• ঢাকা
  • মঙ্গলবার, ০৯ ডিসেম্বর, ২০২৫, ২৩ অগ্রহায়ণ ১৪৩২
SonaliNews

গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকার অনুমোদিত নিউজ পোর্টাল

পৃথক বিচার বিভাগ সচিবালয়: ন্যায়বিচার নিশ্চিতে এক অপরিহার্য পদক্ষেপ


নিজস্ব প্রতিবেদক জুলাই ৩০, ২০২৫, ০৬:০০ পিএম
পৃথক বিচার বিভাগ সচিবালয়: ন্যায়বিচার নিশ্চিতে এক অপরিহার্য পদক্ষেপ

খন্দকার মাজেদুল ইসলাম সম্রাট: 
 
ঢাকা : রাষ্ট্রের প্রধান তিনটি স্তম্ভের মধ্যে বিচার বিভাগ একটি। বিচার বিভাগের জন্য একটি পৃথক সচিবালয় গঠনের প্রস্তাবটি বর্তমানে বেশ  আলোচিত। এমনকি বর্তমান প্রধান বিচারপতির ঘোষিত রোডম্যাপ বা রূপরেখার প্রধান ধাপ ছিল সুপ্রিম কোর্টের অধীনে পৃথক সচিবালয় প্রতিষ্ঠা। সুপ্রিম কোর্ট এবং আইন, বিচার ও সংসদ বিষয়ক মন্ত্রণালয় উভয়েই এই বিষয়ে একমত যে, বিচার বিভাগের স্বাধীনতা ও কার্যকারিতা নিশ্চিত করার জন্য একটি পৃথক সচিবালয় থাকা আবশ্যক।  গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সংবিধানের ২২ অনুচ্ছেদে, নির্বাহী বিভাগ থেকে বিচার বিভাগ পৃথকীকরণের কথা বলা হয়েছে। তবে বাস্তবে এখনও পর্যন্ত বিচার বিভাগের প্রশাসনিক কার্যক্রম পরিচালনা করে আইন মন্ত্রণালয়। এই পরিস্থিতিতে দ্বৈতনীতিতে বিচার বিভাগের স্বাধীনতা প্রশ্নবিদ্ধ হয়ে পড়ে। তাই পৃথক বিচার বিভাগ সচিবালয় গঠনের  মাধ্যমে জনগণের জন্য ন্যায়বিচার আরও সহজ, দ্রুত ও কার্যকরভাবে নিশ্চিত করা সম্ভব হবে।

বিচার বিভাগের স্বাধীনতা; একটি সাংবিধানিক প্রতিশ্রুতি: বাংলাদেশের সংবিধানের ৯৪(৪) অনুচ্ছেদ অনুযায়ী, বিচার বিভাগ নির্বাহী বিভাগ থেকে স্বাধীন থাকবে। ঐতিহাসিক মাসদার হোসেন মামলায় হাইকোর্টের রায় অনুযায়ী বিচার বিভাগের জন্য পৃথক সচিবালয় প্রতিষ্ঠার সুপারিশ করা হলেও অদ্যবধি পর্যন্ত তা বাস্তবায়িত হয়নি।

পৃথক সচিবালয়, জনগণের মুক্তি:  

১. বিচার বিভাগের প্রশাসনিক স্বাধীনতা নিশ্চিত হবে: বিচারক নিয়োগ, পদোন্নতি, বদলি ও শৃঙ্খলা সংক্রান্ত বিষয়গুলো তখন আর আইন মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে নয়, বিচার বিভাগের নিজস্ব সচিবালয়ের মাধ্যমে হবে। ফলে বিচারকগণ সম্পূর্ন স্বাধীনভাবে কাজ করতে পারবে এবং রাজনৈতিক বা আমলাতান্ত্রিক প্রভাব মুক্ত হয়ে বিচার করতে পারবে ।

২. মামলা নিষ্পত্তির গতি বাড়বে: বিচার বিভাগের পরিকল্পনা, জনবল নিয়োগ, প্রশিক্ষণ ও কোর্ট ব্যবস্থাপনার জন্য পৃথক সচিবালয় থাকলে তা আরও দক্ষতার সঙ্গে পরিচালিত হবে। এতে মামলা জট দ্রুত হ্রাস পাবে এবং বিচারপ্রার্থীরা সময়মতো সেবা পাবেন।

৩. স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা নিশ্চিত হবে: জনগণ কেস ম্যানেজমেন্ট, শুনানির তারিখ, আদেশ, রায়সহ আদালতের নানা তথ্য ডিজিটাল প্ল্যাটফর্মে সহজেই পাবে। এতে বিচার বিভাগ নিয়ে জনগণের আস্থা বাড়বে।

৪. দুর্নীতির সুযোগ কমবে: বিচার বিভাগে প্রশাসনিক স্বচ্ছতা বৃদ্ধি পেলে ঘুষ বা অনৈতিক প্রভাব খাটানোর প্রবণতা কমে আসবে। ফলে জনগণ ন্যায্য বিচার পাওয়ার ক্ষেত্রে বাস্তব সুফল পাবে।

৫. মানবাধিকার রক্ষা ও আইনের শাসন প্রতিষ্ঠা পাবে: একটি শক্তিশালী বিচার বিভাগ মানুষের মৌলিক অধিকার রক্ষা করতে পারে। আলাদা সচিবালয় থাকলে বিচার বিভাগ আরও কার্যকরভাবে নাগরিকের অধিকার ও স্বাধীনতা নিশ্চিত করতে পারবে।

৬. রাজনৈতিক প্রভাবমুক্ত বিচারবিভাগ : রাজনৈতিক প্রভাবমুক্ত বিচার বিভাগ করতে হলে পৃথক বিচার বিভাগ সচিবালয় গঠনের কোন বিকল্প নেই।  সংবিধান ও সুপ্রিম কোর্টের রায়ের আলোকে দ্রুত পৃথক বিচার বিভাগ সচিবালয় বাস্তবায়ন করতে হবে। 

৭.  সুশাসন প্রতিষ্ঠা এবং মানবাধিকার রক্ষায়: পৃথক সচিবালয় গঠনের মাধ্যমে জনগণের আইনের শাসনের প্রতি আস্থা বৃদ্ধি পাবে। এটি মানবাধিকার রক্ষা, সুশাসন ও গণতন্ত্রের ভিত্তি শক্তিশালী করতে সহায়তা করবে।

৯. মামলার তথ্য ও সেবা সহজলভ্য হবে: পৃথক সচিবালয় প্রযুক্তি ও জনবল নিয়োগে স্বাধীনভাবে কাজ করতে পারবে। জনগণ সহজেই মামলার তথ্য, শুনানির তারিখ ও আদেশ জানতে পারবে।

১০. বিচারকদের প্রশিক্ষণ ও পদোন্নতি হবে স্বচ্ছভাবে: স্বাধীন সচিবালয়ের অধীনে বিচারকদের জন্য আলাদা প্রশিক্ষণ ও দক্ষতা উন্নয়ন কর্মসূচি নেওয়া সম্ভব হবে। পদোন্নতিতে দুর্নীতি ও রাজনৈতিক তদবির হ্রাস পাবে। 

১১. হস্তক্ষেপ মুক্ত বিচার বিভাগ: বিচার বিভাগের পৃথক সচিবালয় হলে স্বায়ত্তশাসন নিশ্চিত হবে। হস্তক্ষেপ মুক্ত হবে বিচার বিভাগ, নিশ্চিত হবে স্বাধীনতা ও জবাবদিহিতা। 

পৃথক বিচার বিভাগ সচিবালয় গঠন কোনো বিলাসিতা নয়, এটি জনগণের মৌলিক অধিকার রক্ষার অবিচ্ছেদ্য অংশ। পৃথক বিচার বিভাগ সচিবালয় বহু পূর্বেই বাস্তবায়িত হওয়া উচিত ছিল। এ ব্যবস্থা বাস্তবায়িত হলে শুধু বিচার বিভাগের গুণগত পরিবর্তনই নয়, জনগণের ন্যায়বিচার পাওয়ার পথ আরও সহজ ও নিশ্চিত হবে। একটি গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রে এ পদক্ষেপ শুধু প্রয়োজনীয়ই নয়, এটি নৈতিক দায়বদ্ধতাও বটে।

লেখক: আইনজীবী ও সংবাদকর্মী।

*** প্রকাশিত মতামত লেখকের নিজস্ব ভাবনার প্রতিফলন। সোনালীনিউজ-এর সম্পাদকীয় নীতির সঙ্গে লেখকের এই মতামতের অমিল থাকাটা স্বাভাবিক। তাই এখানে প্রকাশিত লেখার জন্য সোনালীনিউজ কর্তৃপক্ষ লেখকের কলামের বিষয়বস্তু বা এর যথার্থতা নিয়ে আইনগত বা অন্য কোনও ধরনের কোনও দায় নেবে না। এর দায় সম্পূর্ণই লেখকের।

Wordbridge School
Link copied!