• ঢাকা
  • শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল, ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

অতিআত্মবিশ্বাসে অন্তর্মুখী বিএনপি


জাকিরুল আহসান জুন ২১, ২০১৭, ০৯:১৭ পিএম
অতিআত্মবিশ্বাসে অন্তর্মুখী বিএনপি

ঢাকা: দেশের রাজনৈতিক অঙ্গণে অন্যতম জনপ্রিয় ও বৃহৎ দল হিসেবে সমাদৃত বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি)। নিজেদের ক্ষমতাসীন দলের প্রধান প্রতিপক্ষ হিসেবে দাবি করে আসছে বরাবরই। এমনকি যেকোনো মুহূর্তেই দেশে ‘নিরপেক্ষ’ নির্বাচন হলেই তারা জয়ের দেখা পাবে- এমন আত্মবিশ্বাসে ভরপুর থাকছে দলের নেতারা।

তবে এক দশক ধরে ক্ষমতার বাইরে থাকায় দলের সাংগঠনিক কাঠামো আর সক্রিয় নেতাদের এই আত্মবিশ্বাসে খানিকটা ধাক্কা লেগেছে। বিশেষ করে ক্ষমতার পালাবদলের অতীতের রাজনীতির সংস্কৃতি থেকে বের হয়ে আসতে হচ্ছে রাজনৈতিক দলগুলোকে। তবে এক্ষেত্রে বিএনপি এখনও ফ্যান্টাসির মধ্যে রয়েছে বলেই মনে করছে কেউ কেউ।

সমালোচকরা বলছেন, নির্বাচন কেন্দ্রিক কিংবা দলীয় ইস্যুতে যতটা উচ্চকণ্ঠ দলের নেতাদের ততটা নয় জনসম্পৃক্ত বা ‘পাবলিক’ ইস্যুতে। জনগণের ভোগান্তি, গ্যাস, বিদ্যুৎ, জ্বালানি তেল কিংবা নিত্যপণ্যের দাম বাড়ানো নিয়ে কোনো কর্মসূচি নেই বিএনপির।

সম্প্রতি প্রস্তাবিত বাজেটে ব্যাংক আমানতের উপর আবগারি শুল্ক বাড়ানোর প্রস্তাবে দেশব্যাপী সমালোচনার ঝড় উঠলেও সেখানে উদ্বেগ-উৎকণ্ঠার মাত্রা বেশি বাড়তে দেখা যায়নি বিএনপিতে। শুধু বাজেট নিয়ে সংবাদ সম্মেলনে বক্তব্য তুলে ধরার মধ্যেই সীমাবদ্ধ রয়ে গেছে দলীয় কর্মসূচি।

বিএনপির শুভাকাঙ্ক্ষীরা বলছেন, জনসম্পৃক্ত কিংবা জনগুরুত্বপূর্ণ যেকোনো ইস্যুতে বিএনপি আগেও জনগণের সঙ্গে ছিল, এখনও আছে। তারা চাইলে যেকোনো সফল আন্দোলনের ডাক দিতে পারে। বিএনপি এখনও সক্ষম, তবে সরকারের বাধা আর প্রতিহিংসার কারণেই তা ভেস্তে যাচ্ছে।

দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেনের সাফ কথা, বিএনপি জনগণের দল। আমরা সব সময়ই জনকল্যাণে রাজনীতি করি। পাবলিক ইস্যুতে আমাদের কোনো কর্মসূচি নেই এ অভিযোগ সঠিক নয়। আমরা সব সময় জনগণের দাবিতে সোচ্চার। বাজেটের প্রতিক্রিয়া দিয়েছি সংবাদ সম্মেলন করে। এটাও তো আন্দোলনের অংশ।

তবে খানিকটা যৌক্তিক ব্যাখ্যা দিয়ে ভাইস চেয়ারম্যান শামসুজ্জামান দুদু বললেন, আমাদের তো রাস্তায় নামতে দেয়া হয় না। মানুষের সেবায় পাশে দাঁড়াতে যাওয়ার পথে গাড়িতে হামলা করে ভেঙে দেয়া হয়। শুধু কি মহাসচিবই? স্বয়ং চেয়ারপারসনের গাড়িবহরেও তো হামলা করা হচ্ছে।

সূত্রমতে, বর্তমান সরকারের আমলে জ্বালানি তেল আর বিদ্যুতের দাম বাড়ানো হয়েছে দফায় দফায়। এই দাম বাড়ানোর আগে বা পরে সংবাদ সম্মেলন কিংবা সভা- সেমিনারে বক্তব্য বা বিবৃতির মধ্যেই সীমাবদ্ধ দেখা গেছে বিএনপির কর্মসূচি। তবে রাঙ্গুনিয়ায় মহাসচিবসহ নেতাদের ওপর হামলার প্রতিবাদে রাজপথে সোচ্চার দেখা গেছে নেতাকর্মীদের। তাৎক্ষণিক প্রতিবাদ মিছিলসহ কেন্দ্রীয় বিক্ষোভ কর্মসূচিও পালন করেছে দলটি।

এর আগে চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া কিংবা সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান তারেক রহমানের নামে কোনো মামলা হলেও রাজপথে কাপাতে দেখা গেছে নেতাকর্মীদের। একই সঙ্গে নির্বাচনকালীন সরকারের দাবিতে আন্দোলন কর্মসূচি চলমান রয়েছে।

জনগুরুত্বপূর্ণ ইস্যুগুলোতে সক্রিয় না হওয়ায় জনগণের মধ্যেও প্রশ্ন তৈরি হচ্ছে বলে মনে করছেন অভিজ্ঞ মহল। দলীয় ইস্যুতে বেশি সক্রিয় হওয়ায় দলের সক্ষমতা নিয়ে কোনো প্রশ্ন তোলা যায় না। তবে জনসম্পৃক্ত ইস্যুতে নীরবতা থাকার বিষয়টি দল সম্পর্কে জনগণের কাছে ভালো বার্তা যাচ্ছে কিনা তা ভেবে দেখার বিষয়।

এ ব্যাপারে রাজনৈতিক দলগুলোর কঠোর সমালোচনা করলেন সুশাসনের জন্য নাগরিক (সুজন) সম্পাদক বদিউল আলম মজুমদার। তিনি বললেন, আমাদের দেশের রাজনৈতিক দলগুলো ক্ষমতার জন্য বিভোর। ক্ষমতায় যাওয়ার জন্য যা করার তাই চেষ্টা করে তারা।

সুজন সম্পাক আরো বললেন, জনগণের জন্য কোনো দল যদি কিছু করে থাকে তাও লোক দেখানো। শুধু বিএনপি নয়, সব রাজনৈতিক দলেরই একই অবস্থা। সবাই ব্যক্তি ও দল কেন্দ্রিক রাজনীতি ও কর্মসূচি পালন করে। জনগণের স্বার্থে কোনো দল রাজনীতি করে না।’ দু’একজন নেতা অবশ্য এক্ষেত্রে ব্যতিক্রম।

সোনালীনিউজ/এন

Wordbridge School
Link copied!