• ঢাকা
  • মঙ্গলবার, ১৯ মার্চ, ২০২৪, ৫ চৈত্র ১৪৩০

গণপূর্তের দুই প্রকৌশলীর দুর্নীতি তদন্তে মাঠে দুদক


নিজস্ব প্রতিবেদক ডিসেম্বর ৭, ২০১৯, ১২:০৬ এএম
গণপূর্তের দুই প্রকৌশলীর দুর্নীতি তদন্তে মাঠে দুদক

ঢাকা : গণপূর্ত অধিদপ্তরের দুই প্রকৌশলীর দুর্নীতির অভিযোগ তদন্তে মাঠে নেমেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)।

সম্প্রতি গণপূর্ত ঠিকাদার সমিতির পক্ষে সোহেল রানা নামে এক ব্যক্তি গণপূর্ত অধিদপ্তরের অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলী মোসলেহ উদ্দিন ও ড. মইনুল ইসলামের বিরুদ্ধে দুর্নীতি দমন কমিশনের চেয়ারম্যান বরাবর অভিযোগ দায়ের করেন। সেই অভিযোগের সত্যতা যাচাইয়ে কাজ করছে কমিশন। দুদকের দায়িত্বশীল একজন কর্মকর্তা বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।

দুদকে দায়েক করা অভিযোগপত্রে সোহেল রানা বলেন, গণপূর্ত অধিদপ্তরের অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলী মোসলেহ উদ্দিন এবং ড. মইনুল ইসলামের সীমাহীন দুর্নীতির ফলে প্রতিষ্ঠানটি নিমজ্জিত হতে বসেছে। দুর্নীতির বিরুদ্ধে প্রধানমন্ত্রী ও গণপূর্ত মন্ত্রীর জিরো টলারেন্স নীতির কোনো তোয়াক্কাই করেননি গণপূর্ত অধিদপ্তরের এই দুই প্রকৌশলী। তারা বিভিন্ন ঠিকাদার থেকে পার্সেন্টেজ নিয়ে কাজ পাইয়ে দিতেন। অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলী ড. মঈনুল ইসলাম অতীতে উচ্চশিক্ষার জন্য ৩ বছরের ছুটি নিয়ে বিদেশ গমন করেন। পরে তিনি বিনা ছুটিতে আরো ৬ (ছয়) বছর বিদেশে ছিলেন।

এ সময় চাকরি শৃঙ্খলা ভঙ্গ করায় তাকে সাময়িকভাবে বরখাস্ত করা হয় এবং তার বিরুদ্ধে বিভাগীয় মামলা দায়ের করা হয়। দীর্ঘ প্রায় নয় বছর পর দেশে ফিরে তিনি গণপূর্ত মন্ত্রণালয় ও গণপূর্ত অধিদপ্তরের কয়েকজন কর্মকর্তাকে বিশেষ উপঢৌকনের মাধ্যমে ‘ম্যানেজ’ করে আদালতে জাল কাগজপত্র জমা দিয়ে চাকরিতে স্ব-পদে ফিরে আসেন। গত ২০১৮ সালের ৫ জুন র্যাব সদর দপ্তরের কাজের জন্য টেন্ডার আহ্বান করা হয়।

এই সময়ের টেন্ডার নিষ্পতির চেয়ারম্যান ছিলেন গণপূর্তের অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলী প্রকল্প ও বিশেষ প্রকল্পের (পিএনএসপি) বর্তমান কর্মকর্তা ড. মঈনুল ইসলাম। প্রচলিত বিধি অনুযায়ী প্রকল্পের দরপত্র গণপূর্তের ঢাকা সার্কেল-৩ থেকে আহ্বান ও তৎকালীন ঢাকা গণপূর্ত জোন থেকে মূল্যায়ন দেওয়ার কথা।

র‌্যাব সদর দপ্তরের কাজের টেন্ডার গণপূর্তের ঢাকা সার্কেল-৩ এর অধীনে কিন্তু কোনো নিয়মনীতি না মেনে বর্তমান অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলী ড. মঈনুল ইসলাম ও তৎকালীন প্রধান প্রকৌশলী মো. রফিকুল ইসলামের সঙ্গে যোগসাজশে অতিরিক্ত কমিশন আদায়ের জন্য গণপূর্তের সদর দপ্তর থেকে টেন্ডার আহ্বান করা হয়।

উত্তরায় র্যাবের হেডকোয়ার্টার নির্মাণে ৫৫০ কোটি টাকার কাজে সমান সমান অথবা কিছু কম নেওয়ার কথা, সেখানে ১০% বেশিতে কাজ দিয়েছেন জি কে শামীমের প্রতিষ্ঠান জি কে বিল্ডার্সকে। এমনিভাবে সরকারের বড় অংশের লোকসান দিয়ে নিজের পকেট ভারী করেছেন ড. মঈনুলসহ তার দোসররা।

এছাড়া সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে স্বাধীনতাস্তম্ভ ভবন নির্মাণে ১৫০ কোটি টাকার প্রকল্প ৫% বেশিতে একজন ঠিকাদারকে দিয়ে তার থেকে ১৩.৫% হারে ঘুষ নিয়েছে ড. মঈনুল ও তার সহযোগীরা।

সোহেল রানা জানান, মোসলেহ উদ্দিন গণপূর্ত ঢাকা জোনে আসার জন্য দুই কোটি টাকা বাজেট নিয়ে তদবির করেন এবং মাননীয় গণপূর্তমন্ত্রীর কানে এলে তার পোস্টিং প্রস্তাব মন্ত্রণালয় থেকে ফেরত পাঠিয়ে দেন। এরপর মন্ত্রীকে তার বিরুদ্ধে ওঠা দুর্নীতির অভিযোগকে বানোয়াট বলে ভুল বুঝিয়ে ঢাকা জোনে পোস্টিং করানো হয়।

সোহেল রানা আরো বলেন, সম্প্রতি রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের বালিশ কেলেঙ্কারির ঘটনা হাইকোর্ট পর্যন্ত গড়ানোর কারণে অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে তদন্ত হলেও গণপূর্ত অধিদপ্তরের বেশ কয়েকজন প্রকৌশলীর বিরুদ্ধে ইতোপূর্বে অনিয়ম দুর্নীতির অভিযোগ ওঠার পরও কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। এমনকি জাতীয় সংসদের তদন্ত কমিটি সংসদ ভবন এলাকার দায়িত্বে থাকা কয়েকজন প্রকৌশলীর বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগে বিভাগীয় ব্যবস্থা গ্রহণের সুপারিশ করলেও তা মানেনি গণপূর্ত অধিদপ্তর। বরং তাদের কয়েক দফা পদোন্নতি দেওয়া হয়েছে।

বিগত অষ্টম জাতীয় সংসদের অনিয়ম দুর্নীতি তদন্তে অ্যাডভোকেট ফজলে রাব্বী মিয়াকে (বর্তমানে ডেপুটি স্পিকার) প্রধান করে গঠিত সংসদীয় তদন্ত কমিটির প্রতিবেদনে সংসদের গণপূর্ত বিভাগের বিভিন্ন অনিয়ম দুর্নীতি প্রমাণিত হওয়ায় তখনকার দায়িত্বপ্রাপ্ত প্রকৌশলীদের বিরুদ্ধে বিভাগীয় ব্যবস্থা গ্রহণের সুপারিশ করা হয়েছিল।

কিন্তু তদন্ত কমিটির সুপারিশের আলোকে সাবেক স্পিকার জমির উদ্দিন সরকার ও ডেপুটি স্পিকার অ্যাডভোকেট আখতার হামিদ সিদ্দিকীর বিরুদ্ধে মামলা হলেও ধরাছোঁয়ার বাইরে রয়ে গেছেন গণপূর্তের অভিযুক্ত প্রকৌশলীরা।

অভিযোগে বলা হয়, অষ্টম সংসদ আমলে গণপূর্ত শেরে বাংলা বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী মহসিন মিয়া এবং দুজন উপবিভাগীয় প্রকৌশলী জিল্লুর রহমান ও মোসলেহ উদ্দিন দায়িত্বে ছিলেন। তদন্ত কমিটি কেনাকাটা ও সংস্কারকাজে অনিয়মের পাশাপাশি সংসদ লেকের সঙ্গে হাঁসের শেড নির্মাণে দুর্নীতির অভিযোগের প্রমাণ পায়।

কিন্তু তদন্ত কমিটির সুপারিশ অনুযায়ী তাদের বিরুদ্ধে বিভাগীয় ব্যবস্থা না নিয়ে নির্বাহী প্রকৌশলী মহসিন মিয়াকে দুই দফা পদোন্নতি দিয়ে অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলী করা হয়। তিনি অবসরে চলে গেছেন।

এছাড়া উপ-বিভাগীয় প্রকৌশলী মোসলেহ উদ্দিনকে তিন দফা পদোন্নতি দিয়ে বর্তমানে অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলী ও জিল্লুর রহমানকে দুই দফা পদোন্নতি দিয়ে তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী করা হয়েছে। এর মধ্যে জিল্লুর রহমান আলোচিত রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ প্রকল্পের অভিযুক্ত কর্মকর্তা। তদন্ত কমিটির সুপারিশে তাকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে।
বিএনপি-জামায়াত জোটের শাসনামলে সংসদ ভবনের মতো গুরুত্বপূর্ণ জায়গায় দায়িত্ব পালন এবং ক্ষমতার অপব্যবহার করা মোসলেহ উদ্দিন তিন দফায় পদোন্নতি পেয়ে এখন চট্টগ্রাম জোনের অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলী।

সম্প্রতি তাকে ঢাকা জোনে পদায়ন করতে সরকারের উচ্চমহলে ব্যাপক তদবির করা হয়েছে। সাধারণত কোনো তদন্ত প্রতিবেদন সংসদে উত্থাপিত হলে ওই প্রতিবেদনের সব সুপারিশই বাস্তবায়ন করা বাধ্যবাধকতার মধ্যে পড়ে। বিষয়টি উপেক্ষা করে গণপূর্ত অধিদপ্তর। এসব দুর্নীতির জন্য একমাত্র বলির পাঁঠা হয়েছেন উৎপল কুমার দে, অথচ অন্য রাঘব বোয়ালেরা রয়েছেন ধরাছোঁয়ার বাইরে।

এ ব্যাপারে দুদকের দায়িত্বশীল এক কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, আমরা অভিযোগ পেয়েছি। সেটি যাচাই-বাছাই চলছে। তদন্তে দুই প্রকৌশলীর দুর্নীতির প্রমাণ পেলে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

সোনালীনিউজ/এমটিআই

Wordbridge School
Link copied!