• ঢাকা
  • শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল, ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

ধর্মকে আঘাত হানা রাজনীতি ত্যাগ করতে হবে, ওবামা


নিজস্ব প্রতিবেদক জানুয়ারি ১৩, ২০১৬, ০৫:৪১ পিএম
ধর্মকে আঘাত হানা রাজনীতি ত্যাগ করতে হবে, ওবামা

আর্ন্তজাতিক ডেস্ক

মার্কিন প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা বলেছেন, আমাদের এমন রাজনীতি পরিহার করতে হবে, যা নির্দিষ্ট কোনো গোষ্ঠী বা ধর্মকে আঘাত করে। এ জায়গাগুলোয় আসলে রাজনৈতিক সংস্কারের কোনো প্রয়োজন নেই। এগুলো বোঝার জায়গা।

জাতির উদ্দেশে ভাষণ (স্টেট অব দ্য ইউনিয়ন অ্যাড্রেস) দেওয়ার সময় মার্কিন প্রেসিডেন্ট এসব কথা বলেন। স্থানীয় সময় মঙ্গলবার (১২ জানুয়ারি) রাতে (বাংলাদেশ সময় বুধবার সকালে) কংগ্রেসের যৌথ অধিবেশনে তিনি এ ভাষণ দেন। প্রেসিডেন্ট হিসেবে জাতির উদ্দেশে ওবামার এটাই শেষ বাৎসরিক ভাষণ।

তিনি বলেন, বিশ্ব আমাদের সমীহ করে, কারণ আমরা খোলামেলা এবং সবার প্রতি সহানুভূতিশীল। যখন রাজনীতিকরা মুসলিমদের অপমান করে, যখন একটি মসজিদে হামলা হয় বা কোনো শিশু নিপীড়নের শিকার হয়, তখন আমাদের জাতীয় নিরাপত্তা বিঘ্নিত হয়। এ ধরনের চিন্তাভাবনা, একে-অপরকে আক্রমণ আমাদের জন্য ধ্বংসই বয়ে আনবে।

তিনি বলেন, আমাদের সেনাবাহিনী বিশ্বের সবচেয়ে নিখুঁত বাহিনী। যখনই পৃথিবীতে কোনো আন্তর্জাতিক ইস্যুর সৃষ্টি হয়েছে, মানুষ আমাদেরকে নেতৃত্ব দেওয়ার আহ্বান জানিয়েছে। আমাদের কর্মপদ্ধতিতে সবসময়ই অগ্রাধিকার পেয়েছে মার্কিন জনগণের সুরক্ষা ও সন্ত্রাসের মূলোৎপাটন। কেউ যদি আমেরিকানদের পেছনে লাগে, আমেরিকানরা তাদের পেছনে লাগে। যেমনটা এখন জঙ্গি সংগঠন ইসলামিক স্টেট (আইএস) বুঝতে পারছে।

ওবামা বলেন, ৬০টিরও বেশি দেশের যৌথবাহিনীর নেতৃত্ব দিচ্ছে যুক্তরাষ্ট্র। জঙ্গি দমনে ১০ হাজারেরও বেশি বিমান হামলা পরিচালনা করেছি আমরা। এছাড়া সন্ত্রাস দমনে স্থানীয় বাহিনীগুলোকে প্রশিক্ষণ, অস্ত্র সরবরাহ ও অন্যান্য সহযোগিতা দিয়ে যাচ্ছি। আমাদের এসব উদ্যোগের কারণেই মধ্যপ্রাচ্য, আফগানিস্তান ও পাকিস্তানে জঙ্গি দমনে যথেষ্ট অগ্রগতি হয়েছে।

তিনি আরও বলেন, আমরা ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠা করতে পেরেছি কি না, তা ওসামা বিন লাদেনকে জিজ্ঞেস করুন। যখন বিশ্বে সন্ত্রাস মাথাচাড়া দিয়ে উঠলো, মানুষ মস্কো বা বেইজিংয়ের কাছে যায়নি। তারা আমাদের প্রতি নেতৃত্ব দেওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন।

জাতীয় উন্নতিতে সবার অংশগ্রহণের কথা বলে ওবামা বলেন, আমি আশা করছি, ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠা ও জাতীয় উন্নতির জন্য এ বছর আমরা সবাই এক সঙ্গে কাজ করবো। নতুন বছরের জন্য আজ রাতে (স্থানীয় সময় মঙ্গলবার দিনগত রাত) আমি আনুষ্ঠানিকভাবে কিছু প্রস্তাব করবো। এগুলোর মধ্যে অন্যতম হলো, বন্দুক সহিংসতা থেকে আগামী প্রজন্মকে সুরক্ষা, সবার জন্য সমান বেতন, বেতনভোগী ছুটি ও নূন্যতম বেতন বৃদ্ধি। এসব প্রতিষ্ঠার জন্য আমি আমার লড়াই অব্যাহত রাখবো।

বিগত সাত বছরে তার শাসনের সাফল্যগাঁথার উল্লেখযোগ্য অংশগুলো তুলে ধরতে গিয়ে তিনি বলেন, আমরা প্রতিটা অঙ্গরাজ্যেই মানুষের পছন্দ অনুযায়ী বিয়ে করার স্বাধীনতা দিয়েছি। যুক্তরাষ্ট্রের অর্থনীতি এখন বিশ্বের সবচেয়ে শক্তিশালী ও স্থিতিশীল। বেকারত্বের হারও আমরা অর্ধেকে কমিয়ে আনতে সক্ষম হয়েছি। ১ কোটি ৪০ লাখেরও বেশি নতুন কর্মসংস্থান সৃষ্টি করতে পেরেছি। এর সঙ্গে আমরা বাজেট ঘাটতিও তিন-চতুর্থাংশ কমিয়ে এনেছি।

ওবামা বলেন, গত সাত বছরে আমরা চেষ্টা করেছি, আমেরিকার প্রতিটা মানুষের অর্থনৈতিক অবস্থার উন্নতি করতে। শিক্ষার ও উন্নত প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করেছি, যাতে প্রতিটা মানুষ ভালো বেতনের চাকরি পান। প্রাথমিক শিক্ষার হারও বাড়াতে সক্ষম হয়েছি। সেই সঙ্গে আমাদের দেশে মাধ্যমিকে পাশের হার নতুন এক উচ্চতা পেয়েছে। প্রতিটা আমেরিকান যেন উচ্চশিক্ষা অর্জন করতে পারে, সে জন্য আমরা কলেজ প্রতিষ্ঠা করেছি। আমরা এরই মধ্যে শিক্ষাকালীন ঋণ পরিশোধের মাত্রা ১০ শতাংশ কমিয়ে এনেছি।

মহাকাশ বিজ্ঞানে রাশিয়ার সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের তুলনা করতে গিয়ে ওবামা বলেন, ৬০ বছর আগে রাশিয়া একাই মহাকাশে দাপটের সঙ্গে বিচরণ করেছে। আমরা সেসব নিরবে দেখেছি আর দিনরাত কাজ করেছি। ১২ বছর পর আমরাও চাঁদে হাঁটতে শুরু করলাম।

থমাস এডিসন, রাইট ব্রাদার্স ও জর্জ ওয়াশিংটনের অবদানেই আমেরিকার আজকের এই শক্ত ভিত বলেও এসময় দাবি করেন তিনি।

ওবামা বলেন, আমরা সবার জন্য মুক্ত ইন্টারনেট নিশ্চিত করেছি। বড় বড় পদক্ষেপ নিয়েছি যাতে করে শিক্ষার্থী ও নিম্ন আয়ের আমেরিকানরা অনলাইনে বেশি আয়ের সুযোগ পান। গত বছর ভাইস-প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন বলেছিলেন, আমেরিকা ক্যান্সার সারাতে পারবে। আজ রাতে আমি ঘোষণা করছি, সরকার এক নতুন জাতীয় উদ্যোগ নিতে চলেছে, যার মাধ্যমে বাইডেনের কথার সত্যতা প্রমাণিত হবে। আর বাইডেনকে আমি এই ‘মিশন কন্ট্রোল’র দায়িত্ব দিচ্ছি।

তিনি বলেন, সাত বছর আগে আমরা একটি ঐতিহাসিক পদক্ষেপ নেই। ক্লিন এনার্জির ওপর সবচেয়ে বড় একক বিনিয়োগ করি আমরা। এখন তার ফল পাওয়া যাচ্ছে। আইওয়া থেকে টেক্সাস পর্যন্ত এখন উইন্ডমিল থেকে শক্তি উৎপাদন করছি। আরিজোনা থেকে নিউইয়র্ক পর্যন্ত প্রতিটা ভবনের ছাদেই সোলার প্যানেল শক্তি উৎপাদন করছে। আর এভাবেই প্রতি বছর বিদ্যুৎ উৎপাদনে আমাদের বিলিয়ন ডলার বেঁচে যাচ্ছে। এখন সময় পরিবেশ দুষণকারী শক্তি উৎপাদন ব্যবস্থাকে বিদায় জানানোর। বিশেষ করে জীবাশ্ম জ্বালানি থেকে সরে আসতে হবে আমাদের। আর এ কারণেই আমরা আমাদের তেল ও কয়লা ব্যবস্থাপনাকে পরিবর্তন করতে চলেছি।
জলবায়ু পরিবর্তন সম্পর্কে তিনি বলেন, এ বিষয়টি আমাদের জাতীয় নিরাপত্তার সঙ্গে জড়িত। এ ব্যাপারে এখনই পদক্ষেপ না নিলে বাকি বিশ্বের মতো আমরাও বিরূপ পরিস্থিতির সম্মূখীন হবো।

এছাড়া জাতীয় অগ্রগতি ও রাজনীতি, আন্তর্জাতিক রাজনীতির বিভিন্ন দিক ও দেশের আমদানি-রফতানিসহ বিভিন্ন বিষয় নিয়ে কথা বলেন ওবামা।
প্রসঙ্গত, ২০০৮ সালে মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে জয় পন ওবামা। ২০১২ সালে দ্বিতীয় মেয়াদে নির্বাচিত হন তিনি। যুক্তরাষ্ট্রের ৪৪তম প্রেসিডেন্ট হিসেবে ওবামার মেয়াদ শেষ হবে ২০১৭ সালের জানুয়ারি মাসে।

সোনালীনিউজ/ঢাকা/এমসুআ

Wordbridge School
Link copied!