• ঢাকা
  • শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল, ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১
ফাহাদের মা-বাবার আহাজারি

এক বাবাকে হারাইছি, আরেক বাবাকে হারাইতে চাই না


নিজস্ব প্রতিবেদক অক্টোবর ১৬, ২০১৯, ০২:০৯ পিএম
এক বাবাকে হারাইছি, আরেক বাবাকে হারাইতে চাই না

ঢাকা : ‘ঢাকা শহরে আমার বাবারে কে দেখবো, তারে কে দেখশুন করবো, বড় বাবাকে হারাইছি, ছোট বাবারে হারাইতে চাই না, নিজের গ্রামে ছোট বাবারে বুকে আগলে ধইরা রাখমু’- এ কথা বলে কান্নায় ভেঙে পড়লেন নিহত বুয়েটছাত্র আবরার ফাহাদের মা রোকেয়া খাতুন।

মঙ্গলবার (১৫ অক্টোবর) বিকালে ফাহাদের ছোট ভাই ফাইয়াজ ঢাকা কলেজ থেকে ছাড়পত্র নিয়ে বের হয়ে যাওয়ার সময় প্রশাসনিক শাখার সামনে সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলার সময় তার আহাজারিতে এক হৃদয়বিদারক দৃশ্যের অবতারণা হয়।

এসময় আবরার ফাহাদের বাবা বরকতুল্লাহ কান্নাজড়িত কণ্ঠে জানান, দুই ছেলের একজন আমাদের ছেড়ে চলে গেছে, এই অবস্থায় সার্বক্ষণিক নিরাপত্তাজনিত অজানা মৃত্যুশঙ্কা মাথায় নিয়ে জীবন-যাপন আরও কষ্টসাধ্য হয়ে উঠেছে। এসব বিষয় ভেবে ওর মা এবং পরিবারের অন্য স্বজনদের ইচ্ছায় এমন সিদ্ধান্ত নিতে হলো।

এছাড়া, এক সন্তানকে হারিয়ে ফাইয়াজের মায়ের একাকী জীবনের বিষয়ও বিবেচনা করা হয়েছে।

তিনি আরও বলেন, কুষ্টিয়া সরকারি কলেজও দেশের উল্লেখযোগ্য কলেজগুলোর মধ্যে অন্যতম। ফা্ইয়াজ ছোট, ওকে দেখেশুনে আগলে রাখার জন্য বড় ভাই ফাহাদ ছিল। যেখানে ফাহাদই চরম নৃশংসতার শিকার হলো, সেখানে আর কার ভরসায় ওকে (ফাইয়াজকে) ঢাকায় রাখব?

আমি বিশ্বাস করি ফায়াজ কুষ্টিয়া সরকারি কলেজ থেকেও পড়ালেখা করে ভালো রেজাল্ট করবে। সেই সঙ্গে ওর মাকেও সঙ্গ দিতে পারবে। তাতে ফাইয়াজের জন্য ওর মা কিছুটা হলেও দুশ্চিন্তামুক্ত থাকবে।

ঢাকা কলেজ সূত্র বলেছে,  বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) নিহত ছাত্র আবরার ফাহাদের একমাত্র ছোট ভাই আবরার ফাইয়াজ কুষ্টিয়া সরকারি কলেজে ভর্তির আবেদন করেছেন। নিরাপত্তা শঙ্কায় তিনি ঢাকা কলেজ থেকে ছাড়পত্র নিয়েছে। মঙ্গলবার (১৫ অক্টোবর) দুপুরে ঢাকা কলেজ কর্তৃপক্ষ অনাপত্তি ছাড়পত্র দিয়েছে।

কুষ্টিয়া সরকারি কলেজের অধ্যক্ষ কাজী মনজুর কাদির জানান, রোববার আবরার ফাইয়াজ কুষ্টিয়া সরকারি কলেজে ভর্তির আবেদন করেন। আবেদনের প্রেক্ষিতে এরইমধ্যে কলেজ কর্তৃপক্ষ বিষয়টি গুরুত্বের সঙ্গে বিবেচনায় নিয়ে তাকে ভর্তি করে নেয়ার জন্য ইতিবাচক সিদ্ধান্ত নিয়েছে। এখন অপেক্ষায় আছি ঢাকা কলেজ থেকে ছাড়পত্রের কপি হাতে পেলেই ফাইয়াজের ভর্তির প্রাথমিক কাজ সম্পন্ন হবে।

মঙ্গলবার রাতেই ফাইয়াজ, তার বাবা-মা, মামাতো ভাইসহ স্বজনদের নিয়ে কুষ্টিয়ার উদ্দেশে রওনা হয়ে গেছেন।

‘পারিবারিক সমস্যা’য় ঢাকা কলেজ ছাড়লেন ফাহাদের ছোটভাই ফাইয়াজ : ছাত্রলীগ ক্যাডারদের নির্যাতনে নিহত বুয়েট ছাত্র আবরার ফাহাদের ছোট ভাই আবরার ফাইয়াজ ঢাকা কলেজ ছেড়েছেন।

‘পারিবারিক সমস্যা’ দেখিয়ে আজ মঙ্গলবার (১৫ অক্টোবর) দুপুরে তিনি এ ছাড়পত্র নেন। এ ছাড়পত্র নিয়ে তিনি কুষ্টিয়া সরকারি কলেজে ভর্তি হবেন বলে জানিয়েছেন।

জানা গেছে, আবরার ফাইয়াজ ঢাকা কলেজের একাদশ শ্রেণির শিক্ষার্থী। আজ দুপুর ১টায় তিনি কলেজে আসেন। এসময় তার স্বজনরা সঙ্গে ছিলেন।

ফাইয়াজ সাংবাদিকদের বলেন, ‘বড় ভাইয়ের এমন মৃত্যুতে পুরো পরিবার মুষড়ে পড়েছে। আর বাবা-মা চান না আমি তাদের ছেড়ে থাকি। তাই ঢাকা কলেজ ছাড়লাম। যদিও প্রশাসনের পক্ষ থেকে সব ধরনের নিরাপত্তার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন।

জানতে চাইলে ঢাকা কলেজের অধ্যক্ষ অধ্যাপক নেহাল আহমেদ বলেন, ‘আবরার ফাইয়াজের ঢাকা কলেজ ছাড়ার সিদ্ধান্ত একান্তই তাদের পারিবারিক। আমি সর্বোচ্চ নিরাপত্তার আশ্বাস দিয়েছিলাম। তারপরও তাদের এবং প্রশাসনের ইচ্ছায় তার কলেজ বদলির ব্যাপারে আমাদের পক্ষ থেকে সর্বোচ্চ সহযোগিতা করব।’

আবরার ফাইয়াজের ছাড়পত্রের ব্যাপারে ঢাকা মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা বোর্ডের কলেজ শাখার এক কর্মকর্তা জানান, ফাহাদের ছোট ভাই কুষ্টিয়া সরকারি কলেজে পড়তে চান। বিশেষ ব্যবস্থায় আজ ছাড়পত্রের আবেদন করেন তিনি। তার ছাড়পত্র মঞ্জুর করা হয়েছে।
গণভবনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে সাক্ষাৎকরেন বুয়েট শিক্ষার্থী ফাহাদের মা-বাবা ও ছোটভাই আবরার ফাইয়াজ - ছবি : পিএমও

গতকাল সোমবার বিকালে আবরার ফাহাদের বাবা-মা ও পরিবারের সদস্যরা গণভবনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন। এসময় আবরার ফাইয়াজও তাদের সঙ্গে ছিলেন। প্রধানমন্ত্রী দ্রুততম সময়ের মধ্যে ফাহাদ হত্যায় জড়িতদের সর্বোচ্চ শাস্তি নিশ্চিতের আশ্বাস দেন।

প্রসঙ্গত, ফেসবুকে একটি স্ট্যাটাস দেয়ার জেরে বুয়েট শিক্ষার্থী আবরার ফাহাদকে গত ৬ অক্টোবর রাতে ডেকে নিয়ে যায় বুয়েট শাখা ছাত্রলীগের কয়েকজন নেতাকর্মী। এরপর রাত ৩টার দিকে শেরে বাংলা হলের নিচতলা ও দোতলার সিঁড়ির করিডোর থেকে তার মরদেহ উদ্ধার করা হয়। নিহত ফাহাদ বুয়েটের ইলেকট্রিক্যাল অ্যান্ড ইলেকট্রনিক ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী ছিলেন। শেরে বাংলা হলের ১০১১ নম্বর কক্ষে থাকতেন।

এ ঘটনায় ফাহাদের বাবা বরকত উল্লাহ বাদী হয়ে চকবাজার থানায় ১৯ জনের বিরুদ্ধে একটি হত্যা মামলা করেন। এ ঘটনায় এখন পর্যন্ত ২০ জনকে গ্রেফতার করেছে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) গোয়েন্দা ও অপরাধ তথ্য বিভাগ।

সোনালীনিউজ/এমটিআই

Wordbridge School
Link copied!