• ঢাকা
  • শনিবার, ২৭ এপ্রিল, ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

ধর্ষণ নিয়ে রাজনীতি নয়, সর্বোচ্চ বিচার নিশ্চিত করাই কাম্য


শামীম আহসান সেপ্টেম্বর ২৭, ২০২০, ০৭:৩৮ পিএম
ধর্ষণ নিয়ে রাজনীতি নয়, সর্বোচ্চ বিচার নিশ্চিত করাই কাম্য

ছবি: প্রতিনিধি

চিন্তা করা যায় কতটা বর্বর লম্পট নিকৃষ্ট অমানবিক আমরা! স্ত্রীকে নিয়ে ঘুরতে আসলে স্বামীর কাছ থেকে ছিনিয়ে নিয়ে পালাক্রমে ধর্ষণ করলো দাপিয়ে বেড়ানো কিছু বেপরোয়া ছাত্রলীগ কর্মী। একবার ঐ স্বামী কিংবা স্ত্রীর জায়গায় নিজেকে রেখে ভাবুন তো তাদের হৃদয়ের রক্তক্ষরণ, কান্না, অসহায়ত্ব, কষ্ট, ক্ষোভ এবং জাতির প্রতি ঘৃনার দৃশ্যটা কত  ভয়াবহ হতে পারে! 

আমাদের কি কখনো ক্ষমা করতে পারবেন তিনি? পারবে না। কিছুতেই তাদের সম্মান আমরা ফিরিয়ে দিতে পারবো কি?- তাও পারব না। এর মোটেই  দায়ভার আমাদের নেই? অবশ্যই আছে। এর দায় প্রথমত বর্তায় আমাদের নীতিনির্ধারক ও নেতৃত্বের উপর। যাদের ব্যর্থ নেতৃত্বে সঠিক বিচার হচ্ছে না, হলেও কালক্ষেপণ করা হচ্ছে। আবার এই বেপরোয়া বাহিনী যাদের ছত্রছায়ায় গড়ে উঠেছে তাদের উপর। কথা হলো পুরো ছাত্রলীগকে এ জন্য দায়ী করা যাবে না তবে এ বেপরোয়া কর্মী বাহিনী যে তাদের ছায়াতলে গড়ে উঠেছে সে কথা কি অস্বীকার করা যাবে? নিশ্চয়ই না। 

আবার বিরোধী দলকেই কেন ধর্ষণের বিচার চাইতে হবে? নিজ দলে হলে সাধু ভাবার সুযোগ আছে কি? নাই। ধর্ষণের বিচার তো আইনের নিজস্ব গতিতে হতে হবে। যখনই কোনো ঘটনা নিয়ে তোলপাড় শুরু হয় সে বিষয়ে গুরুত্ব দেওয়া হয়। অন্যথায় চাপা পড়ে যায় সত্য ঘটনা কিংবা ধীর হয়ে যায় আইনের গতি।

ছাত্র অধিকারের হাসান আল মামুন ধর্ষণ করলে তারও সঠিক বিচার হতে হবে তাই বলে ভিপি নূরকে ধর্ষকের খেতাব দিয়ে তার রাজনৈতিক চরিত্র হরণ করার সুযোগ আছে কি? নিশ্চয়ই না। তবে এ ঘটনা সঠিক হলে এবং তিনি অবগত থাকলে এর দায় তিনি পুরোপুরি এড়াতে পারবেন না এর ন্যায় বিচার নিশ্চিত করতে তার যতটুকু করার আছে করতে হবে। দেখা যাক ছাত্র অধিকারের প্রতিবেদনে কি উঠে আসে এটা দেখার বিষয়। অন্যদিকে তাকে যদি ধর্ষকের খেতাব দেওয়া বৈধ হয় তাহলে ছাত্রলীগের ধর্ষনের জন্যও তাদের নেতাদের দায়ী করতে হবে। সাবেক সাধারণ সম্পাদক গোলাম রব্বানী সাহেবকে দেখলাম সেই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রীকে আইনী সহায়তা দিবেন বলে জানিয়েছেন। নিঃসন্দেহে প্রশংসনীয় আচরণ তবে এটা কেন শুধু বিরোধী দলের ক্ষেত্রেই প্রযোজ্য।

বিগত কোনো ধর্ষণের বিষয়ে তো তিনি এভাবে এগিয়ে আসেন নি! হয়তো তিনি সাধারণ ছাত্রদের মতো বিচার চেয়েছিলেন। তাও বাদ দিলাম সিলেটের এমসি কলেজের মেয়েটিকেও কি তিনি আইনী সহায়তা দিবেন? তা তো দিবেন না। তারমানে স্পষ্ট আমরা ধর্ষণ নিয়েও রাজনীতি করি। আমি বলবো, ধর্ষণ চরম ঘৃণিত কাজ এটা যে দলের লোকই করুক না কেন তাকে ঘৃণা করতে হবে। সর্বোচ্চ শাস্তি নিশ্চিত করতে হবে।
উর্ধ্বতনদের বলবো, ধর্ষণের বিরুদ্ধে কঠোর না হলে, ধর্ষণ সামাজিক রূপ নেয়া সময়ের ব্যাপার মাত্র। আপাতত দৃষ্টিতে আমার কথাটা আপনাদের কাছে অমূলক মনে হতে পারে কিন্তু বাস্তবতা তা নয়। ভাবুন তো আমাদের সমাজের কিছু বাস্তবচিত্রের কথা। 

বিগত দশকগুলোতে আমরা যৌতুক, মাদক ও ইভটিজিং বিরোধী ব্যাপক সভা সেমিনার সচেতনতা মূলক কাজ আইন প্রণয়ন করেছি। তাই বলে কি এগুলো আমরা রোধ করতে পেরেছি? পারিনি বরং এখন অহরহ চলছে এগুলো, আমাদের মাঝে সামাজিক বৈধতা পেয়েছে অনেকাংশে। একিভাবে ধর্ষণ কেও রুখে দিতে না পারলে সামাজিক রুপ নেওয়ার সম্ভাবনাই কয়েকদশক পর প্রকট হয়ে দ্বারাবে। পশ্চিমা দেশগুলোর মতো লিভ ট্যুগেদার সহ নানা ফর্মে অবলীলায় সম্মতি কিংবা অসম্মতিতে ধর্ষণ সামাজিক ব্যাধিতে রুপ নেওয়ার সংশয় রয়েছে যথেষ্ট। তাই এটা যাতে সামাজিক রুপ না পায় সে বিষয়ে সবাইকে সচেতন হতে হবে। 

আমাকে হয়তো প্রশ্ন করতে পারেন কিভাবে এটা রোধ করা যেতে পারে? এক্ষেত্রে আমি কয়েকটি কথা বলবো। সকলের সম্মিলিতভাবে চেষ্টা করতে হবে একদম নীতিনির্ধারক পর্যায় থেকে শুরু করে স্থানীয় প্রতিনিধি, রাজনীতিবিদ, সমাজ কর্মী সাধারণ মানুষ সবাই। নীতিনির্ধারকদের কঠোর এবং দ্রুত বিচার নিশ্চিত করতে দরকারে আইন প্রণয়ন করতে হবে। স্বতন্ত্র একটা বিশেষজ্ঞ প্রতিনিধি দল গঠন করে তাদের পরামর্শে এ বিষয়ে কর্মপদ্ধতি হাতে নিতে হবে। যাদের মধ্যে অন্তর্ভুক্ত থাকবেন রাজনীতিবিদ, সমাজবিজ্ঞানী, আলেমসমাজের বিশেষজ্ঞগণ, শিক্ষাবিদ ও গবেষক দল। তবে ধর্মীয় মূল্যবোধটাকে আমি বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে বেশি গুরুত্ব দিতে চাই। কারণ বাংলাদেশের জনসংখ্যার প্রায় শতকরা ৯০ শতাংশ মানুষই মুসলমান। আর এই বিশাল জনগোষ্ঠী কে ধর্মীয় মূল্যবোধে উজ্জীবিত করে ধর্ষণ রোধ সম্ভব অনেকটা যা শুধু আইন প্রণয়ন করেও সম্ভব হবে না পুরোপুরি। কারণ আইন ফাঁকি দেওয়া গেলেও সৃষ্টিকর্তা কে ফাঁকি দেওয়া যাবে না। 

বর্তমান সময়ে আমরা ধর্ষণের বিষয়ে হতাশা কিংবা বিপাকে পড়লেও পবিত্র কোরানে মহান আল্লাহ প্রায় সাড়ে চৌদ্দ'শ বছর আগেই এর বিরুদ্ধে কঠোর আইন জানিয়ে দিয়েছেন।  যেনাকে হারাম ঘোষণা করেছেন এবং ভয়াবহ শাস্তির কথাও উল্লেখ করেছেন। সুতরাং আলেম সমাজকে এ বিষয়ে এগিয়ে এসে সচেতনতা সৃষ্টির লক্ষ্যে আরো অগ্রণী ভূমিকা পালন করতে হবে।  কঠোর শাস্তির বিধানের বিষয়ে সচেতন করা, জাহান্নামের ভয়াবহ শাস্তি থেকে বাঁচতে ধর্মীয় বিধিবিধানকে গুরুত্ব দেয়া। এর পাশাপাশি রাষ্ট্রীয় সংবিধানে ধর্ষণের বিরুদ্ধে দ্রুত সময়ে কঠোর বিচার রেখে আইন প্রণয়ন ও বাস্তবায়ন করতে হবে। স্থানীয় প্রতিনিধিদেও কঠোর অবস্থানে থাকতে হবে।

সমাজের সংস্কৃতিরও বড় একটা পরিবর্তন আনতে হবে, আমাদের সমাজে চলমান প্রেম নামের একধরণের অবৈধ সম্পর্ক আছে,  যা সামাজিক বৈধতা পেয়েছে অনেকাংশে। আর বর্তমান সময়ের বেশিরভাগ ধর্ষণ গুলো হয় এই প্রেম নামক সম্পর্কের দ্বারাই। আমাদের সামনে হয়তো আসে না অনেক ধর্ষণের খবর। আমরা জানিও না বহু ধর্ষিতা আমাদের সমাজে লুকায়িত থেকে যায় সবসময়ই। 

বাবা মাকে তাদের সন্তানের ব্যাপারে সচেতন হতে হবে তার ছেলেমেয়ে যাতে প্রেমের নামে ধর্ষণের স্বীকার না হয়। প্রেম নামক সম্পর্কের ইতিবৃত্ত টেনে বিয়ে কে সহজ কর করে দিতে হবে। চরিত্রবান আদর্শ ছেলে হলে চাকরির অপেক্ষায় না করে ছেলেমেয়েদের বিয়ে দিয়ে দিতে হবে। বিয়ে করলেই সংসার করতে হবে এমন নয়। লেখাপড়া জীবন শেষ করে চাকরি জীবনে সংসার শুরু করলেই বা সমস্যা কোথা? হয়তো অনেকে বলবেন সমাজ কি বলবে! তাদের কে আমি বলবো ভাবুন তো সমাজের এই ভুল সিঁড়িতে পা দিয়ে কি আমরা যেনা কিংবা ধর্ষণকে সমাজিক রুপ দিতে পারি? কিছুটা হলেও এর মাধ্যমে হ্রাস পেতে পারে ঘৃণ্য অপরা।      

সবশেষে শুধু বলবো আমাদের মূল্যবোধ কে জাগ্রত করতে হবে। তরুণদের প্রতিজ্ঞাবদ্ধ হতে হবে আর কোনো ধর্ষণ নয়, যাকে তুমি ধর্ষণ করছ সেও তোমার মতো কারো বোন কিংবা মা। তোমাদের বোন কিংবা মায়ের সম্মান তোমাদেরকেই রক্ষা করতে হবে। 

লেখক: শিক্ষার্থী, বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়।

সোনালীনিউজ/এমএএইচ

*** প্রকাশিত মতামত লেখকের নিজস্ব ভাবনার প্রতিফলন। সোনালীনিউজ-এর সম্পাদকীয় নীতির সঙ্গে লেখকের এই মতামতের অমিল থাকাটা স্বাভাবিক। তাই এখানে প্রকাশিত লেখার জন্য সোনালীনিউজ কর্তৃপক্ষ লেখকের কলামের বিষয়বস্তু বা এর যথার্থতা নিয়ে আইনগত বা অন্য কোনও ধরনের কোনও দায় নেবে না। এর দায় সম্পূর্ণই লেখকের।

Wordbridge School
Link copied!