• ঢাকা
  • মঙ্গলবার, ১৯ মার্চ, ২০২৪, ৫ চৈত্র ১৪৩০

‘হত্যা নয়, আত্মহত্যাই করেছিলেন সালমান শাহ’


নিজস্ব প্রতিবেদক ফেব্রুয়ারি ২৪, ২০২০, ১২:৫৭ পিএম
‘হত্যা নয়, আত্মহত্যাই করেছিলেন সালমান শাহ’

ঢাকা : দেশের রুপালি পর্দার তুমুল জনপ্রিয় নায়ক সালমান শাহর মৃত্যু হত্যা না আত্মহত্যা এ রহস্য উদ্ঘাটনে পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশনের (পিবিআই) তদন্তে প্রমাণ মেলেছে।

পারিবারিক কলহের জেরে আত্মহত্যা করেছেন চিত্রনায়ক সালমান শাহ এমন তথ্য উঠে এসেছে পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশনের (পিবিআই) এর তদন্ত প্রতিবেদনে।

সোমবার (২৪ ফেব্রুয়ারি) বেলা সাড়ে ১১টায় প্রেস ব্রিফিংয়ে এ সব তথ্য জানান পিবিআই প্রধান বনজ কুমার মজুমদার।

ব্রিফিংয়ে তিনি বলেন, চিত্রনায়ক সালমান শাহ পারিবারিক কলহের জেরে আত্মহত্যা করেছেন। হত্যার কোনও প্রমাণ মেলেনি।

চিত্রনায়ক সালমান শাহর রহস্যজনক মৃত্যুর পর দায়ের করা মামলায় এখন পর্যন্ত কোনও তদন্তকারী সংস্থার প্রতিবেদন গ্রহণ করেনি তার পরিবার।

প্রথমে থানা পুলিশ পরে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি) মামলাটি তদন্ত করে। সেটি প্রত্যাখ্যাত হওয়ার পর সালমান শাহ অপমৃত্যু নাকি হত্যার শিকার তা নিশ্চিত হতে আদালত বিচার বিভাগীয় তদন্ত কমিটি করে। সেটাও প্রত্যাখ্যাত হয়। এরপর র‌্যাব এবং সর্বশেষ ২০১৬ সালের ২১ আগস্ট তদন্ত সংস্থা হিসেবে দায়িত্ব পায় পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই)।

সর্বশেষ গত ১৮ ফেব্রুয়ারি আদালতে প্রতিবেদন দাখিল করার কথা থাকলেও সালমান শাহ হত্যা মামলার পুনঃতদন্ত প্রতিবেদন জমা দিতে পারেনি পিবিআই। এ কারণে ঢাকা মহানগর হাকিম বাকী বিল্লাহ শুনানি শেষে পুনঃতদন্ত প্রতিবেদন জমা দেয়ার তারিখ নির্ধারণ করেছেন ১৮ মার্চ (বুধবার)।

১৮ মার্চের আগেই পুনঃতদন্ত প্রতিবেদন চূড়ান্ত করতে চাইছে তদন্ত সংস্থা পিবিআই।

পিবিআই জানায়, চিত্রনায়ক সালমান শাহ হত্যার শিকার নাকি তার অপমৃত্যু হয়েছে, সে ব্যাপারে তদন্ত একদম শেষ পর্যায়ে। তাদের তদন্তে চাঞ্চল্যকর অনেক তথ্যও পাওয়া গেছে।

পিবিআইয়ের তদন্ত সংশ্লিষ্ট এক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা গণমাধ্যমকে বলেন, এতদিন অনেক কথা হয়েছে, মামলার তদন্ত অনেকে করেছেন। অনেকবারই নারাজি দেয়া হয়েছে আদালতে দাখিল করা প্রতিবেদনে। তবে পিবিআই দায়িত্ব পাওয়ার পর এ ব্যাপারে অনেক কাজ হয়েছে। যার যার সঙ্গে কথা বলা বা জিজ্ঞাসাবাদ করা দরকার, করা হয়েছে। এখন উপসংহারের পালা।

১৯৯৬ সালের ৬ সেপ্টেম্বর মারা যান চিত্রনায়ক চৌধুরী মোহাম্মদ শাহরিয়ার (ইমন) ওরফে সালমান শাহ। সে সময় এ বিষয়ে অপমৃত্যুর মামলা দায়ের করেছিলেন তার বাবা প্রয়াত কমরউদ্দিন আহমদ চৌধুরী। পরে ১৯৯৭ সালের ২৪ জুলাই ছেলেকে হত্যা করা হয়েছে অভিযোগ করে মামলাটিকে হত্যা মামলায় রূপান্তরিত করার আবেদন জানান তিনি। অপমৃত্যু মামলার সঙ্গে হত্যাকাণ্ডের অভিযোগের বিষয়টি একসঙ্গে তদন্ত করতে সিআইডিকে নির্দেশ দেন আদালত।

তদন্তের পর ১৯৯৭ সালের ৩ নভেম্বর আদালতে চূড়ান্ত প্রতিবেদন দেয় সিআইডি। চূড়ান্ত প্রতিবেদনে সালমান শাহের মৃত্যুকে আত্মহত্যা বলে উল্লেখ করে সংস্থাটি। ওই মাসের ২৫ নভেম্বর ঢাকার সিএমএম আদালতে প্রতিবেদনটি গৃহীত হয়।

কিন্তু সিআইডির প্রতিবেদন প্রত্যাখ্যান করে তার বাবা কমরউদ্দিন আহমদ চৌধুরী রিভিশন মামলা দায়ের করেন। এর ফলে ২০০৩ সালের ১৯ মে মামলাটি বিচার বিভাগীয় তদন্তে পাঠান আদালত। এরপর প্রায় ১৫ বছরে মামলাটি বিচার বিভাগীয় তদন্তে ছিল।

পরে ২০১৪ সালের ৩ আগস্ট ঢাকার সিএমএম আদালতের বিচারক বিকাশ কুমার সাহার কাছে বিচার বিভাগীয় তদন্তের প্রতিবেদন দাখিল করেন মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট ইমদাদুল হক। ওই প্রতিবেদনেও সালমান শাহর মৃত্যুকে আত্মহত্যা হিসেবে উল্লেখ করা হয়।

আবারও ২০১৪ সালের ২১ ডিসেম্বর সালমান শাহর মা নীলা চৌধুরী ছেলের মৃত্যুতে বিচার বিভাগীয় তদন্ত প্রতিবেদন প্রত্যাখ্যান করেন এবং বিচার বিভাগীয় তদন্ত প্রতিবেদনের বিরুদ্ধে নারাজি দেবেন বলে আবেদন করেন।

২০১৫ সালের ১০ ফেব্রুয়ারি নীলা চৌধুরী ঢাকা মহানগর হাকিম জাহাঙ্গীর হোসেনের আদালতে বিচার বিভাগীয় তদন্ত প্রতিবেদনের নারাজির আবেদন দাখিল করেন। নারাজি আবেদনে উল্লেখ করা হয়, আজিজ মোহাম্মদ ভাইসহ ১১ জন তার ছেলে সালমান শাহর হত্যাকা্লের সঙ্গে জড়িত থাকতে পারেন।

পরে মামলার তদন্তের দায়িত্ব দেওয়া হয় র‍্যাবকে। কিন্তু র‍্যাবের তদন্ত চলাকালে বেশ কয়েকবার শুনানি নিয়ে ২০১৬ সালের ১৯ মে মহানগর দায়রা জজ কামরুল হোসেন মোল্লা বিব্রত বোধ করে ঢাকার ৬ নম্বর বিশেষ জজ আদালতে মামলার নথি পাঠিয়ে দেন।

এ আদালতের বিচারক ইমরুল কায়েস ওই বছরেরই ২১ আগস্ট র‍্যাবের মাধ্যমে পুনঃতদন্তের (অধিকতর) আদেশ আইনসম্মত হয়নি উল্লেখ করে বিষয়টি আবারও শুনানি নেওয়ার জন্য ঢাকার মুখ্য মহানগর হাকিমকে দায়িত্ব দেন।

এর ধারাবাহিকতায় মহানগর হাকিম লস্কর সোহেল রানা নারাজি আবেদনের ওপর আবারও শুনানি নেন। পরে ৭ ডিসেম্বর শুনানির পর সালমান শাহর মৃত্যুর ঘটনা হত্যা না আত্মহত্যা- তা নির্ধারণের জন্য র‍্যাবের বদলে পিবিআইকে দায়িত্ব দেন।

সবশেষ গত ২ ফেব্রুয়ারি আদালতে প্রতিবেদন জমা দেওয়ার সময় নির্ধারণ ছিল। কিন্তু ওই দিন প্রতিবেদন দাখিল না করে পিবিআইয়ের তদন্ত কর্মকর্তা পুনরায় সময় চেয়ে আবেদন করেন। আবেদনের প্রেক্ষিতে আদালত আগামী ৩০ মার্চ তারিখে প্রতিবেদন জমা দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন।

সোনালীনিউজ/এমটিআই

Wordbridge School
Link copied!