• ঢাকা
  • শনিবার, ২৭ এপ্রিল, ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১
প্রয়োজনে তাদের বাদ দিয়ে জাতীয় ঐক্য গড়ার তাগিদ

বিকল্পধারার শর্তে নাখোশ ২০ দলীয় জোটের নেতারা


নিজস্ব প্রতিবেদক সেপ্টেম্বর ২৮, ২০১৮, ১২:৩৪ পিএম
বিকল্পধারার শর্তে নাখোশ ২০ দলীয় জোটের নেতারা

ঢাকা : বিকল্পধারা বাংলাদেশ বৃহত্তর জাতীয় ঐক্য গড়তে বিএনপিকে যেসব শর্ত দিচ্ছে সেগুলোকে ঐক্যের পথে বড় বাধা হিসেবে দেখছেন বিএনপির নেতৃত্বাধীন ২০ দলীয় জোটের শরিক দলের নেতারা।

তারা ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, বিকল্পধারা বাংলাদেশের সভাপতি ও সাবেক রাষ্ট্রপতি অধ্যাপক ডা. একিউএম বদরুদ্দোজা চৌধুরী এবং তার ছেলে ও বিকল্পধারা বাংলাদেশের যুগ্ম মহাসচিব মাহি বি. চৌধুরীর দলের রাজনৈতিক অবস্থান কী তা দেশবাসী জানে। তারা দেশের বর্তমান অবস্থার গুরুত্ব বুঝতে পারছেন না। তাই তাদের এত শর্ত মেনে কাজ নেই। প্রয়োজনে তাদের ছাড়াই বৃহত্তর ঐক্য গড়ার তাগিদ শরিকদের।

এসব শর্ত নিয়ে শুধু জোটের শরিক দলগুলোই নয়, বিএনপির নেতাকর্মীদের মধ্যেও চলছে অসন্তোষ। তারা বলছেন, প্রয়োজনে বিকল্পধারা বাংলাদেশকে বাদ দিয়ে বৃহত্তর জাতীয় ঐক্য গড়ে তোলা হোক।

বৃহস্পতিবার (২৭ সেপ্টেম্বর) সন্ধ্যায় বিএনপি চেয়ারপারসনের গুলশানের রাজনৈতিক কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত ২০ দলীয় জোটের সভায় জোটের শরিক দলগুলোর নেতারা এসব বিষয় তুলে ধরেছেন বলে জানিয়েছেন।

বৈঠকে আলোচনার বিষয়বস্তু সম্পর্কে জানতে চাইলে লিবারেল ডেমোক্র্যাটিক পার্টির সাধারণ সম্পাদক রেদোয়ান আহমেদ বলেন, বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া কারাবন্দি, দেশে গণতন্ত্র নেই। বিএনপির নেতৃত্বাধীন ২০ দলীয় জোট দেশের হারিয়ে যাওয়া গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারে আন্দোলন-সংগ্রাম করে যাচ্ছে। শক্তি বৃদ্ধির জন্য বৃহত্তর ঐক্য গড়ে তোলার চেষ্টা করছে।

জোটের শরিকরা বৃহত্তর ঐক্য গড়ে তুলতে বিএনপিকে সহযোগিতা করছে। এ অবস্থায় বিকল্পধারা বাংলাদেশের পক্ষ থেকে যেসব শর্ত দেওয়া হচ্ছে তা বাড়াবাড়ির পর্যায়ে চলে যাচ্ছে। বিষয়টি ২০ দলীয় জোটের শরিক দলগুলোও ভালো চোখে দেখছে না। প্রয়োজনে বিকল্পধারাকে ছাড়া বৃহত্তর জাতীয় ঐক্য গড়ে তোলার জন্য বিএনপিকে অনুরোধ জানিয়েছেন তারা।

বিএনপির একটি ঘনিষ্ঠ সূত্র জানায়, জামায়াতে ইসলামী প্রকাশ্যে কিছু না বললেও ভেতরে ভেতরে তারা বিকল্পধারা বাংলাদেশের শর্তগুলোর বিষয়ে ক্ষুব্ধ। তারা তাদের ক্ষোভের কথা বিএনপি মহাসচিবকে জানিয়েছেন।

জোটের শরিক লেবার পার্টির চেয়ারম্যান ডা. মোস্তাফিজুর রহমান ইরান বলেন, যুক্তফ্রন্টের পক্ষ থেকে দেড়শ আসন চাওয়া, নির্বাচিত হলে প্রথম দুই বছর তাদের ক্ষমতায় রাখা, বিএনপির নেতৃত্বাধীন ২০ দলীয় জোটে কে থাকবে, কে থাকবে না তা নিয়ে শর্ত জুড়ে দেওয়া মানা যায় না। বিএনপির নেতৃত্বাধীন ২০ দলীয় জোট পানিতে পড়ে যায়নি যে তাদের এত শর্ত মেনে নিতে হবে। এসব বিষয় তারা বৈঠকে তুলে ধরেন।

জোটের বৈঠকে আলোচনার বিষয়বস্তু সম্পর্কে জানতে চাইলে ২০ দলীয় জোটের সমন্বয়ক ও বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খান বলেন, বৈঠকে বৃহত্তর জাতীয় ঐক্য নিয়ে যে সর্বশেষ অগ্রগতি হয়েছে তা জোটের শরিক দলগুলোর নেতাদের জানান এবং তাদের মতামত নেন তারা।

২০ দলীয় জোটের শরিক কল্যাণ পার্টির মহাসচিব এম এম আমিনুর রহমান বলেন, বিকল্পধারা বাংলাদেশের যুগ্ম মহাসচিব মাহি বি চৌধুরী বেশি বাড়াবাড়ি করছেন। বৃহত্তর জাতীয় ঐক্য গড়তে বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছেন। এতে শুধু ২০ দলীয় জোটের নয় বরং জাতীয় ঐক্যের অন্তর্ভুক্ত হওয়ার জন্য ঐক্যবদ্ধ হওয়া অন্যান্য রাজনৈতিক দলের নেতারাও অসন্তুষ্ট।

জামায়াতে ইসলামীতে আপত্তি, বদরুদ্দোজা চৌধুরীকে নেতৃত্বে রাখতে ‘জেদ’ ধরা, নির্বাচনী আসন বণ্টনসহ বিকল্পধারার এমন কয়েকটি শর্তে জাতীয় ঐক্য প্রক্রিয়ায় জটিলতা বাড়ছে। এ জন্য বৃহৎ জাতীয় ঐক্য গড়তে বিকল্পধারার ‘আন্তরিকতা’ নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। প্রয়োজনে তাদের ছাড়া বৃহত্তর জাতীয় ঐক্য গড়ে তুলতে হবে বলে বৈঠকে জানিয়েছেন তারা।

শুধু বিএনপির নেতৃত্বাধীন ২০ দলীয় জোটের শরিক দলগুলোই নয়। বিএনপির মধ্যেও এ নিয়ে চলছে আলোচনা। বিএনপি নেতারা মাহি বি চৌধুরীর বক্তব্যকে ঔদ্ধত্যপূর্ণ বলছেন। ক্ষমতার ভারসাম্যের নামে দেড়শ আসন চাওয়া, নির্বাচনে জয়ী হলে মালয়েশিয়ার মতো দুই বছরের জন্য দেশ পরিচালনার দায়িত্বে থাকার কথাটাও ঐক্যের পথে বাধাই মনে করছেন তারা। তাই দলের ভেতর থেকে দাবি উঠেছে, বিকল্পধারাকে বাদ দিয়ে বৃহৎ জাতীয় ঐক্য গড়ে তুলতে। এ নিয়ে বিএনপি জোটের কয়েকজন নেতাও ‘বিদ্রোহী’ হয়ে উঠেছেন।

অধ্যাপক বদরুদ্দোজা চৌধুরী ও মাহি বি. চৌধুরীর ভূমিকায় অসন্তোষ প্রকাশ করে বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান মোহাম্মাদ শাহজাহান বলেন, কারাবন্দি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার নির্দেশ মানতে গিয়ে বিকল্পধারা বাংলাদেশের সঙ্গে যোগাযোগ করছে বিএনপি।

এর অংশ হিসেবে দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন ও ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ গিয়েছিলেন অধ্যাপক বদরুদ্দোজা চৌধুরীর বারিধারার বাসভবনে। একাধিকবার ফোনেও কথা হয়েছে। এরপরও দিনের পর দিন তার ছেলে মাহি বি চৌধুরী যেসব শর্ত দিচ্ছেন তা মেনে নেওয়া যায় না।

সোনালীনিউজ/এমটিআই

Wordbridge School
Link copied!