• ঢাকা
  • শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল, ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

প্রধানমন্ত্রীরে কাছে সন্তান ভিক্ষা চাইলেন রাশেদের মা


নিজস্ব প্রতিবেদক জুলাই ১১, ২০১৮, ০৯:৪৪ পিএম
প্রধানমন্ত্রীরে কাছে সন্তান ভিক্ষা চাইলেন রাশেদের মা

ঢাকা: ‘প্রধানমন্ত্রী একজন মা, আমিও একজন মা। সন্তানের জন্য দিশেহারা এক মা আমি, অন্য এক মায়ের (প্রধানমন্ত্রী) কাছে সন্তানকে ভিক্ষা চাইছি। আপনি দয়া করে আমার সন্তানকে ক্ষমা করে দেন। ওকে আমি বাড়ি নিয়ে যাবো।’

বুধবার (১১ জুলাই) বিকেলে রাজধানীর ক্রাইম রিপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশনে এক সংবাদ সম্মেলনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে উদ্দেশ করে কোটা সংস্কার আন্দোলনের যুগ্ম আহ্বায়ক রাশেদ খানের মা সালেহা বেগম এসব কথা বলেন।

সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন— রাশেদ খানের ছোট বোন সোনিয়া আক্তার এবং তার স্ত্রী রাবেয়া আলো।

সংবাদ সম্মেলনে রাশেদের মা সালেহা বেগম প্রধানমন্ত্রীর কাছে তার ছেলেকে ভিক্ষা চেয়েছেন। কাঁদতে কাঁদতে তিনি বলেন, ‘‘আমার সঙ্গে আমার সন্তানের অনেকদিন দেখা নেই। প্রতিদিন রাস্তায় রাস্তায় ঘুরি, ডিবি অফিসের সামনে বসে থাকি। গতকাল (মঙ্গলবার) ভাগ্যক্রমে ডিবি অফিসে সকাল ১১টায় দেখা হয়ে গিয়েছিল। আমার মনিকে দেখে চেনা যাচ্ছে না। ওর শরীর ভালো নেই। রাশেদ আমাকে দেখেই বললো— ‘প্রধানমন্ত্রীর কাছে অনুরোধ করো, আমাকে যেন না মারে। আমার রিম্যান্ড যেন তুলে নেয়।’ কথা বলতে বলতেই পুলিশ ওকে নিয়ে চলে গেলো। হাঁটতে হাঁটতে একমিনিট কথা হয়েছে।’’

তিনি বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রী একজন মা, আমিও একজন মা। দিশেহারা এক মা আমি, অন্য এক মায়ের (প্রধানমন্ত্রী) কাছে আমার সন্তানকে ভিক্ষা চাইছি। আমার কইলজার টুকরা, আমার প্রাণ, আমার জানকে তার কাছে ভিক্ষা চাইছি। আপনি দয়া করে আমার সন্তানকে ক্ষমা করে দেন। আমার বুকের ধনকে আমার বুকে ফিরিয়ে দেন। আমার আর কিচ্ছু দরকার নেই, আমার রাশেদের চাকরি দরকার নেই। ওকে আমি বাড়ি নিয়ে যাবো।’

রাশেদ রাজনৈতিক কোনও দল বা দেশের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্রে জড়িত নয় উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘আমার মনি এমনকি আমরা কেউ কোনও রাজনৈতিক দলের সঙ্গে জড়িত না। মনি শুধু চাকরির জন্য দাবি করেছিল, কোটা কমানোর জন্য আন্দোলন করছিল। ও-তো কোনও অপরাধ করেনি। তারপরও ওকে এমনভাবে হয়রানি করা হচ্ছে। আমার আর চাকরি দরকার নেই। আমার মনিকে প্রধানমন্ত্রী ক্ষমা করে দিলে আমি ওকে বাড়ি নিয়ে যাবো। ওকে আর কোনোদিন আন্দোলন করতে দেবো না।’ এ সময় তিনি প্রধানমন্ত্রীর উদ্দেশে হাত জোড় করে রাশেদকে ফিরিয়ে দেওয়ার প্রার্থনা করেন।

তিনি বলেন, ‘আমি পরের বাড়িতে কাজ করে আমার মনিকে লেখা পড়া শিখাইছি। ওর আব্বা লোকের জমিতে কামলা দিয়ে বহু কষ্টে সংসার চালিয়েছে। ওর আব্বার পেটে পাথর জমেছে।’

রাশেদের বোন সোনিয়া আক্তার বলেন, ‘আমার মা গত ১৫ দিন ধরে একটু্ও ঘুমায় না। তার যে কখন কী হয়, জানি না। তার শরীরের অবস্থাও ভালো না। আমার আব্বার অবস্থাও খুব খারাপ।’

সাংবাদিকদের উদ্দেশে তিনি বলেন, ‘আপনারা আমাদের গ্রামে খোঁজ নেন, কেউ বলতে পারবে না আমার ভাই এবং আমরা কেউ জামাত শিবিরের সঙ্গে জড়িত। আমার ভাই শুধু একজন ছাত্র। তার কোনও খারাপ উদ্দেশ্য ছিল না।’

সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের উত্তরে রাশেদের স্ত্রী রাবেয়া আলো বলেন, ‘আমরা মানবাধিকার কমিশনে গিয়েছিলাম সাহায্যের জন্য। তারা জানিয়েছে— অনেকগুলো মামলা তার বিরুদ্ধে হয়েছে, সময় লাগবে। আইনজীবীরাও একই কথা বলেন। আর কয়েকদিন আগে পত্রিকায় দেখলাম, বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি বলেছেন— বিশ্ববিদ্যালয় তাদের বিষয়ে কোনও দায়িত্ব নেবে না। ফলে আমরা আর তার কাছে যাইনি। তবুও তার কাছে আমাদের অনুরোধ, আমার স্বামী তো কোনও অপরাধ করেনি। হাজার হাজার শিক্ষার্থী তা জানে। তাহলে তাকে এভাবে কেন শাস্তি দেওয়া হচ্ছে? আমরা তার মুক্তি চাই।’

১ জুলাই সকালে ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় কমিটির আইন বিষয়ক সম্পাদক আল-নাহিয়ান খান জয় বাদী হয়ে শাহাবাগ থানায় তথ্য-প্রযুক্তি আইনে রাশেদের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করেন। এজাহারে আল-নাহিয়ান খান জয় বলেন, ‘রাশেদ খান ফেসবুক লাইভে এসে প্রধানমন্ত্রীকে নিয়ে কটূক্তি করেছেন। এছাড়া ক্যাম্পাসে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টির জন্য বিভ্রান্তিকর তথ্য ছড়িয়ে আসছিল। রাশেদ নিজে তার ফেসবুক অ্যাকাউন্ট থেকে লাইভে এসে তাকে তুলে নেওয়া হচ্ছে বলে দাবি করেন। এরূপ বিভ্রান্তিকর তথ্য ছড়ানোর অভিযোগ করায় জনমনে ভীতি সৃষ্টি হয়েছে।’

ওইদিনই মিরপুর-১৪ নম্বর থেকে রাশেদকে গ্রেফতার করা হয়। ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (মিডিয়া) অতিরিক্ত উপ-পুলিশ কমিশনার ওবায়দুর রহমান জানান, শাহবাগ থানায় তথ্য-প্রযুক্তি আইনে দায়ের করা একটি মামলায় তাকে গ্রেফতার করা হয়েছে।

সোনালীনিউজ/জেএ

Wordbridge School
Link copied!