• ঢাকা
  • সোমবার, ০৬ মে, ২০২৪, ২৩ বৈশাখ ১৪৩১
বিপিএল ফাইনাল

কুমিল্লার পঞ্চম নাকি বরিশালের প্রথম শিরোপা


ক্রীড়া ডেস্ক মার্চ ১, ২০২৪, ১০:০৫ এএম
কুমিল্লার পঞ্চম নাকি বরিশালের প্রথম শিরোপা

ঢাকা : টিকিট কাউন্টার বন্ধ, কিন্তু সামনে দর্শকদের বিশাল সারি। দুপুর ১২টাতেও মিরপুর শের-ই বাংলা স্টেডিয়ামের এক নম্বর গেট সংলগ্ন সেই বুথ খোলার কোনো লক্ষণ দেখা গেল না। অথচ সময়ের সঙ্গে ভিড় কেবল বাড়ছিলই। টিকেট নিয়ে স্পষ্ট কোনো তথ্য না পেয়ে অস্থির হয়ে পড়লেন অনেকে। 

এক পর্যায়ে জানা গেল, টিকেট শেষ বলেই বুথ বন্ধ। ঘণ্টার পর ঘণ্টা অপেক্ষায় থাকা মানুষগুলি মানতেই চাইলেন না তারা। বিক্ষুদ্ধ জনস্রোত নিয়ন্ত্রণে আনতে একপর্যায়ে লাঠিচার্জ করতে দেখা গেল নিরাপত্তাকর্মীদের।

লোকের এই আগ্রহ, উন্মাদনা, হাহাকার কিংবা উত্তেজনা, সবই বিপিএল ফাইনাল ঘিরে। ফাইনালের আগের দিন সব মিলিয়ে বলা যায় উত্তপ্ত অবস্থা। উত্তাপের বার্তা আছে মাঠের ক্রিকেটেও। অপেক্ষা জমজমাট এক লড়াইয়ের। প্রায় ছয় সপ্তাহ ও ৪৫ ম্যাচের দীর্ঘ পরিক্রমা পেরিয়ে টুর্নামেন্ট এসে দাঁড়িয়েছে শিরোপা নির্ধারণী মঞ্চে। যেখানে ট্রফির জন্য লড়বে কুমিল্লা ভিক্টোরিয়ান্স ও ফরচুন বরিশাল। 

মিরপুর শের-ই বাংলা জাতীয় ক্রিকেট স্টেডিয়ামে ম্যাচ শুরু শুক্রবার সন্ধ্যা সাড়ে ৬টায়।

বিপিএল চ্যাম্পিয়ন হওয়াকে একরকম অভ্যাস বানিয়ে ফেলা কুমিল্লার সামনে এবার পঞ্চম শিরোপার হাতছানি। বরিশালের কোনো ফ্র্যাঞ্চাইজির এখনও সেই সাফল্য ধরা দেয়নি। বরিশাল বার্নার্স আর বরিশাল বুলস হয়ে এখনকার ফরচুন বরিশাল, তিনবার তারা হেরেছে ফাইনালে। চতুর্থবারে তাদের আশা নতুন কিছুর।  

দুই দলের ফাইনালের আগের দিনটা শুরু হয়েছে ট্রফি নিয়ে আনুষ্ঠানিক ফটোসেশন দিয়ে। ঐতিহ্যবাহী আহসান মঞ্জিলে সেই পর্ব অবশ্য রঙ হারিয়েছে মূল আকর্ষণেরাই না থাকায়। ট্রফির নিয়ে পোজ দেওয়ার কথা অধিনায়কদের। কিন্তু দুই অধিনায়কের কেউই যাননি সেখানে। কুমিল্লার প্রতিনিধি ছিলেন কিপার-ব্যাটসম্যান জাকের আলি, বরিশালের হয়ে সহ-অধিনায়ক মেহেদী হাসান মিরাজ।

ফটোসেশন শেষে সংবাদমাধ্যমের মুখোমুখি হয়ে উপভোগ্য ম্যাচের প্রতিশ্রুতি দিলেন মিরাজ।

ক্রিকেট এমন একটা খেলা, যেদিন যারা ভালো খেলবে তারা জিতবে। এর আগেও বরিশাল-কুমিল্লা ফাইনাল হয়েছে, সেবার বরিশাল ১ রানে হেরেছে। আশা করছি, আবার ভালো একটা ম্যাচ হবে, সবাই উপভোগ করবে।

মিরাজ বলছিলেন ২০২২ আসরের ফাইনালের কথা। কুমিল্লার বিপক্ষে শিরোপার লড়াইয়ে সেবার ১৫২ রানের লক্ষ্যে ৮ উইকেট হারিয়ে ১৫০ পর্যন্ত যেতে পারে বরিশাল। সেদিন শেষ ওভারে ১০ রানের সমীকরণ মেলাতে পারেননি তরুণ তাওহিদ হৃদয়।

এক আসর পর আরেকটি কুমিল্লা-বরিশাল ফাইনালে হৃদয় এবার বিপরীত দলে। এবার তিনি আসরের সেরা ব্যাটসম্যানদের একজন। ১৩ ইনিংসে ২ ফিফটি ও ১ সেঞ্চুরিতে দলের সর্বোচ্চ ৪৪৭ রান করে কুমিল্লাকে ফাইনালে তোলার পথে বড় অবদান তার।

হৃদয়সহ ম্যাচ জেতানোর ক্রিকেটারের কমতি নেই কুমিল্লায়। দেশের ক্রিকেটারেদর মধ্যে অধিনায়ক লিটন কুমার দাস, বিদেশি তালিকায় আন্দ্রে রাসেল, মইন আলি, জনসন চার্লসরা নিজেদের দিনে একাই গুঁড়িয়ে দিতে পারেন প্রতিপক্ষকে।

বোলিংয়ে সুনিল নারাইন প্রতি ম্যাচেই চেনা কিপটে চেহারায়। মাথায় বলের আঘাত পেয়ে বাইরে থাকা মুস্তাফিজুর রহমানও ফিরছেন দলে। ফাইনালে তাকে রাখার আভাস দিয়ে রাখলেন প্রধান কোচ মোহাম্মদ সালাউদ্দিন।

সব মিলিয়ে কুমিল্লার শক্তিমত্তা সম্পর্কে পরিষ্কার ধারণা আছে মিরাজের। তাই ফাইনালের সম্ভাব্য চ্যালেঞ্জ সম্পর্কেও সতর্ক বরিশালের স্পিন অলরাউন্ডার। 

কুমিল্লা সব সময়ই অনেক বড় দল, তারা অনেক ভালো দল সব সময়ই গড়ে। প্রতিপক্ষ হিসেবে চ্যালেঞ্জিং হবে, সহজ হবে না। দুই দলের খেলাটা ভালো হবে। কারণ, আমাদের দলও অনেক শক্তিশালী। আমাদের দলেও অভিজ্ঞ খেলোয়াড় আছে, দেশের বাইরে যারা আছে, তারাও খুব ভালো খেলোয়াড়।

বরিশাল দলেও অবশ্য তারকা ক্রিকেটারের কমতি নেই। অধিনায়ক তামিম ইকবাল আছেন দারুণ ছন্দে। এখন পর্যন্ত ৪৫৩ রান নিয়ে তিনিই সবার ওপরে। আরেক অভিজ্ঞ ক্রিকেটার মুশফিকুর রহিমের ব্যাটও চলছে সমান তালে।

প্রয়োজনের সময় কথা বলছে মাহমুদউল্লাহ, মুশফিকুর রহিমের ব্যাট। নিচের দিকে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখছেন মিরাজ, মোহাম্মদ সাইফ উদ্দিন। বল হাতেও ছন্দে আছেন সাইফ উদ্দিন, তাইজুল ইসলামরা। 

বিদেশিদের মধ্যে কাইল মেয়ার্স দলে যোগ দেওয়ার পর বরিশালের সার্বিক চিত্রই বদলে গেছে। নতুন বলে কার্যকরী স্পেল আর ব্যাটিংয়ে ঝড়ো ইনিংসে ধারাবাহিক অবদান রাখছেন ক্যারিবিয়ান তারকা।

দক্ষিণ আফ্রিকার ডেভিড মিলারের অন্তর্ভুক্তি তাদের শক্তি বাড়িয়েছে আরও। শুরুতে দুই ম্যাচের জন্য চুক্তি করলেও তাকে ফাইনালে খেলতেওতাকে রাজি করিয়ে ফেলেছে বরিশাল ফ্র্যাঞ্চাইজি। শক্তিতে খুব একটা পিছিয়ে নেই বরিশাল।

কুমিল্লার প্রধান কোচ মোহাম্মদ সালাউদ্দিন অবশ্য প্রতিপক্ষের শক্তি নিয়ে ভাবতে চান না। ম্যাচের আগের দিন অনুশীলন শেষে সংবাদমাধ্যমের মুখোমুখি তিনি বললেন, নিজ দলের ওপর তার আস্থা প্রবল।

ব্যাটিং তো ১১ জনই করবে। তাই (বরিশালের) ব্যাটিং লাইনআপ দেখে আমার দরকার নেই। যারা ভালো খেলবে, তারাই জিতবে। দল যদি আমরাও ভালো না হতাম, আমরাও ফাইনালে আসতাম না। অন্য দল কী করল সেটা আমার কাছে মূখ্য নয়।

আমার ছেলেরা কীভাবে ভালো খেলে, কীভাবে সেরা পারফরম্যান্স করতে পারে, সেটিই আমার দেখার বিষয়। সেরা পারফরম্যান্সের পর হেরে গেলেও আমার দুঃখ নেই। তবে পুরো টুর্নামেন্টে ছেলেরা অনেক ভালো খেলেছে। সেটা আমার কাছে অনেক আনন্দের ছিল।

শিরোপা নির্ধারণী ম্যাচে পরিসংখ্যানও বর্তমান চ্যাম্পিয়নদের সঙ্গে। চারটি ফাইনাল খেলে প্রতিবারই ট্রফি উঁচিয়ে ধরেছেন দলটির অধিনায়ক। এর মধ্যে দুইবার প্রতিপক্ষ ছিল বরিশালের ফ্র্যাঞ্চাইজি। 

২০২২ সালের আগে ২০১৫ আসরে বরিশাল বুলসকে হারিয়ে প্রথম চ্যাম্পিয়ন হয় কুমিল্লা। দলটির কিপার-ব্যাটসম্যান জাকেরও মনে করিয়ে দিলেন তাদের বড় ম্যাচ খেলার অভ্যস্ততার কথা।   

কুমিল্লা ফাইনাল খেলতে অভ্যস্ত। আমরা দল হিসেবে জানি, কীভাবে বড় ম্যাচে পারফর্ম করতে হয়। মনোযোগ সেখানেই থাকবে। যেহেতু ম্যাচটি ফাইনাল… অবশ্যই বরিশাল ভালো খেলেই এত দূর এসেছে। প্রতিপক্ষ হিসেবে সব দলকেই সম্মান করি। ফাইনালেও ব্যতিক্রম হবে না। সব সময় চেষ্টা করি সেরা ক্রিকেট খেলতে, ফাইনালেও চেষ্টা করব।

আহসান মঞ্জিলে ফটো সেশন শেষ করে মিরপুর এসে অনুশীলনও করেন জাকের। রাসেল ছাড়া বাকি সবাইকে নিয়ে পুরো দমে অনুশীলন করে কুমিল্লা। আর আগের দিন দ্বিতীয় কোয়ালিফায়ার জয়ী ফরচুন বরিশাল বিশ্রামে কাটায় ফাইনালের আগের দিন। 

বরিশালের মতোই প্রথম শিরোপার আশায় আছেন তাদের দুই অভিজ্ঞ তারকা মুশফিকুর রহিম ও মাহমুদউল্লাহ। দুইবার করে ফাইনাল খেলেও শেষ বাধা টপকাতে পারেননি তারা। কুমিল্লার হৃদয়ও খেলেছেন বিপিএলের সবশেষ দুটি ফাইনাল। কিন্তু ম্যাচ শেষ করেছেন পরাজিত দলে।

এবার আরেকটি শিরোপার লড়াইয়ে নিশ্চিতভাবেই বড় দায়িত্ব থাকবে মুশফিক, মাহমুদউল্লাহ বা হৃদয়ের কাঁধে। তাদের ব্যাট হাসলেই বাড়বে দলের সাফল্যের সম্ভাবনা।

তবে ফাইনালের মতো ম্যাচের ভাগ্য নির্ধারণে বড় ভূমিকা থাকবে স্নায়ুর চাপেরও। সেখানে কুমিল্লা এগিয়ে যোজন যোজন। বড় ম্যাচ জয়ের কাজটা তাদের চেয়ে ভালো পারে না কেউই। তবে খেলাটা তো ক্রিকেট। শেষের আগে তাই শেষ নয় কিছুই। 

এমটিআই

Wordbridge School
Link copied!