• ঢাকা
  • শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল, ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

স্প্যানিশ ভাষায় কোরআন অনুবাদের উদ্যোগ


কবির আল মাহমুদ, স্পেন ডিসেম্বর ১০, ২০১৯, ০২:৩১ পিএম
স্প্যানিশ ভাষায় কোরআন অনুবাদের উদ্যোগ

ঢাকা : ১৪৯২ সালের ১ এপ্রিল।  খ্রিস্টানদের বিশ্বাসঘাতকতায় বলি হয় গ্রানাডার হাজার হাজার মুসলিম নারী-পুরুষ। নিরাপত্তার জন্য মুসলমানরা আশ্রয় নেয় মসজিদে। কিন্তু খ্রিস্টানরা মসজিদে তালা লাগিয়ে আগুন ধরিয়ে দেয়।  মুহূর্তেই পুড়ে ছাই হয়ে যায় মুসলমানরা। চিরতরে হারিয়ে যায় তাদের আটশত বছর স্পেন শাসনের গৌরবময় স্মৃতি।  স্পেন থেকে মুছে যায় ইসলামের শেষ চিহ্নটুকুও।  এভাবে স্পেন চলে যায় অমুসলিমদের হাতে।

অথচ, স্পেনে মুসলিম ‍যুগকে প্রায়ই জ্ঞানচর্চার স্বর্ণযুগ বলা হয়।  যেখানে গ্রন্থাগার, বিদ্যালয় ও হাম্মামখানা প্রতিষ্ঠিত হয়েছিলো, আর সেই সাথে বিকাশ লাভ করেছিলো সাহিত্য, কবিতা এবং স্থাপত্যকলা।  মুসলিম এবং অমুসলিম উভয়ই এতে অবদান রেখেছিলো ব্যাপকভাবে।

এখনও সেখানে অমুসলিমদের শাসন অব্যাহত।  তবে দাওয়াত ও তবলিগের ফলে স্পেনের মানুষ ইসলামের সুশীতল ছায়ায় ক্রমেই আশ্রয় নিচ্ছে।  দিন দিন তাদের সংখ্যা বৃদ্ধিই পাচ্ছে।  

এক রিপোর্টে বলা হয়েছে, বর্তমানে স্পেনের সাড়ে চার কোটি জনসংখ্যার ৪.৫ ভাগ মুসলিম।  ২০২৭ সালে স্পেনে মুসলিম জনসংখ্যা ৭ লাখে দাঁড়াবে, যা হবে জনসংখ্যার প্রায় ১৪ ভাগ।  মুসলমানদের সংখ্যা উত্তরোত্তর বৃদ্ধির ফলে সেখানে নির্মিত হচ্ছে অধিক হারে মসজিদ-মাদ্রাসা।  সরকার থেকেও পাচ্ছে সুযোগসুবিধা আর নিরাপত্তা।  মুসলমানদের সংখ্যা এভাবে বৃদ্ধি পেলে এক সময় হয়তো স্পেন আবার হয়ে উঠবে মুসলিমপ্রধান দেশ। 

স্পেনের রাষ্ট্রীয় ভাষা স্প্যানিশ হলেও বেশ কয়েকটি স্বীকৃত আঞ্চলিক ভাষা রয়েছে। তবে আঞ্চলিক ভাষার মধ্যে স্প্যানিশ বেশি প্রসিদ্ধ ও আদি ভাষা।

এবার সেই স্প্যানিশ ভাষায় পবিত্র কোরআনে কারিমের অনুবাদের উদ্যোগ নিলেন বাংলাদেশ মসজিদ পরিচালনা কমিটির সাবেক সভাপতি জামাল উদ্দিন মনির।  আর তার এই উদ্যোগকে বাস্তবায়নের জন্য এগিয়ে এসেছে ইসলামিক কালচারাল সেন্টার, মাদ্রিদ ও বায়তুল মোকাররম বাংলাদেশ মসজিদ পরিচালনা কমিটি।  

পবিত্র কোরআনে কারিমের প্রকৃত বাণী অমুসলিম স্প্যানিশদের কাছে পৌঁছে দিতে এবং স্প্যানিশ  ভাষায় বোঝার সুবিধার্থে তারা এ সিদ্ধান্ত নিয়েছেন।

আল কোরআন একাডেমি লন্ডনের মাধ্যমে স্প্যানিশ ভাষায় কোরআনের অনুবাদটি করবে।  আল কোরআন একাডেমি দীর্ঘ দিন ধরে লন্ডনসহ বিভিন্ন দেশে পবিত্র কোরআন বিতরণের কাজ করে যাচ্ছে।  বাংলা, ইংরেজি, উর্দু এবং অন্যান্য ভাষায় তরজমাসহ এ কোরআন বিশ্বের বিভিন্ন দেশে বিতরণ করা হচ্ছে। 

এ উপলক্ষে সোমবার (৯ ডিসেম্বর) দেশটির রাজধানী মাদ্রিদের বাংলাদেশ এসোসিয়েশন ইন স্পেন’র হলে এক আলোচনা সভা,নৈশভোজ ও দোয়ার মাহফিল অনুষ্ঠিত হয়।  

বায়তুল মোকাররম বাংলাদেশ মসজিদ পরিচালনা কমিটির সভাপতি খোরশেদ আলম মজুমদারের সভাপতিত্বে আয়োজিত সভায় দৈনন্দিন জীবনে কুরআনুল করিমের গুরুত্ব তুলে ধরে মূল বক্তব্য দেন বায়তুল মোকাররম বাংলাদেশ মসজিদের খতিব শায়েখ হাসান বিন মোহাম্মদ উল্লাহ।  আল হূদা জামে মসজিদের খতিব মোহাম্মদ নুরুল সঞ্চালনায় সভায় আমন্ত্রিত অতিথিদের মধ্যে বক্তব্য দেন বাংলাদেশ এসোসিয়েশন ইন স্পেনের সভাপতি কাজী এনায়েতুল করিম তারেক, সাধারণ সম্পাদক কামরুজ্জামান সুন্দর, বায়তুল মোকাররম বাংলাদেশ মসজিদ পরিচালনা কমিটির সাধারণ সম্পাদক হাজী আজিজুল হক খালেক, কমিউনিটি নেতা নূর হোসেন পাটোয়ারী, আবুল খায়ের, গ্রেটার ঢাকা এসোসিয়েশন ইন স্পেনের সভাপতি এম এইচ সোহেল ভূঁইয়া, মানবাধিকার সংগঠন ভালিয়েন্ত বাংলার সভাপতি মো. ফজলে এলাহী, ঢাকা জেলা এসোসিয়েশন ইন স্পেনের সাধারণ সম্পাদক এস এম মাসুদুর রহমান প্রমুখ। 

সভাপতির বক্তব্যে খোরশেদ আলম মজুমদার বলেন, ইসলাম ধর্মকে সঠিকভাবে চেনা ও কোরআন সম্পর্কে যথার্থ জ্ঞানার্জনের ক্ষেত্রে ভিনদেশিদের ভাষা আমাদের ভাষা বিশাল এক প্রতিবন্ধক হিসেবে কাজ করছে।  আমারা তা দূর করার চেষ্টা করছি মাত্র।

সভায় বক্তারা স্প্যানিশ ভাষায় পবিত্র কোরআনে কারিমের অনুবাদের এই মহতি উদ্যোগের প্রশংসা করেন এবং এব্যাপারে তাঁদের সার্বিক সহযোগিতা ও একাত্বতার কথা জানান।  অনুষ্ঠানে লেখক, কবি, সাংবাদিকসহ কমিউনিটির বিশিষ্ট ব্যক্তিবর্গরা উপস্থিত ছিলেন। পরে নৈশভোজ ও দোয়ার মাধ্যমে অনুষ্ঠানের সমাপ্তি হয়। 

সোনালীনিউজ/এএস

Wordbridge School
Link copied!