• ঢাকা
  • শনিবার, ২৭ এপ্রিল, ২০২৪, ১৪ বৈশাখ ১৪৩১

ছেলেদের কী দেখে প্রেমে পড়ে মেয়েরা?


লাইফস্টাইল ডেস্ক জুন ১২, ২০১৯, ১১:৫৪ এএম
ছেলেদের কী দেখে প্রেমে পড়ে মেয়েরা?

ঢাকা: একজন নারীর মনে পুরুষের কোন বিষয়গুলো বেশি স্থান পায়, এই নিয়ে অনেক ব্যাখ্যা বিভিন্ন জায়গায় পাওয়া গেছে। কিন্তু খুবই কম ব্যাখ্যা পড়েছি, যা আমার কাছে পারফেক্ট মনে হয়েছে। তার মানে এই নয় যে, একজন পুরুষকে বেছে নেয়ার ক্ষেত্রে সব নারীদের পছন্দ একই রকম হবে। পছন্দ-অপছন্দ অবশ্যই নারীদের আছে তবে সেটা একেক জনের একেক রকম। কেউ চেহারা দেখে পছন্দ করলেও আবার কেউ দেখে মন। কেউ উচ্চতা দেখে পছন্দ করলেও আবার কেউ দেখে টাকা। কারো সিক্স প্যাক বডিতে মন ঘামলেও কারো চায় বাড়ি গাড়ি, আবার কারো সৌন্দর্য আসল হলেও কারো চায় জমিদারী।

সত্যি কথা বলতে প্রত্যেক মেয়ে প্রত্যেক ছেলেকে পছন্দ করে না। এমন যদি হত, সকল মেয়েদের পছন্দ একই হতো, তাহলে সকলের মন্ত্রীর ছেলে, এমপির ছেলে, ডাক্তার ছেলে, ইঞ্জিনিয়ার ছেলে, পুলিশ, সাংবাদিক, মাস্তান, গুন্ডা, সিনেমার নায়ক প্রভৃতিকে পছন্দ হতো। কিন্তু এমন না বলে, কেউ পছন্দ করে ডাক্তারদের কেউ আবার ইঞ্জিনিয়ারদের কেউ প্রেমিক পুরুষদের আবার কেউ সাংবাদিকদের। 
 
মূলত একেক নারীর পছন্দই একেকরকম। তাই কার মনে কে হিরো, সেটা বোঝা দুষ্কর। যেমনটি হয়েছে পেশায় চিকিৎসক ডা. শামসুন্নাহার বীথির কাছে। তিনি মনে করেন পুরুষের সৌন্দর্য মানেই তার পরিচ্ছন্নতা, সেটা হোক শরীরের বা মনের। তার ভাষ্য মতে, আমি যখন মেডিকেলে পড়তাম তখন আমাকে এক বড় ভাই খুব পছন্দ করতো। তিনি দেখতেও বেশ সুন্দর ছিলেন। তারপরেও আমি উনাকে কখনো অনুভব করতে পারিনি। কারণ তিনি কখনো সুগন্ধি ব্যবহার করতেন না, যা ছিল আমার কাছে খুব অপছন্দনীয় বিষয়।

বীথি আরো বলেন, আমার কাছে শরীর ও মন দুটোর পরিচ্ছন্নতা থাকা ছেলেই পছন্দ। হোক সে কাঁচা পাকা চুলের অধিকারী অথবা টাক। তবে টাকের ক্ষেত্রে অবশ্য মাথা চকচকে হওয়াটা বাঞ্ছনীয়।

এদিকে, ব্যাবসায়ী নারী নওরিন আক্তারের পছন্দ কিন্তু আবার অন্যরকম। তিনি চান এমন পুরুষ, যিনি বাইরে থেকে কিছুটা এলোমেলো, কিন্তু ভেতরে পুরোটা গোছানো প্রকৃতির। অর্থাৎ বাইরে থেকে উরাধুরা হলেও মনটা চায় বেশ গোছানো। তার ভাষ্য, ছেলে খুব ফরমাল হোক, সেটা চায় না আমি। যেমন আমার মনে ধরে না এমন কোন ছেলে, যে কিনা পাঞ্জাবি পড়লো, কাঁধে ঝোলা ব্যাগ, চোখে চশমা, চাপ দাড়ি। এছাড়া এমন কোন কিছু পড়লো সে, যার সঙ্গে মিলিয়ে বাকি সব ম্যাচিং করলো। 
 
এমন ছেলে সত্যি আমার পছন্দ না। তবে ওই ধরণের ছেলে আমার পছন্দ, যে কিনা বেশ গুছিয়ে কথা বলেন, আর খুব যুক্তি সংগত কথা বলেন। আর অপরিপক্ব কোনো কাজই করেন না তিনি।  

এদিকে, প্রামাণ্যচিত্র অভিনেত্রী ফারহানা হামিদের পছন্দ কিন্তু কারো সঙ্গে মিলছে না। তিনি ব্যক্তিগতভাবে সৃজনশীল, আত্মবিশ্বাসী সেইসঙ্গে শারীরিক ফিটনেস এবং বাচনভঙ্গির ব্যাপারে সচেতন পুরুষদের বেশ পছন্দ করেন। একটি ছেলে লম্বা, খাটো, কালো বা ফর্সা সব ধরণের হতে পারে। যদি সে তার শরীরের ফিটনেস নিয়ে যত্নশীল না হয় অথবা ফ্যাশন সচেতন না হয়, সেক্ষেত্রে তার মনেই ধরে না। এছাড়া তিনি চায় এমন কোন ছেলে, যে কিনা খুব স্মার্ট, অন্যকে সম্মান দিয়ে কথা বলে। 

অপরদিকে ভারী কণ্ঠের পুরুষে পছন্দ বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তা ফারজানা ইয়াসমিনের। তার কাছে গায়ের রং তেমন গুরুত্ব না পেলেও লম্বা গড়ন সেইসঙ্গে ক্যারিয়ারে সুপ্রতিষ্ঠিত পুরুষের প্রতি দুর্বলতা রয়েছে বলে জানান তিনি। তবে তিনি এটাও মনে করেন যে, একজন পুরুষের সবকিছুর ওপরে তার মানসিকতাই মুখ্য।

সবার আগে আমার ভাল লাগে পুরুষের হাইট, তার কণ্ঠ আর তার হাত পা পরিষ্কার কিনা। মোটামুটি যে পুরুষ পরিষ্কার পরিচ্ছন্নতা, পোশাকি রুচিশীলতা, মার্জিত আচরণ এবং কথাবার্তায় রসবোধকে বেশি গুরুত্ব দিয়ে থাকেন, এমনই ছেলে বেশি পছন্দ স্কুল শিক্ষিক তাসনিম চৌধুরীর। তাছাড়া পোশাকের সঙ্গে মানিয়ে সে কেমন জুতা পরছে, সেখানেও তার রুচি অনেকটা পরখ করা যায়।
 
তবে তিনি মনে করেন, তার কাছে বেশি জরুরি কেয়ারিং মেন্টালিটি আর তার সেন্স অব হিউমর। যে পুরুষ তার নারী সঙ্গীর ছোট ছোট বিষয়গুলো খেয়াল রাখে। তাকে হাসাতে পারে, তার চাইতে আকর্ষণীয় আর আবেদনময় আর কিছুই নেই। ইতিহাসের বিভিন্ন নিদর্শনেও একজন পুরুষকে সুদর্শন ও সুঠাম দেহের দেখানো হয়। তাই এই ধরণের ছেলে তার বেশি পছন্দ।

এদিকে টেলিভিশন রিপোর্টার বীথি সপ্তর্ষি একজন পুরুষের বাহ্যিক সৌন্দর্যের চাইতে তার বাচনভঙ্গি, কথাবার্তার ধরণ, দায়িত্বশীলতা, সমাজ ও বিশ্বকে দেখার দৃষ্টিভঙ্গি এবং মানুষের প্রতি তার সম্মানবোধকে বেশি গুরুত্ব দিয়ে থাকেন। সমাজের যে বেঁধে দেয়া সুন্দর্যের সংজ্ঞা আছে যেমন টল ডার্ক হ্যান্ডসাম, এই বিষয়গুলো আমাকে একদমই টানে না।

আমি একজন পুরুষকে পছন্দ করার ক্ষেত্রে তিনটি বিষয়কে গুরুত্ব দেই, প্রথমত তার কণ্ঠ ও বাচনভঙ্গি, দ্বিতীয়ত কথা বলার বিষয়বস্তু ও তার গভীরতা এবং তৃতীয়ত যে সাধারণ আদব কায়দা মানে, এমন প্রকৃতির। যেমন খাওয়ার সময় শব্দ না করা, নাকে হাত না দেয়া, সেগুলো মেইনটেইন করছে কিনা।

এদিকে, পুরুষের প্রতি নারীদের এই দৃষ্টিভঙ্গির বৈচিত্র্য, বয়স-ভেদে বদলায় বলে মনে করেন ফ্যাশন ডিজাইনার ও মিডিয়া ব্যক্তিত্ব তাহমিনা শৈলী। এর পেছনে শিক্ষা, সচেতনতা এবং নারীর স্বাধীনভাবে মত প্রকাশের সুযোগকে অন্যতম কারণ হিসেবে মনে করেন তিনি। বর্তমানে মেয়েদের এমন বিষয়ে খোলামেলা কথা বলাকে বেশ ইতিবাচক দৃষ্টিতেই দেখছেন মিজ শৈলী। 

তিনি বলেন, আগেকার ইতিহাস, ধর্মের বইয়ে পুরুষের এক ধরনের বর্ণনা ছিল যে পুরুষ মানেই সুঠাম দেহ-শক্তিশালী-সাহসী, সেই সবার ওপরে কথা বলে। তেমনি নারীর ক্ষেত্রেও শুধুমাত্র তার বাহ্যিক কিছু সৌন্দর্যের বর্ণনা দেয়া হতো। সেই বিষয়টি কিন্তু এখন আর নেই। তবে এটা আশাবাঞ্জক যে নারীরা এটা নিয়ে কথা বলছেন। তবে নারী ও পুরুষের সৌন্দর্য নিয়ে সমাজে যে গৎবাঁধা ধারণা প্রচলিত আছে সেখান থেকে বেরিয়ে আসার প্রয়োজন বলে মনে করেন তিনি। সর্বোপরি নারীর মনের মতো তার চাওয়া-পাওয়ার বিষয়টিও রহস্যময়।

মোদ্দাকথা একজন নারী যেমন পুরুষের বিভিন্ন দিক বিবেচনা করে মনে টানেন, ঠিক একজন পুরুষও কিন্তু নারীর কিছু বৈশিষ্ট্য দেখে তাকে পছন্দ করেন। তাই পছন্দ হচ্ছে প্রত্যেক মানুষের বেলায় একেকরকম। এই ক্ষেত্রে সব নারীর টেস্ট কিন্তু একই হবে তা কিন্তু নয়।

সোনালীনিউজ/ঢাকা/এসআই

Wordbridge School
Link copied!