• ঢাকা
  • শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল, ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

বাংলাদেশে করোনা সংক্রমণের ৩ টার্নিং পয়েন্ট


নিজস্ব প্রতিবেদক মে ২৩, ২০২০, ০৬:২৫ পিএম
বাংলাদেশে করোনা সংক্রমণের ৩ টার্নিং পয়েন্ট

ঢাকা: বাংলাদেশে করোনা সংক্রমণ প্রতিদিনই বাড়ছে। গড়ে প্রতিদিন এখন ১০ হাজারের কাছাকাছি পরীক্ষা হচ্ছে। ১০ হাজারের পরীক্ষাতে দেখা যাচ্ছে যে, প্রতি ১০০ জনে ১৭ জনের বেশী মানুষ করোনায় সংক্রমিত হচ্ছে। এটি বাংলাদেশের জন্য উদ্বেগজনক।

তবে চিকিৎসক এবং বিশেষজ্ঞরা বলছেন যে, তারা যেটা প্রক্ষেপণ করেছিলেন যে, বাংলাদেশে মে’র শেষ পর্যন্ত করোনার পিক সিজন থাকবে এবং জুন থেকে আস্তে আস্তে কমতে থাকবে, সেটি এখন আর বাংলাদেশের জন্য প্রযোজ্য নয়। বিশেষজ্ঞরা বরং মনে করছেন যে, পুরো জুন মাসজুড়েই বাংলাদেশে করোনার সংক্রমণ বাড়তে পারে। জুলাই মাস পর্যন্ত করোনা বাংলাদেশকে নাস্তানাবুদ করবে। চিকিৎসক ও বিশেষজ্ঞরা এটাও মনে করছেন যে, বাংলাদেশে কম মৃত্যুর হার নিয়ে যে আত্মতুষ্টি, সেটাও কিছুদিনের মধ্যে নষ্ট হয়ে যাবে। কারণ বাংলাদেশে খুব শিগগিরই মৃত্যুর হারও বাড়বে।

একাধিক চিকিৎসক ও বিশেষজ্ঞ বলছেন যে, বাংলাদেশের যেভাবে করোনা মোকাবেলা করার দরকার ছিল, সেভাবে করতে পারেনি। একের পর এক ভুল সিদ্ধান্তের কারণে বাংলাদেশে ভয়ঙ্কর পরিস্থিতি শুধু ভয়ঙ্কর হয়ে উঠছে না, অনেক দীর্ঘমেয়াদীও হচ্ছে।

এর আগে, স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের ৮ জন বিশেষজ্ঞের সমন্বয়ে গঠিত প্যানেল বাংলাদেশের করোনা পরিস্থিতি নিয়ে প্রক্ষেপণ করেছিল। তারা বলেছিলেন যে, বাংলাদেশে মে মাসের শেষ পর্যন্ত পিকে থাকবে করোনা। এবং আস্তে আস্তে জনে তা কমতে থাকবে। জুন মাসের তৃতীয় সপ্তাহ নাগাদ আমাদের করোনা পরিস্থিতি একটা সহনীয় পর্যায়ে আসবে। বিশ্বের অন্যান্য দেশের পরিস্থিতি বিশ্লেষণ করে তারা এটা বলেছিলেন। তারা এটাও প্রক্ষেপণ করেছিলেন যে, ৫০ হাজার থেকে ১ লাখ করোনা রোগী সর্বোচ্চ আমাদের হতে পারে।

কিন্তু সাম্প্রতিক কালে কিছু ভুল সিদ্ধান্ত এবং বাস্তবতার কারণে বাংলাদেশের করোনা পরিস্থিতি অন্যদিকে মোড় নিয়েছে বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা। তারা বলতে চাচ্ছেন যে, বাংলাদেশে একটা প্রথম তরঙ্গ শেষ হলো। আবার নতুন করে করোনার তরঙ্গ সৃষ্টি হচ্ছে। সেটিও পিক সিজনে যাবে। এর পেছনে মূল কারণ বলে তারা মনে করছেন যে, বাংলাদেশে করোনা সংক্রমণের টার্নিং পয়েন্টকে তারা ৩ ভাগে ভাগ করছেন।

প্রথমত; যারা ইতালি থেকে ফেরত আসলেন, তাদের কোয়ারেন্টাইনে রাখা হলো না। এর মাধ্যমে করোনা স্নগক্রমিত হলো।

দ্বিতীয়ত; যে জায়গাগুলোতে করোনার সামাজিক সংক্রমণ হয়েছে, সেই জায়গাগুলোকে আমরা বিচ্ছিন্ন করতে পারিনি। ফলে ওই এলাকার লোকজন বিভিন্ন জায়গায় সামাজিক সংক্রমণ ছড়িয়ে দিয়েছে।

তৃতীয়ত; যে সময় আমাদের ঢাকায় একটা সামাজিক বিচ্ছিন্নতা এবং একটা কঠর লকডাউন দরকার ছিল সেই সময় আমরা দোকান পাট, বাজার হাট এবং গার্মেন্টস খুলে দিয়েছি। ফলে আমাদের পরিস্থিতি নাজিক হয়েছে।

এছাড়াও পরিস্থিতির নতুন নেতিবাচক মাত্রা হলো এই ঘরমুখো মানুষের ভিড়। ঈদে লাখ লাখ মানুষ ঢাকা ছেড়ে গ্রামে চলে যাচ্ছেন। এই মানুষগুলো ঈদের পরে আবার গ্রাম থেকে শহরে আসবেন। এর ফলে একটি লাগামহীন পরিস্থিতি তৈরি হবে বলে চিকিৎসকরা আশঙ্কা করছেন।

প্রধানমন্ত্রীর ব্যক্তিগত চিকিৎসক এবং আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন মেডিসিন বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক ডা. এবিএম আব্দুল্লাহ বলছেন যে, ঢাকা থেকে যারা যাচ্ছেন তাদের অনেকেই করোনা সংক্রমণ নিয়ে যাবেন এবং আমাদের যেটা ইতিবাচক দিন ছিল যে ঢাকার বাইরে বিশেষ করে গ্রামাঞ্চলগুলো কম করোনা উপদ্রুত ছিল। কিন্তু এখন ঢাকার লোকজনের গ্রামগঞ্জে যাওয়ার ফলে প্রত্যন্ত অঞ্চলেও করোনা সংক্রমণ ছড়িয়ে পড়বে। আর এমনটা হলে সারাদেশেই একটা খারাপ পরিস্থিতি তৈরি হবে।

শুধু ডা. এবিএম আব্দুল্লাহই নন, অনেক চিকিৎসক বিশেষজ্ঞরাই বলছেন যে, বাংলাদেশে করোনার দ্বিতীয় পর্যায় শুরু হবে ঈদের পর থেকে। ঢাকা থেকে মানুষ যখন সারা দেশে যাবে, সেখানে গিয়ে তারা করোনার সংক্রমণ ছড়িয়ে দেবে। এর তৃতীয় ধাপ হবে যখন তারা আবার ঈদের পর ঢাকা আসবেন। এর মাধ্যমে পুরো দেশই করোনার হটস্পটে পরিণত হবে।

বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন যে, এর ফলে জুন থেকে আমাদের করোনার নতুন অধ্যায়, নতুন সংক্রমণের পর্যায় শুরু হবে। যেটি জুনের তৃতীয় সপ্তাহে গিয়ে আবার পিকে উঠবে। এর মধ্যে যদি আমরা স্বাস্থ্যবিধি এবং প্রয়োজনীয় ব্যবস্থাগুলো না মানতে পারি, তাহলে জুলাইয়েও আমাদের করোনা থাকবে।

প্রশ্ন হলো, বাংলাদেশ যে সিদ্ধান্ত নিয়েছে করোনার সঙ্গে বসবাসের এবং এই সিদ্ধান্তের পেছনে মূল কারণ হলো মৃত্যুর হার কম থাকা। কিন্তু যখন করোনা রোগীর সংখ্যা অনেক বেড়ে যাবে, তখন মৃত্যুর হার অবধারিতভাবেই বাড়তে বাধ্য। তখন আমরা এই পরিস্থিতি কীভাবে সামাল দেব, সেটাই ভাবনার এবং উদ্বেগের।

চিকিৎসকরা মনে করছেন যে, তখনই আসলে বাংলাদেশে করোনার ভয়াবহতা সাধারণ চোখে ধরা পড়বে। তখন আমাদের নিয়ন্ত্রণ করার সুযোগ থাকবে খুবই কম। 

সোনালীনিউজ/এইচএন

Wordbridge School

জাতীয় বিভাগের আরো খবর

Link copied!