• ঢাকা
  • শনিবার, ২৭ এপ্রিল, ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

বাংলাদেশের ভাষা, সাহিত্য, সংস্কৃতি ও রাজনৈতিক তৎপরতা


সাইমন জাকারিয়া জানুয়ারি ৫, ২০২১, ০৮:২৫ এএম
বাংলাদেশের ভাষা, সাহিত্য, সংস্কৃতি ও রাজনৈতিক তৎপরতা

ঢাকা : বাংলাদেশ নামের রাষ্ট্রের জন্ম ১৯৭১ খ্রিস্টাব্দে। কিন্তু এই দেশের তথা এই ভূখণ্ডের সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যের ইতিহাস প্রায় তিন হাজার বছরের প্রাচীন। খ্রিস্টপূর্বকালে নির্মিত প্রাচীন বাংলার পুণ্ডুবর্ধনের স্থাপনাসমূহের সঙ্গে এবং ওয়ারী-বটেশ্বরের মাটির তলদেশে আবিষ্কৃত বিভিন্ন ধরনের প্রত্নতাত্ত্বিক উপাদানের সঙ্গে এদেশের সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যের প্রাচীন ইতিহাস সম্পর্কে নানা ধরনের নির্দেশনা পাওয়া যায়। প্রাচীন বাংলার চর্যাপদের সাহিত্যিক নিদর্শনে এদেশের প্রাচীনতম সংগীত, নৃত্য, নাট্য, সংস্কৃতি ও সাধনার পরিচয় লিপিবদ্ধ রয়েছে। কে না জানে চর্যাপদের গানের বাণী ও সাধনার ধারা ইতিহাসের পরম্পরায় বিকশিত হয়ে মিশে আছে বাংলাদেশের বাউল সংগীত ও সাধনার ঐতিহ্যে।

বাংলাদেশের সাংস্কৃতিক ক্ষেত্রে অর্জনকে বিবেচনা করলে দুটি দিক প্রত্যক্ষ করা যায়, যথা—১. জনগণের স্বতঃস্ফূর্ত অংশগ্রহণে সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য রক্ষা ও পুনর্জাগরণে ভূমিকা পালন এবং ২. আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলে বাংলাদেশের ভাষা, সাহিত্য, সংস্কৃতি ও রাজনৈতিক তৎপরতার স্বীকৃতি অর্জন।

প্রথম পর্যায়ে বাংলাদেশের গ্রামীণ সমাজে সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য চর্চা ও রক্ষা জনগণ স্বতঃস্ফূর্তভাবে অংশগ্রহণ করে এদেশের আবহমান কালের ঐতিহ্য বিভিন্ন ধরনের সাংগীতিক ঐতিহ্য, নৃত্য, নাট্য, কৃত্য, ঋতুভিত্তিক উৎসব উদযাপন প্রভৃতি বাঁচিয়ে রেখেছেন। এক্ষেত্রে এদেশের অঞ্চলভিত্তিক সংস্কৃতির মধ্যে মুসলিম পীর-পাঁচালিমূলক গীতি-নাট্য-নৃত্য ধারা তথা গাজীর গান, মানিক পীরের গান, মাদার পীরের গান, একদিল পীরের গান, খোয়াজ খিজিরের বেড়া ভাসান প্রভৃতি ঐতিহ্যের সজীব চিত্র প্রত্যক্ষ করা যায়, পাশাপাশি ধামাইল গীতি-নৃত্য, লাঠিখেলার নাট্য-নৃত্য, জারিগানের কৃত্যাচার, চৈত্রসংক্রান্তির আচার, বাউল-ফকিরদের সাধুসঙ্গ ও সাংগীতিক ঐতিহ্য, মনিপুরীদের রাসলীলা থেকে শুরু করে মারমা, চাকমা, গারো, সাঁওতাল, ওঁরাও, মান্দি, হাজং, খাসিয়া, ত্রিপুরা প্রভৃতি বিচিত্র নৃগোষ্ঠীদের সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য প্রাণবন্তভাবে চর্চিত রয়েছে। উল্লেখ্য, এসব সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য বাংলাদেশের জনগোষ্ঠী প্রাণের স্পন্দনের মতোই প্রবাহমান রেখেছেন নিজেদের উদ্যোগ ও চর্চার মাধ্যমে। অন্যদিকে এদেশের ভাবসাধকের প্রাচীন বাংলার সাংগীতিক ঐতিহ্য চর্যাপদের গানের পুনর্জাগরণের ঐতিহাসিক ভূমিকা রেখে চলেছেন। ভাবনগর ফাউন্ডেশন ও ভাবনগর সাধুসঙ্গের উদ্যোগে বাংলাদেশের বাউল-ফকির সাধকদের মধ্যে চর্যাপদের গানের পুনর্জাগরণ কার্যক্রম শুরু হবার পর সারা বাংলাদেশের ভাবসাধকদের মধ্যে দারুণ উদ্দীপনা সৃষ্টি হয়। শুধু তাই নয়, বাংলা একাডেমি, বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমি, বাংলাদেশ জাতীয় জাদুঘর, বাংলাদেশ টেলিভিশন, বাংলাদেশ বেতার, বাংলাদেশ লোক ও কারুশিল্প ফাউন্ডেশন, বাংলাদেশ উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়, ইউনিভার্সিটি অব লিবারেল আর্টস প্রভৃতি প্রতিষ্ঠানসহ বিভিন্ন বেসরকারি টেলিভিশন চ্যানেল বাংলাদেশের ভাবসাধকদের চর্যাপদের গানের পুনর্জাগরণকে জাতীয় ও আন্তর্জাতিক পর্যায়ে তুলে ধরতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। শুধু তাই নয়, গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের সংসদ অধিবেশনে ২০১৭ খ্রিস্টাব্দে মাননীয় সংস্কৃতিমন্ত্রী আসাদুজ্জামান নূর এমপি ভাবসাধকদের চর্যাপদের গানের পুনর্জাগরণ সম্পর্কে তথ্য উপস্থাপন করেন। চর্যাপদের গানের মতো যে প্রাচীন সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য ১২০০ খ্রিস্টাব্দের পর আর বাংলাদেশে তেমনভাবে চর্চিত হয়নি। ভাবসাধকদের তৎপরতায় সেই চর্যাপদের গানের পুনর্জাগরণ নিঃসন্দেহে একটি বড় অর্জন। উল্লেখ্য, প্রাচীন বাংলার চর্যাসংস্কৃতির প্রাণকেন্দ্র নওগাঁর সোমপুর মহাবিহার তথা পাহাড়পুর বৌদ্ধবিহার এলাকায় ভাবসাধকদের উদ্যোগে গড়ে উঠেছে ‘ভাবনগর সাধুসঙ্গ পাহাড়পুর বৌদ্ধবিহার চর্যা চর্চাকেন্দ্র’, বর্তমানে এই কেন্দ্রে প্রায় শতাধিক বাউল-ফকির সাধকেরা নিয়মিত চর্যাপদের গান চর্চা করেন। জাপানের হিরোসিমা বিশ্ববিদ্যালয়ের এনথ্রোপলোজি বিভাগের শিক্ষক ও শিক্ষার্থীরাসহ পৃথিবীর বিভিন্ন দেশের গবেষকগণ ইতোমধ্যে এই কেন্দ্রের ভাবসাধকদের চর্যাপদের গান পর্যবেক্ষণ করেছেন।

সাংস্কৃতিক ক্ষেত্রে আন্তর্জাতিক পর্যায়ে বাংলাদেশের অর্জনের কথা উল্লেখ করতে গেলে প্রথমেই বাউল সংগীতের কথা বলতে হবে। ইউনেস্কো ২০০৫ খ্রিস্টাব্দে বাংলাদেশের বাউল সংগীতকে মানবতার পরিবর্তনশীল সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য হিসেবে ঘোষণা দেয় এবং ২০০৮ খ্রিস্টাব্দে বাংলাদেশের পরিবর্তনশীল সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য হিসেবে বিশ্ব ঐতিহ্যের প্রতিনিধিত্বশীল তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করে। ইউনেস্কোর স্বীকৃতিতে বলা হয়, বাংলাদেশের বাউল সংগীত উদার ও সম্প্রদায় সম্প্রীতির এমন একটি সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য যা বাংলাদেশের বিচিত্র ধরনের ধর্মসাধনা তথা হিন্দু, মুসলিম, বৌদ্ধ, বৈষ্ণবসহ বাংলাদেশের অপরাপর ধর্ম ও সাধনার ধারাকে মিশ্রণ ও গ্রহণের মাধ্যমে মানবিকতার রূপটাকে প্রধানভাবে প্রকাশ করেছেন। ভক্তি ও প্রেমের বাণীকে প্রাধান্য দিয়ে বাংলাদেশের বাউল সংগীত সব ধর্মের মানুষকে মানবিকতার মন্ত্রে দীক্ষা দিতে বদ্ধপরিকর। বাংলাদেশের বাউল সংগীতের এই ধারা নভেল পুরস্কারপ্রাপ্ত বাঙালি কবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরকে দারুণভাবে প্রভাবিত করেছিল। ইউনেস্কোর এই স্বীকৃতি প্রদানের পর বাংলাদেশের বাউল সংগীতের ধারা সারা পৃথিবীতে গ্রহণযোগ্যতা অর্জন করে। এরই মধ্যে ২০১৭ খ্রিস্টাব্দে অক্সফোর্ড ইউনিভার্সিটি প্রেস (নিউইর্য়ক, আমেরিকা) থেকে ‘সিটি অব মিরোরস : সংস অব লালন সাঁই’ (আরশিনগর : লালন সাঁইয়ের গান) শিরোনামে আমেরিকার বিখ্যাত পণ্ডিত ড. ক্যারোল সলোমনের অনূদিত লালন সাঁইয়ের গানের সুবিশাল গ্রন্থ প্রকাশিত হয়েছে। ২০১৬ খ্রিস্টাব্দে বিশ্ববিখ্যাত প্রকাশনা সংস্থা ব্রিল থেকে ‘ফোকলোর, রিলিজিওন অ্যান্ড সংস অব এ বেঙ্গলি ম্যাডম্যান : এ জার্নি বিটুইন পারফরমেন্স অ্যান্ড দি পলিটিক্স অব কালচারাল রিপ্রেসেন্টেটিভ’ শিরোনামে বাংলাদেশের সাধক কবি ভবা পাগলার সাধনা ও সাংগীতিক জীবন নিয়ে ইতালির প্রখ্যাত পণ্ডিত ক্যারোলা এরিকা লোরেয়ার পিএইচডি অভিসন্দর্ভ প্রকাশিত হয়েছে। এছাড়া, বাংলাদেশের বাউল সংগীত নিয়ে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে বিচিত্র ধরনের গবেষণা চলমান রয়েছে।

সংগীত সংস্কৃতির পাশাপাশি বাংলাদেশের বস্ত্র বুনন শিল্পের প্রাচীন ইতিহাসের স্বীকৃত রয়েছে বিশ্বজুড়ে। এক্ষেত্রে বিশেষ করে এদেশের প্রাচীন কালের বস্ত্রশিল্প মসলিনের নাম সবারই জানা রয়েছে। প্রাচীনকালের বাংলাদেশে মসলিন বস্ত্র বুননের যে শৈল্পিক চর্চার সমৃদ্ধ ইতিহাস ছিল, সেই বুনন ঐতিহ্যের একটি ধারা জামদানি বুননে রক্ষিত হয়েছে বলে অনেকের ধারণা। ইউনেস্কো ২০১৩ খ্রিস্টাব্দে বাংলাদেশের জামদানির বুনন ঐতিহ্যকে বিশ্ব ঐতিহ্যের প্রতিনিধিত্বশীল তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করেছে। ইউনেস্কোর স্বীকৃতিতে জামদানি বুনন শিল্পের ঐতিহ্যকে ঢাকা ও তার পার্শ্ববর্তী এলাকার বস্ত্রশিল্প হিসেবে উল্লেখ করা হয় এবং জামদানি বুননের শৈল্পিক ঐতিহ্য হিসেবে এর মোটিফকে বাংলাদেশের নিজস্বতার প্রতীক হিসেবে চিহ্নিত করা হয়। পাশাপাশি জামদানি বুননের সাথে নারী, পুরুষ ও শিশুদের অংশগ্রহণের কথা উল্লেখ করা হয়। সেই সাথে জামদানি বুননের সাথে বাংলাদেশের মানুষের সুনিপুণ শৈল্পিক দক্ষতা ও নন্দন ঐতিহ্যের মৌলিকত্ব সম্পর্কে স্বীকৃতি দেওয়া হয়।

জামদানি বুননের পাশাপাশি বাংলাদেশের ঐতিহ্যবাহী লোকশিল্পে আরো অনেক বুনন শিল্পের বিশেষত্ব রয়েছে। সেই বিশেষত্বের দিকে লক্ষ রেখে ইউনেস্কো ২০১৭ খ্রিস্টাব্দে বাংলাদেশের সিলেটের ঐতিহ্যবাহী লোকশিল্প শীতল পাটির বুননকে বিশ্ব ঐতিহ্যের প্রতিনিধিত্বশীল তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করে। ইউনেস্কোর ঘোষণায় শীতল পাটিকে মূলত হস্তশিল্প হিসেবে উল্লেখ করা হয়। সেই সাথে বাংলাদেশের ভৌগোলিক বৈশিষ্ট্য অনুযায়ী শীতল পাটির মূল উপাদান মূর্তা বেতের উৎপাদন ও শীতল পাটি তৈরির জন্য ব্যবহার বিধি সম্পর্কে যেমন তথ্য দেওয়া হয়েছে তেমনি শীতল পাটি তৈরিতে বৃহত্তর সিলেটের বিশেষ শ্রেণির মানুষের পারিবারিক ঐতিহ্য এবং তার সাথে বৃহত্তর জনগোষ্ঠীর সম্পর্কসূত্র নির্ণয় করা হয়েছে। একই সঙ্গে শীতল পাটির বুননে গ্রামীণ মানুষের নান্দনিক চেতনা ও শৈল্পিক দক্ষাকে বিশেষভাবে মূল্যায়িত করা হয়েছে।

বাংলাদেশের সাংস্কৃতিক ক্ষেত্রে আরেকটি বড় অর্জন ঘটেছে বাংলা নববর্ষ উদযাপন উপলক্ষে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা অনুষদ আয়োজিত পহেলা বৈশাখের মঙ্গল শোভাযাত্রার। ২০১৬ খ্রিস্টাব্দে ইউনেস্কো পহেলা বৈশাখের মঙ্গল শোভাযাত্রাকে বিশ্ব ঐতিহ্যের প্রতিনিধিত্বশীল তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করে। স্বীকৃতিতে বলা হয়, ১৯৮৯ খ্রিস্টাব্দে সামরিক শাসনের সময় যখন ছাত্ররা হতাশ হয়ে পড়েছিল তখন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলার ছাত্র-শিক্ষকেরা সুন্দর ভবিষ্যতের প্রত্যাশায় বাংলা নববর্ষের প্রথম দিন তথা পহেলা বৈশাখ মঙ্গল শোভাযাত্রার আয়োজন করে। শোভাযাত্রায় তারা সামরিক শাসকের প্রতিবাদে নিজেদের তৈরি বিভিন্ন ধরনের মুখোশ, পশু-পাখি অবয়ব, পুতুল প্রভৃতি ব্যবহার করে। পরবর্তীতে পহেলা বৈশাখ মঙ্গল শোভাযাত্রা নাগরিক মানুষের অংশগ্রহণে সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যের রূপ লাভ করে। এই শোভাযাত্রার আরেকটি বিশেষ দিক হয়ে উঠে সম্প্রদায় সম্প্রীতির বাংলাদেশের প্রতীকী উপস্থাপন এবং বাংলাদেশের লোকায়ত শিল্পের ঐতিহ্যিক আদলের এক ধরনের নাগরিক উপস্থাপনা।

বাংলাদেশের সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যের ভেতর রাজনীতির একটি স্থান রয়েছে। বলা হয়ে থাকে, বাংলাদেশের রাজনীতি মূলত সাংস্কৃতিক নেতৃত্বের অধীন। আবার একথাও ঠিক যে, বাংলাদেশের ভাষা, সাংস্কৃতি ও রাজনীতি একাঙ্গিকৃত। এক্ষেত্রে ১৯৫২ খ্রিস্টাব্দের একুশের ফেব্রুয়ারি তারিখে রাষ্ট্রভাষার দাবিতে নিহত ভাষা শহীদদের স্মরণে ইউনেস্কো কর্তৃক ১৯৯৯ খ্রিস্টাব্দে প্রদত্ত ‘আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস’ পালনের ঘোষণা বাংলাদেশের বড় অর্জনের মধ্যে শ্রেষ্ঠ।

জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ঐতিহাসিক ৭ মার্চের ভাষণ বাংলাদেশের গৌরবের সর্বোচ্চ আরেকটি শিখর। বাংলাদেশের ইতিহাসের শ্রেষ্ঠ সম্পদ এই ভাষণকে ২০১৭ খ্রিস্টাব্দে ‘মেমরি অব দি ওয়ার্ল্ড’ হিসেবে স্বীকৃতি প্রদান করে। আসলে, ইউনেস্কোর বিশ্বস্মৃতি হিসেবে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ঐতিহাসিক ৭ই মার্চের ভাষণ অন্তর্ভুক্ত হাওয়ায় বাংলাদেশের একটি বড় অর্জন প্রাপ্তি ঘটেছে বৈকি।  

আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে বাংলাদেশের ভাষা, সংস্কৃতি ও রাজনীতির বড় অর্জনের মধ্যে বাউল সংগীত থেকে শুরু করে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ঐতিহাসিক ৭ই মার্চের ভাষণ, ১৯৫২ খ্রিস্টাব্দে ভাষা শহীদদের স্মরণে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস, পহেলা বৈশাখের মঙ্গল শোভাযাত্রা, জামদানির বুনন ঐতিহ্য, সিলেটের শীতল পাটির বুননশিল্পের ইউনেস্কো প্রদত্ত বিশ্বস্বীকৃতি উল্লেখযোগ্য। কিন্তু একথা ভুলে গেলে চলবে না যে, বাংলাদেশের সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যের বহুমাত্রিকতার চর্চা, বিকাশ, সুরক্ষা ও প্রচারের উদ্যোগ নিলে জাতীয় আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে আরো নানা ধরনের অর্জন ঘটতে পারে। তবে, তার জন্যে সরকারি পর্যায়ে সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যের চর্চাকারীদের সঙ্গে আন্তঃসম্পর্ক বৃদ্ধি এবং তাদের তালিকা প্রণয়ন ও সুরক্ষায় উদ্যোগ নেওয়া জরুরি।

করোনা মহামারীর সময়ে বাংলাদেশের সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যের চর্চাকারীরা নতুন বাস্তবতার মুখোমুখি হয়েছেন। তাদের কোনো তালিকা না থাকায় তারা অনেক ক্ষেত্রে সরকারি পৃষ্ঠপোষকতা ও সাহায্য থেকে বঞ্চিত হয়েছেন। এই দিকে লক্ষ রেখে ভাবনগর ফাউন্ডেশন বাংলাদেশের লোকশিল্পীদের একটি প্রাথমিক তালিকা প্রণয়ন করেছে। এখন যথাযথ প্রক্রিয়া সম্পাদনের মাধ্যমে এই তালিকাটির সম্পূর্ণতা বিধান করা এবং সরকারিভাবে তালিকাটিকে গ্রহণযোগ্য করে তোলা। তাহলেই বাংলাদেশের সাংস্কৃতিক অর্জনের বিচিত্রতা বৃদ্ধি পাবে বলে আমাদের বিশ্বাস।

লেখক : নাট্যকার ও গবেষক
[email protected]

 

*** প্রকাশিত মতামত লেখকের নিজস্ব ভাবনার প্রতিফলন। সোনালীনিউজ-এর সম্পাদকীয় নীতির সঙ্গে লেখকের এই মতামতের অমিল থাকাটা স্বাভাবিক। তাই এখানে প্রকাশিত লেখার জন্য সোনালীনিউজ কর্তৃপক্ষ লেখকের কলামের বিষয়বস্তু বা এর যথার্থতা নিয়ে আইনগত বা অন্য কোনও ধরনের কোনও দায় নেবে না। এর দায় সম্পূর্ণই লেখকের।

Wordbridge School
Link copied!