• ঢাকা
  • মঙ্গলবার, ১৯ মার্চ, ২০২৪, ৫ চৈত্র ১৪৩০

আ.লীগের কেন্দ্রীয় পদে নারী নেতৃত্ব বাড়ছে


বিশেষ প্রতিনিধি নভেম্বর ২০, ২০১৯, ০১:০২ পিএম
আ.লীগের কেন্দ্রীয় পদে নারী নেতৃত্ব বাড়ছে

ঢাকা : আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী কমিটিতে নারীর সংখ্যা বাড়ছে। আগামী ২০ ও ২১ ডিসেম্বর অনুষ্ঠেয় ২১তম জাতীয় সম্মেলনের মধ্য দিয়ে গুরুত্বপূর্ণ কেন্দ্রীয় পদে নারী নেতৃত্ব বাড়ানোর নীতিগত সিদ্ধান্ত নিয়েছে ক্ষমতাসীন দলের শীর্ষ নেতৃত্ব।

দলের সহযোগী সংগঠনগুলোসহ জেলা ও উপজেলায় অনুষ্ঠিত ও অনুষ্ঠেয় সম্মেলনের মধ্য দিয়ে নতুন কমিটিগুলোর বিভিন্ন পদে নারী নেতৃত্ব আগের তুলনায় বাড়ছে। সব পর্যায়ের কমিটিতে নারী নেতৃত্ব প্রায় ৩৩ শতাংশে উন্নীত করতে চায় সরকারি দল।

গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশের (আরপিও) বাস্তবায়ন, দলে নারীদের প্রতিনিধিত্ব বাড়ানো, দলীয় কার্যক্রম আরো গতিশীল করা ও নারী নেতৃত্বকে আরো এগিয়ে নেওয়ার লক্ষ্য নির্ধারণ করে এসব পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করতে চান ক্ষমতাসীনরা।

নারীরা দায়িত্ব পেতে যাওয়ায় প্রভাবশালী ও নানা কারণে অভিযুক্ত বেশ কয়েকজন নেতা এবার দলের কেন্দ্রীয় পদ থেকে বাদ পড়তে যাচ্ছেন। নানা কারণে বাদ পড়তে যাওয়া নেতাদের সংখ্যা দলের কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী সংসদের মোট সংখ্যার অর্ধেকেরও বেশি হতে পারে বলে আওয়ামী লীগের নীতিনির্ধারক পর্যায়ের সূত্র জানায়।

দলীয় সূত্রমতে, আওয়ামী লীগের বিভিন্ন পর্যায়ের অনেক নারী নেত্রীর মাঠে রাজনৈতিক অর্জন, নেতাকর্মীদের কাছে জনপ্রিয়তা, স্বচ্ছ ভাবমূর্তি ও বিশেষ করে প্রায় ১১ বছর ধরে দল টানা সরকারে থাকা অবস্থায় কর্মকাণ্ড ইত্যাদি সম্পর্কে বিস্তারিত খোঁজ নেওয়া হচ্ছে।

সরকারি দলের শীর্ষ নেতা ও গোয়েন্দা কর্মকর্তাদের মাধ্যমে তাদের সম্পর্কে এসব ‘আমলনামা’ বা প্রতিবেদন সংগ্রহ করছেন প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা। দলের শীর্ষ পদে জায়গা করে দিতে তিনি তাদের বিস্তারিত খোঁজ নিচ্ছেন।

দশম জাতীয় সংসদে সংরক্ষিত আসনে যারা আওয়ামী লীগের হয়ে সংসদে ছিলেন, তাদের মধ্যে কয়েকজনকে যোগ্যতা ও দলের জন্য ত্যাগ বিবেচনায় আসন্ন জাতীয় সম্মেলনের মধ্য দিয়ে কেন্দ্রীয় কমিটিতে আনা হতে পারে।

নবম বা অন্য সংসদে যারা ছিলেন, তাদের মধ্যেও কেউ কেউ এবার দলের কেন্দ্রীয় কমিটিতে ঠাঁই পাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। কেন্দ্রীয় কমিটিতে যারা ঠাঁই পাবেন না, তাদের পরে নিজ জেলা ও উপজেলার কমিটির গুরুত্বপূর্ণ পদের দায়িত্ব দেওয়া হতে পারে। ইতোমধ্যে অনুষ্ঠিত সম্মেলনের মধ্য দিয়ে কেউ কেউ গুরুত্বপূর্ণ পদে দায়িত্ব পেয়েছেনও।

একাদশ সংসদে দলের জন্য সংরক্ষিত আসনে যারা সংসদ সদস্য আছেন, তাদের মধ্যেও কেউ কেউ কেন্দ্রীয় কমিটিতে পদ পেতে পারেন।
একাদশ সংসদে সংরক্ষিত নারী আসনে পুরনো দুজন ছাড়া নতুনদের মনোনয়ন দেয় দল। দলের সহযোগী সংগঠন কৃষক লীগের জন্মের পর প্রায় পাঁচ দশক পর এবারই প্রথমবারের মতো শীর্ষ দুই পদের (সভাপতি, সাধারণ সম্পাদক) একটিতে নারীকে দায়িত্ব দেওয়া হয়।

দলে নতুন নারী নেতৃত্ব সৃষ্টি, তৃণমূল থেকে যোগ্যদের কেন্দ্রে আনা, নতুনদের জায়গা করে দেওয়া ও নারীর ক্ষমতায়নের লক্ষ্যে এমন সিদ্ধান্ত নেয় আওয়ামী লীগ।

নীতিনির্ধারকদের মতে, আগামী ২০২০ সালের আগে যথাসম্ভব শুদ্ধ রাজনৈতিক দল চায় আওয়ামী লীগ। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের গড়া এ দলের নেতৃত্বের সরকার আগামী বছর তার জন্মশত বছর ও ২০২১ সালে স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী উদযাপন করবে রাষ্ট্রীয় বর্ণিল আয়োজনের মধ্য দিয়ে।

সর্বকালের শ্রেষ্ঠ বাঙালি বঙ্গবন্ধুর জন্মশত বছর ও স্বাধীনতার সুর্বণজয়ন্তী উদযাপনের সময় মুক্তিযুদ্ধে নেতৃত্ব দেওয়া আওয়ামী লীগের কোনো পর্যায়ের পদে বিতর্কিতদের না রাখার নীতিগত সিদ্ধান্ত নিয়েছেন শেখ হাসিনা। নতুন বছর শুরুর আগেই দলকে নতুন করে সাজিয়ে বিতর্কমুক্ত করার পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে।

এসব লক্ষ্যেই প্রধানমন্ত্রীর কঠোর নির্দেশে দলে সাংগঠনিক শুদ্ধি অভিযান চলছে। ক্ষমতাসীন দলের বিতর্কিত, অভিযুক্ত ও দুর্নীতিতে জড়িত নেতাদের শুদ্ধি অভিযান এবং মূল দল ও সহযোগী সংগঠনগুলোর সম্মেলনের মধ্য দিয়ে ছেঁটে ফেলা হচ্ছে। সম্মেলনগুলোর পর বিতর্কিত ও নিষ্ক্রিয়দের মন্ত্রিসভা থেকেও সরিয়ে দেওয়া হবে। প্রধানমন্ত্রী সাংগঠনিক ও প্রশাসনিক-দুইভাবেই কঠোর থাকার বার্তা দিয়েছেন।

তথ্যমতে, আগামী ২০২০ সালের মধ্যে যেকোনো রাজনৈতিক দলের সর্বস্তরের কমিটিতে ৩৩ শতাংশ নারী নেতৃত্ব নিশ্চিত করতে দেশের সব দলের প্রতি নির্বাচন কমিশনের (ইসি) বাধ্যবাধকতা আছে।

২০২০ সালের মধ্যে সব পর্যায়ের কমিটিতে ৩৩ শতাংশ নারী প্রতিনিধিত্ব নিশ্চিত করা হবে—এ প্রতিশ্রুতি দিয়ে ২০০৮ সালে ইসিতে নিবন্ধিত হয় রাজনৈতিক দলগুলো।

গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশের (আরপিও) ৯০-এর খ-এর খ (২) অনুচ্ছেদে যেকোনো রাজনৈতিক দলের কেন্দ্রীয় কমিটিসহ সব পর্যায়ের কমিটিতে অন্তত ৩৩ শতাংশ পদ নারী সদস্যদের জন্য সংরক্ষণের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ আর সেই লক্ষ্য ২০২০ সালের মধ্যে অর্জনের কথা উল্লেখ আছে। আগামী বছরের মধ্যে এ লক্ষ্যে পৌঁছাতে চায় আওয়ামী লীগ।

আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় থেকে তৃণমূলের সব কমিটিতে নারীর প্রতিনিধিত্ব বাড়লেও গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশে বেঁধে দেওয়া লক্ষ্য পূরণের পথে এখনো অনেকটা পিছিয়ে আছে দলটি।

অবশ্য এখন পর্যন্ত প্রধান রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে আওয়ামী লীগের কমিটিতে নারী প্রতিনিধিত্ব সবচেয়ে বেশি। ভোটের মাঠের প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী বিএনপির তুলনায় আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয়সহ অন্য কমিটিগুলো নারীদের উপস্থিতিতে কয়েকগুণ এগিয়ে আছে।

২০০৮ সালের পর থেকে আওয়ামী লীগে নারী নেতৃত্ব প্রায় ৮ শতাংশ বাড়লেও বিএনপিতে বেড়েছে মাত্র ১ শতাংশ। আওয়ামী লীগে এবার আরো বাড়ছে। এক্ষেত্রে আরো এগিয়ে থাকতে চায় সরকারি দল। তবে লক্ষ্যে পৌঁছাতে আর মাত্র এক বছর বাকি থাকলেও দেশের কোনো দলই এখনো পর্যন্ত ৩৩ শতাংশ সংখ্যার কাছাকাছি যেতে পারেনি।

ইসিকে ২০১৭ সালে আওয়ামী লীগ জানায়, দলটির কেন্দ্রীয় থেকে তৃণমূলের সব কমিটিতে বর্তমানে ১৫ শতাংশ নারীর প্রতিনিধিত্ব রয়েছে। দলের নীতিনির্ধারণী সর্বোচ্চ পর্ষদ কার্যনির্বাহী সংসদে এ হার প্রায় ১৯ শতাংশ।

নির্ধারিত ২০২০ সালের মধ্যে সর্বস্তরের কমিটিতে ৩৩ শতাংশ নারী প্রতিনিধিত্বের লক্ষ্যপূরণে আওয়ামী লীগ সক্ষম হবে বলে আশা প্রকাশ করে দল।

ইসিকে দলটি জানায়, ২০২০ সালের মধ্যে ৩৩ শতাংশ নারী অন্তর্ভুক্তির বিষয়টি নিশ্চিত করা হবে।

আওয়ামী লীগ মনে করে, নারীর ক্ষমতায়নে শেখ হাসিনার সরকার বরাবরই গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখে আসছে। শেখ হাসিনাই প্রথম নারীনীতি প্রণয়ন করেন। বাবার নামের পাশাপাশি মায়ের নাম লেখার আইন কার্যকর করে তার সরকার। সমাজ ও রাষ্ট্রীয় জীবনের সর্বক্ষেত্রে নারীর অংশ নেওয়া নিশ্চিত করার বহুমুখী পদক্ষেপও নেয় তার সরকার।

২০০৯ সাল থেকে টানা প্রায় ১১ বছরে তার নেতৃত্বে দেশে নারীর অবস্থান মৌলিকভাবে পরিবর্তিত হয়েছে। নারীর ক্ষমতায়নে অসামান্য অবদানের জন্য তিনি ‘গ্লোবাল উইমেনস লিডারশিপ অ্যাওয়ার্ড’ পেয়েছেন।

সোনালীনিউজ/এমটিআই

Wordbridge School
Link copied!