• ঢাকা
  • শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল, ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

অর্ধডজনের বেশি পশুর হাট নিয়ে ধোঁয়াশা


নিজস্ব প্রতিবেদক আগস্ট ১১, ২০১৮, ০৮:০৩ পিএম
অর্ধডজনের বেশি পশুর হাট নিয়ে ধোঁয়াশা

ঢাকা : পবিত্র ঈদ-উল-আজহার আর কয়েকদিন বাকি থাকলেও এখনো রাজধানীর ৭টি পশুর হাটের ইজারা সম্পন্ন হয়নি। ফলে ওসব পশুর হাট নিয়ে ধোঁয়াশার সৃষ্টি হয়েছে। অথচ ঈদের প্রায় এক সপ্তাহ আগ থেকেই রাজধানীর পশুর হাটগুলো জমজমাট হতে থাকে। কিন্তু ইজারা না হওয়া হাটগুলোতে পশু উঠানো নিয়ে এখনো অনিশ্চয়তা কাটেনি। তবে দ্রুতই এ সমস্যার সমাধান হবে বলে রাজধানীর উভয় সিটির কর্মকর্তারা আশাবাদী। ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশন সংশ্লিষ্ট সূত্রে এসব তথ্য জানা যায়।

সংশ্লিষ্ট সূত্র মতে, এবার ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের মোট ২১টি স্থানে পশুর হাট বসানো হবে। তার মধ্যে গাবতলী স্থায়ী হাট বাদে বাকি ২০টি হাট ঈদের জন্য অস্থায়ী ভিত্তিতে বসানো হবে। ওসব হাটের জন্য মূল্য নির্ধারণ করে মাসখানেক আগেই পত্রিকায় বিজ্ঞপ্তি দিয়ে দরপত্র আহ্বান করা হয়।

এবার ওই নিয়মে দরপত্র আহ্বান করা হলেও সবগুলো হাটের ইজারা সম্পন্ন হয়নি। দুই সিটি কর্পোরেশনের ২০টি অস্থায়ী হাটের মধ্যে ৮টির ইজারা এখনও সম্পন্ন হয়নি। মূলত কাঙ্খিত মূল্য না পাওয়ায় ওসব হাটের জন্য পুনরায় দরপত্র আহ্বান করা হয়েছে। আগামী ১৫ আগস্টের পর থেকেই রাজধানীতে পশু আসতে শুরু করবে। ঈদের তিন দিন আগে থেকেই সিটি কর্পোরেশনের অনুমোদিত হাটে পশু ওঠার কথা থাকলেও এর আগে থেকে আসা শুরু হয়ে যায়। তবে বেচাকেনাটা ঈদের দু’একদিন আগেই হয়।

সূত্র জানায়, এবার ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশনের গাবতলী স্থায়ী হাটসহ ৭টি স্থানে হাট বসবে। তার মধ্যে রয়েছে উত্তরা ১৫ নম্বর সেক্টরের ২ নম্বর ব্রিজের পশ্চিমে গোলচত্বর পর্যন্ত সড়কের উভয় পাশের ফাঁকা জায়গা, মিরপুর ডিওএইচ এর উত্তর পাশের সেতু প্রোপার্টি সংলগ্ন খালি জায়গায়, মিরপুর সেকশন-২ (ইস্টার্ন হাউজিং) এর খালি জায়গা, মোহাম্মদপুর বুদ্ধিজীবী সড়ক সংলগ্ন (বছিলা) পুলিশ লাইনের খালি জায়গা, আশিয়ান সিটি হাউজিং, খিলক্ষেত বনরূপা আবাসিক প্রকল্পের খালি জায়গা, ভাটারা (সাঈদ নগর) হাট এবং গাবতলী স্থায়ী পশুরহাট। তার মধ্যে উত্তরের উত্তরখান হাটের ইজারা সম্পন্ন হয়নি। আর ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের ১৩টি স্থানে অস্থায়ী পশুর হাট বসানো হবে।

ওসব হাটের মধ্যে রয়েছে- কমলাপুর স্টেশনের আশপাশের খালি জায়গা, উত্তর শাহজাহানপুর খিলগাঁও রেলগেট বাজারের মৈত্রী সংঘের মাঠ সংলগ্ন খালি জায়গা, ব্রাদার্স ইউনিয়নের বালুর মাঠ সংলগ্ন খালি জায়গা, মেরাদিয়া বাজার সংলগ্ন খালি জায়গা, রহমতগঞ্জ খেলার মাঠ সংলগ্ন খালি জায়গা, কামরাঙ্গীরচর ইসলাম চেয়ারম্যানের বাড়ির মোড় থেকে দক্ষিণ দিকে বুড়িগঙ্গা নদীর বাঁধ সংলগ্ন খালি জায়গা, আরমানিটোলা খেলার মাঠ সংলগ্ন খালি জায়গা, ধূপখোলা ইউ এ্যান্ড ক্লাব সংলগ্ন খালি জায়গা, পোস্তাগোলা শ্মশানঘাট সংলগ্ন খালি জায়গা, দনিয়া কলেজ মাঠ সংলগ্ন খালি জায়গা, শ্যামপুর খালি জায়গা সংলগ্ন খালি জায়গা, সাদেক হোসেন খোকা মাঠের পাশে ধোলাইখাল ট্রাক টার্মিনাল সংলগ্ন খালি জায়গা, ঝিগাতলার হাজারীবাগ মাঠ সংলগ্ন খালি জায়গা। তার মধ্যে ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশনের ৮টি পশুর হাটের মধ্যে ৭টির ইজারা সম্পন্ন হয়েছে।

আর ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের মধ্যে এখনো ইজারা সম্পন্ন না হওয়া পশুর হাটগুলো হচ্ছে- ব্রাদার্স ইউনিয়নের বালুর মাঠ সংলগ্ন খালি জায়গা, কমলাপুর স্টেশনের আশপাশের খালি জায়গা, আরমানিটোলা খেলার মাঠ সংলগ্ন খালি জায়গা, ধূপখোলা ইউ এ্যান্ড ক্লাব সংলগ্ন খালি জায়গা, সাদেক হোসেন খোকা মাঠের পাশে ধোলাইখাল ট্রাক টার্মিনাল সংলগ্ন খালি জায়গার হাট।

সূত্র আরো জানায়, সরকারী হাট-বাজার বরাদ্দ নীতিমালা-২০১১ অনুযায়ী বিগত বছরের ইজারামূল্যের সঙ্গে ২৫ শতাংশ মূল্য বাড়িয়ে সর্বনিম্ন দর নির্ধারণ করতে হবে। কিন্তু গতবছর জারি করা এক প্রজ্ঞাপনে তা কমিয়ে ৬ শতাংশ করা হয়। যদিও প্রতিবছরই হাট ইজারাদাররা ওই খাতে প্রচুর লাভবান হলেও সরকারের খুব একটা রাজস্ব আদায় হয় না। এবার ডিএনসিসির ৭টি পশুর হাটের সরকারী ইজারামূল্য ধরা হয়েছে ১২ কোটি ৮৫ লাখ ৫৩ হাজার ৭৭ টাকা। আর দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের ১৩টি অস্থায়ী হাটের ইজারামূল্য ধরা হয়েছে ১২ কোটি ১৮ লাখ ৩৭ হাজার ৬৭৫ টাকা।

এদিকে এ বছর রাজধানীতে একটি স্থায়ী এবং ২০ অস্থায়ী গরুর হাট বসলেও এর সংখ্যা আরো বৃদ্ধি করার জন্য ঢাকার উত্তর ও দক্ষিণের জনগণ মেয়রের কাছে এই চিঠি পাঠিয়েছেন। কোরবানির হাট অপ্রতুল থাকায় ঢাকার জনগণ কি সমস্যায় পড়ছে চিঠিতে তাও চিঠিতে উল্লেখ করা হয়েছে। রাজধানী উত্তরের রামপুরা থানার জনগণ চিঠিতে জানান, কয়েক বছর পর্যন্ত হাটের সংখ্যা হ্রাস পাওয়ায় ব্যাপক সমস্যা হচ্ছে। ঢাকা উত্তরে মোট জনসংখ্যা এক কোটি; কিন্তু হাটের সংখ্যা মাত্র ৭টি। ফলে গড়ে ১৩ লাখ জনগণের জন্য হাটের সংখ্যা মাত্র একটি। চিঠিতে আরো বলা হয়, প্রতি হাটে এক সঙ্গে বিপুলসংখ্যক মানুষ জড়ো হওয়ায় বেপারীরা গরুর দাম বাড়িয়ে দেয়, ফলে পশুর মূল্য মধ্যবিত্ত ও নিম্ন মধ্যবিত্তদের ক্রয়ক্ষমতার বাইরে চলে যায়। ফলে অনেকেই কোরবানি দিতে পারেন না। মেয়রের কাছে তারা হাটের সংখ্যা বৃদ্ধি করে দ্রুত সমস্যা সমাধানের আহ্বান জানান।

অন্যদিকে মৎস্য ও প্রাণীসম্পদ মন্ত্রণালয়ের তথ্য মতে, গত বছরের মতো এবারও কোরবানির পশুর কোন সঙ্কট হবে না। ভারতীয় গরুরও প্রয়োজন হবে না। তার কারণ এবার কোরবানিযোগ্য গবাদিপশুর সংখ্যা প্রায় এক কোটি ১৬ লাখ। তার মধ্যে গরু-মহিষ ৪৪ লাখ ৫৭ হাজার এবং ছাগল-ভেড়ার সংখ্যা ৭১ লাখ। গতবছর এ সংখ্যা ছিল এক কোটি ৪ লাখ ২২ হাজারের বেশি। দিন দিন পশু পালনের প্রতি উৎসাহিত হচ্ছে মানুষ। ফলে কোরবানিতে পশু সঙ্কটও কমে যাচ্ছে।

রাজধানীতে শুর হাট ইজারা না হওয়া প্রসঙ্গে ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশনের (ডিএনসিসি) প্রধান সম্পত্তি কর্মকর্তা আমিনুল ইসলাম জানান, এিনসিসির ৮টি হাটের মধ্যে ৭টির ইজারা সম্পন্ন হয়েছে। একটির জন্য পুনরায় দরপত্র আহ্বান করা হয়েছে। আশা করা যায় আগামী ১৩ আগস্ট সেটি চূড়ান্ত হয়ে যাবে।

একই প্রসঙ্গে ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের (ডিএসসিসি) প্রধান সম্পত্তি কর্মকর্তা আব্দুল মালেক জানান, ডিএসসিসির ১৩টি অস্থায়ী হাটের মধ্যে ৭টি ইজারা হয়েছে। বাকি যে ৬টির ইজারা হয়নি তার জন্য। স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের কাছে নির্দেশনা চাওয়া হয়েছে। মন্ত্রণালয় সেভাবে নির্দেশনা দেবেন সেভাবেই হাটগুলোর বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেয়া হবে এবং খুব দ্রুতই সিদ্ধান্ত আসতে পারে।

সোনালীনিউজ/এমটিআই

Wordbridge School
Link copied!