• ঢাকা
  • শনিবার, ২০ এপ্রিল, ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১

খালি বস্তায় দারিদ্র্যতাকে জয় করেছেন তারা


আমিনুল হক বুলবুল, নান্দাইল  মার্চ ৬, ২০২৩, ১২:০৫ পিএম

নান্দাইল: অভাবের তাড়নায় ছেড়েছিলেন বাড়ি। এরপর বেশ কয়েক বছর তিনি দেশের বিভিন্ন এলাকায় কাজ করেছেন। সেখান থেকে জমানো সামান্য পুঁজি নিয়ে বাড়ি ফিরে আসেন তিনি। এরপর আর তাকে পিছনে ফিরে তাকাতে হয়নি। এখন আর তার সংসারে নেই কোনো অভাব। তার হাতে ধরা দিয়েছে আয়ের লাখ টাকার চাবি।

ময়মনসিংহের নান্দাইল উপজেলার বীরবেতাগৈর ইউনিয়নের বীরকামট খালী গ্রামের হতদরিদ্র জামাল উদ্দিনের (৪৩) অভাব ছিল নিত্য সঙ্গী। নিত্যদিন তিনি অভাবের সঙ্গে যুদ্ধ করেছেন। অবশেষে দারিদ্র্যতাকে জয় করে সফল হয়েছেন তিনি।

জামাল মাত্র ৫ হাজার টাকা পুঁজি নিয়ে সিমেন্টের খালি বস্তা থেকে বানানো ব্যাগের ব্যবসা করে এখন স্বাবলম্বী। স্ত্রী রোকেয়া বেগম তার সঙ্গে ব্যাগ তৈরি করেন। পরে এসব ব্যাগ বাজারে বিক্রি করেন। সেই ৫ হাজার টাকার ব্যবসা থেকে এখন তিনি মাসে আয় করেন ৩০ থেকে ৩২ হাজার টাকা। আর বছরে আয় প্রায় ৪ লাখ টাকা।

জানা যায়, স্ত্রী রোকেয়ার পরামর্শে ২০০৭ সালে ৫ হাজার টাকা পুঁজি নিয়ে ব্যাগ তৈরির ব্যবসা শুরু করেন জামাল উদ্দিন। দিনে দিনে তার তৈরি ব্যাগের চাহিদা বাড়তে থাকে। ফলে দ্রুত প্রসার লাভ করে ব্যাগ ব্যবসার। শুরুর দিকে তিনি স্থানীয়ভাবে সিমেন্টের খালি বস্তা সংগ্রহ করতেন। কিন্তু তাতে ব্যাগ সরবরাহে দোকানিদের (ব্যবসায়ীদের) চাহিদা মেটানো সম্ভব হতোনা। এ অবস্থায় তিনি গাজীপুরের টঙ্গি থেকে সিমেন্টের বস্তা কিনে পিকআপভ্যানে করে আনতে শুরু করেন। একটি পিকআপে তিন হাজার সিমেন্টের খালি বস্তা আনা যায়। যার মূল্যে ৪৫ হাজার টাকা।

সরেজমিন জামালের বাড়িতে গিয়ে দেখা যায়, তিনি স্ত্রীকে নিয়ে ব্যাগ বানাতে ব্যস্ত সময় পার করছেন। নিজে সিমেন্টের কাগজ দিয়ে মেশিনে ব্যাগ সেলাই করছেন। তার স্ত্রী রোকেয়া ব্যাগ তৈরি করতে বস্তা প্রস্তুত করে দিচ্ছেন।

জামাল জানান, বাড়িতে সিমেন্টের কাগজগুলো ভালোভাবে পরিষ্কার করতে হয়। বস্তার সেলাই খুলতে হয়। প্রতিটি বস্তা কাঁচি দিয়ে কেটে দুই ভাগ করা হয়। তারপর স্বামী-স্ত্রী দুইজনই ব্যাগ সেলাইয়ের কাজ করেন। 

প্রতিটি বস্তা থেকে দুটি ব্যাগ তৈরি হয়। আর আট হাজার সিমেন্টের বস্তা থেকে ১৬ হাজার ব্যাগ তৈরি করা যায়। প্রতিদিন তারা ২০০ ব্যাগ তৈরি করতে পারেন। প্রতি পিস ব্যাগ (ছোট) পাইকার বিক্রি হয় ৪ টাকা করে। আর বড় ব্যাগ বিক্রি হয় ৬ টাকায়। সাধারণত পাইকারিভাবেই তিনি ব্যাগ বিক্রি করেন।

সব খরচ বাদে এখন তার মাসিক আয় ৩০ হাজার টাকার অধিক। ব্যাগের চাহিদা অনুযায়ী প্রতি মাসে দুই থেকে তিনবার সিমেন্টের বস্তা কিনে আনতে হয় তাকে। সপ্তাহে তিনদিন তিনি নিজেই সাইকেলে করে ব্যাগ সরবরাহ করেন দোকানগুলোতে। স্থানীয় বাজারের চাহিদা মিটিয়ে তিনি গফরগাঁও, ত্রিশাল ও হোসেনপুরসহ অন্যান্য জায়গায় ব্যাগ সরবরাহ করেন।

বর্তমানে ব্যাগ বিক্রির টাকায় জামাল তার পরিবারের ছয় সদস্যের ভরণপোষণ করছেন। এ ব্যবসার দিয়ে কিনেছেন ২০ শতাংশ জমি। বন্ধক (গিরবী) নিয়েছেন আরও ৩০ শতাংশ জমি। কিনেছেন একটি গাভী। প্রতি মাসে ৩ হাজার ৬০০ টাকার দুধ বিক্রি করেন। পাশাপাশি কিনে আনা সিমেন্টের খালি বস্তা পরিষ্কার করে এর ভিতরের যে অবশিষ্ট কাগজ থাকে সেই কাগজে তাদের এক মাসের রান্নার জ্বালানি হয়ে যায়।

জামালের স্ত্রী রাকেয়া বেগম বলেন, আমার স্বামী কঠোর পরিশ্রমী। ব্যাগ তৈরির কাজে আমি তাকে সার্বিক সহযোগীতা করছি। আমার স্বামীর স্বপ্ন পূরণে এ কাজকে অনেক দুর এগিয়ে নিতে চাই।তাই সরকারী কোন সাহায্য পেলে এ ব্যবসাকে আরো বড় করতে পারতাম।

জামাল তৃপ্তির হাসি হেসে বলেন, ব্যাগ তৈরির এ পেশায় এসে কেটেছে আমার আর্থিক দৈন্যতা, সংসারে দেখা দিয়েছে সচ্ছলতা। এক সময় আমার ভিটে বাড়ি কিছুই ছিলনা। ভাইয়ের বাড়িতে থাকতে হতো। আজ আমার সব হয়েছে। এখন আমার কোনো চাওয়া-পাওয়া নেই। শুধু আমার সন্তানদের শিক্ষিত করতে পারলে নিজেকে ভাগ্যবান বলে মনে করব।

স্থানীয় ইউপি সদস্য মো.ইলিয়াস কাঞ্চন বলেন, দরিদ্র জামাল কঠোর পরিশ্রম করে দারিদ্রতা দুর করতে পেরেছে।এখন তিনি অনেক স্বাবলম্বী। সরকারী কোন সহযোগীতা পেলে জামাল ব্যবসাকে আরো বড় করতে পারবেন। এটি  অন্যদের জন্য অনুকরণীয়।

নান্দাইল উপজেলা চেয়ারম্যান হাসান মাহমুদ জুয়েল বলেন, কঠোর পরিশ্রমের মাধ্যমে ব্যাগ তৈরি করে জামাল উদ্দিন সফলতা পেয়েছেন। নিশ্চয় এটি একটি ভালো কাজ। তার কাজ দেখে অন্যরাও অনুপ্রাণিত হবেন এবং পরিবার ও সমাজের উন্নমনে ভুমিকা রাখবে বলে আমি মনে করি।

সোনালীনিউজ/এম

Wordbridge School
Link copied!