• ঢাকা
  • শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল, ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১
খালেদা মুক্তির যোগসূত্র

পরিক্রমণের মেরুকরণ, রাজনীতিতে নতুন আশা


বিশেষ প্রতিনিধি এপ্রিল ৩০, ২০১৯, ১২:৩২ পিএম
পরিক্রমণের মেরুকরণ, রাজনীতিতে নতুন আশা

ঢাকা : রাজনৈতিক অঙ্গনে এখন নানা কৌতূহল। সোমবার জাতীয় সংসদে চার এমপির শপথকে ঘিরে এই কৌতূহল রাজনৈতিক নেতা ও সাধারণের মাঝে।

মৌসুমের তপ্ত বায়ুতে হঠাৎ রাজনীতিতে শীতলতা যেন দেশবাসীর মনে নতুন আশার সঞ্চার করছে। রাজনীতির অন্দরমহলে কী ঘটছে, কী অপেক্ষা করছে সামনের দিনগুলোতে- এই প্রশ্ন সবার মুখে মুখে। শপথ কী শুধুই সদস্যপদ রক্ষা, নাকি কারাবন্দি খালেদা জিয়ার মুক্তির যোগসূত্র?

রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, সব আলোচনা-সমালোচনা ছাপিয়ে রাজনীতিতে তৈরি হচ্ছে সমঝোতার বাতাবরণ। এ সমঝোতা ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ ও রাজপথের বিরোধী দল বিএনপির মধ্যে। সমঝোতার প্রেক্ষাপট শুরু জাতীয় ঐক্যফ্রটের শরিক গণফোরাম নেতা সুলতান মোহাম্মদ মনসুরের শপথ দিয়ে। সবকিছু ঠিক থাকলে অন্তরালের ঘটনাবলির আংশিক দৃশ্যমান হবে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের শপথের মধ্য দিয়ে। তিনি শপথ নেওয়ার জন্য জাতীয় সংসদের স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরীর কাছে সময়ের আবেদন করেছেন। আর সমঝোতার চূড়ান্ত ফলাফল দেখতে আরো কিছু সময় অপেক্ষা করতে হবে বলে মনে করেন তারা। অর্থাৎ খালেদা জিয়ার মুক্তি হবে প্যারোলে নয়, জামিনে।

সোমবার (২৯ এপ্রিল) বিকালে বিএনপির শপথ নেওয়া চার এমপি জানিয়েছেন, বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের নির্দেশনা মতেই তারা সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। তাদের এ দাবি ঘণ্টা কয়েক প্রশ্নবিদ্ধ হলেও সন্ধ্যায় তা পরিষ্কার করেছেন দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। তিনিও জানিয়েছেন তারেক রহমানের নির্দেশনার কথা। তিনি বলেন, গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারের সংগ্রাম, খালেদা জিয়াসহ সব রাজবন্দির মুক্তির আন্দোলন বেগবানের অংশ হিসেবেই সংসদে বিএনপি।

এদিকে সংখ্যানুপাতিক হারে বিএনপি সংরক্ষিত আসনে যে একজন এমপি পাবে, তার জন্য মনোনীত করা হয়েছে সাবেক এমপি আসিফা আশরাফি পাপিয়াকে। তিনি শিগগিরই সংসদের সংরক্ষিত আসনে শপথ নিচ্ছেন বলে নির্ভরযোগ্য সূত্রে জানা গেছে।    

এরই মধ্যে রাজনীতিক অঙ্গনে পর্দার অন্তরালে আরো অনেক কিছু ঘটছে এবং ঘটতে পারে বলে ধারণা করছেন জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের সরকার ও রাজনীতি বিভাগের অবসরপ্রাপ্ত অধ্যাপিকা ড. দিলারা চৌধুরী। তিনি বলেন, রাজনীতিতে শেষ বলে কিছু নেই। সময়ে সময়ে প্রেক্ষাপট পরিবর্তন হতে পারে। সোমবার (২৯ এপ্রিল) দুপুর পর্যন্ত বিএনপির অবস্থান ছিল সংসদবিমুখ আর বিকালেই ভিন্ন পদক্ষেপ দেখা গেছে। শীর্ষ নেতা কারাবন্দি খালেদা জিয়ার মুক্তির অপেক্ষায় দলটির নেতাকর্মীরা। তাদের প্রত্যাশা পূরণের আভাস-ইঙ্গিত এই চিত্রের মধ্য দিয়ে স্পষ্ট হচ্ছে বলে মনে করতে চান এই রাষ্ট্রবিজ্ঞানী।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সরকার ও রাজনীতি বিভাগের সাবেক চেয়ারম্যান নুরুল আমিন বেপারী বলেন, পৃথিবী এখন সূর্যের কাছাকাছি তাই বইছে চরম উত্তাপ; আর দৃশ্যপটে মনে হচ্ছে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ ও রাজপথের বিরোধী পক্ষ বিএনপি পরস্পরের মধ্যে বড় ধরনের বোঝাপড়া হচ্ছে বলেই তারা এখন পরস্পরের কাছাকাছি। তাই রাজনীতিতে শীতলতা ফিরেছে। বিএনপির সংসদে যাওয়ার কারণে হয়তো তাদের দলীয় প্রধানকে কাছে পেতে পারেন বলে মনে করছেন নুরুল আমি বেপারী।

গত ৩০ ডিসেম্বর অনুষ্ঠিত একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বিএনপি নেতৃত্বাধীন জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট আটটি আসনে জয়লাভ করে। এর মধ্যে ছয়জন বিএনপির; বাকি দুজন ড. কামাল হোসেনের গণফোরামের। নির্বাচনের পরপরই ভোটে ব্যাপক অনিয়ম এবং কারচুপির অভিযোগ তুলে তা প্রত্যাখ্যান করে জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট। পুনরায় নির্বাচনের দাবি জানানোর পাশাপাশি তারা শপথ না নেওয়ার সিদ্ধান্ত নেয়। তবে এ সিদ্ধান্ত উপেক্ষা করে গণফোরামের দুই সংসদ সদস্যের মধ্যে মৌলভীবাজার-২ আসন থেকে ধানের শীষ নিয়ে নির্বাচিত সুলতান মোহাম্মদ মনসুর আহমেদ গত ৭ মার্চ শপথ নিয়ে সংসদে যোগ দেন। তাকে অনুসরণ করে গণফোরামের প্রতীক উদীয়মান সূর্য নিয়ে সিলেট-২ আসন থেকে নির্বাচিত দলটির আরেক নেতা মোকাব্বির খান গত ২ এপ্রিল শপথ নেন।

সর্বশেষ গত বৃহস্পতিবার দলের সিদ্ধান্তের বাইরে গিয়ে ঠাকুরগাঁও-৩ আসন থেকে বিএনপি প্রার্থী হিসেবে নির্বাচিত জাহিদুর রহমান শপথ নেন। এ কারণে দল তাকে বহিষ্কারও করেছে। গত শনিবার রাতেই দলের শীর্ষ নেতারা নানা তৎপরতাও চালায়। রোববার রাতে তারেক রহমান নির্বাচিতদের সঙ্গে স্কাইপির মাধ্যমে কথাও বলেন। সোমবার সকালে নির্বাচিতদের শপথ গ্রহণের সম্ভাবনা দেখা দিলে দুপুরে এক সংবাদ সম্মেলনে দলের সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী অভিযোগ করে বলেন, সংসদে শপথ নিতে সরকারি দল নির্বাচিতদের ওপর চাপ প্রয়োগ করছে।

এর আগে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন বলেছেন, বিএনপি একটি বটগাছ, দু-একটি পাতা ঝরে গেলে তাতে কিছু যায় আসে না। আর দলটির স্থায়ী কমিটির আরেক সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায় বলেছেন, দলীয় সিদ্ধান্তের বাইরে গিয়ে যারা শপথ নিয়েছেন তারা গণদুশমন।

বিএনপির নেতাদের সাংগঠনিক অবস্থান আর কেন্দ্রীয় নেতাদের বক্তব্যের প্রেক্ষিতে তৃণমূল নেতাকর্মীরা রীতিমতো ধোঁয়াশায় পড়ে। তবে দলীয় শীর্ষ নেতা খালেদা জিয়ার মুক্তির বিষয়টি ফয়সালা করতে অঘোষিত শর্ত দিয়েছিল বিএনপির নির্বাচিতরা। নির্বাচিতদের সবাই বলেছেন, দলীয় নেতাকে কারাগারে রেখে তারা সংসদে শপথ নেবেন না। এ নিয়ে পাল্টা বক্তব্যও দিয়েছিলেন ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের নেতারা।

দলটির যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক মাহবুব-উল আলম হানিফ বলেছেন, বিএনপির বিজয়ীদের সংসদে আসতে কোনো শর্ত মানতে আমরা বাধ্য নই। খালেদা জিয়ার সাজা হয়েছে আদালতের মাধ্যমে, তার মুক্তি নির্ভর করছে আদালতেই। ওই সময় রাজনীতিক অঙ্গনে চাউর হয় খালেদা জিয়ার মুক্তির শর্তে সংসদে যেতে পারেন বিএনপির বিজয়ীরা।

এদিকে কারাবন্দি খালেদা জিয়ার মুক্তির বিষয়টি নিয়ে পর্দার আড়ালে বিএনপি এবং আওয়ামী লীগের নীতিনির্ধারণী পর্যায়ে আলোচনা চলছিল। আলোচনায় রয়েছে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের স্ত্রী ডা. জোবায়দা রহমানও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার এক উপদেষ্টার সঙ্গে ফোনালাপ করেছেন। দূতিয়ালি করেছেন বহির্বিশ্বের একাধিক কূটনীতিক। তবে তা অস্বীকার করেছে বিএনপি।

সোনালীনিউজ/এমটিআই

Wordbridge School
Link copied!