• ঢাকা
  • শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল, ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

জেনে নিন রোজাদারের দোয়া কোন সময় কবুল হয়


ধর্মচিন্তা ডেস্ক মে ৫, ২০১৯, ০৬:১৬ পিএম
জেনে নিন রোজাদারের দোয়া কোন সময় কবুল হয়

ছবি সংগৃহীত

ঢাকা: ‘দোয়া’ শব্দের অর্থ প্রার্থনা করা, আহ্বান করা, কোনো কিছু পাওয়ার জন্য আকুতি-মিনতি করা প্রভৃতি। দোয়া হচ্ছে আল্লাহর সঙ্গে বান্দার কথোপকথনের অন্যতম প্রধান মাধ্যম। মাহে রমজানে আল্লাহর কাছে পাপমুক্তির জন্য এমনভাবে দোয়া করতে হবে যেন নিজেদের মন ও হৃদয় পরস্পরের প্রতি সহানুভূতিশীল হয়। সর্বোপরি মুসলমানেরা যেন সুস্থ থেকে পবিত্র রমজান মাসের রোজাগুলো সঠিকভাবে পালন করতে পারেন, সে জন্য সব সময় আল্লাহর কাছে এভাবে দোয়া করতে হবে, ‘হে আল্লাহ! তুমি ক্ষমাশীল, ক্ষমাকে তুমি পছন্দও করো, অতএব আমাকে ক্ষমা করো।’ দোয়ার মাধ্যমে বান্দা আল্লাহর ঘনিষ্ঠতা অর্জন করতে পারে ও তাঁর উষ্ণ পরশে ধন্য হতে পারে। রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘সিজদায় বান্দা তার প্রভুর অধিক নিকটবর্তী হয়ে থাকে, তাই তোমরা অধিক দোয়া করো।’ (মুসলিম) ‘আল্লাহর কাছে দোয়া অপেক্ষা উচ্চ মর্যাদাসম্পন্ন কোনো বস্তু নেই।’ তিনি আরও বলেছেন, ‘দোয়া হচ্ছে ইবাদতের মগজ।’ (তিরমিজি)

পবিত্র কোরআনের বিভিন্ন আয়াতে পাপমুক্তির জন্য দোয়া কীভাবে করতে হবে, এর পদ্ধতি বর্ণনা করা হয়েছে। যেমন—ইহকাল ও পরকালের সফলতার জন্য কীভাবে দোয়া করতে হবে এ মর্মে তিনি শিক্ষা দিয়েছেন, ‘হে আমার প্রতিপালক! তুমি আমাকে দুনিয়া এবং আখিরাত উভয়ের মধ্যে সফলতা দান করো এবং আমাকে জাহান্নামের কঠিন শাস্তি থেকে মুক্তি দাও।’ অন্যত্র দোয়া শিক্ষা দিয়েছেন এভাবে, ‘হে আমার প্রতিপালক! আমি আমার নিজের ওপর অত্যাচার করেছি; এখন যদি তুমি আমাকে মাফ না করো এবং আমার ওপর দয়া না করো; তাহলে নিশ্চয়ই আমি ক্ষতিগ্রস্তদের অন্তর্ভুক্ত হব।’

দোয়ার মধ্যে মানুষের ইহকালীন ও পারলৌকিক সফলতা নিহিত। আল্লাহ তাআলা ওই মুহূর্তটিকে অধিক পছন্দ করেন যখন বান্দা মানবসভ্যতার চরম বিপদ-আপদে ধৈর্যধারণ ও সম্পূর্ণ আত্মসমর্পণ করে কায়মনোবাক্যে আল্লাহর সাহায্য প্রার্থনা করে, তাঁর কাছে মাগফিরাত ও নাজাত কামনা করে। নবী করিম (সা.) রমজান মাসে দোয়া ও ক্ষমা প্রার্থনা সম্পর্কে বলেছেন, ‘এ মাসে তোমরা চারটি কাজ অধিক পরিমাণে করো, তন্মধ্যে দুটি কাজ এমন, যা দ্বারা আল্লাহকে সন্তুষ্ট করা যাবে। আর অপর দুটি এমন যা থেকে তোমরা মুখাপেক্ষীহীন হতে পারবে না। প্রথম দুটি হলো ১. বেশি বেশি ‘লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু’-এর জিকির করা; ২. আল্লাহর কাছে মাগফিরাত তথা ক্ষমা প্রার্থনা করা। আর যে দুটি কাজ না করে আমাদের কোনো উপায় নেই তা হলো- ১. জান্নাত চাওয়া, ২. জাহান্নাম থেকে মুক্তি চাওয়া।

রমজান মাসে রাত্রি জাগরণ করে তারাবি ও তাহাজ্জুদ নামাজে দাঁড়িয়ে পবিত্র কোরআন তিলাওয়াত করা, আত্মসমালোচনা ও ক্ষমা প্রার্থনা করা প্রভৃতি ইবাদত-বন্দেগিতে মশগুল থাকার চেষ্টা করা উচিত—এটা তাকওয়া অর্জনের জন্য অত্যন্ত জরুরি। রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘এমন দুটি কলেমা বা বাক্য আছে, যা উচ্চারণ করতে খুবই সহজ, কিন্তু কিয়ামতের দিন আমলনামা ওজনের পাল্লায় খুব ভারী এবং আল্লাহর কাছে খুবই পছন্দনীয়। তা হলো ‘সুবহানাল্লাহি ওয়া বিহামদিহি, সুবহানাল্লাহিল আজিম।’ (বুখারি ও মুসলিম)  মাহে রমজান মানুষের সামনে ইবাদত-বন্দেগির মাধ্যমে দোয়া কবুলের এমন একটা সুবর্ণ সময় যে আল্লাহ তাআলা রোজাদারদের গুনাহ থেকে মুক্ত হয়ে নতুন জীবন লাভ করার সুযোগ সৃষ্টি করে দিয়েছেন।তাই নবী করিম (সা.) বলেছেন, ‘রোজাদারের নিদ্রা ইবাদততুল্য, চুপ থাকা তাসবিহ-তাহলিলতুল্য, আমল ইবাদত সওয়াব হাসিলে বেশি অগ্রগণ্য, দোয়া কবুলযোগ্য ও তার গুনাহ ক্ষমার যোগ্য।’ (বায়হাকি)

সিয়াম সাধনার মাধ্যমে আত্মসমালোচনা ও আত্মোপলব্ধিতে মানুষ যখন পৌঁছাতে সক্ষম হয়, তখন আল্লাহ তার দোয়া কবুল করেন ও গুনাহখাতা মাফ করে দেন। রাসুলুল্লাহ (সা.) ফরমান, ‘আল্লাহ তাআলা (মাহে রমজানে) দুনিয়ার নিকটবর্তী আসমানে আসেন এবং ডেকে বলেন, ‘কে আছে এমন যে আমার কাছে নিজের গুনাহ মাফ চাইবে আর আমি মাফ করে দেব।’ (বুখারি ও মুসলিম) পবিত্র কোরআনে আল্লাহ তাআলা ঘোষণা করেছেন, ‘আমার বান্দারা যখন আমার সম্পর্কে তোমাকে প্রশ্ন করে, (তাদের জানিয়ে দাও) আমি তো নিকটেই। আহ্বানকারী যখন আমাকে আহ্বান করে (দোয়া করে) আমি তার আহ্বানে সাড়া দিই (দোয়া কবুল করি)। সুতরাং তারাও আমার ডাকে সাড়া দিক এবং আমার ওপর ইমান আনুক, যাতে তারা সঠিক পথে চলতে পারে।’ (সূরা আল-বাকারা, আয়াত: ১৮৬)

রোজাদার দিনে রোজা রেখে রাত জেগে জিকির-আজকার, পবিত্র কোরআন তিলাওয়াত, তারাবি ও তাহাজ্জুদ নামাজের মাধ্যমে মহান আল্লাহর নৈকট্য লাভ করার কারণে রোজাদারের দোয়া কবুল হয়। রোজার মাধ্যমে রোজাদার নিজেকে পুরস্কার, সম্মান, দয়া, অনুগ্রহসহ আল্লাহর রহমত ও মাগফিরাতের উপযুক্ত করে তোলেন। একপর্যায়ে রোজাদার আল্লাহর প্রিয় বান্দা হিসেবে গণ্য হন। তাই রোজাদার মাহে রমজানে দোয়া ও ইস্তেগফার করে আল্লাহর কাছে যা চান আল্লাহ তাঁর সে প্রার্থনা কবুল করেন। রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘তিন ধরনের লোকের দোয়া কখনো ফেরত দেওয়া হয় না। ইফতারের সময় রোজাদারের দোয়া, জালেমের বিরুদ্ধে মজলুমের দোয়া, বাড়িতে ফিরে না আসা পর্যন্ত মুসাফিরের দোয়া।’ (তিরমিজি)

মাহে রমজান বিশেষভাবে দোয়া কবুলের মাস। মাহে রমজানের প্রতিটি মুহূর্ত বিরাট কল্যাণ, রহমত, বরকত ও মাগফিরাতের ধারক-বাহক। তাই মহান আল্লাহর দরবারে পাপমুক্তির জন্যদোয়ারমাধ্যমে নিজের দুই হাত অবশ্যই সম্প্রসারণ করা উচিত। ইফতারের আগে, সেহ্‌রির আগে ও পরে, তাহাজ্জুদ নামাজের সমাপনান্তে আল্লাহর কাছে দোয়া ও ক্ষমা প্রার্থনা করলে তিনি তা কবুল করেন। সাধারণ সময় ছাড়াও এ সময়গুলোতে বেশি বেশি করে দোয়া, ক্ষমা প্রার্থনা, তওবা, ইস্তেগফার, দরুদ শরিফ, তাসবিহ, তাহলিল প্রভৃতি জিকিরের মাধ্যমে রমজান মাসে ইবাদত-বন্দেগি করা উচিত।

ড. মুহাম্মদ আবদুল মুনিম খান: বিশ্ববিদ্যালয়ের সহযোগী অধ্যাপক। [email protected]

সোনালীনিউজ/ঢাকা/জেডআই

Wordbridge School
Link copied!