• ঢাকা
  • মঙ্গলবার, ১১ নভেম্বর, ২০২৫, ২৫ কার্তিক ১৪৩২
SonaliNews

গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকার অনুমোদিত নিউজ পোর্টাল

পুরান ঢাকায় মেয়েদের মেসজীবন

নিরাপত্তাহীনতা আর নোংরা পরিবেশে দিন কাটে শিক্ষার্থীদের


মো. ওবাইদুল হক, কবি নজরুল কলেজ প্রতিনিধি নভেম্বর ৩, ২০২৫, ০২:৪৬ পিএম
নিরাপত্তাহীনতা আর নোংরা পরিবেশে দিন কাটে শিক্ষার্থীদের

ছবি: প্রতিনিধি

ঢাকা: পুরান ঢাকার ঘিঞ্জি গলির ভেতর ছাত্রীদের মেসগুলোর বেশির ভাগই যেন অব্যবস্থাপনার এক ভয়ংকর চিত্র। নিরাপত্তাহীনতা, অস্বাস্থ্যকর পরিবেশ, অতিরিক্ত ভাড়া, পানি ও বিদ্যুৎ সংকট—এসব সমস্যা মিলেমিশে নারী শিক্ষার্থীদের জীবন করে তুলেছে দুর্বিষহ।

সন্ধ্যার পর একা বাইরে যাওয়া দূরের কথা, ভাবতেও ভয় লাগে—এমন বাস্তবতায় দিন কাটাচ্ছেন অনেক শিক্ষার্থী। অধিকাংশ মেসে দারোয়ান বা কর্মচারী নেই, ফলে বাহিরের লোকজন সহজেই প্রবেশ করে চুরি, ছিনতাই, এমনকি ইভটিজিংয়ের ঘটনাও ঘটে।

এলাকার অন্যতম বড় সমস্যা বিশুদ্ধ পানির অভাব। অনেক মেসেই পানি ফিল্টার নেই। নোংরা পানি খেয়ে অসুস্থ হয়ে পড়ছেন শিক্ষার্থীরা। নিরাপত্তা, বিশুদ্ধ পানি ও গ্যাস সরবরাহ-সব ক্ষেত্রেই রয়েছে চরম ঘাটতি।

কবি নজরুল কলেজের প্রথম বর্ষের শিক্ষার্থী আয়েশা সিদ্দিকা বলেন, ‘আমার বাড়ি বরগুনা। ঢাকায় এসে কবি নজরুল সরকারি কলেজে ভর্তি হয়েছি, কিন্তু কলেজে ছাত্রীদের জন্য কোনো হল নেই। তাই বাধ্য হয়ে মেসে থাকতে হচ্ছে। ঘর ছোট অথচ ভাড়া অনেক বেশি। বাথরুম আর রান্নাঘর শেয়ার করতে হয় ১০–১২ জনের সঙ্গে। পানি আসে না ঠিকমতো। এমন পরিবেশে মনোযোগ দিয়ে পড়াশোনা করা যায় না। আমি চাই, কলেজ প্রশাসন দ্রুত এ বিষয়ে কার্যকর পদক্ষেপ নিক।’

জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী সুমাইয়া জামান বলেন, ‘জগন্নাথে ভর্তি হওয়া যতটা কঠিন, পুরান ঢাকায় মেয়েদের জন্য একটা ভালো মেস পাওয়া তার চেয়েও কঠিন। একই রুমে ৩–৪ জন গাদাগাদি করে থাকতে হয়, পর্যাপ্ত আলো-বাতাস নেই। শৌচাগার আর রান্নাঘরের অবস্থাও করুণ। অনেক সময় মেস মালিকদের কাছ থেকেও সহযোগিতা পাই না। রাতে বিদ্যুৎ বা পানির সমস্যা হলে জানানোর সুযোগ থাকে না। পড়াশোনার মূল্যবান সময় প্রতিদিন নষ্ট হচ্ছে এসব ঝামেলায়।’

তিনি আরও বলেন, “বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন যেন দ্রুত আবাসন সংকট সমাধানে উদ্যোগ নেয়, যাতে আমরা নিরাপদ পরিবেশে পড়াশোনা চালিয়ে যেতে পারি।”

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক শিক্ষার্থী বলেন, ‘অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে গাদাগাদি করে থাকতে হয়। পুরান ঢাকার বাসাগুলো ছোট, অথচ মেস মালিকরা এক রুমে অনেক জনকে রাখে। বিশুদ্ধ পানির কোনো ব্যবস্থা নেই। ফলে নানা রোগে আক্রান্ত হই। ভাড়া আকাশছোঁয়া, কিন্তু সুযোগ-সুবিধা প্রায় নেই বললেই চলে। নিরাপত্তাও নেই। গলিতে বা ভবনে কোনো দারোয়ান থাকে না। আমরা চাই, প্রশাসন দ্রুত এসব সমস্যা সমাধান করুক।’

জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের দর্শন বিভাগের চতুর্থ বর্ষের শিক্ষার্থী রিয়া আক্তার বলেন, ‘পুরান ঢাকার মেসে থাকা মানে প্রতিদিন এক যুদ্ধ। এখানে নিরাপদ পরিবেশের অভাব তীব্রভাবে টের পাওয়া যায়। জবিতে মাত্র একটি ছাত্রী হল আছে, যেখানে আসনসংখ্যা খুব সীমিত। তাই দূরদূরান্ত থেকে আসা মেয়েরা বাধ্য হয়েই অনিরাপদ, অস্বাস্থ্যকর মেসে থাকে।

মেস ভাড়া ও খাবারের খরচ অস্বাভাবিকভাবে বেড়ে গেছে। টিউশনির সামান্য টাকায় আর চলা যায় না। একটা শান্ত পরিবেশে পড়াশোনা করার সুযোগ যেন স্বপ্ন হয়ে গেছে।’

শহীদ সোহরাওয়ার্দী কলেজের শিক্ষার্থী সাদিয়া আক্তার বলেন, ‘মেসে বিশুদ্ধ পানি আর গ্যাসের অভাব নিত্যদিনের বিষয়। রান্না করা যায় না ঠিকমতো, আবার অনেক সময় পানি সংকটও দেখা দেয়। ভাড়া অত্যন্ত বেশি, তবু নিরাপত্তা নেই।’

কবি নজরুল কলেজের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থী সুমাইয়া বলেন, ‘পুরান ঢাকার অনেক এলাকা ঘনবসতিপূর্ণ, নোংরা ও অস্বাস্থ্যকর। বাধ্য হয়ে সেই পরিবেশেই থাকতে হচ্ছে। প্রায়ই অসুস্থ হয়ে পড়ি, বিশেষ করে ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হই। অনেক সময় বাড়িওয়ালারা অল্প সময়ের মধ্যে বাসা ছাড়তে বলেন। ক্লাস, টিউশনির পর এসব ঝামেলায় মনোযোগ দেওয়া যায় না। নিরাপত্তার কথা ভাবারও সুযোগ থাকে না।’

এসএইচ 

Wordbridge School
Link copied!