• ঢাকা
  • শুক্রবার, ০৫ ডিসেম্বর, ২০২৫, ২০ অগ্রহায়ণ ১৪৩২
SonaliNews

গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকার অনুমোদিত নিউজ পোর্টাল

বিসিবিকে বার্তা দিলেন শান্ত


ক্রীড়া ডেস্ক ডিসেম্বর ৩, ২০২৩, ০৪:০২ পিএম
বিসিবিকে বার্তা দিলেন শান্ত

ঢাকা: টেস্ট ও ওয়ানডেতে বাংলাদেশের পরবর্তী নিয়মিত অধিনায়ক হওয়ার অদৃশ্য কোনো লড়াই যদি থাকে বা যত আলোচনা, সব কিছুতেই সম্ভাব্য অন্যদের চেয়ে নিজের অবস্থান পোক্ত করে ফেললেন তিনি অসাধারণ এই জয়ে।

এমনিতে এই টেস্ট বা সিরিজ থেকে অধিনায়ক হিসেবে তার হারানোর কিছু ছিল না। ভারপ্রাপ্ত অধিনায়ক তিনি, তরুণ একজন। দলের বা দেশের সাম্প্রতিক অবস্থাও খুব একটা ভালো ছিল না। এই অবস্থায় যদি দল ভালো না করত বা অধিনায়ক হিসেবে তিনি ছাপ রাখতে না পারতেন, তাহলে তাকে দায় দেওয়া বা কাঠগড়ায় তোলার মতো কোনো ব্যাপার হয়তো হতো না।

তবে হারানোর না থাকলেও তার পাওয়ার ছিল অনেক কিছু। তার জন্য এটা এরকম ছিল নিজের নেতৃত্বগুণ মেলে ধরার মঞ্চ। পরবর্তী অধিনায়ক হিসেবে তার পোশাকি মহড়াও। সেই মহড়াতেই তিনি এতটা অসাধারণ পারফর্ম করলেন যে, এখন মূল দায়িত্ব পাওয়াটা কেবলই মনে হচ্ছে সময়ের ব্যাপার। যতটুকু প্রাপ্তির ছিল, পেলেন তিনি সবটুকুই।

টস ভাগ্যকে পাশে পেয়ে টেস্ট অধিনায়ক হিসেবে তার পথচলা শুরু। তবে প্রথম দিনটি ব্যাট হাতে তার ভালো কাটেনি। তিন নম্বরে ব্যাটিংয়ে নেমে বেশ আগ্রাসী ব্যাটিং করতে থাকেন। শেষ পর্যন্ত ফুল টস বলে দৃষ্টিকটূ এক শটে আউট হয়ে ফেরেন ৩৬ রানে। অধিনায়কের কাছ থেকে প্রত্যাশা থাকে দায়িত্বশীল ব্যাটিং, শান্তর আউটে ছিল দায়িত্বজ্ঞানহীনতার ছাপ।

তবে মুগ্ধতা ছড়ানোর শুরু দ্বিতীয় দিন থেকে, যখন তার নেতৃত্বের অন-ফিল্ড পরীক্ষার শুরু। বোলিং পরিবর্তনগুলোয় তাকে দেখা গেল নিখুঁত। দ্বিতীয় দিনে তার চারটি বোলিং পরিবর্তনে প্রথম ওভারেই ধরা দেয় উইকেট।

পার্ট টাইম স্পিনার মুমিনুল হককেও যেভাবে তিনি ব্যবহার করেছেন, তা ছিল দেখার মতো। দ্বিতীয় দিনে মুমিনুলের প্রথম ওভারেই গ্লেন ফিলিপসের বিদায়ে নিউ জিল্যান্ডের সবচেয়ে বড় জুটি ভেঙেছে। পরদিন কাইল জেমিসন ও টিম সাউদির জুটি এক ঘণ্টা কাটিয়ে দেন নির্বিঘ্নে। পানি পানের বিরতির পরই শান্ত আক্রমণে আনেন মুমিনুলকে। এবার তার প্রথম ওভারেই আসে দুটি উইকেট!

মুমিনুল দিনের খেলা শেষে জানান, বাইরে থেকে পাওয়া নির্দেশনায় নয়, শান্তর তাৎক্ষনিক সিদ্ধান্তেই পরিবর্তনগুলো হয়েছে।

ফিল্ডিং সাজানোতেও শান্ত বেশির ভাগ সময় ছিলেন আগ্রাসী। দেখা যায় কিছু নতুনত্বও। দুই ইনিংসেই উদ্ভাবনী বেশ কিছু দিক চোখে পড়েছে তার মাঠ সাজানোয়। বিশেষ করে প্রথম ইনিংসে নাঈম হাসানের বলে কেন উইলিয়ামসন যেখানে ক্যাচ দিয়েছিলেন তাইজুল ইসলামকে এবং শেষ দিকে নাঈমের বলেই যেখানে তাইজুলের হাতে ধরা পড়লেন ড্যারিল মিচেল, দুটিই একটু অপ্রথাগত পজিশন। যেটির মানে, পরিষ্কার পরিকল্পনা শান্তর ছিল।

সব মিলিয়ে মাঠে দারুণ তৎপর ও সক্রিয় ছিলেন তিনি। দু-একটি ব্যতিক্রম বাদ দিলে, ঘটনা ঘটার অপেক্ষা না করে তিনি চেষ্টা করেছেন ঘটিয়ে দেওয়ার। সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য ব্যাপার, দলকে মাঠের ক্রিকেটে মনোযোগ ফেরানোর আবহ গড়ে তোলা।

বিশ্বকাপের চরম ব্যর্থতার পর দেশের ক্রিকেটে যে অস্থিরতা ছিল, তাতে এই টেস্ট সিরিজে দল মুখ থুবড়ে পড়লেও খুব বিস্ময়কর কিছু হতো না। কিন্তু সিলেট টেস্টে গোটা দলকে বেশ উজ্জীবিত মনে হয়েছে। লড়িয়ে মানসিকতার প্রতিফলন পড়েছে তাদের পারফরম্যান্সে। দলটাকে মনে হয়েছে এককাট্টা। সবাইকে মাঠে বেশ সম্পৃক্ত দেখা গেছে।

এই যে ঝঞ্ঝাবিক্ষুব্ধ সময়েও দলটা এরকম লড়িয়ে পারফরম্যান্স ও শরীরী ভাষা মেলে ধরল, সেই কৃতিত্ব তো অধিনায়ককে দিতেই হয়। টেস্টের আগে দলের প্রতি শান্তর বার্তায় মিশে ছিল আর কিছু না ভেবে শুধু প্রক্রিয়ায় অটল থাকা।

“প্রথমত, দলকে বলেছি যে এই দুটি ম্যাচ আমরা জেতার জন্য খেলব এবং জিততে পারি, এই বিশ্বাস যেন থাকে। আমরা ওই চিন্তা করেই এসেছিলাম। ফলাফল নিয়ে আমরা অতটা চিন্তা করিনি। একটা কথা বলেছি যে, যতক্ষণ আমরা বর্তমানে থাকব, ওটাই আমাদের জন্য গুরুত্বপূর্ণ। ওই মুহূর্তটায় আমাদের কী করা দরকার… এই বার্তাটাই সবাইকে দেওয়ার চেষ্টা করেছি।”

“অধিনায়ক হিসেবে আমি হারা-জেতা নিয়ে খুব বেশি চিন্তিত না, সত্যি বলছি। যে জিনিসটা নিজে করার চেষ্টা করি এবং দলের সবার কাছ থেকে চাই, তারা প্রক্রিয়াটা ঠিকঠাক অনুসরণ করছে কিনা এবং এবং তাদের মধ্যে ওই নিবেদনটা আছে কিনা।”

স্রেফ নেতৃত্বের যেটুকু তিনি দেখিয়েছেন, নিয়মিত অধিনায়ক হিসেবে নিজের দাবি জানানোর জন্য যথেষ্ট ছিল হয়তো সেটুকুই। তবে অধিনায়ককে তো সামনে থেকে নেতৃত্বও দিতে হয়। শান্ত সেখানেও সফল দারুণভাবে।

প্রথম ইনিংসের হতাশাজনক আউটের পর দ্বিতীয় ইনিংসেও তিনি বেশ দ্রুততায় শুরু করেছিলেন। এক পর্যায়ে ৪৫ বলে তার রান ছিল ৩৭। এরপর পরিস্থিতির সঙ্গে মানিয়ে নিজের ব্যাটিংয়ের ধরনও বদলে ফেলেন তিনি। ফিফটিতে যেত পরের ১৩ রান করতে বল খেলেন ৫০টি। সেভাবেই খেলে একসময় পা রাখেন শতরানে। বাংলাদেশের প্রথম ক্রিকেটার হিসেবে টেস্ট নেতৃরত্বর অভিষেকে গড়েন সেঞ্চুরির কীর্তি।

ব্যাটিংয়ে এই যে বিভিন্ন ঘরানার মিশ্রণ, সেটার পেছনেও পরিষ্কার ক্রিকেটীয় ভাবনার কথা জানালেন তিনি ম্যাচ শেষে সংবাদ সম্মেলনে।

“খেলাটা তো আমার একার নয়, গোটা দলের। দলের জন্য আমি কতটুকু ব্যাটিং করছি, এটা গুরুত্বপূর্ণ। পরিস্থিতি ছিল যে, প্রথমে ওরা একটু আক্রমণাত্মক মাঠ সাজিয়েছিল। আমার কাছে তাই অপশন ছিল, বাউন্ডারির সুযোগ পাচ্ছিলাম। এই উইকেটে লম্বা সময় ধরে ডিফেন্স করা খুব সহজ নয়, যেহেতু কাছাকাছি অনেক ফিল্ডার ছিল। পরে আমি শট খেলার পর ওরা ফিল্ডার একটু বাইরে নিয়েছে, তখন আমার রক্ষণাত্মক শট খেলতে খুব একটা সমস্যা হয়নি। আমার স্বাভাবিক পরিকল্পনায় ফিরে গিয়েছি।”

“পরিকল্পনা এরকমই ছিল। একেক সময় একেক পরিকল্পনা ছিল। প্রথম ইনিংস যদি বলি, ওরা আমাকে শুরু অনেক আক্রমণ করেছে, সবগুলো ফিল্ডার ওপরে রেখেছে। আমি ওই পরিকল্পনা অনুযায়ীই ব্যাট করেছি।”

সব মিলিয়ে তার ব্যাটিং, তার নেতৃত্ব, সব কিছুতেই প্রতিফলন পড়েছে পরিণত ভাবনার। এক টেস্ট দিয়েই অবশ্যই সবকিছু বোঝা যায় না। তবে নিজের নেতৃত্বের সামর্থ্যের আভাসটা তিনি দারুণভাবেই দিয়েছেন।

এই টেস্ট সিরিজ শেষে নিউ জিল্যান্ডে সীমিত ওভারে দুই সংস্করণেই অধিনায়কের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে তাকে। ফেব্রুয়ারি-মার্চে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে সিরিজের আগেই হয়তো চূড়ান্ত করা হবে নতুন নিয়মিত অধিনায়ক। লিটন কুমার দাস, মেহেদী হাসান মিরাজ তো বটেই, অন্য কারও নামও সেখানে আসতে পারে বোর্ডকর্তাদের আলোচনায়।

তবে এখনকার যে বাস্তবতা, নতুন অধিনায়কের নাম যদি শান্ত না হয়, সেটিই হবে বিস্ময়ের।

এআর

Wordbridge School
Link copied!