• ঢাকা
  • শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল, ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১
মায়ের পক্ষে আদালতের রায়

জাপান যেতে পারবে দুই মেয়ে?


লাইজুল ইসলাম জানুয়ারি ২৯, ২০২৩, ০৯:০২ পিএম
জাপান যেতে পারবে দুই মেয়ে?

দুই মেয়ের সঙ্গে জাপানের নাগরিক চিকিৎসক নাকানো এরিকো। সংগৃহীত ছবি:

ঢাকা: জাপানের নাগরিক চিকিৎসক নাকানো এরিকোর কাছেই তার দুই মেয়ে থাকবেন বলে রায় দিয়েছেন ঢাকার দ্বিতীয় অতিরিক্ত সহকারী জজ ও পারিবারিক আদালতের বিচারক দুরদানা রহমান। এতে কোনো সমস্যা দেখছেন না নিম্ন ও উচ্চ আদালতের আইনজীবীরা। কিন্তু সমস্যা আরেকটি স্থানে লক্ষ করেছেন তাঁরা। তারা বলছেন, রায়ে শুধু বলা হয়েছে দুই মেয়ে তাদের মায়ের কাছে থাকবেন। কিন্তু দুই মেয়ে নিয়ে জাপানি এই নাগরিক বাংলাদেশে থাকবেন নাকি জাপানে চলে যাবেন সেটা স্পষ্ট করা হয়নি। এতেই আরো আইনি জটিলতা সৃষ্টি হবে। ধোঁয়াশা তৈরি হয়েছে দুই শিশুর জাপানে ফেরত যাওয়া নিয়ে। 

বাংলাদেশি বাবা ও জাপানি মায়ের সেই দুই শিশুকে মা নাকানো এরিকোর জিম্মায় রাখার আদেশ দিয়েছেন আদালত। রোববার (২৯ জানুয়ারি) ঢাকার দ্বিতীয় অতিরিক্ত সহকারী জজ ও পারিবারিক আদালতের বিচারক এ রায় ঘোষণা করেন।

জাপানি মা নাকানো এরিকোর আইনজীবী শিশির মনির বিষয়টি নিশ্চিত করে বলেন, বাংলাদেশি বাবা প্রকৌশলী ইমরান শরীফ দুই সন্তান নিজ হেফাজতে রাখার যে মামলা করেছেন তা খারিজ করে দিয়েছেন আদালত। ফলে দুই শিশু মায়ের কাছেই থাকছে।

এখানেই প্রধান সমস্যা শুরু হয়েছে। ইতোমধ্যে আরো একটি মামলা আদালতে চলমান আছে। যে মামলা দায়ের করেছিলেন ইমরান শরীফ। গত বছর ২৩ ডিসেম্বর জাপানি চিকিৎসক তার দুই সন্তানসহ জাপানে যাওয়ার সময় হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর কর্তৃপক্ষ তাদের ফিরিয়ে দেয়। এসময় ইমরান শরীফ সেখানে উপস্থিত ছিলেন। তিনি গণমাধ্যমকে বলেন, আদালত বাচ্চাদের জিম্মায় রাখতে বললেও বিদেশ যাওয়ার আদেশ দেয়নি। নাকানো এরিকো মেয়েদের আদালতের আদেশ অমান্য করে বিদেশে নিয়ে যেতে চাইছেন। এই ঘটনায় একটি মামলা দায়ের করা হয়। যেটা এখন তদন্ত করছে পিবিআই। 

নিম্ন আদালতের আইনজীবী জলিল উজ্জল সোনালীনিউজকে বলেন, নিম্ন আদালতের এই রায়ে শুধু বলা হয়েছে মায়ের কাছে দুই সন্তান থাকবে। কিন্তু এখানে বলা হয়নি মেয়েদের নিয়ে নাকানো এরিকো বিদেশ যেতে পারবেন কি না? এই বিষয়টি নিয়ে আরো একটা ঝামেলা আছে। যেটা ইতোমধ্যে ঘটেছে। তাই রায় নিয়ে দুই পক্ষের আরো আইনি লড়াই হবে বলে মনে হচ্ছে।
 
তিনি আরো বলেন, এই রায়ের পর বোঝাই যাচ্ছে ইমরান শরীফ উচ্চ আদালতে যাবেন। সেখানে হাইকোর্ট ও সুপ্রিম কোর্ট আছে। এই দুই আদালতে বিষয়টি নিয়ে আরো শুনানী হবে। সেখানে হয়তো দুই মেয়েকে জাপান নিয়ে যাওয়ার বিষয়ে একটি রায় আসতে পারে। তবে এখন এটা বলা যায় সহসাই দুই মেয়ে নিয়ে আদালতে ইমরান শরীফ ও নাকানো এরিকোর লড়াই শেষ হচ্ছে না। 

এদিকে নিম্ন আদালতের আরেক আইনজীবী ফারুক আহমেদ সোনালীনিউজকে বলেন, দুই মেয়েকে বিদেশ নিয়ে যাওয়া নিয়ে একটি মামলা চলমান আছে। তাই হয়তো ওই বিষয়টি আদালত এখানে টানেননি। অথবা পূর্ণাঙ্গ রায়ে হয়তো দুই মেয়েকে বিদেশ নিয়ে যাওয়ার বিষয়ে কিছু বলতে পারেন আদালত। তবে এটা বোঝা যাচ্ছে এত সহজে জাপান নেয়া যাবে না দুই মেয়েকে।

জাপানি চিকিৎসক নাকানো এরিকোর সঙ্গে বাংলাদেশি প্রকৌশলী ইমরান শরীফের বিয়ে হয় ২০০৮ সালে। দাম্পত্য কলহের জেরে ২০২০ সালের শুরুতে বিচ্ছেদের আবেদন করেন এরিকো। এরপর ইমরান স্কুল পড়ুয়া বড় দুই মেয়েকে নিয়ে বাংলাদেশে চলে আসেন। ছোট মেয়ে জাপানে এরিকোর সঙ্গে থেকে যান।

মেয়েদের জিম্মা পেতে করোনাভাইরাস মহামারির মধ্যে গত বছরের জুলাইয়ে বাংলাদেশে আসেন এ জাপানি নারী। তিনি হাইকোর্টে রিট আবেদন করলে তাদের সমঝোতায় আসতে বলেন বিচারক। তবে ওই দম্পতি সমঝোতায় না আসায় কয়েক মাস ধরে শুনানির পর হাইকোর্ট দুই সন্তানকে বাবার হেফাজতে রাখার সিদ্ধান্ত দেন। পাশাপাশি মা যাতে সন্তানদের সঙ্গে দেখা করতে পারেন, তা নিশ্চিত করতে বাবাকে খরচ দিতে বলা হয়।

হাইকোর্টের ওই রায়ের বিরুদ্ধে আপিল বিভাগে আবেদন করেন শিশুদের মা। পরে আপিল বিভাগ এক আদেশে শিশু দুটিকে মায়ের জিম্মায় রাখার নির্দেশ দিলেও বাবা সেটা না মানায় বিচারকরা উষ্মা প্রকাশ করেন। পরে আদালত শিশু দুটিকে বাবার হেফাজত থেকে এনে তাদের সঙ্গে কথা বলে এবং পরে মায়ের হেফাজতে দেওয়ার আদেশ দেন।

এরপর গত বছর ১৩ ফেব্রুয়ারি দুই মেয়ে কার জিম্মায় থাকবে, তার নিষ্পত্তি পারিবারিক আদালতে হবে এবং তার আগ পর্যন্ত দুই শিশু তাদের মায়ের কাছেই থাকবে বলে সিদ্ধান্ত দেন আপিল বিভাগ। এরপর আপিল বিভাগ থেকে মামলাটি পারিবারিক আদালতে আসে।

এদিকে, গত ২৩ ডিসেম্বর রাতে দুই সন্তান নিয়ে জাপানে যাওয়ার জন্য ঢাকার হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে যান এরিকো নাকানো। আদালতের নির্দেশনা অমান্য করে সন্তানদের নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করায় তাকে বিমানবন্দর থেকে পুলিশ ফিরিয়ে দেয়।

এ ঘটনায় ২৯ ডিসেম্বর বাবা ইমরান শরিফ ঢাকা মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আরাফাতুল রাকিবের আদালতে মামলা করেন। আদালত বাদীর জবানবন্দি গ্রহণ করে পিবিআইকে তদন্ত করে প্রতিবেদন দাখিলের নির্দেশ দেন।

সোনালীনিউজ/আইএ

Wordbridge School
Link copied!