• ঢাকা
  • মঙ্গলবার, ১৯ মার্চ, ২০২৪, ৫ চৈত্র ১৪৩০

কষ্ট নিয়ে বাংলাদেশ ছাড়লেন ড. বিজন


নিজস্ব প্রতিবেদক সেপ্টেম্বর ২০, ২০২০, ০৯:৪৪ এএম
কষ্ট নিয়ে বাংলাদেশ ছাড়লেন ড. বিজন

ঢাকা : বিষণ্নতা ও কিছুটা কষ্ট নিয়ে বাংলাদেশ ছেড়ে সিঙ্গাপুরে পাড়ি দিলেন আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন বিজ্ঞানী ও গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের করোনা কিট উদ্ভাবন দলের প্রধান বিজ্ঞানী ড. বিজন কুমার শীল। 

রোববার (২০ সেপ্টেম্বর) ভোর সোয়া ৪টায় দিকে তিনি বলেন, ‘এখন আমি বিমানবন্দরে অবস্থান করছি। সিঙ্গাপুরে চলে যাচ্ছি।’ একেবারে চলে যাচ্ছেন, না সাময়িকভাবে যাচ্ছেন- তিনি নিজেও জানেন না। তবে আবারও বাংলাদেশে ফিরে আসতে চান বলে জানিয়েছেন এই বিজ্ঞানী।

সিঙ্গাপুর থেকে ওয়ার্ক পারমিট নিয়ে বাংলাদেশে এসেছিলেন ড. বিজন। তিনি গণবিশ্ববিদ্যালয়ের মাইক্রোবায়োলজি বিভাগের প্রধান হিসেবে শিক্ষকতা করছিলেন। এর মধ্যে করোনা সংক্রমণ শুরু হলে পূর্ব অভিজ্ঞতার ভিত্তিতে তিনি তা শনাক্তে অ্যান্টিজেন্ট ও অ্যান্টিবডি কিটের উদ্ভাবন করেন। তবে তা এখনো অনুমোদন দেয়নি সরকার।

গত জুলাইয়ে তার ওয়ার্ক ভিসার মেয়াদ শেষ হয় । তারপর ওয়ার্ক ভিসার জন্য আবেদন করলেও সরকারের পক্ষ থেকে এখনো কোনো উত্তর দেওয়া হয়নি। ফলে কাজ করতে না পেরে এক ধরনের বাধ্য হয়ে দেশ ছাড়লেন ড. বিজন। ওয়ার্ক ভিসার অনুমতি পেলে তিনি আবার বাংলাদেশে কাজে ফিরতে পারবেন।

গতকাল শনিবার রাতে দেশের জাতীয় দৈনিককে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে ড. বিজন বলেন, ‘বাংলাদেশে তো আমি সবসময়ই আসা-যাওয়ার মধ্যে ছিলাম। এবার যাওয়ার আগে কেন যেন মনটা খুব বিষণ্ন। খুব কষ্ট অনুভব করছি। আমার ওয়ার্ক পারমিট হবে না, এমন সিদ্ধান্তও কিন্তু জানিয়ে দেওয়া হয়নি। কষ্টের কারণ হয়তো, এত মানসম্পন্ন কিট উদ্ভাবন করলাম, এখনো অনুমোদন পেলাম না। ভেতরে ভেতরে একটা ধারণাও হয়তো তৈরি হয়েছিল যে, অল্প সময়ের মধ্যে ওয়ার্ক পারমিট পেয়ে যাব।’

গণবিশ্ববিদ্যালয় সূত্রে জানা গেছে, ড. বিজনের ওয়ার্ক পারমিটের জন্যে আবেদন করা হয়েছে। নতুন করে তার পদের বিজ্ঞপ্তি দিতে বলা হয়েছিল। সেটা সম্পন্ন হয়েছে। ট্যাক্সসহ আরও কিছু কাগজ চেয়েছিল, তাও জমা দেওয়া হয়েছে। আরও একটি বিষয় বলা হয়েছে, ওয়ার্ক পারমিট পেলে বাংলাদেশের বাইরে থেকে ভিসা প্রক্রিয়া সম্পন্ন করে তারপর আসতে হবে।

এ ব্যাপারে ড. বিজন বলেন, ‘আমার ওয়ার্ক পারমিটের জন্যে গণবিশ্ববিদ্যালয়ের পক্ষ থেকে প্রয়োজনীয় সব কাগজপত্র জমা দেওয়া হয়েছে। ধারণা করছি, প্রক্রিয়া সম্পন্ন হতে সময় লাগবে। প্রক্রিয়া বা আইনের প্রতি আমি সম্পূর্ণ শ্রদ্ধাশীল। যে দেশে জন্ম, বেড়ে ওঠা, কাদামাটির গন্ধ, বিশেষ কারণে আমি অন্য একটি ভৌগলিক অংশের বাসিন্দা। কাগজপত্র অনুযায়ী, আমার সিঙ্গাপুরের পাসপোর্ট, আমি সিঙ্গাপুরের নাগরিক। কিন্তু বাংলাদেশ তো আমার জন্মভূমি। সেই দেশের ওয়ার্ক পারমিট পাব না, কল্পনাও করতে চাই না। এমন তো না যে আমি অর্থের জন্যে চাকরি করতে এসেছি। এর চেয়ে পাঁচ-সাত গুণ বেশি সুবিধায় সিঙ্গাপুরসহ অন্য কোনো দেশে কাজ করা মোটেই কঠিন কিছু নয়। কিন্তু আমি জন্মভূমিতেই কাজ করতে চাই।’

‘আমার তো আর অর্থ-সম্পদের দরকার নেই। যাই হোক, যদি ওয়ার্ক পারমিট পাই তবে সেই কাগজপত্র সিঙ্গাপুরের বাংলাদেশ দূতাবাসে জমা দিতে হবে। তারা এমপ্লয়মেন্ট ভিসা দেবে। হয়তো ফিরে আসব প্রিয় জন্মভূমিতে। অ্যান্টিজেন ও অ্যান্টিবডি কিট যে পর্যায়ে রেখে গেলাম, অনুমোদন পেলে উৎপাদনে যেতে পারবে গণস্বাস্থ্য কেন্দ্র। তবে কিছু কারণে আমার উপস্থিত থাকার প্রয়োজন হতে পারে। যদি উপস্থিত থাকতে নাও পারি, সিঙ্গাপুর থেকেই সহায়তা করার চেষ্টা করব’, বলছিলেন এই বিজ্ঞানী।

উল্লেখ্য, গণস্বাস্থ্য কেন্দ্র ড. বিজন কুমার শীলদের উদ্ভাবিত অ্যান্টিজেন ও অ্যান্টিবডি কিটের ঘোষণা দেয় মার্চ মাসের দ্বিতীয় সপ্তাহে। অনুমোদনের জন্যে আবেদন করে বাংলাদেশ ঔষধ প্রশাসন অধিদপ্তরের কাছে। র‌্যাপিড কিট বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা কর্তৃক অনুমোদিত নয়, পৃথিবীর কোথাও ব্যবহার হয় না— ইত্যাদি কথা বলা হতে থাকে। সরকার সমর্থক চিকিৎসকদের অনেকে বলতে শুরু করেন, এই কিট মানসম্পন্ন নয়। পরীক্ষার আগেই সমালোচনা চলতে থাকে। বেশ সময় নিয়ে ওষুধ প্রশাসন অধিদপ্তর ৩০ এপ্রিল বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়কে (বিএসএমএমইউ) গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের কিট পরীক্ষার অনুমতি দেয়।

পরে ২ মে বিএসএমএমইউ গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের কিট পরীক্ষার জন্যে ছয় সদস্যের কমিটি গঠন করে। তারপর গণস্বাস্থ্য কেন্দ্র ট্রায়ালের জন্যে কিট জমা দেয়। অভিযোগ আসে, অত্যন্ত ধীর গতিতে পরীক্ষা চলছে। প্রায় দেড় মাস পর ১৭ জুন বিএসএমএমইউ অ্যান্টিবডি টেস্ট কিট পরীক্ষার রিপোর্ট দেয়। তার আগেই বিএসএমএমইউ কর্তৃপক্ষের অ্যান্টিজেন টেস্ট কিটের নমুনা সংগ্রহ পদ্ধতিতে ত্রুটি ধরা পড়ে। গণস্বাস্থ্য কেন্দ্র পরীক্ষা স্থগিত রাখার আবেদন করে। অল্প সময়ের মধ্যে গণস্বাস্থ্য কেন্দ্র অ্যান্টিজেন কিটের নমুনা সংগ্রহের ডিভাইস তৈরি করে দেয়। তারপর থেকে অ্যান্টিজেন কিট পরীক্ষা নিয়ে চিঠি চালাচালি চলছে। পরীক্ষা আর শুরু হয়নি।

বিএসএমএমইউ পরীক্ষায় অ্যান্টিবডি কিটের কার্যকারিতা ৭০ শতাংশ সফল হিসেবে প্রমাণ হয়। কিন্তু, আরও মান উন্নয়নের পরামর্শ দিয়ে ঔষধ প্রশাসন অধিদপ্তর অনুমোদন না দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেয়। এরপর গণস্বাস্থ্য কেন্দ্র কিটের মান আরও উন্নত করেছে বলে একাধিকবার জানান ড. বিজন কুমার শীল ও ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী। কিন্তু পুনরায় পরীক্ষার জন্যে যে নীতিমালা নির্ধারণ করা হয়েছে, তা পূরণ করা অসম্ভব বলে মনে করেন ড. বিজন। তারপর থেকেই বিষয়টি আটকে আছে।

সোনালীনিউজ/এএস

Wordbridge School
Link copied!