• ঢাকা
  • শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল, ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

সখিনার ১০৪ বছরেও জোটেনি বয়স্ক ভাতা


মোরেলগঞ্জ প্রতিনিধি সেপ্টেম্বর ৮, ২০১৯, ১২:৫৭ পিএম
সখিনার ১০৪ বছরেও জোটেনি বয়স্ক ভাতা

মোরেলগঞ্জ : বয়সের ভারে নূজ্য হয়ে পড়েছে শরীরটা। শরীরের চামড়া কুচকে গেছে। চুল সব সাদা। হাটা-চলার শক্তি নেই শরীরে। তারপরও বেঁচে থাকার তাগিদে খাবারের সন্ধানে প্রতিদিনই বাড়ি থেকে বের হতে হয় ১০৪ বছর বয়সী অসহায় বৃদ্ধাকে। তবে ভিক্ষার জন্য নয়, পরিচিত জনদের সাক্ষাতের জন্য। পরিচিত জনরা তাকে পথে-ঘাটে সামনে পেলে কিছু পয়সা দেন। আর সেই পয়সায়ই চলে তার জীবন-জীবীকা।

তার নাম সখিনা বিবি। বয়স ১০৪ বছর। চার সন্তানের জননী সখিনার বাড়ি বাগেরহাটের মোরেলগঞ্জ উপজেলার বারইখালী ইউনিয়নের উত্তর সুতালড়ী গ্রামে। স্বামী আফেল উদ্দিন মারা গেছেন ১৯৭৩ সালে। তারপর থেকে মানুষের বাড়িতে কাজ করে পেটের ভাত যোগাতেন সখিনা। কিন্তু বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে কর্মক্ষমতা হারিয়ে ফেলেন। তারপর থেকে এলাকার মানুষের সহায়তায় চলে তার দিন।

বয়সের ভারে নূজ্য সখিনার ৩ ছেলে ১ মেয়ে। বড় ছেলে আ. হামিদ শেখ খুলনায় শ্রমিকের কাজ করেন। মেঝো ছেলে মানুষিক রোগী আব্বাস আলী শেখ ১ বছর ধরে নিখোঁজ। ছোট ছেলে জাহাঙ্গীর আলী শেখ শহরে ভ্যান চালিয়ে  জীবনযাপন করেছে মাঝে মধ্যে মা সখিনার ভরণ-পোষণের জন্য ৩-৪ শ’ টাকা পাঠান। বড় ছেলেও মাঝে মধ্যে ৫শ’ করে পাঠায়। আর মেয়ে বিয়ে দিয়েছিলেন, কিন্তু মেয়ের স্বামী মারা গেছে বেশ কয়েক বছর হয়েছে। খুলনা শহরে মানুষের বাসায় কাজ করে পেট চলে বিধাব মেয়ের। তারপরও মাঝে মাঝে মায়ের খোঁজ-খবর নেয়ার চেষ্টা করেন। ছেলে-মেয়েদের এ সহায়তা প্রয়োজনের তুলনায় অতি সামান্য। নিজের মাথা গোজার ঠাই না থাকায় ঘুরে ঘুরে যখন যেখানে স্থান পান সেখানেই রাত কাটান।  

নানা সংকটে আর্থিক কষ্টে দিন কাটালেও সখিনার কপালে জোটেনি সরকারি কোন সহযোগিতা। এলাকায় বাইরে থাকার কারণে জাতীয় পরিচয়পত্রও হয়নি তার। জাতীয় পরিচয়পত্র নেই সে অজুহাতে স্থানীয় জনপ্রতিনিধিরা তাকে কখনও কোন প্রকার সহযোগিতাও করেন না।

শনিবার সকালে উত্তর সুতালড়ী গ্রামের রাস্তায় বসে কথা হয় বৃদ্ধা সখিনা বিবির সঙ্গে। সখিনা বলেন, ‘আমি ভিক্ষা করিনা। ভিক্ষা করা পাপ। তবে হাটার পথে পরিচিতজনেরা খুশি হয়ে যা কিছু দেয় তা দিয়ে চলি। খুব একটা হাটা-চলা করতেও পারিনা। মাথা ঘুরায়’।
 
সখিনা আরও বলেন,  ‘সরকারি সাহায্য কোনদিন পাইনি। সরকারতো অনেক দেয় শুনি। আর কত দিবে। আমার কপালে নাই’।

সাহায্যের প্রয়োজন কিনা জানতে চাইলে বৃদ্ধা সখিনা বিবি চোখের পানি ছেড়ে দিয়ে বলেন, শেখ হাসিনা যা দিবে তাতেই আমি খুশি। তয়, একখান ঘর আর একটু ভাওতা (ভাতা) পাইলে ভালো হয়’।

বারইখালী ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান শফিকুর রহমান লাল বলেন, সখিনা বিবি বহুদিন এলাকায় ছিলনা। তার আইডি কার্ড নেই। তাই তাকে বিধবা ভাতা দেয়া যায়নি। তবে পরিষদে গেলে তাকে চাল দেয়া হয়।

উপজেলা সমাজসেবা অফিসার মো. রায়হান কবির বলেন, বিষয়টি আমার জানা ছিলনা। সখিনা বিবিকে খুজে বের করা হবে। আইডি কার্ড না থাকলে বিকল্প ব্যবস্থায় তাকে সাহায্যের আওতায় আনা হবে।

এ ব্যাপারে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. কামরুজ্জামান বলেন, বারইখালী ইউনিয়নের বার্ধক্য সখিনা বেগমের বিধবা ভাতা বয়স্ক ভাতা ভিজিডি ভিজিএফ কার্ড না পাওয়ার বিষয়টি খোঁজ খবর নিয়ে দেখা হচ্ছে। তকে শুধু বয়স্ক ভাতা নয় সকল সুযোগ সুবিধার আওতায় আনা হবে।

সোনালীনিউজ/এমআরআইএম/এএস

Wordbridge School
Link copied!