ঢাকা: রাকিব (১১)। বাবা শরিফুল খাঁ। বাড়ি মহম্মদপুর উপজেলা সদরের শ্যামনগর গ্রামে। প্রাথমিক সমাপনী উত্তীর্ণ হয়ে ষষ্ঠ শ্রেণিতে ভর্তি হয় সে। এরপরই করোনাভাইরাস মহামারিতে অনির্দ্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ হয়ে যায় স্কুল।
হৃতদরিদ্র পরিবারের এসব শিশুর বাবা-মা বাধ্য হয়ে উপার্জন করতে নামিয়ে দিয়েছেন।
রাকিব উপজেলা সদরের একটি হোটেলে কাজ করে। খাবার পায়, সাথে দিনে ১০০ টাকা বেতন। হোটেলে ফরমায়েশ খাটার পাশাপাশি তাকে ভ্যান চালিয়ে মালিকের বাড়ি থেকে হোটেলের খাদ্য সামগ্রী আনা-নেওয়া করতে হয়। ভোর থেকে মধ্য রাত পর্যন্ত চলে রাকিবের কাজ।
শুধু রাকিব নয়। তার মতো অসংখ্য দরিদ্র শিশু রাকিবদের শিক্ষা জীবন আজ হুমকির সম্মুখীন।
রাকিবের সাথে দেখা হলো বৃহস্পতিবার (২৪ সেপ্টেম্বর) সদরের রাজবাড়ি সড়কে। ভ্যান থেকেই নেমেই জিজ্ঞাসা করে, স্যার আমাগের স্কুল খুলবি কবে? উত্তর দিতে পারিনি। কারণ তার প্রশ্নের উত্তর আমরা কেউ জানি না।
পড়ালেখা করিস? স্যার স্কুল খোলে না বলে আব্বা হোটেলে কামে রাখছে। পড়তি পারিনে। যেটুক শিখছিলাম সব ভুলে গিছি।
স্কুল না খুললি সারা জীবন হোটেলেই কাম করে খাতি হবি আমার।
স্যার স্কুল খুললি আমারে এট্টু কবেন।
রাকিব ভ্যানের প্যাডেল মারতে মারতে সামনের দিকে এগিয়ে যায়। ছোট পায়ে পেডেলটা সে পুরো ঘুরিয়ে আনতে পারে না। ছিপছিপে শরীরটা বাঁকা হয়ে আসে। সংসারের চাকা ঘুরাতে এই বয়সে তাকে বাধ্য হয়ে ভ্যানের প্যাডেল ঘোরাতে হয়।
চোখের আড়াল না হওয়া পর্যন্ত রাকিবের চলার পথের দিকে তাকিয়ে থাকি। এক সময় দৃষ্টি সীমার বাইরে চলে যায় সে।
শুধু দৃষ্টিসীমা নয়, রাকিবরা হয়তো একেবারে হারিয়ে যাবে স্কুল থেকে পড়ালেখা থেকে।
রাকিবদের জন্য কিছু না করতে পারার কষ্ট যন্ত্রণা পোড়াবে প্রতিনিয়ত।
রাকিব ভালো থাকিস...
লেখক: সহকারী শিক্ষক, সরকারি আর এস কে এইচ ইনস্টিটিউশন, মহম্মদপুর, মাগুরা।
সোনালীনিউজ/এমএএইচ
*** প্রকাশিত মতামত লেখকের নিজস্ব ভাবনার প্রতিফলন। সোনালীনিউজ-এর সম্পাদকীয় নীতির সঙ্গে লেখকের এই মতামতের অমিল থাকাটা স্বাভাবিক। তাই এখানে প্রকাশিত লেখার জন্য সোনালীনিউজ কর্তৃপক্ষ লেখকের কলামের বিষয়বস্তু বা এর যথার্থতা নিয়ে আইনগত বা অন্য কোনও ধরনের কোনও দায় নেবে না। এর দায় সম্পূর্ণই লেখকের।
আপনার মতামত লিখুন :