ছবি: পিআইডি
ইনকিলাব মঞ্চের মুখপাত্র ও ঢাকা-৮ আসনের সম্ভাব্য স্বতন্ত্র প্রার্থী শরিফ ওসমান হাদির ওপর হামলাকে জুলাই গণঅভ্যুত্থান নস্যাৎ করার ষড়যন্ত্রের অংশ হিসেবে দেখছেন দেশের প্রধান রাজনৈতিক দলগুলোর নেতারা। তারা বলেছেন, এই অভ্যুত্থানকে ব্যর্থ করার যেকোনো প্রচেষ্টা প্রতিহত করতে রাজনৈতিক শক্তিগুলো ঐক্যবদ্ধ থাকবে।
শনিবার (১৩ ডিসেম্বর) রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনায় প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে অনুষ্ঠিত এক বৈঠকে এই অবস্থান জানান বিএনপি, বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী ও জাতীয় নাগরিক পার্টির নেতারা।
বৈঠকে বিএনপির পক্ষে উপস্থিত ছিলেন স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমদ ও মেজর অবসরপ্রাপ্ত হাফিজ উদ্দিন আহমেদ বীর বিক্রম। জামায়াতের প্রতিনিধিত্ব করেন সেক্রেটারি জেনারেল মিয়া গোলাম পরওয়ার ও সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল অ্যাডভোকেট এহসানুল মাহবুব জুবায়ের। জাতীয় নাগরিক পার্টির পক্ষে ছিলেন আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম ও দক্ষিণাঞ্চলের মুখ্য সংগঠক হাসনাত আবদুল্লাহ। এছাড়া ইনকিলাব মঞ্চের সদস্যসচিব আবদুল্লাহ আল জাবের এবং আইন উপদেষ্টা আসিফ নজরুল বৈঠকে অংশ নেন।
বৈঠকে প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস বলেন, ওসমান হাদির ওপর হামলা একটি পূর্বপরিকল্পিত ও গভীর ষড়যন্ত্রের অংশ। এর পেছনে বড় শক্তি কাজ করছে। তিনি বলেন, ষড়যন্ত্রকারীদের উদ্দেশ্য নির্বাচনকে ভণ্ডুল করা। এই হামলা খুবই প্রতীকী, তারা তাদের শক্তি প্রদর্শন করতে চায় এবং নির্বাচনের সব আয়োজন ভেস্তে দিতে চায়।
প্রধান উপদেষ্টা বলেন, এখন পর্যন্ত পাওয়া তথ্যে দেখা যাচ্ছে, ষড়যন্ত্রকারীরা তাদের নেটওয়ার্ক বিস্তৃত করেছে এবং প্রশিক্ষিত শুটার নামিয়ে মাঠে নেমেছে।
বিএনপির নেতা সালাহউদ্দিন আহমদ বলেন, এই পরিস্থিতিতে রাজনৈতিক দলগুলোর ঐক্য সবচেয়ে জরুরি। পরস্পরের দোষারোপ থেকে বিরত থাকতে হবে। ষড়যন্ত্রের বিরুদ্ধে সবাইকে একসঙ্গে আওয়াজ তুলতে হবে এবং কোনো অপশক্তিকে বরদাস্ত করা হবে না। রাজনৈতিক মতপার্থক্য থাকলেও জাতির স্বার্থে ও জুলাইয়ের স্বার্থে ঐক্যবদ্ধ থাকার বিকল্প নেই বলে মন্তব্য করেন তিনি। এ সময় অবৈধ অস্ত্র উদ্ধার ও ষড়যন্ত্রকারীদের বিরুদ্ধে অভিযান জোরদারের পরামর্শ দেন তিনি।
জামায়াতের সেক্রেটারি জেনারেল মিয়া গোলাম পরওয়ার বলেন, সাম্প্রতিক সময়ে একে অন্যকে দোষারোপের প্রবণতা বাড়ায় বিরোধীরা সুযোগ নিচ্ছে। অতীতের মতো আবারও ঐক্যবদ্ধ হতে হবে। ক্ষুদ্র দলীয় স্বার্থে একে অন্যকে প্রতিপক্ষ বানানো ঠিক নয় বলে মন্তব্য করেন তিনি।
জাতীয় নাগরিক পার্টির আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম বলেন, জুলাই অভ্যুত্থানের পর থেকেই একটি সংগঠিত গোষ্ঠী এই অভ্যুত্থানকে খাটো করার অপচেষ্টা চালাচ্ছে। মিডিয়া, প্রশাসন ও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে জুলাইবিরোধী ন্যারেটিভ তৈরি করা হচ্ছে। তিনি বলেন, আওয়ামী লীগ ও জাতীয় পার্টিকে স্বাভাবিক করার চেষ্টা চলছে, যা ভবিষ্যৎ সরকারকেও ভোগাবে। কেউ একা দেশ চালাতে পারবে না।
নাহিদ ইসলাম বলেন, জুলাইকে ঘিরে বিভ্রান্তিকর বক্তব্য ও অনৈক্যই ষড়যন্ত্রকারীদের শক্তি দিচ্ছে। তারা ভারতের বাইরে বসে যা খুশি করছে, আর আমরা নিজেদের মধ্যে বিভক্ত থাকছি। বুদ্ধিজীবী ও সাংস্কৃতিক কর্মীর ছদ্মবেশে যারা আওয়ামী লীগের এজেন্ডা বাস্তবায়ন করছে, তাদের থামানোর আহ্বান জানান তিনি।
হাসনাত আবদুল্লাহ বলেন, নিজেদের মধ্যে ঐক্য না থাকলে কোনো নিরাপত্তাই কার্যকর হবে না। রাজনৈতিক স্বার্থে দলগুলোই আওয়ামী লীগকে সুযোগ করে দিচ্ছে বলে মন্তব্য করেন তিনি।
বৈঠকের শেষ দিকে প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস বলেন, ভবিষ্যতের জন্য সবাইকে ভাবতে হবে। শুধু সরকার নয়, সমাজের সব শক্তিকেই দৃঢ় থাকতে হবে। রাজনৈতিক বক্তব্য থাকবে, কিন্তু একে অন্যকে শত্রু ভাবা বা আক্রমণের সংস্কৃতি থেকে বেরিয়ে আসতে হবে। নির্বাচনকালীন উত্তেজনা যেন নিয়ন্ত্রণের মধ্যে থাকে, সেদিকে সবাইকে সতর্ক থাকার আহ্বান জানান তিনি।
আইন উপদেষ্টা আসিফ নজরুল বলেন, রাজনৈতিক দলগুলোর পারস্পরিক হানাহানির সুযোগেই আওয়ামী লীগ শক্তিশালী হয়েছে। তিনি দলগুলোর প্রতি আহ্বান জানান, দলীয় স্বার্থের পাশাপাশি জাতীয় স্বার্থকে অগ্রাধিকার দিতে হবে।
এসএইচ







































