• ঢাকা
  • শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল, ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১
আজ বিশ্ব মানবাধিকার দিবস

থেমে নেই বিচার বহির্ভূত হত্যাকাণ্ড


নিজস্ব প্রতিবেদক ডিসেম্বর ১০, ২০১৯, ০২:২১ পিএম
থেমে নেই বিচার বহির্ভূত হত্যাকাণ্ড

ঢাকা : গত দশ মাসে ৩৪৭ জন সাধারণ মানুষ বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড এবং ৩৯৬ জন শিশু হত্যার শিকার হয়েছেন। মানবাধিকার সংস্থা আইন ও সালিশ কেন্দ্রের এ পরিসংখ্যানে এ তথ্য উঠে এসেছে।

তবে সংশ্লিষ্টরা মনে করছেন, চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে অক্টোবর পর্যন্ত মানবাধিকার লঙ্ঘনের এসব ঘটনার তথ্য পাওয়া গেলে প্রকৃত হিসাব আরো বেশি হবে। এমন প্রেক্ষাপটকে সামনে রেখে আজ পালিত হচ্ছে বিশ্ব মানবাধিকার দিবস।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, থেমে নেই গুম, গুপ্তহত্যা, বিচারবহির্ভূত খুন ও হেফাজতে নির্যাতন ও ন্যায়বিচারের সুযোগহীনতার মতো বিষয়গুলো।

মানবাধিকার লঙ্ঘনের নৃশংসতম ও চরম অপরাধগুলো রাষ্ট্রীয় নীতি ও পৃষ্ঠপোষকতা ছাড়া ঘটার সুযোগ নেই। মানবাধিকারের এসব লঙ্ঘনের কোনোটি বিচ্ছিন্নভাবেও সংঘটিত হয় না, এগুলো পরস্পর সম্পৃক্ত; একটি অপরটিকে আরো গুরুতর দিকে পরিচালিত করে এবং চূড়ান্তভাবে আইনের শাসনকে বিপন্ন করে তোলে।

জানতে চাইলে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান বলেন, আইনশৃঙ্খলা বাহিনী কোনো বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড সংঘটিত করে না। সরকার বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ডকে সমর্থনও করে না। এসব গুম, খুনের ঘটনার সঙ্গে সস্ত্রাসীরা জড়িত। তাদের বিরুদ্ধে সব সময় অভিযান অব্যাহত রয়েছে।

জানতে চাইলে সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা ও মানবাধিকার কর্মী সুলতানা কামাল বলেন, মানবাধিকারের অধিকাংশ ক্ষেত্রেই আমরা পিছিয়ে আছি।

মানবাধিকারের যে সব ইস্যু থাকে, যেমন স্বাধীনভাবে মানুষ জীবনযাপন করতে পারবে।

স্বাধীনভাবে জীবনযাপনের অর্থ হচ্ছে- কারো মুখাপেক্ষী না থাকা, বাক স্বাধীনতা, চলাফেরার স্বাধীনতা, বিশ্বাসের স্বাধীনতা ও সংগঠন করার স্বাধীনতা। কিন্তু এসব বিষয়ে প্রচণ্ড রকম বাধার তৈরি করা হচ্ছে।

বিশেষ করে বাক স্বাধীনতা ও সংগঠন করার স্বাধীনতার ক্ষেত্রে অযাচিত হস্তক্ষেপ করা হচ্ছে। এছাড়া আইনকানুনগুলো যেভাবে প্রয়োগ করা হচ্ছে তাতেও স্বাধীনতা বাধাগ্রস্ত হচ্ছে।

এই মানবাধিকার কর্মী মনে করেন, দেশে বর্তমানে চলাফেরার স্বাধীনতাও নেই। বিশেষ করে নারীদের চলাফেরা নিরাপদ করা যায়নি। নানাবিধ অব্যবস্থাপনার কারণে বাড়ি থেকে বের হয়ে নিরাপদে বাড়ি ফেরার নিশ্চয়তা পাচ্ছি না।

তার মতে, মানবাধিকার মৌলিক শর্ত, সমাজে ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠাতা করা। তবে আমাদের দেশে এখন অধিকার লঙ্ঘন হলে বিচার পর্যন্ত চাইতে আগ্রহবোধ করেন না অনেকেই। এর পক্ষে অনেক উদাহরণও আছে। মানুষ যখন বিচার চান না, তখন বুঝতে মানুষের মনে ন্যায়বিচারের বিশ্বাস অনুপস্থিত।

সুলতানা কামাল বলেন, বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড, মানুষের গুম হওয়া বন্ধ করা যায়নি। বরং এগুলো প্রতিদিনের ঘটনা হয়ে দাঁড়িয়েছে। এসব ঘটনার সঙ্গে রাষ্ট্র কিংবা যেই সম্পৃক্ত থাকুন তাদের থামানো যায়নি। এসব বিষয়কে গুরুত্ব দিচ্ছে বলে আমার মনে হয় না।

আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের দ্বারা মানবাধিবকার লঙ্ঘনের প্রসঙ্গ টেনে এই মানবাধিকার কর্মীর বলেন, যাদের হাতে অধিকার রক্ষার দায়িত্ব তারা যদি অধিকার লঙ্ঘন করে তখন বিষয়টি আরো চিন্তার কারণ হয়ে দাঁড়ায়। শুধু তাই নয়, এসব কর্মকাণ্ড দিন দিন বাড়ছে। কারণ তাদেরকে বিচারের আওতায় আনা হচ্ছে না।  

২০০৯ সালে করা কমিশন আইনের ১৮ (১) ধারা মোতাবেক, কমিশন শৃঙ্খলা বাহিনী বা এর কোনো সদস্যের বিরুদ্ধে মানবাধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগে পেলে সরকারকে চিঠি দিয়ে প্রতিবেদন চাইতে পারে। সরকারের প্রতিবেদন পাওয়ার পর পর্যালোচনা করে কমিশন সত্যতা পেলে ব্যবস্থা নিতে সুপারিশ করার কথা। কিন্তু কার্যত এখানে কমিশনকে পাত্তা দিচ্ছে না সরকার।

সরকারি ও বেসরকারি তথ্য বলছে, মানবাধিকার রক্ষায় জাতীয় মানবাধিকার কমিশন গঠন করা হয়েছে। কিন্তু নিধিরাম সরদারের ভূমিকায় দাঁড়িয়ে আছে এখনো প্রতিষ্ঠানটি। প্রতিষ্ঠার পর থেকে অব্যাবধি মানবাধিকার ইস্যুতে বড় কোনো দৃষ্টান্ত তৈরি করতে পারেনি তারা।

অনেকটা সভা, সেমিনার আর বিবৃতিতে আটকে আছে কিন্তু জাতীয় মানবাধিকার কমিশন আইন-২০০৯ মোতাবেক ব্যাপক ক্ষমতা দেওয়া আছে সংস্থাটির।

তবে সংশ্লিষ্টরা বলছেন, মানবাধিকার লঙ্ঘনের গুরুত্বপূর্ণ সূচকগুলোতে কাজ করতে পারছে না সংস্থাটি। বিশেষ করে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর দ্বারা মানবাধিকার লঙ্ঘনের যেসব ঘটনা সামনে আসছে সেসব ক্ষেত্রে শক্ত কোনো পদক্ষেপ নিতে পারছে না তারা। এমনকি স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কে চিঠি দিয়ে সহায়তা চাইলেও পাচ্ছে না।

কমিশন মানবাধিকার পরিস্থিতির ওপর সার্বক্ষণিক নজরদারি, মানবাধিকার লঙ্ঘনে ব্যবস্থা গ্রহণ, এ সংক্রান্ত সুপারিশ ও পরামর্শসহ আইনি সংস্কারের পরামর্শ দিতে পারে আইন মোতাবেক।

কমিশনের হিসাব বলছে, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যদের বিরুদ্ধে মানবাধিকার লঙ্ঘনের ঘটনা বাড়ছে। ২০১৮ সালে মানবাধিকার কমিশনে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর বিরুদ্ধে মানবাধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগ এসেছে ৪৬টি, যা আগের বছরের দেড়গুণ। ২০১৭ সালে অভিযোগের পরিমাণ ছিল ৩২টি।    

কমিশনের সর্বশেষ প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, এ বছর দেশের জনগণ মাদকবিরোধী অভিযান প্রত্যক্ষ করেছে যাতে মাদক ব্যবসার সঙ্গে জড়িত সন্দেহে অভিযুক্ত করে ৩০০-এর বেশি মানুষকে হত্যা করা হয়েছে।

২০১৮ সালের মে মাসে সরকার মাদকের বিরুদ্ধে অভিযান শুরু করে। এতে পুলিশ, র্যাব এবং অন্যান্য আইনশৃঙ্খলা রক্ষা বাহিনীর সদস্যরা বহু মানুষকে হত্যার অভিযোগে অভিযুক্ত হয়।

মাদকবিরোধী অভিযানকালে বন্দুক-যুদ্ধের ফলে অভিযুক্ত মাদক-চোরাকারবারিদের মৃত্যুর ঘটনা এবং আইনশৃঙ্খলা রক্ষা বাহিনীর সদস্যদের জখম হওয়া দেশব্যাপী তীব্র উদ্বেগের সৃষ্টি করে।

২০১৮ সালে টেকনাফের কাউন্সিলর একরামুল হক গুলিতে নিহত হন। তার পরিবার দাবি করে যে নিরাপত্তা রক্ষীরা তাকে ঠান্ডা মাথায় খুন করেন।  

জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের চেয়ারম্যান তার পরিবারের সঙ্গে দেখা করেন এবং হত্যাকাণ্ডের যথাযথ তদন্ত দাবি করেন। কমিশন থেকে সুনির্দিষ্ট নির্দেশনাসহ স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে পত্র প্রেরণ করা হয়। কিন্তু আজও তার জবাব মেলেনি।

আইন-শৃঙ্খলা রক্ষা বাহিনীর কতিপয় সদস্যের দ্বারা বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড সংঘটনের কথিত অভিযোগ সরকারের জন্য ইমেজ-সংকটের সৃষ্টি করছে।

এদিকে, মানবাধিকার দিবস উপলক্ষে আজ রাজধানীর সোনারগাঁও হোটেলে এক অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়েছে।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এতে প্রধান অতিথি থাকার কথা রয়েছে। এতে সভাপতিত্ব করবেন মানবাধিকার কমিশনের চেয়ারম্যান নাছিমা বেগম। আইনমন্ত্রী আনিসুল হক এতে বিশেষ অতিথি থাকবেন বলে জানানো হয়েছে।

সোনালীনিউজ/এমটিআই

Wordbridge School
Link copied!