• ঢাকা
  • সোমবার, ১৫ ডিসেম্বর, ২০২৫, ৩০ অগ্রহায়ণ ১৪৩২
SonaliNews

গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকার অনুমোদিত নিউজ পোর্টাল

ব্যাংকাসুরেন্স বীমা খাতে প্রতিযোগিতা বাড়িয়ে গ্রাহকসেবার মান উন্নত করবে: এস এম নুরুজ্জামান


নিজস্ব প্রতিবেদক ডিসেম্বর ১৫, ২০২৫, ১২:৫৪ পিএম
ব্যাংকাসুরেন্স বীমা খাতে প্রতিযোগিতা বাড়িয়ে গ্রাহকসেবার মান উন্নত করবে: এস এম নুরুজ্জামান

ছবি: সোনালীনিউজ

ঢাকা: ব্যাংকাসুরেন্স বাংলাদেশে একটি বিশাল নতুন সম্ভাবনা, যা ব্যাংক ও বীমা খাতের সমন্বয়ে গ্রাহকদের বীমা সেবা সহজে পেতে এবং ব্যাংকগুলোর জন্য কমিশন ও মুনাফা বাড়াতে সাহায্য করবে; এর মাধ্যমে ডিজিটাল চ্যানেল (এমএফএস, ডিজিটাল ব্যাংকিং) ব্যবহার করে নতুন বীমা পণ্য ডিজাইন ও বিতরণ করা সম্ভব, যা গ্রাহকের আস্থা বাড়াবে এবং বীমা খাতকে নতুন উচ্চতায় নিয়ে যাবে, যদিও এর সুষ্ঠু বাস্তবায়ন এবং লোভ নিয়ন্ত্রণ জরুরি। 

ব্যাংকাসুরেন্স বাংলাদেশে বীমা খাতে ইতিবাচক প্রভাব সৃষ্টি করছে। ব্যাংককে এজেন্ট হিসেবে ব্যবহার করে বীমা পণ্য সরাসরি গ্রাহকের কাছে পৌঁছে দেওয়া হচ্ছে, যা বিক্রয় বৃদ্ধি, গ্রাহকের আস্থা এবং খাতের প্রতিযোগিতাকে আরও শক্তিশালী করছে। দেশের অর্থনীতিতে ব্যাংকাসুরেন্সের অবদানও উল্লেখযোগ্য হতে পারে। ব্যাংকাসুরেন্স সংক্রান্ত নানান দিক নিয়ে বিস্তারিত জানিয়েছেন জেনিথ ইসলামী লাইফের নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) ও বাংলাদেশ ইনস্যুরেন্স ফোরামের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক এস এম নুরুজ্জামান। সাক্ষাৎকারটি লিখেছেন সোনালী নিউজের স্টাফ রিপোর্টার আবদুল হাকিম।

সোনালী নিউজ: বাংলাদেশে নতুন ব্যাংকাসুরেন্স, নতুন এই উদ্যোগ নিয়ে কেমন সম্ভাবনা দেখছেন? 

এস এম নুরুজ্জামান: ব্যাংকাসুরেন্স বীমা খাতে একটি বিশাল ইতিবাচক প্রভাব ফেলবে। এটি বীমা পণ্যের বিক্রয় বৃদ্ধি করবে, নতুন গ্রাহক তৈরি করবে এবং এ খাতে প্রতিযোগিতা বাড়িয়ে গ্রাহকসেবার মান উন্নত করবে। সঠিক বাস্তবায়ন হলে এটি বীমা খাতের আস্থা বাড়াবে এবং দেশের অর্থনীতিতে বীমার অবদান বৃদ্ধিতে সহায়তা করবে।

সোনালী নিউজ: বিশ্বের বিভিন্ন দেশে ব্যাংকাসুরেন্সের জনপ্রিয়তা ব্যাপক। বাংলাদেশে কেমন ভূমিকা রাখতে পারবে ব্যাংকাসুরেন্স?

এস এম নুরুজ্জামান: যে কোন নতুন উদ্যোগ বাস্তবায়ন বা জনপ্রিয় করতে কিছুটা সময়ের প্রয়োজন হয়। আপনি যদি দেখেন ফ্রান্স ১৯৭০-এর দশকে প্রথম ব্যাংকাসুরেন্স চালু করে। পরে স্পেনসহ অন্যান্য দেশে এটি জনপ্রিয় হয়। ভারত সরকার ২০০০ সালে ব্যাংকাসুরেন্স প্রবর্তন করে। বাংলাদেশে ২০২৩ সালের ডিসেম্বর মাসে আনুষ্ঠানিকভাবে ব্যাংকাসুরেন্স চালু হয়। বাংলাদেশে প্রবর্তনের ফলে ব্যাংকে তারল্য প্রবাহ বৃদ্ধি পাবে, বীমা কোম্পানির ব্যয় সাশ্রয় হবে, দুই খাতের চুক্তিবদ্ধ কোম্পানির ব্যবসা বৃদ্ধি পাবে, গ্রাহকের আস্থা বৃদ্ধি পাবে, কারণ ব্যাংককে প্রতিষ্ঠান হিসেবে বেশি নির্ভরযোগ্য মনে করা হয়। ধীরে ধীরে এর প্রচার ও প্রসার বাড়ার সাথে সাথে ব্যপ্তিও বাড়বে। এতে করে দেশের এর একটা জনপ্রিয়তা তৈরি হবে-মানুষও আকৃষ্ট হবে।

সোনালী নিউজ: ব্যাংকাসুরেন্সের অবদান কিভাবে মূল্যায়ন করবেন, ব্যাংকাসুরেন্সে সবচেয়ে জনপ্রিয় পণ্যগুলো কী কী?

এস এম নুরুজ্জামান: গ্রাহকের আস্থা বেড়েছে। প্রথাগত পদ্ধতিতে ৫০ বছর ধরে এজেন্ট বা দালালদের মাধ্যমে পলিসি বিক্রি হতো। এতে কখনও টাকা সঠিকভাবে জমা হতো না। ব্যাংকাসুরেন্স চালু হওয়ার পর গ্রাহক তার প্রাপ্য টাকা থেকে বঞ্চিত হবেন না। তাই এটি একটি ভালো উদ্যোগ। এতে সবচেয়ে জনপ্রিয় প্রডাক্টগুলো হলো: তিন কিস্তি বীমা, চার কিস্তি বীমা, পাঁচ কিস্তি বীমা, পেনশন বীমা, শিশু নিরাপত্তা বীমা, স্বাস্থ্য বীমা, দুর্ঘটনা বীমা, দেনমোহর বীমা, শিক্ষা বীমা, হজ্ব বীমা।

সোনালী নিউজ: কোন ব্যাংক ও বীমার মাধ্যমে বেশি পলিসি বিক্রি হচ্ছে?

এস এম নুরুজ্জামান: স্বাধীনতার পর প্রথমে দুটি বীমা কোম্পানির মাধ্যমে পলিসি বিক্রি শুরু হয়। বর্তমানে ৩৬টি লাইফ ইন্স্যুরেন্স কোম্পানি বীমা পরিষেবা দিচ্ছে। ব্যাংকাসুরেন্স এখনো নতুন, তাই এখনও বীমার মাধ্যমে বিক্রি বেশি। ভবিষ্যতে ব্যাংক চ্যানেলের মাধ্যমে বিক্রি বৃদ্ধি পাবে। কারণ গ্রাহক ব্যাংকের প্রতি আস্থা রাখে, এবং এটি বীমা কোম্পানির বিক্রয় খরচ কমায়। ব্যাংকাসুরেন্সে লেনদেন ব্যাংকের মাধ্যমে হওয়ায় সুশৃঙ্খল ব্যবস্থা তৈরি হয়। ব্যাংকের শাখা এবং ডিজিটাল চ্যানেলের মাধ্যমে বীমা পণ্য আরও বেশি সংখ্যক গ্রাহকের কাছে পৌঁছে।

সোনালী নিউজ: ব্যাংকাসুরেন্সে কেমন সাড়া পাচ্ছেন এবং এর প্রসারে কি পদক্ষেপ প্রয়োজন?

এস এম নুরুজ্জামান: কিছু লাইফ ইন্স্যুরেন্স কোম্পানি ইতিমধ্যে বিভিন্ন ব্যাংকের মাধ্যমে ব্যাংকাসুরেন্স চালু করেছে। ব্যাংক এজেন্ট হিসেবে কাজ করবে। ব্যাংকাসুরেন্স নতুন হওয়ায় কর্মকর্তাদের আগে প্রশিক্ষণ নেওয়া প্রয়োজন। কিছু কোম্পানি ইতিমধ্যে ৫ কোটি থেকে ১০ কোটি টাকার ব্যবসা সংগ্রহ করেছে। তবে এই কাজে প্রধান চ্যালেঞ্জগুলো হলো: ব্যাংকের আর্থিক অবস্থা, বীমা খাতে নিম্ন প্রবেশাধিকার, দক্ষ জনবলের অভাব, গ্রাহকের আস্থা অর্জনে সময়, পর্যাপ্ত প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত কর্মী নেই। সমাধানের জন্য: ব্যাংক কর্মীদের প্রশিক্ষণ, গ্রাহক সচেতনতা বৃদ্ধি, আধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহার বৃদ্ধি, ডিজিটাল প্ল্যাটফর্ম, নতুন বীমা প্রডাক্ট তৈরি, ব্যাংক কর্মীদের প্রশিক্ষণ, দক্ষ জনবল, সময়মতো বীমা দাবি পরিশোধ, নিয়ন্ত্রক সংস্থার দক্ষতা বৃদ্ধি, প্রাসঙ্গিক আইন ও নীতিমালা প্রণয়ন প্রয়োজন।

সোনালী নিউজ: গ্রাহক কিভাবে সহজে ব্যাংকাসুরেন্সের মাধ্যমে বীমা করবে? ব্যাংকাসুরেন্সের প্রধান সুবিধা কী কী?

এস এম নুরুজ্জামান: গ্রাহকের ব্যাংকে একটি অ্যাকাউন্ট থাকতে হবে। ব্যাংকের নিজস্ব চ্যানেল ব্যবহার করে সুবিধা নিতে পারবে। ব্যাংক ইন্স্যুরেন্স সুবিধাগুলো গ্রাহককে বিস্তারিত জানাতে হবে। গ্রাহকের জন্য- সহজে বীমা পণ্য প্রাপ্তি, ব্যাংকিং ও বীমা এক ছাদের নিচে, সময় ও শ্রম সাশ্রয়।

ব্যাংকের জন্য সুবিধা: কমিশন আয়, নতুন রাজস্ব উৎস, গ্রাহকের আনুগত্য বৃদ্ধি। বীমা কোম্পানির জন্য: বিপণন ও বিতরণ খরচ কমে, বড় বিক্রয় দল তৈরি করতে হয় না।

এএইচ/পিএস

Wordbridge School
Link copied!