• ঢাকা
  • মঙ্গলবার, ১৯ মার্চ, ২০২৪, ৫ চৈত্র ১৪৩০

সুবিধা অর্জনের চেষ্টায় মরিয়া প্রিয়া সাহা


নিজস্ব প্রতিবেদক জুলাই ২০, ২০১৯, ০১:০৭ পিএম
সুবিধা অর্জনের চেষ্টায় মরিয়া প্রিয়া সাহা

ঢাকা : সরাসরি বিদেশের মাটিতে নিজের নিরাপত্তাহীনতা নিয়ে ‘বিভ্রান্তিমূলক তথ্য’ দেয়া নতুন কোন ঘটনা নয়। আর এমন ঘটনা যদি ঘটান দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) সদর দফতরের উপপরিচালক মলয় কুমার সাহা স্ত্রী প্রিয়া সাহা, তখন হয়তো এ নিয়ে আপত্তি ওঠার সম্ভাবনা একটু বেশিই।

কারণ, এরইমধ্যে একাধিকবার বিদেশে আপত্তিকর তথ্য দিয়ে দেশের ভাবমূর্তি নষ্ট করেছেন। ব্যক্তিগত স্বার্থ উদ্ধারে চেষ্টায় বিদেশে বিভ্রান্তিকর তথ্য দিয়েছেন বার বার। তার এই কর্মকাণ্ড এখানেই সীমাবদ্ধ থাকছে না। তার একাংশ ভিডিও সোশ্যাল মিডিয়ায় শেয়ার করে চলে বাংলাদেশকে বিতর্কিত করার চেষ্টাও।

সবশেষ বুধবার (১৭ জুলাই) রাতে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের কাছে সংখ্যালঘু নির্যাতনের মিথ্যা অভিযোগ তুলে বাংলাদেশে সমালোচনার ঝড় তুলেছেন তিনি।

সাংবাদিক ও এনজিও কর্মকর্তাদের মতে, ব্যক্তিগত ও পারিবারিক সুবিধা অর্জনের চেষ্টায় এমনটা করেন প্রিয়া সাহার মতো মৌলবাদীরা।

অভিযোগ আছে, ‘মহিলা ঐক্য পরিষদ’র কেন্দ্রীয় কমিটির সাধারণ সম্পাদক পদে থাকায় অবস্থায় বিভ্রান্তিমূলক কর্মকাণ্ডের জন্য গতবছর প্রিয়া সাহাকে বহিষ্কার করে সংগঠনটি। শুধু তাই নয়, নিজ বাড়ি পুড়িয়ে দেওয়ার নাটক সাজিয়ে প্রচুর বিদেশি অর্থ সংগ্রহ করার অভিযোগও রয়েছে তার বিরুদ্ধে।

‘শারি’ নামে বাংলাদেশের দলিত সম্প্রদায় নিয়ে একটি এনজিওর পরিচালক হলেন প্রিয়া সাহা। এছাড়া তিনি বাংলাদেশ হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিষ্টান ঐক্য পরিষদের কেন্দ্রীয় কমিটির সাংগঠনিক সম্পাদক।

তার বাবার বাড়ি পিরোজপুরের নাজিরপুর উপজেলার চরবানিয়ারী গ্রামে। শ্বশুর বাড়ি বৃহত্তর যশোরে। প্রিয়ার স্বামী মলয় কুমার সাহা দুদকের সদর দফতরে উপপরিচালক পদে কর্মরত রয়েছেন। তার দুই মেয়ে প্রজ্ঞা পারমিতা সাহা ও ঐশ্বর্য লক্ষ্মী সাহা যুক্তরাষ্ট্রে পড়াশুনা করেন।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক পিরোজপুরের এক এনজিও কর্মী বলেন, হয়তো নিজের মেয়েদেরকে গ্রিনকার্ড পাইয়ে দেওয়ার জন্য প্রিয়া সাহা ডোনাল্ড ট্রাম্পের কাছে এ সব ভিত্তিহীন অভিযোগ করছেন।

অনুসন্ধানে জানা গেছে, চলতি বছরের শুরুতে চরবানিয়ারীতে প্রিয়ার ভাই জগদীশ চন্দ্র বিশ্বাসের একটি অব্যবহৃত ঘরে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় এলাকায় চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়। তখন অভিযোগ ওঠে, পাশের বাগেরহাট জেলার চিতলমারী উপজেলার চেয়ারম্যান ও আওয়ামী লীগ নেতা মুজিবুর রহমান শামীম ঘরটি রাতের আঁধারে পুড়িয়ে দিয়েছেন। সঙ্গে একটি মন্দিরে আগুন দেওয়ার চেষ্টা করা হয়। সেখানে শামীমের একটি মাছের ঘের রয়েছে। তখন পাল্টা অভিযোগ ওঠেছিল শামীমেরও তিনটি ঘর আগুনে পুড়িয়ে দেওয়া হয় চিতলমারী এলাকায়।

পুলিশসহ প্রশাসন এবং পিরোজপুর ও নাজিরপুরের সাংবাদিকরা ঘটনাস্থলে বারবার গিয়ে অনুসন্ধান করে তখন ঘটনার কূলকিনারা পাননি। একপর্যায়ে ঘটনাটি আলোচনার বাইরে চলে যায়। ঘটনাটি নাটক বা সাজানো বলে প্রতিষ্ঠিত হয় পিরোজপুরে।

হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিষ্টান ঐক্য পরিষদের সভাপতি অ্যাডভোকেট রানা দাস গুপ্ত অসুস্থ থাকায় মঙ্গলবার (১৬ জুলাই) রাতে প্রিয়া সাহা সংগঠনের প্রতিনিধি হয়ে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্টের সঙ্গে সাক্ষাতের উদ্দেশ্যে ঢাকা ত্যাগ করেন। এরপর গত বুধবার ডোনাল্ড ট্রাম্পের সঙ্গে দেখা করেন।

ট্রাম্পের কাছে তিনি অভিযোগ করেন, বাংলাদেশে ৩৭ মিলিয়ন হিন্দু, বৌদ্ধ ও খ্রিস্টান ধর্মাবলম্বী মানুষ নিখোঁজ হয়েছে।

তিনি আরো বলেন, ‘আমি আমার বাড়ি হারিয়েছি। তারা আমার বাড়ি পুড়িয়ে দিয়েছে, আমার জমি কেড়ে নিয়েছে। কিন্তু কোনো বিচার হয়নি।’

প্রিয়া সাহা বলেন, ‘মুসলিম মৌলবাদী গ্রুপ এগুলো করছে। তারা সব সময় রাজনৈতিকভাবে শেল্টার পায়। সব সময়।’

প্রিয়া সাহার ওই অভিযোগের পর থেকেই কেউ কেউ এই ঘটনার পেছনে বড় কোনো ষড়যন্ত্রের গন্ধ পাচ্ছেন বলে জানিয়েছেন। আবার কেউ বলছেন বাংলাদেশের বিরুদ্ধে মিথ্যা অভিযোগ করেছেন তিনি।

এ বিষয়ে পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী মো. শাহরিয়ার আলম তার ফেসবুকে বলেন, ধর্মীয় সম্প্রতির এক উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত বাংলাদেশ। অনেকেই ব্যক্তি স্বার্থে বা না বুঝে এটার ক্ষতি করে ফেলেন। সবার উচিত এই ধরনের কাজ থেকে বিরত থাকা। প্রিয়া সাহা কেন এটা করলেন তা খতিয়ে দেখা হবে। তার অভিযোগগুলোও সরকার শুনবে এবং খতিয়ে দেখবে।

পরিচয় মিলেছে ট্রাম্পের কাছে ‘ভয়ঙ্কর’ অভিযোগকারী সেই নারীর : যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প বিভিন্ন ধর্মের ২৭ জন মানুষকে ডেকেছিলেন তাদের দুর্ভোগের কথা শোনার জন্য।

বুধবার (১৭ জুলাই) সেখানে মায়ানমার, নিউজিল্যান্ড, ইয়েমেন, চায়না, কিউবা, ইরিত্রিয়া, নাইজেরিয়া, তুরস্ক, ভিয়েতনাম, সুদান, আফগানিস্তান, নর্থ কোড়িয়া, শ্রীলঙ্কা, পাকিস্তান জার্মানি, বাংলাদেশসহ আরো কয়েকটি দেশের ব্যক্তিরা উপস্থিত ছিলেন।

তাদের প্রত্যেকেই ট্রাম্পকে তাদের নিজ দেশের দুর্ভোগের কথা বলছিলেন। সেখানেই বাংলাদেশ থেকে যাওয়া নারী ট্রাম্পকে বলেন, তার জমি জমা কেড়ে নিয়েছে বাংলাদেশি মুসলিমরা, তার ঘরবাড়িতেও আগুন লাগিয়ে দিয়েছে। তাই তিনি ঘরবাড়ি ছেড়ে পালিয়ে এসেছেন।

ওই নারীর বক্তব্যের পর দেশের সোশ্যাল মিডিয়ায় ঝড় উঠেছে। রীতিমতো নেটিজেনরা ওই নারীর বক্তব্যের প্রতিবাদ করেন। তারা ট্রাম্পকে হ্যাশ ট্যাগ, মেনশন করে জানাচ্ছেন ওই মহিলা মিথ্যে কথা বলেছেন। তবে কেন ওই নারী এমন কথা বললেন তা জানা যায়নি। তবে যুক্তরাষ্ট্রের একটি গণমাধ্যম পুরো অনুষ্ঠানটি ফেসবুকে লাইভ করার কারণে ভিডিওটি সকলের সামনে চলে আসে।

ওভাল অফিসে আয়োজিত এই অনুষ্ঠানে সেই নারী ট্রাম্পকে বলেন, ‘আমি বাংলাদেশ থেকে এসেছি। সেখানে ৩৭ মিলিয়ন হিন্দু-মুসলিম-বৌদ্ধ খ্রিস্টানকে গুম করা হয়েছে। এখনো সেখানে ১৮ মিলিয়ন সংখ্যালঘু জনগণ রয়েছে।

দয়া করে আমাদের সাহায্য করুন। আমরা আমাদের দেশ ত্যাগ করতে চাই না। আমি আমার ঘর হারিয়েছি, আমার জমি নিয়ে নিয়েছে, আমার ঘরবাড়িতে আগুন লাগিয়ে দিয়েছে কিন্তু সেসবের কোনো বিচার নেই।

ডোনাল্ড ট্রাম্প জিজ্ঞেস করেন কারা এসব করছে? বাংলাদেশি ওই নারী বলেন, ‘সবসময় উগ্রবাদী মুসলিমরা এই কাজ করছে। সবসময় তারা রাজনৈতিক প্রশ্রয়ে এই কাজ করে।

এরপরই বিষয়টি টক অব দ্য কান্ট্রিতে পরিণত হয়েছে। জানা গেছে ওই মহিলার নাম প্রিয়া সাহা। তিনি বাংলাদেশের হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদের সাংগঠনিক সম্পাদক পরিচয়দানকারী।

জানা গেছে, প্রিয়া সাহা মহিলা ঐক্য পরিষদ’র কেন্দ্রীয় কমিটির সাধারণ সম্পাদক ছিলেন, উনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্র ইউনিয়ন করতেন, রোকেয়া হলে থাকতেন। এখন একটি এনজিও আছে ওনার।

বিভ্রান্তিমূলক কর্মকাণ্ডের জন্য গতবছর তাকে মহিলা ঐক্য পরিষদের সাধারণ সম্পাদকের পদ থেকে বহিষ্কার করা হয়। এছাড়াও এর আগেও বাড়ি পুড়িয়ে দেওয়ার নাটক করে প্রচুর বিদেশি ফান্ড কালেক্ট করেন তিনি। তার গ্রামের বাড়ি চরবানিরী, মাটিভাঙ্গা, নাজিরপুর, পিরোজপুর।

প্রিয়ার স্বামী মলয় সাহা সহকারী উপপরিচালক দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। তাদের দুই মেয়ে কয়েক বছর ধরে আমেরিকায় বসবাস করছেন। কিছুদিন পূর্বে প্রিয়া সাহা আমেরিকায় যান।

সোশাল মিডিয়ায় অনেকেই দাবি তুলেছেন তাকে শাস্তির আওতায় আনার। এ এইচ সুজন নামে একজন লিখেছেন, এই মহিলার পরিচয় বের করে দেশদ্রোহীতার কারনে আইনের আওতায় আনা উচিত। তার পরিবার ও বংশের কেউ বাংলাদেশে থাকলে তাদেরকেও আইনের আওতায় আনা উচিত।

সাইফ নাসির লিখেছেন, প্রিয়া সাহা শুধু হিন্দু ধর্মের লোকদের নয়, পুরো বাংলাদেশকেই বিপদে ফেলে দিয়েছে। একই সঙ্গে মৌলবাদীদের হাতে চমৎকার একটি ইস্যুও তুলে দিয়েছে। এর প্রভাবে পানি যে কতো ঘোলা হবে তা আমরা ধারণা করতে পারছি না। আমার বিশ্বাস তিনি কোন ম্যাসাকারের অপেক্ষায় আছেন। আশা করি, সরকার কোন বুদ্ধিদীপ্ত সমাধান বের করবে। ইতিপূর্বে এগুলো মোকাবেলা করার অভ্যাস সরকারের আছে।

এছাড়াও তার পরিচয় তুলে ধরে রুদ্র সাইফুল লিখেছেন, প্রিয়া সাহা মহিলা ঐক্য পরিষদ’র কেন্দ্রীয় কমিটির সাধারণ সম্পাদক ছিলেন, উনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্র ইউনিয়ন করতেন, রোকেয়া হলে থাকতেন। এখন একটি এনজিও আছে ওনার।

বিভ্রান্তিমূলক কর্মকাণ্ডের জন্য গতবছর তাকে মহিলা ঐক্য পরিষদের সাধারণ সম্পাদকের পদ থেকে বহিষ্কার করা হয়, বাড়ি পুড়িয়ে দেওয়ার নাটক করে প্রচুর বিদেশি ফান্ড কালেক্ট করেন তিনি। তার গ্রামের বাড়ি চরবানিরী, মাটিভাঙ্গা, নাজিরপুর, পিরোজপুর।

প্রিয়ার স্বামী মলয় সাহা সহকারী উপপরিচালক দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক), তাদের দুই মেয়ে কয়েক বছর ধরে মলয় সাহার দুর্নীতির টাকায় আমেরিকায় বসবাস করছেন, কিছুদিন পূর্বে প্রিয়া সাহাকে দুদকের অফিসিয়াল গাড়ি ব্যবহার করে এয়ারপোর্টে পৌছে দেন তার স্বামী, দুদকের সহকারী পরিচালক মলয় সাহা।

সকালে এয়ারপোর্ট পৌছে ফ্লাইট মিস করেন প্রিয়া, তারপর সেদিন রাতেই আরেকটি ফ্লাইটে তিনি আমেরিকায় রওনা হন, তার বিদায় মুহূর্তে বিমানবন্দরে উপস্থিত ছিলেন কুখ্যাত যুদ্ধাপরাধী আকবর কবিরের কন্যা তথাকথিত মানবাধিকার কর্মী খুশী কবির।

প্রিয়া সাহার এই দেশবিরোধী ষড়যন্ত্রের সঙ্গী হওয়ায় তার স্বামী মলয় সাহাকে অতিদ্রুত চাকুরি থেকে অব্যাহতি দিয়ে গ্রেফতার করে আইনের আওতায় নিয়ে আসা হোক; ভুলে গেলে চলবে না তারা স্বামী-স্ত্রী মিলে অলরেডি অনেক বড় ক্ষতি করে ফেলেছেন বাংলাদেশের।

সোনালীনিউজ/এমটিআই

Wordbridge School
Link copied!