• ঢাকা
  • মঙ্গলবার, ১৯ মার্চ, ২০২৪, ৫ চৈত্র ১৪৩০

স্বেচ্ছায় নিজ দেশে ফিরতে চান রোহিঙ্গারা


কক্সবাজার প্রতিনিধি আগস্ট ১৮, ২০১৯, ০১:৪৩ পিএম
স্বেচ্ছায় নিজ দেশে ফিরতে চান রোহিঙ্গারা

ঢাকা : বাংলাদেশে আশ্রয় নেওয়া রোহিঙ্গাদের ফেরত নিতে আবারো তোড়জোড় শুরু করেছে মিয়ানমার। নিজ দেশে ফিরে যেতে অধির আগ্রহী অধিকাংশ রোহিঙ্গা শরণার্থী। ইতোমধ্যে কিছু সংখ্যক রোহিঙ্গা নিজ উদ্যোগে রাখাইন ফিরেও গেছে।

কিন্তু ক্যাম্পগুলোতে প্রত্যাবাসনবিরোধী উগ্রতা ও উসকানিদাতাদের নিবৃত করা সম্ভব না হলে ফের হোঁচট খাওয়ার শঙ্কা থেকেই যাচ্ছে। আগামী ২২ আগস্ট সাড়ে তিন হাজার রোহিঙ্গাকে প্রথম ধাপে স্থল ও নৌপথে গ্রহণ করতে প্রস্তুতি নিয়েছে মিয়ানমার।

গত জুলাই মাসের ২৭-২৯ তারিখ মিয়ানমার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের স্থায়ী সচিব ইউ মিন্ট থুর নেতৃত্বে একটি উচ্চ পর্যায়ের ডেলিগেশন টিম বাংলাদেশ সফর করে। টিমের সদস্যরা দুই দিনে কয়েক দফায় ক্যাম্পগুলোতে  মুসলিম, হিন্দু ও খ্রিস্টান রোহিঙ্গাদের সঙ্গে পৃথক পৃথক আলোচনায় অংশ নেন। মিয়ানমার সফরকারী টিমের সঙ্গে যুক্ত হন আসিয়ানের আহা সেন্টারের ৫ সদস্যের প্রতিনিধি দল।

রাখাইনে রোহিঙ্গারা ফিরে কী কী সুবিধা ভোগ করবে, জীবন-জীবিকা কীভাবে নির্বাহ হবে ও অন্যান্য অবস্থার কী পরিবর্তন হয়েছে, যোগাযোগ, স্বাস্থ্য, শিক্ষাসহ সরকারের পক্ষ থেকে গৃহীত পদক্ষেপের কথা তুলে ধরেন ডেলিগেশন টিম। এ-সংক্রান্ত বিভিন্ন ধরনের লিফলেটও বিতরণ করা হয়।

ভয়েস অব রোহিঙ্গা নেতা সৈয়দুল আমিন জানান, মিয়ানমার টিমের সঙ্গে আলোচনায় রোহিঙ্গারা নিজ জন্মভূমিতে ফেরার ব্যাপারে আশাবাদী হয়ে ওঠে। বালুখালী ক্যাম্পের রোহিঙ্গা নেতা জবর মুল্লুক জানান, বর্ডার খোলা পেলে যেভাবে এসেছে, সেভাবে রোহিঙ্গারা ফিরে যেতে উদগ্রীব।

কিন্তু জানমালের নিরাপত্তার অভাবে কেউ মুখ খুলে বলতে পারছে না। কারণ ইতোপূর্বে এ ধরনের ফিরে যাওয়ার আগ্রহ প্রকাশ করা বেশ কয়েক জন হত্যার শিকার হয়েছে।

থাইংখালী ক্যাম্পের রোহিঙ্গা মৌলভী হাফেজ আমির হোসেন জানান, রাখাইনে যারা মুলা দেখিয়ে দেশান্তরিত হতে কাজ করেছিল, তারাই ক্যাম্পগুলোতে নানা নির্যাতন-জুলুম করছে। এখানে (ক্যাম্পে) ছেলে-মেয়েরা নষ্ট হয়ে যাচ্ছে, নারীদের কোনো ইজ্জত নেই। জিম্মিদশায় প্রতিনিয়ত নারীর সম্ভ্রমহানি হচ্ছে। তাই  অধিকাংশ রোহিঙ্গা যেকোনোভাবে রাখাইন ফিরে যেতে আগ্রহী।

কুতুপালং ক্যাম্পের রোহিঙ্গা মো. ইলিয়াছ জানান, রোহিঙ্গাদের ফিরে যেতে যারা হুমকি, খুন, গুমের সঙ্গে জড়িত, তারা সবার চেনাজানা। তাদের নানা হুমকি উপেক্ষা করে নিজ উদ্যোগে অনেক রোহিঙ্গা গোপনে রাখাইন ফিরে যাচ্ছে। ক্যাম্পগুলোতে সন্ত্রাসীদের অত্যাচারে অতিষ্ঠ হয়ে গত ৯ আগস্টও ২১ জন রোহিঙ্গা নারী, পুরুষ ও শিশু মিয়ানমার ফিরে গেছে বলে অনেক রোহিঙ্গা জানান।

তবে বেশ কিছু রোহিঙ্গা বলেছে মিয়ানমার সরকারের পক্ষ থেকে রোহিঙ্গা ও নাগরিকত্বের স্বীকৃতির নিশ্চয়তা এবং তাদের ওপর সংঘটিত নির্যাতনের বিচারের নিশ্চয়তা না পেলে রোহিঙ্গারা ফিরে যেতে রাজি নয়। এ অবস্থায় ফিরে না যেতে চাইলে এই দফার চেষ্টাও ফলপ্রসূ হবে কি না তা এখনো অনিশ্চিত।

একইভাবে গত বছরের ১৫ নভেম্বর উভয় দেশের ব্যাপক প্রস্তুতি থাকার পরও রোহিঙ্গাদের ফেরত পাঠানো যায়নি। এ সময়  কতিপয় দেশি-বিদেশি এনজিওর গোপন ষড়যন্ত্র ও উসকানি পেয়ে সন্ত্রাসী রোহিঙ্গাদের বাধার মুখে প্রত্যাবাসন কার্যক্রম পণ্ড হয়ে যায়।

শরণার্থী ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কমিশনার মো. আবুল কালাম এনডিসি বলেন,  মিয়ানমার নিয়মিত তাদের নাগরিক রোহিঙ্গাদের যাচাইকৃত তালিকা দিচ্ছে। ২২ আগস্ট মিয়ানমার সম্প্রতি ছাড়পত্র দেওয়া ৩ হাজার ৪৫০ রোহিঙ্গাকে ফেরত নিতে যাচ্ছে। সবকিছু ঠিক থাকলে সীমান্তের ঘুমধুম মৈত্রী সেতু দিয়ে স্থলপথে ও নাগাখুইয়া নৌপথ দিয়ে রোহিঙ্গাদের প্রথম ব্যাচটি মিয়ানমার ফিরে যাওয়ার প্রস্তুতি রয়েছে।

সোনালীনিউজ/এমটিআই

Wordbridge School
Link copied!