয়ে দেখো আজ 
আলোর কোলে আঁধার নেমেছে নীরবে নিষিদ্ধ ভালোবাসায় 
বিলুপ্ত হয়েছে ভালোবাসারা যেনো কোথায়? 
নিষিদ্ধকরণ করা হয়েছে মানবতাকে 
এই নিষিদ্ধ পরিত্যাক্ত পৃথিবী তো আমার নয় ||

আজ কেউ কাউকে ভালোবাসে না, 
চেনা মানুষ অচেনা অচেনা মানুষ আতঙ্কের 
কারোর কাছে যেতে মানা,কথা বলতে সাবধানতা
অট্টহাসিতে ফেটে পড়তে মানা
মা'য়ের বুকে সন্তানের যেতে মানা
সন্তানকে মা চুমু খেতে পারবে না 
নিষিদ্ধতার বেড়াজালে বন্দী মায়া-মমতা, 
দায়-দায়িত্ব ও কর্তব্য ! 
এ কোন পৃথিবী? এই পৃথিবীকে আমি জানি না ! 
এই পৃথিবী আমি চিনি না! 
এই পৃথিবী আমি চাইনা ! চাইনা !! 

আমি নিষিদ্ধতার বাঁধন ছিড়ে পৌঁছে যেতে চাই 
সেই নীলিম সীমানায় বহতা নদী যেথায় মিলিত হয় 
সেই সাগরের বিশালতায় আমি নিশ্চিন্তে 
স্বাধীনভাবে হেঁটে যেতে চাই
সেই মিলনের দুর্লভ মোহনায় !! 

যেখানে আকাশের বুকে থোকা থোকা মেঘ 
নির্ভাবনায় ভেসে বেড়ায় কতো না স্বাধীনতায় ! 
আমিও তেমনি ডুবতে চাই ভাসতে চাই 
এই সুন্দর ধরায় !! 

আমি অপলকে চেয়ে আছি সেই দিগন্তে ,
যেখানে নীলাকাশ ছুঁয়েছে মাটি কতো মমতায়,
সবুজ অরণ্য নিবীড় ভালোবাসায় নীরবে জড়িয়ে একাকার! 
প্রজাপতি নির্বিঘ্নে উড়ে বেড়ায়, 
মৌমাছি নিশ্চিন্তে চয়ন করছে ফুলের মধু,
গাছ, লতাপাতা, একে অন্যকে জড়িয়ে, বেঁচে আছে কতো না মমতায় !! 

আহা!  এমন সুন্দর পৃথিবী কেনো আজ নিষিদ্ধ 
করোনাভাইরাসের বিষে জর্জরিত? 
এই বিষাক্ত ধরণী আমি দেখতে চাইনা !! 

দেখে নিও তোমরা! দেখে নিও ! 
আমিও একদিন পৌঁছে যাবো! ঠিক পৌঁছে যাবো! 
করোনা ভাইরাসের বেঁধে দেয়া 
নিষিদ্ধ প্রাচীর ভেঙ্গে হেথায় যেথায় আছে
শুধু মানবতা আর নীবির করে ভালোবাসিবার অধিকার!! 


ঝরছে সোনার স্বপ্ন

বাঁধা আছে মোর ঘরখানি
এক অরণ্যের গভীরে,
নিকানো মেঝে সুখ আছে
আলতো স্বপ্ন শিখড়ে ||

বোঝেনা মন অচিন যাদুকর
নাটাই ঘোরায় ঘুড়ির,
স্বপ্ন আর জাগরণে মিশালো
স্বপ্ন ভেঙে চুরচুর||

চেনা মানুষ অচেনা অসময়ে
কতো সুর পড়ে থাকে,
গাইতে বারণ শুনতে বারণ
সময়ে মনের বাঁকে||

ফুরিয়ে যায় পিছুটানে তার
রাত জাগা প্রদীপশিখা,
সলতে ঢিমেতালের বাসনায়
আসে আলোকবর্তিকা||

সোনার আলো ঝরছে দেখো
ওই যাদুকরের ইচ্ছেয়,
আলোয় আলো ছড়িয়ে যাক
মানুষের অন্তরাত্মায়||


তুমিহীন একটুও ভালো নেই

 
আজ তুমিহীন এখানে একটুও ভালো নেই আমি, 
একটুও ভালো নেই! 
মাথার ওপরে যে আকাশটি বিধাতা দিয়েছিলেন? 
নিকষকালো মেঘে মুষলধারে ঝড় বৃষ্টি ও
সূর্যতাপে যে ঘরখানা একমাত্র আশ্রয় ছিলো? 
সেই ঘরখানাও চৈতালি ঝড়ে আকস্মিক 
ভেঙ্গে গুড়িয়ে দিয়ে গেছে সেই বিধাতাই
তাইতো তুমিহীন এখানে একটুও ভালো নেই আমি ||

জীবন নদীর ভেলায় অসংখ্য ঢেউয়ের ছড়াছড়ি
ক্লান্ত দিশেহারা এক পথিক আমি
মাঝিহীন নদীর গতিপথ ও সীমান্ত চিনিনা
স্বপ্নগুলো কর্দমাক্ত পথে ক্লান্তি বিনোদনে
আছড়ে পরে অনবরত 
আজ তুমিহীন এখানে একটুও ভাল নেই আমি! 

যাপিত জীবনে স্বপ্ন রাজ্যে যে ভীতখানা গড়েছিলাম
সেখানে কখনো জোয়ার কখনো ভাটা
কংক্রিটের গড়া বিবেকহীন সমাজে আজ
বেচা কেনা হয় অসহায়ত্ব! 
রক্তমাংসে গড়া মানুষগুলো আবেগহীন বিবেকহীন 
কান্নার জলও তাদের হৃদয় স্পর্শ করেনা
হৃদপিন্ডে পাথরের খেলা চলে প্রতিদিন 
আজ তুমিহীন এখানে একটুও ভাল নেই আমি! 

নির্ঘুম ফেরারি চোখে একাকিত্ব জুড়ে অহোরাত্র একাকি আমি,
আত্মায় এক শরীর নিয়ে বয়ে চলছি দিনরাত্রি 
নিঃশ্বাস নিতেও কষ্ট হয় আমার 
কণ্ঠনালী চেপে ধরে পেছন থেকে কেউ
দম বন্ধ হয়ে আসে আমার 
ছটফটিয়ে মরি মনে হয় এক্ষুনি হয়তো চিরনিদ্রায় চলে যাবো
তাই বলছি তুমি কি জানো? 

আজ তুমিহীন এখানে একটুও ভাল নেই আমি! 
বিশ্বাস করো! একটুও ভালো নেই আমি। 

সোনালীনিউজ/এম

Wordbridge School
Link copied!