ফাইল ছবি
আসন্ন জাতীয় নির্বাচন ঘিরে সশস্ত্র বাহিনী মাঠে থাকবে-এ বার্তা এবার আনুষ্ঠানিক। শুধু নির্বাচন নয়, নির্বাচনের পরও বিশেষ নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটের ক্ষমতা নিয়ে তারা দায়িত্ব পালন করবে। অন্তর্বর্তী সরকার সেনাবাহিনীর ক্যাপ্টেন ও তদূর্ধ্ব কমিশনপ্রাপ্ত কর্মকর্তাদের এই ক্ষমতার মেয়াদ ২০২৬ সালের ২৮ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত বাড়িয়েছে। নিরাপত্তা বাস্তবতা ও জন-আকাঙ্ক্ষা মাথায় রেখে নেওয়া সিদ্ধান্তে নির্বাচনী সহিংসতা, কেন্দ্র দখল বা ব্যালট ছিনতাই ঠেকানো সহজ হবে বলে মনে করা হচ্ছে।
গত বছরের সেপ্টেম্বরে রাজনৈতিক অস্থিরতা বাড়ায় সশস্ত্র বাহিনীকে দেওয়া হয় ম্যাজিস্ট্রেসি ক্ষমতা। এরপর ধাপে ধাপে দুই মাস করে মেয়াদ বাড়ছিল। এবার একবারে সাড়ে তিন মাসের মতো বাড়ানো হলো। সেনাবাহিনী মাঠে থাকলে নির্বাচনী কারচুপির সুযোগ কমে যাবে-এ উপলব্ধি থেকেই একটি মহল এখন বাহিনীকে বিতর্কিত করার চেষ্টা করছে। অপপ্রচার, গুজব ও বিভ্রান্তি ছড়ানোর প্রচেষ্টায় তারা আরও সক্রিয় হয়েছে।
সেনাবাহিনীর ভূমিকা এখন জাতীয় নিরাপত্তা ছাড়িয়ে দুর্যোগ উদ্ধার, অভ্যন্তরীণ স্থিতিশীলতা ও শান্তিরক্ষা পর্যন্ত বিস্তৃত। নির্বাচন সামলাতেও তাদের প্রস্তুতি জোরদার। সেনা সদর জানিয়েছে, নির্বাচন হলে দেশের স্থিতিশীলতা আরও মজবুত হবে, আইন-শৃঙ্খলা স্বাভাবিক হয়ে আসবে, আর তারা সেনানিবাসে ফিরবে। গুজব বা বিভ্রান্তিমূলক প্রচারণায় তারা বিচলিত নয়-এই বার্তাও পরিষ্কার।
সেনাপ্রধান জেনারেল ওয়াকার-উজ-জামান সাম্প্রতিক সময়ে খুলনার জাহানাবাদ সেনানিবাস থেকে জয়পুরহাট গার্লস ক্যাডেট কলেজ পর্যন্ত বিভিন্ন কর্মসূচিতে বাহিনীর মনোবল জোরদার করছেন। প্রযুক্তিগত অগ্রগতি, পেশাগত দক্ষতা, ভবিষ্যৎ প্রস্তুতি-প্রতিটি বিষয়ে তিনি দৃঢ়তার সুর তুলেছেন। এতে বাহিনীর সদস্যদের আত্মবিশ্বাস আরও বেড়েছে।
এই দৃঢ়তা গুজববাজদের অসুবিধায় ফেলেছে। সাধারণ মানুষ এখন সেনাবাহিনীর ওপরি আস্থাই রাখছে। সরকারও গুজব দিয়ে নয়, সত্য দিয়ে পরিস্থিতি সামাল দিতে চাইছে। নির্বাচনকেন্দ্রিক নিরাপত্তায় সর্বোচ্চ প্রস্তুতি নিতে সেনা, নৌ ও বিমানবাহিনী প্রধানকে নির্দেশ দিয়েছেন প্রধান উপদেষ্টা। গত এক বছরে বাহিনীর সদস্যদের অবদানও তিনি স্মরণ করেছেন।
পুরো দেশ এখন নির্বাচনমুখী। জুলাই-আগস্টের অভ্যুত্থানের পর থেকেই দ্রুত নির্বাচনের প্রয়োজনীয়তার কথা বলছে সেনাবাহিনী। নির্বাচনী ট্রেন ট্র্যাকে উঠতেই একটি মহলের অস্বস্তি বেড়েছে। তারা সশস্ত্র বাহিনীর মনোবল দুর্বল করার চেষ্টা করছে। বিদেশি কিছু গণমাধ্যমও একই তৎপরতায় জড়িত।
বাংলাদেশের রাজনৈতিক ইতিহাসে সুষ্ঠু নির্বাচনে সেনাবাহিনীর উপস্থিতি বারবার আস্থা জুগিয়েছে। নির্বাচন কমিশন এবার আবারও আইন প্রয়োগকারী সংস্থার সংজ্ঞায় সশস্ত্র বাহিনীকে অন্তর্ভুক্ত করেছে-যা ভোটারদের মধ্যে নতুন আশা তৈরি করেছে।
২০১৪, ২০১৮ ও ২০২৪ সালের বিতর্কিত নির্বাচনের পর জাতি এবার সৎ, শান্তিপূর্ণ একটি নির্বাচনের অপেক্ষায়। ফেব্রুয়ারিতে ভোট হলে রোজার আগেই নতুন সরকারকে ক্ষমতা হস্তান্তরের প্রস্তুতি নিচ্ছে অন্তর্বর্তী সরকার। সুষ্ঠু নির্বাচন আয়োজনের পূর্বশর্ত আইন-শৃঙ্খলার স্বাভাবিকতা। এর জন্য মাঠে থাকা সশস্ত্র বাহিনীর বাড়তি দায়িত্ব ভোটারদের মধ্যে আস্থা ফিরিয়ে আনছে।
এসএইচ







































