• ঢাকা
  • বৃহস্পতিবার, ২৮ মার্চ, ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

স্মৃতি লোপ পাচ্ছে খালেদার!


নিজস্ব প্রতিবেদক অক্টোবর ২৮, ২০২০, ০৯:৩৫ পিএম
স্মৃতি লোপ পাচ্ছে খালেদার!

ঢাকা : গত কয়েক দিন ধরেই বেগম খালেদা জিয়ার ব্যক্তিগত চিকিৎসকরা লক্ষ্য করছেন, বেগম খালেদা জিয়া কিছু মনে রাখতে পারছেন না। তার স্মৃতিভ্রম হচ্ছে এবং অনেক কিছুই তিনি মনে করতে পারছেন না। চিকিৎসা বিজ্ঞানের পরিভাষায় এটাকে বলে ডিমেনশিয়া।

একজন চিকিৎসক বলেছেন, বার্ধক্যজনিত কারণে, উচ্চ রক্তচাপ এবং ডায়বেটিজ হলে এই ধরণের ডিমেনশিয়া হয়। ডিমেনশিয়া হলে একজন রোগী তার অতীত কর্মকাণ্ডগুলো ভুলতে থাকে এবং আস্তে আস্তে তিনি নিজের পরিচিতজনদের লোকজনকে চিনতে পারেন না। কিছুক্ষণ আগে ঘটে যাওয়া ঘটনাটাও মনে রাখতে পারেন না।

তবে বেগম খালেদা জিয়ার চিকিৎসার দায়িত্ব পালন করছেন এই রকম একজন জানিয়েছেন, বেগম খালেদা জিয়ার যে স্মৃতিভ্রম তা একেবারে প্রাথমিক পর্যায়ে আছে। তিনি বড় ধরনের ডিমেনশিয়া রোগী তা বলা যাবে না। তবে এখনই এটির চিকিৎসা প্রয়োজন চিকিৎসা না করা এটি আস্তে আস্তে বাড়তে থাকবে।

চিকিৎসকরা মনে করছেন যে, বেগম খালেদা জিয়ার দীর্ঘদিনের কারাভোগ, বয়স বৃদ্ধি এবং মানসিক অবসাদের কারণেই ডিমেনশিয়া বা স্মৃতি লোপ হতে পারে।

উল্লেখ্য যে, বেগম খালেদা জিয়া ২০১৮ সালের ৭ ফেব্রুয়ারি জিয়া অরফানেজ ট্রাষ্ট দুর্নীতি মামলায় দণ্ডিত হয়ে কারাগারে যান। এরপর দীর্ঘ ২৫ মাস তিনি কারাভোগ করে ছিলেন। কারা অন্তরীণ থাকা অবস্থায় বেগম খালেদা জিয়ার শারীরিক অবস্থার কিছুটা অবনতি হয়েছিলো।

অবশ্য বেগম খালেদা জিয়ার চিকিৎসা কাজে নিয়োজিতরা বলছেন যে, বেগম খালেদা জিয়ার চারটি রোগ দীর্ঘদিনের পুরনো ছিলো। ১৯৯২ সাল থেকেই তিনি আথ্রাইটিস এর ব্যাথায় ভুগছিলেন। তার উচ্চ রক্তচাপ ধরা পড়েছিলো ১৯৯৭ সাল থেকে। আর ২০০০ সাল থেকে তিনি ডায়াবেটিসে এ ভুগছিলেন।

একজন চিকিৎসক বলেছেন, খালেদা জিয়ার অতিরিক্ত ওজনের কারণে এবং খাদ্যা ভাসের কারণে তার ডায়াবেটিসের প্রকোপ বাড়তে থাকে। আর কারাগারে যাওয়ার পর এই সমস্ত রোগগুলোই আস্তে আস্তে দানা বেঁধে উঠতে থাকে।

গত ২৫ শে মার্চ বেগম খালেদা জিয়াকে সরকারের বিশেষ বিবেচনায় জামিন দেয়া হয়। জামিন পাওয়ার পর তিনি তার গুলশানের ফিরোজা বাসভবনে রয়েছেন। সেখানে তার ব্যক্তিগত চিকিৎসকরা তাকে চিকিৎসা দিচ্ছেন।

চিকিসকরা বলছেন, জামিন নেয়ার পর বেগম খালেদা জিয়া মানসিকভাবে অনেকটাই সুস্থ রয়েছেন। তার ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণের মধ্যে না এলেও আগের চেয়ে কম রয়েছে। কিন্তু হাঁটুর ব্যাথা এবং বাম হাতের ব্যাথা অপরিবর্তিত রয়েছে।

সারা বিশ্বে করোনা পরিস্থিতির কারণে বেগম খালেদা জিয়াকে বিদেশে উন্নত চিকিৎসার জন্য নিয়ে যাওয়ার জন্য কোন আবেদন বেগম জিয়ার পরিবারের পক্ষ থেকে করা হয়নি। তবে গত কয়েকদিন ধরে লক্ষ্য করা যাচ্ছে, বেগম খালেদা জিয়ার মধ্যে স্মৃতি লোপ পাচ্ছে। যখন তাকে ওষুধ খেয়েছেন কিনা জিজ্ঞেস করা হচ্ছে তিনি মনে করতে পারছেন না। তাকে যখন নিকট অতীতের প্রশ্ন করা হচ্ছে সেই প্রশ্নগুলোর উত্তর তিনি প্রথম দফাতে মনে করতে পারছেন না।

ডিমেনশিয়া একটি পার্শ্বরোগ হিসেবে চিকিৎসা শাস্ত্রে বলা হয়, সাধারণত বার্ধক্য জনিত কারণে স্মৃতিভ্রম হতে থাকে। আর এটির সুনিদিষ্ট কোন চিকিৎসা নেই বলে চিকিৎসকরা মনে করছেন। চিকিৎসকরা বলছেন মানসিকভাবে উদীপ্ত থাকা, আনন্দ, ফূর্তির মধ্যে থাকা এবং চিন্তামুক্ত জীবনযাপন করে মানুষ তার স্মৃতিভ্রম রোগকে কাটাতে পারে।

তবে চিকিৎসকরা বলছেন, তারা এখনই এজন্য কোন চিকিৎসা দিতে রাজি নন। এ বিষয়টি তারা আরও কিছুদিন দেখতে চান। আসলে এটি সত্যিকারের ডিমেনশিয়া নাকি মানসিক অবসাদের কারণে, ক্লান্তির কারণে তিনি মনে করতে পারছেন না।

একজন চিকিৎসক বলেছেন, অনেক সময় মানুষ অতিরিক্ত চাপের মধ্যে থাকলে কিছু কিছু বিষয় ভুলে যায় আবার মনে পরে। এটি সে রকম কি না- সেটিও তারা দেখতে চাচ্ছে। তবে বেগম খালেদা জিয়া যে, কারাগারের বাইরে এসে আগের চেয়ে ভালো আছেন- এ ব্যাপারে সকল চিকিৎসকই একমত।

সোনালীনিউজ/এমটিআই

Wordbridge School
Link copied!