• ঢাকা
  • শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল, ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

বাংলাদেশি দম্পতির নেতৃত্বে দক্ষিণ এশীয় শিল্প প্রদর্শনী


নিজস্ব প্রতিবেদক মার্চ ২৪, ২০১৯, ১২:৫৫ পিএম
বাংলাদেশি দম্পতির নেতৃত্বে  দক্ষিণ এশীয় শিল্প প্রদর্শনী

ঢাকা : নানা সময় যুদ্ধের কারণে নানাজাতি দেশ ছাড়া হয়েছে। সেই দেশছাড়ার সময় থেকে যায় তাদের কিছু আবেগমাখা চিহ্ন। আপনজন সেই চিহ্নটুকু বুকে বয়ে বেড়ায়। বিশ্বে যুদ্ধ নয় বরং শান্তির পরম বার্তা এমন একটি মেসেজ দিয়ে দুবাইয়ের আল কুজের আল সেরকাল কনক্রিট দালানে চলছে দক্ষিণ এশীয় শিল্প প্রদর্শনী- ফ্যাব্রিকেটেড ফ্র্যাকচার। চলতি মার্চের ৯ তারিখ থেকে শুরু হওয়া এ প্রদর্শনী ৩০ তারিখ পর্যন্ত চলবে। এর আয়োজন করেছে বাংলাদেশের সামদানি আর্ট ফাউন্ডেশন ও দুবাইয়ের আল সেরকাল অ্যাভিনিউ।

প্রদর্শনীতে অংশ নিয়েছে বাংলাদেশ, ভারত, পাকিস্তান, নেপাল, মায়ানমারসহ দক্ষিণ এশিয়ার অন্যান্য দেশের শিল্পীরাও।

নানাসময়ে যুদ্ধ লাগার কারণে জাতি ভাগ হলেও তাদের বংশছায়া সীমানার এপার ওপারে সমান এমনটি চিত্র তুলে ধরা হয়েছে এ প্রদর্শনীতে। কেউ তুলেছেন রঙতুলিতে আবার কেউ তুলেছেন ক্যামেরার লেন্সে।

ভারতের বিখ্যাত আলোকচিত্রশিল্পী পাবলো বার্তলো ম্যাও বাংলাদেশ ও ভারতের চাকমা উপজাতির জীবনধারা তার ক্যামেরার লেন্সে বন্দি করেছেন।
বাংলাদেশের কনকচাপা চাকমা, রশীদ চৌধুরী, আমফিকা রহমান, জয়দেব রোয়াজা, ঋতু সাত্তার, কামরুজ্জামান স্বাধীন, মোনেম ওয়াসিফ, দেবাশীষসহ অনেকে এসেছেন এ প্রদর্শনীতে। কেউ এঁকেছেন রঙতুলিতে ছবি। কেউ দেখিয়েছেন লেন্সের ভাষা। আবার কেউ গেয়েছেন বাংলা লোকগান আর কেউবা দেখিয়েছেন মঞ্চ নাটক।

এ প্রদর্শনীটি বিভিন্ন ধর্মীয় ও জাতিগত পরিচয়গুলির বহুবচনকে সবার কাছে তুলে ধরে, যা দিয়ে বর্তমান বাংলাদেশের সমৃদ্ধ সংস্কৃতি তৈরি করা হয়েছে। উপসর্গ দেয়া হয়েছে ‘ভুলেও আমাদের বিভক্ত করার ভুল চেষ্টা করবেন না’।

ফ্যাব্রিকেটেড ফ্র্যাকচার প্রদর্শনীটি আলসেরকাল অ্যাভিনিউর বৃহত্তম গ্যালারির মধ্যে একটি, ‘কংক্রিট’ নামক বিল্ডিং-এ করা হচ্ছে। প্রদর্শনীর কিউরেটর আমেরিকার নাগরিক ডাইয়ানা ক্যাম্পবেল খুব সুন্দর ভাবে প্রদর্শনীটা সাজিয়েছেন, যা আগত পরিদর্শকদের মন কাড়ছে।

অনেক সময় অনেক রাজনৈতিক ও অন্যান্য কারণে, বিভিন্ন উপজাতি ও অন্যান্য জাতির লোকদের সংখ্যালঘু হিসেবে অন্যদের বা রাষ্ট্রের কাছে হার মেনে, নিজ মাটি ও ভিটেবাড়ি থেকে দূরে সরে যেতে হয়, কিন্তু অক্ষুন্ন রয়ে যায়, শিল্প, সংস্কৃতি ও ইতিহাস। আর এ কঠিন বাস্তবতাকে তুলে ধরেছে এই প্রদর্শনী।
দক্ষিণ এশিয়ায় বিভক্তিকে ব্রিটিশরা একটি ঔপনিবেশিক হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করেছিল। ১৯৪৭ সালে যখন ব্রিটিশরা স্বাধীন ভারত থেকে পাকিস্তানকে ভাগ করে, পূর্ব ও পশ্চিম শক্তি তখন প্রতিষ্ঠা করেছিল, তখন তারা কেবলমাত্র একমাত্র সংখ্যাগরিষ্ঠ ধর্ম, ইসলাম কে মাথায় রেখে - সংস্কৃতিকে উপেক্ষা করে একটি দেশকে একত্রিত করেছিল। আর তার কারণে বর্তমান সময়ে দেশ ভিন্ন হলেও, আমরা সংষ্কৃতিতে অনেক মিল পাই।

১৯৫২ সালে বাংলা ভাষার কারণে ঘরে ঘরে দেশপ্রেমী জন্ম নিয়েছিল, সেই দেশপ্রেমের কারণেই ১৯৭১ সালের জাগরণ। জন্ম হয় ‘বাংলাদেশ’ নামের একটি দেশের। ভাষার উপর ভিত্তি করেই, অনেক সীমানা তৈরী করা যায়, কিন্তু এতে সাংস্কৃতিক একটা পরিচয় খুঁজে পাওয়া যায়। বাংলাদেশে প্রায় ৪২টি ভাষা আছে, কিন্তু সবারই পরিচয়, ‘বাঙালি’। ৫০ বছরেরও কম সময়ে, বাংলাদেশেই যেভাবে দিনের পর দিন, লোকের মাঝে বিভক্তি সৃষ্টি হচ্ছে, সেই জটিল বিষয় কে তুলে ধরা হচ্ছে এ প্রদর্শনীর মূল বিষয়।

এ প্রদর্শনীর ১৫ জন শিল্পী তাদের সম্প্রদায়গুলিতে ঘটে আসা সহিংসতার সাক্ষী হিসেবে সাক্ষ্য দিচ্ছে, এবং তাদের কাজ এই আতঙ্কের নিবন্ধক হিসেবে কাজ করছে এবং অতীতেই এই বিভক্তির রহস্য লুকিয়ে আছে বলে জানাচ্ছে তাদের শিল্পকর্ম।

বিশাল ব্যথার ওজন বহন সত্ত্বেও, এ শিল্পীদের গভীর কাব্যিক অনুশীলনগুলি সহানুভ‚তির স্থান তৈরি করতে সক্ষম হয়েছে যার মাধ্যমে বিশ্বে সংহতির নতুন পদ্ধতি কল্পনা করা যেতে পারে।

আলসেরকালের সহযোগিতায় খুব ভালোভাবে এক নতুন বিশ্বের স্বপ্ন সবার কাছে তুলে ধরেছে, সামদানী আর্ট ফাউন্ডেশন। আর তারা আশাবাদী যে এমন কাজের মাধ্যমে গোটা বিশ্বে এক নতুন পরিবর্তন আসবে এবং সীমানা ভুলে, মানুষ মানবতায় বিশ্বাস করবে।

শিল্পকলার ষোলকলা যেন একরুমে সহজে বন্দি করেছেন বাংলাদেশের বিখ্যাত শিল্প সংগঠক দম্পতি রাজিব সামদানি ও নাদিয়া সামদানি। তাদের গ্রামের বাড়ি সিলেটের গোলাপগঞ্জের ভাদেশ্বরে।

এ দম্পতি ২০১১ সালে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হন। দুজনেরই বাড়ি গোলাপগঞ্জের ভাদেশ্বরে। ২০১২ সাল থেকে ঢাকা সামিটের জন্য কাজ করছেন দেশে দেশে তারা। ২০২০ সালের ভাষার মাসে ঢাকা সামিটের বিশাল আয়োজন তাদের। এ জন্য তারা নানা আন্তর্জাতিক পুরস্কার পেয়েছেন শিল্প সংগঠক আর পৃষ্ঠপোষণের জন্য। তাদের কাজের অন্যতম প্রকল্প হলো সিলেটের আদিনাম নিয়ে ‘শ্রীহট্ট’। শুধু বাংলাদেশ নয় বরং বাংলাদেশের শিল্প সংস্কৃতি নিয়ে বিশ্বমাঝে বিপ্লব ঘটাতে যাচ্ছেন তারা। রাজিব সামদানি দুবাইয়ের আলসেরকাল তথা শিল্প সংস্থার উপদেষ্টা কমিটির একজন সদস্য। বাংলাদেশ থেকে বসেও তিনি এ সংগঠনের সঙ্গে বিগত কয়েকবছর ধরে যুক্ত। জীবনের বাকি সময়ে দেশকে শিল্প-সংস্কৃতি দিয়ে বিশ্বের কাছে তুলে ধরা তার স্বপ্ন।

সোনালীনিউজ/এমটিআই

Wordbridge School
Link copied!