• ঢাকা
  • বুধবার, ০১ মে, ২০২৪, ১৭ বৈশাখ ১৪৩১
সাগর-রুনি হত্যাকাণ্ড

আর কোনো মামলায় এতটা সময় নেয়নি র‌্যাব


লাইজুল ইসলাম আগস্ট ৭, ২০২৩, ০৯:৪৭ পিএম
আর কোনো মামলায় এতটা সময় নেয়নি র‌্যাব

ঢাকা: আইনশৃঙ্খলা বাহিনী হিসেবে প্রতিষ্ঠার পর একটি মামলার তদন্ত প্রতিবেদন নিয়ে ধুকছে র‌্যাপিড অ্যাকশান ব্যাটালিয়ন (র‌্যাব)। তাদের দাবি এটা এতটাই গুরুত্বপূর্ণ যে সঠিক তদন্তের জন্য যুক্তরাষ্ট্রে ডিএনএ টেস্টে পাঠানো হয়েছে। ডিএনএ টেস্টের পর রিপোর্ট হাতে আসলেও কারো ডিএনএর সঙ্গে মেলাতে পারেননি বাহিনীটির তদন্ত কর্মকর্তারা। সন্দেহভাজনদের সঙ্গে ডিএনএ রিপোর্ট না মেলায় গ্রেপ্তারও করা যাচ্ছে না কাউকে। এতেই আটকে আছে বাংলাদেশের ইতিহাসে সবচেয়ে রমহর্ষক সাংবাদিক দম্পতি সাগর সারোয়ার ও মেহেরুন রুনি হত্যাকাণ্ডের তদন্ত ও বিচার। 

সর্বশেষ সোমবার (৭ আগস্ট) মামলার তদন্ত প্রতিবেদন আদালতে দাখিলের তারিখ পিছিয়ে আগামী ১১ সেপ্টেম্বর ধার্য করা হয়েছে। এ নিয়ে ১০০ বার পেছালো তদন্ত প্রতিবেদন দাখিলের সময়। র‌্যাবের একটি সূত্র জানিয়েছে, সাগর-রুনি হত্যা মামলা ছাড়া আর কোনো মামলার তদন্ত প্রতিবেদন দাখিলের জন্য এতবার সময় নেয়নি র‌্যাব। 

এ পর্যন্ত দেশে যে কয়েকজন সাংবাদিককে দুর্বৃত্তরা হত্যা করেছে তার মধ্যে সবচেয়ে রোমহর্ষক হত্যাকাণ্ড বলা যায় সাগর-রুনি হত্যাকাণ্ডকে। সময় যত বাড়ছে এই দম্পত্তিকে হত্যার বিচার পাওয়া ও আসামী গ্রেপ্তার ততটাই অনিশ্চিত হয়ে পরছে।এই অবস্থায় বলাই যায় র‌্যাবের বহু সফলতার মধ্যে এটি অপারগতার একটি সেঞ্চুরি!
 
তদন্ত প্রতিবেদন পেছানো নিয়ে সোমবার দুপুরে র‌্যাবের মিডিয়া সেন্টারে গণমাধ্যম কর্মীদের সঙ্গে কথা বলেন বাহিনীটির আইন ও গণমাধ্যম শাখার পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মঈন। 

সাগর-রুনী হত্যার তদন্ত শেষ করতে না পারা র‌্যাবের ব্যার্থতা নাকি অন্য কিছু এমন প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, তদন্ত তদন্তই। সাংবাদিক দম্পতি সাগর-রুনী হত্যার তদন্ত করতে বিজ্ঞ আদালতের আদেশে আমাদেরকে দেয়া হয়েছিলো। আমরা মনে করি যে এই তদন্ত প্রতিবেদন প্রকাশ করবো তখন যাতে কোনো ভাবেই নির্দোষ এবং নিরপরাধ ব্যক্তি ভিক্টিমাইজ না হয়। এই বিষয়টি মূলত আমলে নিয়ে আমরা তদন্ত করে যাচ্ছি। এই হত্যাকাণ্ডটি আমরা সর্বোচ্চ গুরুত্ব ও আন্তরিকতার সঙ্গে তদন্ত করছি। খুব কম হত্যাকাণ্ডের ডিএনএ টেস্টের জন্য যুক্তরাষ্ট্রে প্রেরণ করা হয়।

তিনি বলেন, সর্বোচ্চ গুরুত্ব দেয়া হয় বলেই এই হত্যার আলামত যুক্তরাষ্ট্রের একটি কোম্পানিতে পাঠানো হয়া। যাদেরকে সন্দেহ করা হয়েছে, যাদের পুলিশ ও র‌্যাব আটক করেছিলো তাদের সবার স্যাম্পল সেখানে পাঠানো হয়েছিলো। সেখান থেকে আমাদের কাছে রিপোর্ট এসেছে। 

যুক্তরাষ্ট্র থেকে পাওয়া প্রতিবেদনটি যাচাই বাছাই করা হচ্ছে জানিয়ে র‌্যাব কর্মকর্তা জানান, দুজনকে আমরা পেয়েছি। যাদেরকে আমরা এখনো শনাক্ত করতে পারিনি। যে দুটি স্যাম্পল কারো সঙ্গেই মিলেনি। আমাদের অভিজ্ঞ তদন্তকারী কর্মকর্তা এ বিষয়ে তদন্ত করে যাচ্ছে। যখনই আদালতে ডেট পরে আমরা অগ্রগতি আদালতে জমা দেই। 

কতদিন লাগতে পারে জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমরা প্রাথমিক ভাবে যুক্তরাষ্ট্র থেকে যে ডিএনএ প্রতিবেদন পেয়েছি সেখানে আমরা সম্ভাব্য অপরাধী দুজনের আলামত আমরা পেয়েছি। তবে তাদের আমরা শনাক্ত করতে পারিনি। শনাক্তের কাজই আমরা করে যাচ্ছি। আমরা যখন শনাক্ত করতে পারবো তখনই বলতে পারবো কতদিন সময় লাগবে। এখনই বলা যাচ্ছে না। ভিকটিমের পরিবার এই বিষয়ে জানে। তাদের আমরা সব কিছু বলেছি। 

এতটা সময় লাগা স্বাভাবিক, এমন প্রশ্নের উত্তরে র‌্যাব কর্মকর্তা বলেন, দেখেন এটা স্বাভাবিক অস্বাভাবিকের কোনো বিষয় না। আমাদের উদ্দেশ্য তদন্তের মাধ্যমে প্রকৃত আসামীকে খুঁজে বের  করা। কেউ যেনো এখানে ভিকটিমাইজ না হন। অনেক ক্ষেত্রে আমরা দেখেছি কেউ ইনভল্ব না হয়েও দীর্ঘদিন ধরে জেল খাটছেন। আমরা কোনো বিতর্কে জড়াতে চাচ্ছি না। এটা একটা বিষয়। আরেকটা বিষয় হচ্ছে সঠিক তদন্তের মাধ্যমে প্রকৃত আসামীকে বের করে আনতে সময় লাগে। বিশ্বে দেখা গেছে অনেক গুরুত্বপূর্ণ মামলার ক্ষেত্রে বেশি সময় লাগছে। 

তিনি বলেন, প্রকৃত অপরাধীদের গ্রেপ্তার করতেই আমাদের সময় লাগছে। কারণ ঘটনার পর আলামত সংগ্রহ করা বেশ কঠিন ছিলো। এর কারণ হত্যার পর সেখানে প্রচুর গণমাধ্যমকর্মী চলে যায়। সেখানে প্রকৃত অপরাধীর আলামত বের করা বেশ কঠিন। আমরা আনুমানিক ২৫ জনের আলামত পাঠিয়ে ছিলাম। আমরা দুজনের আলামত পেয়েছি। কিন্তু এই দুজনকে শনাক্ত করতে পারিনি। যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিষ্ঠানের পাঠানো প্রতিবেদনের মাধ্যমে এটা এখনো সুনিশ্চিত হয়নি যে এই ২৫ জনের মধ্যে কেউ খুন করেছেন।     

র‌্যাবের পক্ষ থেকে জানানো হয়, র‌্যাবে কর্মরত অভিজ্ঞ অতিরিক্ত পুলিশ সুপার খন্দকার শফিকুল আলম মামলাটি তদন্ত করছেন। ডিএনএ প্রতিবেদনে প্রাপ্ত অজ্ঞাত দুই জন আসামীকে সনাক্ত করণের জন্য অধিকতর তদন্ত ও ঘটনা উদঘাটনের চেষ্টা অব্যাহত আছে। বাদী পক্ষ চাইলে আদালতের অনুমোদন সাপেক্ষে প্রয়োজনে অন্যান্য সংস্থার মাধ্যমে তদন্তের ব্যবস্থা করতে পারেন।

উল্লেখ্য, বেসরকারি টিভি চ্যানেল মাছরাঙা’র বার্তা সম্পাদক সাগর সারওয়ার এবং তার স্ত্রী এটিএন বাংলার সিনিয়র রিপোর্টার মেহেরুন রুনিকে ২০১২ সালের ১১ ফেব্রুয়ারি ভোরে রাজধানীর পশ্চিম রাজাবাজারে তাদের ভাড়া বাসায় হত্যা করে দুর্বৃত্তরা।

সোনালীনিউজ/এলআই/আইএ

Wordbridge School
Link copied!