• ঢাকা
  • শনিবার, ২৭ এপ্রিল, ২০২৪, ১৪ বৈশাখ ১৪৩১

আত্মশুদ্ধির মাস রমজান


মো. সাইফুল মিয়া এপ্রিল ১৮, ২০২১, ০১:৩০ পিএম
আত্মশুদ্ধির মাস রমজান

ঢাকা : রমজান হলো আরবি তথা হিজরি বর্ষ পঞ্জিকা অনুসারে নবম মাস। শাবান মাসের সমাপ্তির পরপরই প্রতিবছর রহমত, মাগফিরাত ও নাজাতের বার্তা নিয়ে আগমন ঘটে রমজান মাসের। রমজান মাস বিশ্ব মুসলিমদের জন্য একটি বড় নিয়ামতের মাস। রমজান মাস আগমনের সাথে সাথে এই পৃথিবীকে আল্লাহ তার নিয়ামতে ভরপুর করে দেন। প্রাপ্তবয়স্ক প্রত্যক নারী ও পুরুষের ওপর রমজান মাসের এক মাস সাওম (রোজা) পালন করা ফরজ। রোজা ইসলামের পাঁচটি স্তম্ভের একটি। রমজান মাসের সাওম (রোজা) পালন করা প্রসঙ্গে মহান আল্লাহ বলেন, ‘হে ঈমানদারগণ, তোমাদের ওপর রমজানের রোজাকে ফরজ করা হয়েছে। যেমন করা হয়েছিল তোমাদের পূর্ববতী নবীদের উম্মতদের ওপর। যেন তোমরা তাকওয়া (আল্লাহভীতি) অর্জন করতে পার।’ (সুরা বাকারা, আয়াত-১৮৩)

রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, ‘তোমাদের নিকট রমজান মাস উপস্থিত। এটি অত্যন্ত বরকতময় মাস। আল্লাহতায়ালা এ মাসে তোমাদের প্রতি সাওম (রোজা) ফরজ করেছেন। এ মাসে জান্নাতের দরজাসমূহ খুলে দেওয়া হয়, জাহান্নামের দরজাসমূহ বন্ধ করে দেওয়া হয়। আর অবাধ্য শয়তানকে আটক রাখা হয়। আল্লাহর জন্য এ মাসে একটি রাত আছে যা হাজার মাসর চেয়েও উত্তম। যে ব্যক্তি এ রাতের কল্যাণ হতে বঞ্চিত হয়, সে সত্যিই বঞ্চিত ব্যক্তি। (নাসায়ী শরিফ)

রমজানের সাওম পালনের মাধ্যমে সাওম পালনকারী ব্যক্তির আত্মিক উৎকর্ষ সাধিত হয়। এছাড়া সাওম পালনের মাধ্যমে মানুষের মনের আল্লাহভীতি ও আল্লাহর প্রতি ভালোবাসা সৃষ্টি হয়। রমজাস মাস তাকওয়া অর্জনের মাস। এ মাসে আমরা খুব সহজে আল্লাহর নৈকট্য লাভ করতে পারি। আল্লাহ সব সৎকাজের প্রতিদান দশগুণ থেকে সাতশত গুণ পর্যন্ত বাড়িয়ে দেন। কিন্তু রমজান মাসে সাওমের প্রতিদান সম্পর্কে হাদিসে কুদসিতে আল্লাহ বলেন, ‘সাওম আমার জন্য আর আমি নিজেই এর প্রতিদান দেব।’ রমজানের সাওম পালনের মধ্য দিয়ে আল্লাহতায়ালা আমাদের পূর্বের সকল গুনাহ ক্ষমা করে দেন। এ প্রসঙ্গে প্রিয়নবী হজরত মোহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি রমজান মাসে ঈমান ও চেতনার সাথে রমজানের সাওম পালন করবে, আল্লাহ তার পূববর্তী সকল গুনাহ ক্ষমা করে  দেবেন। (সহিহ বুখারি)

রমজান মাস অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ মাস। আমাদের প্রিয়নবী হযজত মোহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম রজব শুরু হলে নিজে ও সাহাবিদের নিয়ে পুরোদমে রমজানের প্রস্তুতি শুরু করতেন। তিনি রজব মাসের শুরু হলে এই দোয়া পড়তেন, ‘আল্লাহুমা বারিকলানা ফি রজাবাও ওয়া শাবান, ওয়া বাললিগনা ইলা শাহরির রমাদান।’ এর অর্থ হচ্ছে ‘হে আল্লাহ আমাদের জন্য রজব ও শাবান মাসকে বরকতময় করে দিন। আর আমাদের রমজান মাস পর্যন্ত পৌছে দিন। প্রিয়নবী হযরত  মোহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের এই দোয়ার থেকে আমরা বুঝতে পারি যে, ঈমানদারের জীবনে মাহে রমজানের গুরুত্ব কত অপরিসীম। কিন্তু বর্তমানে আমাদের দেশে রমজানের আগমন প্রস্তুতি সম্পর্কে মানুষের ধ্যান-ধারণা পাল্টে গেছে। আমাদের দেশে রমজান মাসের প্রস্তুতি হিসেবে খাদ্যদ্রবের সংকট দেখা দেয়। বাইরের দেশ থেকে খাদ্যদ্রব উচ্চদামে আমদানি করতে হয়। আমরা এ মাসকে ভালো খাবার-দাবার, পান-পানীয়, মিষ্টি-মিষ্টান্নের মৌসুমে পরিণত করছি। কিন্তু একজন মুমিন রমজান মাসের তাৎপর্য সম্পর্কে সচেতন, সে রজব মাস থেকেই রমজানের প্রস্তুতি শুরু করে নবীজির তরিকায়।

রমজান মাস সহানুভূতির মাস। এ মাসে সাওম পালনের মাধ্যমে পারস্পরিক সহানুভূতি ও সহমর্মিতা সৃষ্টি হয়। সাওম পালনের মাধ্যমে ব্যক্তি একজন অনাহারির ক্ষুধার জ্বালা সহজে  বুঝতে পারে। ক্ষুধা ও পিপাসার যন্ত্রণা যে কীরূপ পীড়াদায়ক হতে পারে তা সে উপলব্ধি করতে পারে। এতে মানুষের মনে অসহায় নিরন্ন মানুষের প্রতি সহানুভূতি ও সহমর্মিতা ভাব জাগ্রত হয়। এছাড়া সাওমের সামাজিক অনেক গুরুত্ব রয়েছে। সাত্তম পালনকারী ব্যক্তি অন্যায়-অশ্লীল কথাবার্তা পরিহার করে চলে। বিভিন্ন হানাহানি থেকে দূরে থাকে। ফলে সমাজে শান্তি প্রতিষ্ঠিত হয়। এছাড়া সাওম পালনকারী ব্যক্তি অধিক সাওয়াব পাওয়ার আশায় একে অপরকে সেহরি-ইফতার করায় এবং অভাবীকে আর্থিকভাবে সহযোগিতা করে। এতে পরস্পরের মধ্যে ভ্রাতৃত্ববোধ সৃষ্টি হয় এবং সামাজিক বন্ধন আরো মজবুত ও শক্তিশালী হয়।

রমজান মাসের এমন কিছু নিজস্ব বৈশিষ্ট্য আছে, যা অন্য মাসগুলোর মধ্যে নেই। যার মধ্যে অন্যতম একটি বৈশিষ্ট্য হচ্ছে এ মাসে মহাগ্রন্থ আল-কোরআন নাজিল হয়েছে। যা বিশ্ব মানবতার জন্য নিয়ামতস্বরূপ। এ প্রসঙ্গে আল্লাহতয়ালা বলেন, ‘রমজান ওই মাস, যে মাসে আল-কুরআন নাযিল করা হয়েছে, যা মানবজাতির জন্য হেদায়েত স্বরূপ  এবং সত্য-মিথ্যার মধ্যে পার্থককারী।’ (সুরা বাকারা, আয়াত-১৮৫) এছাড়াও রমজান মাসের আরো কিছু বৈশিষ্ট্য হচ্ছে-জাহান্নামের দরজা বন্ধ করে দেওয়া হয়। জান্নাতের দরজা খুলে দেওয়া হয়। রমজান মাসে লাইলাতুল কদর রয়েছে, যা হাজার মাসের অপেক্ষায় উত্তম। এ মাসে আল্লাহ মানুষের দোয়া সহজে কবুল করেন। সৎ কাজের প্রতিদান বহুগুণ বাড়িয়ে দেন।

পরিশেষে বলবো, রমজান মাস ইবাদতের বসন্ত মাস। এ মাসে প্রিয় নবী হযরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বেশি বেশি দান করতেন এবং পূর্বের গুনাহের জন্য আল্লাহর নিকট তওবা করার সাহাবিদের আদেশ করতেন। তাই আমাদেরও কর্তব্য তার সুন্নাহ অনুসরণ করে রমজানের হক আদায় করা এবং বেশি বেশি নফল ইবাদত করা ও তওবা করা। আল্লাহতায়ালা সবাইকে সুস্থ স্বাভাবিকভাবে সঠিক নিয়ম মেনে রমজান মাসের সবগুলো রোজা রাখার তাওফিক দান করুন। আমিন।

লেখক : শিক্ষার্থী, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়
সদস্য, বাংলাদেশ তরুণ কলাম লেখক ফোরাম, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়

 

Wordbridge School
Link copied!