• ঢাকা
  • শনিবার, ২৭ এপ্রিল, ২০২৪, ১৪ বৈশাখ ১৪৩১

ফেব্রুয়ারি এক শোকার্ত তরবারি


নিজস্ব প্রতিবেদক ফেব্রুয়ারি ১, ২০১৮, ০১:৪৬ পিএম
ফেব্রুয়ারি এক শোকার্ত তরবারি

ঢাকা : ফেব্রুয়ারি বাঙালির শোকগাথা। উদ্ধত বুক। তাই তো বছরের এ মাসটায় আকুল হয়ে ওঠে আমাদের প্রাণ। সালাম, জব্বার, শফিক, বরকত ও রফিকদের জন্য শোকার্ত হয়ে ওঠে হৃদয়। ১৯৫২ সালের ২১ ফেব্রুয়ারি তাদের রক্তে রঞ্জিত রাজপথ যেন এখনো ছড়ায় প্রতিবাদের সুর। শোনায় অন্যায়ের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ানোর মন্ত্র। ফেব্রুয়ারি সমস্ত বাংলাভাষীর জন্য এক শোকার্ত তরবারি।

বাঙালির জীবনে ফেব্রুয়ারি বার বার ফিরে আসে সেই রক্তে রাঙানো স্মৃতি নিয়ে। বৃহস্পতিবার (১ ফেব্রুয়ারি) শুরু হলো সেই স্মৃতির মাস। বাঙালি জাতি এ মাসজুড়ে ভালোবাসা জানাবে ভাষার জন্য প্রাণ-উৎসর্গকারী মহান শহীদদের। এ মাসেই শুরু হয়েছিল লাল-সবুজ বাংলাদেশের স্বপ্ন।

রাষ্ট্রভাষা বাংলার দাবিতে ১৯৫২ সালের দুর্বার আন্দোলনে বাঙালি জাতি পায় মাতৃভাষার মর্যাদা এবং আর্থ-সামাজিক ও রাজনৈতিক মুক্তির প্রেরণা। একুশে ফেব্রুয়ারি আন্দোলনরত ছাত্র-জনতার ওপর পুলিশ নির্বিচারে গুলি চালালে নিহত হন সালাম, জব্বার, শফিক, বরকত ও রফিকসহ আরো কয়েকজন।

মাতৃভাষা বাংলাকে রাষ্ট্রভাষা হিসেবে পাওয়ার দাবি ছিল ন্যায়সঙ্গত। অবিভক্ত পাকিস্তানে জনসংখ্যার বিবেচনায় পূর্ব পাকিস্তানের বাংলাভাষীরা ছিল সংখ্যারিষ্ঠ। উর্দুভাষীরা ছিল সংখ্যালঘু। পাকিস্তানের দুই অংশের কোনো প্রদেশেই তাদের সংখ্যাধিক্য ছিল না। তবুও শাসকরা অত্যন্ত অদূরদর্শিতার সঙ্গে বাংলা ভাষাভাষীদের দাবিকে পদদলিত করার চেষ্টা করেন। বলদর্পী শাসকদের অদূরদর্শিতা, হঠকারিতা ও সীমাহীন বাড়াবাড়ির ফলে ’৫২ সালেই স্বাধীন বাংলাদেশের স্বাধীনতার ভ্রুণ জন্ম নিয়েছিল। সেই ভ্রুণ ধরেই শুরু হয় বাঙালির স্বাধিকার আন্দোলন।

পরবর্তীতে একাত্তরে ৯ মাস পাকিস্তানি বাহিনীর বিরুদ্ধে সশস্ত্র যুদ্ধের মধ্য দিয়ে অর্জিত হয় স্বাধীন সার্বভৌম বাংলাদেশ। এ কারণেই ফেব্রুয়ারি মাস একদিকে শোকাবহ হলেও অন্যদিকে আছে এর গৌরবোজ্জ্বল অধ্যায়। আমরাই পৃথিবীর একমাত্র জাতি যারা ভাষার জন্য জীবন দিয়েছিলাম।

এই একুশে ফেব্রুয়ারি এক দিনে আসেনি। অনেক ত্যাগের বিনিময়ে আমরা পেয়েছি এই গৌরবের মাস। ফেব্রুয়ারি এলেই আমরা ফিরে তাকাই আমাদের শিকড়ের দিকে। আমাদের সংস্কৃতি ও ইতিহাস-ঐতিহ্য নতুন করে আমাদের এগিয়ে চলার প্রেরণা জোগায়। সঙ্গত কারণেই ভাষার মাস নিয়ে আমাদের মধ্যে অন্য রকম আবেগ কাজ করে। সেই আবেগের বহিঃপ্রকাশ থাকে ফেব্রুয়ারি জুড়ে।

একুশের মাসের সবচেয়ে বড় কর্মযজ্ঞ মাসব্যাপী গ্রন্থমেলা। বাংলা একাডেমিতে আজ বেলা সাড়ে ৩টায় এ মেলা উদ্বোধন করবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এছাড়া মাসটির শুরু উপলক্ষে পালিত হবে নানা কর্মসূচি। এসবের মধ্যে রয়েছে পথনাটক উৎসব, আলোচনা সভা ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান। বিভিন্ন সামাজিক, রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠন এ মাসে আয়োজন করেছে নানা অনুষ্ঠানের।

মাতৃভাষার জন্য ’৫২-এর সেই আন্দোলন বিশ্ববাসীকেও স্পর্শ করে। ফলে আজ আমাদের ভাষাশহীদ দিবস বিশ্বের তাবৎ মানুষের মাতৃভাষা দিবসের মর্যাদা পেয়েছে। ২০০০ সালে আমাদের এ গৌরবের মাস পায় আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি। একুশে ফেব্রুয়ারিকে ইউনেস্কো আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস হিসেবে ঘোষণা দেয়। ফলে শুধু বাংলাদেশেই নয়, সারা বিশ্বে আজ একুশে ফেব্রুয়ারিতে শ্রদ্ধাভরে স্মরণ করা হচ্ছে সেই অমর শহীদদের, যারা ভাষার জন্য তাদের জীবন দিয়ে গেছেন। বিশ্ববাসীর কাছে একুশ এখন প্রেরণার নাম।

অন্যায়ের বিরুদ্ধে প্রতিবাদের মন্ত্র। ভাষা রক্ষার আত্মতাড়না। বিশ্বের গুরুত্বপূর্ণ শহরগুলোয় শহীদ মিনার স্থাপন করে ভাষা রক্ষার এ আন্দোলনে তাই শরিক হয়েছে পৃথিবীবাসী।

আর আমরা গেয়ে চলেছি সেই অমর সঙ্গীত-‘আমার ভাইয়ের রক্তে রাঙানো একুশে ফেব্রুয়ারি/ আমি কি ভুলিতে পারি?’

সোনালীনিউজ/এমটিআই

Wordbridge School

জাতীয় বিভাগের আরো খবর

Link copied!