ফাইল ছবি
রাজধানীর গুলশান এলাকায় বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যলয় থাকা সত্ত্বেও সাম্প্রতিক সময়ে বিদেশি মিশনগুলোর সঙ্গে দলের সরাসরি যোগাযোগের দেখা মিলছে না। বরং রাজধানীর অন্য স্থান, বিশেষ করে বসুন্ধরায় জামায়াতে ইসলামের আমীর ডা. শফিকুর রহমানের সঙ্গে বৈঠক করতে দেখা গেছে বিভিন্ন দেশের কূটনৈতিক প্রতিনিধিদের।
বিশ্লেষকরা বলছেন, রাজনৈতিক নেতৃত্বে অভ্যন্তরীণ প্রভাবের কমতি এবং দলের ভেতরের অস্থিরতার কারণে বিদেশি মিশনগুলো এখন বিএনপির ওপর আগের মতো নজর দিচ্ছে না। গুলশানের কেন্দ্রীয় অফিস কার্যত প্রভাবশূন্য হয়ে পড়েছে, কারণ কূটনৈতিক মহল নতুন রাজনৈতিক মানদণ্ড বিবেচনা করছে।
রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকরা মনে করিয়ে দেন, এই ধরনের বৈঠক কেবল রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডের ওপর প্রভাব বিস্তার নয়, বরং ভবিষ্যৎ নির্বাচনী পরিস্থিতি এবং দলের নেতৃত্বে সম্ভাব্য পরিবর্তনের নির্দেশক। বিদেশি মিশনগুলো রাজনৈতিক দলের সঙ্গে সংযুক্ত হয়ে তথ্য সংগ্রহ ও রাজনৈতিক দৃশ্যপট মূল্যায়ন করে থাকে, তাই তারা সেই দলের সঙ্গে বেশি যোগাযোগ রাখে, যার প্রভাব ও নেতৃত্ব স্থিতিশীল মনে হয়।
বিএনপির অভ্যন্তরীণ জটিলতা ও বিদেশে দলের উচ্চপদস্থ নেতাদের অনুপস্থিতি পরিস্থিতিকে আরও জটিল করেছে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, বিএনপির জন্য এখন জরুরি প্রতিক্রিয়া হলো দলের অভ্যন্তরীণ ঐক্য ও নেতৃত্বের দৃঢ়তা পুনঃস্থাপন করা, যাতে বিদেশি মিশনগুলো পুনরায় দলের ওপর নজর রাখে।
দেশের রাজনীতিতে জামায়াতের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে সাম্প্রতিক সপ্তাহগুলোতে আন্তর্জাতিক প্রতিনিধি ও কূটনৈতিক বৈঠকের ধারাবাহিকতা লক্ষ্য করা গেছে। ৪ ডিসেম্বর (বৃহস্পতিবার) জাতিসঙ্ঘের মানবাধিকার বিষয়ক হাইকমিশনের প্রধান মিস হুমা খানের সঙ্গে আমীরের বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। একই দিনে যুক্তরাষ্ট্র ভিত্তিক ইন্টারন্যাশনাল রিপাবলিক্যান ইন্সটিটিউট (আইআরআই) এর প্রতিনিধি দলের সঙ্গে বৈঠকও অনুষ্ঠিত হয়।
এর আগে, বসুন্ধরার কার্যালয়ে বৃটিশ হাইকমিশনার মিস সারাহ কুক, কসোভোর সাবেক হেলথ মিনিস্টার প্রফেসর ডা. রিফাত লতিফি, ভুটানের মান্যবর প্রধানমন্ত্রী মি. শেরিং টোবগ, কমনওয়েলথের সেক্রেটারি জেনারেল মাননীয়া শার্লি বোটচও, নেদারল্যান্ডস ও ফ্রান্সের রাষ্ট্রদূতরা আলাদা বৈঠক করেছেন।
বিশ্ব ব্যাংকের আঞ্চলিক পরিচালক এবং আইএমএফ-এর প্রতিনিধি দলের সঙ্গে বৈঠকও অনুষ্ঠিত হয়েছে। এছাড়া জামায়াতের নেতৃবৃন্দ বিভিন্ন দেশের জাতীয় দিবস ও বিশেষ অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণ করেছেন, যেমন তুরস্কের জাতীয় দিবস, আলজেরিয়ার জাতীয় দিবস, ভুটানের রাজা জিগমে সিংয়ে ওয়াংচুকের জন্মদিন এবং জার্মানির ‘দি ডে অব জার্মান ইউনিটি’ উদযাপন।
বিশ্লেষকরা মনে করছেন, বসুন্ধরায় জামায়াতের কার্যলয়ে বিদেশি কূটনৈতিক বৈঠকগুলো বিএনপির ওপর সরাসরি প্রভাব বিস্তার নয়, বরং দেশের রাজনৈতিক প্রেক্ষাপট ও নিরাপত্তা পরিস্থিতি সম্পর্কে তথ্য সংগ্রহের অংশ। তবে এর প্রভাব ভবিষ্যৎ রাজনৈতিক স্থিতিশীলতায় ও দলের অবস্থান নির্ধারণে গুরুত্বপূর্ণ।
এ অবস্থায় প্রশ্ন উঠছে, তাহলে কি বিদেশি মিশনগুলো জামায়াতকে দেশের ক্ষমতায় দেখতে চায়? রাজনৈতিক মহলে এ ধরনের ধারণা ঘুরপাক খাচ্ছে। বিএনপি এখন শুধু অভ্যন্তরীণ ঐক্য পুনঃস্থাপন ও নেতৃত্বের দৃঢ়তা প্রদর্শনের দিকে মনোযোগ দিলে, দলের প্রভাব ও রাজনৈতিক ভবিষ্যৎ নির্ধারিত হবে।
এসএইচ







































