• ঢাকা
  • বৃহস্পতিবার, ১১ ডিসেম্বর, ২০২৫, ২৬ অগ্রহায়ণ ১৪৩২
SonaliNews

গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকার অনুমোদিত নিউজ পোর্টাল

পে-স্কেলের গেজেট এখন অনিশ্চয়তার ঘেরাটোপে


নিজস্ব প্রতিবেদক ডিসেম্বর ১১, ২০২৫, ০৯:২১ পিএম
পে-স্কেলের গেজেট এখন অনিশ্চয়তার ঘেরাটোপে

ফাইল ছবি

সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের দাবি ও আলটিমেটাম সত্ত্বেও নবম পে-স্কেলের চূড়ান্ত গেজেট নির্বাচনের আগে প্রকাশ হওয়া কার্যত অনিশ্চিত হয়ে গেছে। অর্থ উপদেষ্টা ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ জানিয়েছেন, পে-স্কেল ঘোষণা দ্রুত করার মতো অবস্থা এখন নেই। তিনি বলেন, পে–স্কেল বাস্তবায়ন শুধু প্রশাসনিক সিদ্ধান্ত নয়; দেশের অর্থনীতি, বাজেট সক্ষমতা, মুদ্রাস্ফীতি ও সামগ্রিক উন্নয়ন–অবস্থার সঙ্গে এটি সরাসরি যুক্ত।

বুধবার সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘পে–স্কেল ঘোষণা সহজ কাজ না। অনেকগুলো ধাপ রয়েছে। কর্মচারীদের আলটিমেটামের মধ্যে এত কম সময়ে তা শেষ করা সম্ভব নয়। আমরা কাজ করছি, তবে বাস্তবতা কঠিন।’

সূত্র জানায়, নবম পে-স্কেলের খসড়া প্রস্তাব কমিশন অর্থ বিভাগে পাঠিয়েছে বেশ কয়েক সপ্তাহ আগে। এতে রয়েছে- মূল বেতন পুনর্মূল্যায়ন, গ্রেড পুনর্বিন্যাস, বিভিন্ন ভাতায় বড় ধরনের পরিবর্তন, কিছু ক্ষেত্রে টেকনিক্যাল ক্যাডারের স্কেল উন্নয়ন।

এসব বাস্তবায়নে অর্থ বিভাগ, জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় ও পরিকল্পনা কমিশনের যৌথ আলোচনার প্রয়োজন। কিন্তু নির্বাচনি তফসিল ঘনিয়ে আসায় প্রশাসনের এসব গুরুত্বপূর্ণ দপ্তর এখন প্রার্থী যাচাই–বাছাই ও নির্বাচন প্রস্তুতিতে ব্যস্ত। ফলে পে–স্কেলের ফাইল কার্যত থেমে গেছে।

জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের এক কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানান, নির্বাচনের আগে এই ফাইল আর সামনে এগোনোর সম্ভাবনা খুব কম। যেকোনো বড় আর্থিক সিদ্ধান্ত এখন নির্বাচন কমিশনের অনুমতির ওপর নির্ভরশীল-এটিও একটি বড় বাধা।

সরকারের নীতিনির্ধারকেরা বলছেন, অর্থনীতির যে অবস্থায় আছে, তাতে দ্রুত নতুন পে–স্কেল বাস্তবায়ন করলে বাজেটে বাড়তি চাপ তৈরি হবে। আর তা হলো- উচ্চ মুদ্রাস্ফীতি, রাজস্ব ঘাটতি, বৈদেশিক ঋণ পরিশোধের চাপ, প্রকল্প ব্যয় বাড়তি হওয়া এসব কারণে পে–স্কেল বাস্তবায়নের সময় আরও পর্যালোচনার প্রয়োজন।

অর্থ উপদেষ্টা বলেন, ‘দারিদ্র্য বেড়েছে, প্রশাসনিক দুর্বলতা ও প্রকল্প বাস্তবায়নের ক্রাইসিস রয়েছে। এসব বিবেচনায় না নিয়ে পে–স্কেল ঘোষণা করা হলে সেটি অর্থনীতির ওপর বাড়তি চাপ ফেলবে।’

সরকারি চাকরিজীবীরা ১৫ ডিসেম্বরের মধ্যে গেজেট প্রকাশের দাবি জানিয়েছিলেন। সময়মতো না হলে ১৭ ডিসেম্বর থেকে কঠোর কর্মসূচির ঘোষণা দেন তারা। তবে নীতিনির্ধারকদের ধারণা, ঘোষণার সময়সীমা পেরিয়ে গেলেও প্রশাসনের পক্ষে এত দ্রুত সমন্বয় করা সম্ভব নয়।

চাকরিজীবী সংগঠনগুলোর আশঙ্কা-নতুন সরকার গঠিত না হওয়া পর্যন্ত পে-স্কেল বাস্তবায়ন আর এগোবে না।

নির্বাচনি তফসিল ঘোষণার পর রাষ্ট্রীয় অর্থসংক্রান্ত বড় সিদ্ধান্তগুলো স্থগিত রাখাই প্রচলিত নিয়ম। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ইতোমধ্যে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে নির্বাচনকেন্দ্রিক প্রস্তুতিতে সর্বোচ্চ সতর্ক থাকতে নির্দেশ দিয়েছে। ফলে পে-স্কেল নিয়ে আলোচনার গতি আরও কমে যেতে পারে।

ফলে একদিকে চাকরিজীবীদের দীর্ঘদিনের অপেক্ষা, অন্যদিকে সরকারের অর্থনৈতিক সংকোচন-দুইয়ের মাঝখানে নবম পে–স্কেলের গেজেট এখন অনিশ্চয়তার ঘেরাটোপে।

অর্থনৈতিক বাস্তবতা, প্রশাসনিক ব্যস্ততা ও নির্বাচনি সতর্কতার ত্রিমুখী চাপ-এই তিন কারণেই পে-স্কেল সিদ্ধান্ত আরও পেছাতে পারে বলে ধারণা রাজনৈতিক ও প্রশাসনিক বিশ্লেষকদের।

সামগ্রিকভাবে মনে করা হচ্ছে, নির্বাচনের আগে নয়, বরং নতুন সরকার দায়িত্ব নিলেই নবম পে–স্কেলের চূড়ান্ত রূপরেখা সামনে আসবে।

এসএইচ 


 

Wordbridge School
Link copied!