• ঢাকা
  • শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল, ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

আ’ লীগের নাম ভাঙিয়ে রোহিঙ্গাদের সঙ্গে প্রতারণা!


কক্সবাজার প্রতিনিধি সেপ্টেম্বর ১৯, ২০১৭, ১০:৫৮ পিএম
আ’ লীগের নাম ভাঙিয়ে রোহিঙ্গাদের সঙ্গে প্রতারণা!

কক্সবাজার: আমেনা খাতুন(২০) মিয়ানমারের আকিয়াব বলিবাজার এলাকার সচ্ছল পরিবারের মেয়ে। কৃষিপণ্য ও গরু-ছাগলে ভরপুর ছিল বাড়ির আঙ্গিনা। বলতে গেলে কোনো অভাব ছিল না বাড়িতে।

গত ২৫ আগস্টের আগের রাত সব কিছু ওলট-পালট করে দিয়েছে তার। সরকারি বাহিনীর লুটতরাজ ও পাশবিকতায় এলাকাবাসীর জীবনে নেমে এসেছে কালো ছায়া।

ঘরে ঘরে আগুন, নির্বিচারে বুলেট ও ধারাল অস্ত্রে ক্ষতবিক্ষত করার পাশাপাশি নারীদের ধর্ষণ এক অরাজক পরিস্থিতির মুখোমুখি করে সবাইকে। প্রাণ নিয়ে বাঁচতে অন্যদের সঙ্গে বাংলাদেশে পালিয়ে এসে লেদা রোহিঙ্গা ক্যাম্পে আশ্রয় নিয়েছেন তিনি।

নিজ বাড়িতে এলাকার অভুক্তদের সহায়তা দিতেন তারা। তাই আশ্রিত জীবনে উপোস থাকলেও ত্রাণ বা অন্য কোনো সহায়তার জন্য কারও কাছে যেতে পারেন না তিনি বা বাড়ির কেউ।

এ কারণে সঙ্গে থাকা ব্যবহার্য পণ্য বিক্রি করেই ক্ষুধা নিবারণের চেষ্টা করছে আমেনার পরিবার। চার আনা ওজনের ২২ ক্যারেটের একটি স্বর্ণের রিং বিক্রি করে পেয়েছেন মাত্র ৫ হাজার টাকা। দাম কম পাচ্ছেন বুঝতে পেরেও প্রয়োজনের তাগিদে বিক্রি করেন আমেনা।

শুধু আমেনা নন, তার পরিবারের মতো অসংখ্য পরিবার আশ্রয় নিয়েছে টেকনাফ-উখিয়ার রোহিঙ্গা ক্যাম্পগুলোতে। তারাও আমেনার মতো আভিজাত্য বোধের বাধায় নিজেদের সঞ্চিত পণ্য বা দ্রব্যাদি বিক্রি করে আহারের সংস্থান করার চেষ্টা করছেন।

এসব রোহিঙ্গার অসহায়ত্বকে পুঁজি করে সীমান্ত শহরে গড়ে উঠেছে ‘ঠক’ বাণিজ্য চক্র। সুবিধার জন্য নানা জায়গায় সরকারি দলের নেতার অনুসারী বা নেতা পরিচয় দিয়ে চক্রটি রোহিঙ্গাদের স্বর্ণালংকারসহ মূল্যবান দ্রব্য নামমাত্র মূল্যে ক্রয় করে লাভবান হওয়ার পথে রয়েছেন তারা।

চক্রটির সঙ্গে উখিয়া-টেকনাফের রোহিঙ্গা ক্যাম্পকেন্দ্রিক আলাদা ক্ষুদ্র দল কাজ করছে। তারা অনেক সময় নিজেদের স্থানীয় সংসদ সদস্য আব্দুর রহমান বদির ‘লোক’ পরিচয় দিয়ে পুরো এলাকা দাঁপিয়ে বেড়াচ্ছে বলে অভিযোগ স্থানীয়দের।

টেকনাফ ও উখিয়ার রোহিঙ্গা শরণার্থী ক্যাম্পে গিয়ে কথা বলে জানা গেছে, পালিয়ে আসা রোহিঙ্গাদের মধ্যে অনেক উচ্চবিত্ত ও উচ্চ মধ্যবিত্ত পরিবারের লোকজন রয়েছেন। রাখাইনে যাদের আলিশান বাড়ি, খেত-খামারে জমি এবং জমানো অর্থও রয়েছে।

তবে মিয়ানমার বাহিনীর হাত থেকে বাঁচতে সব কিছু ফেলেই পালিয়ে আসতে বাধ্য হয়েছেন তারা। সঙ্গে এনেছেন ঘরে থাকা নগদ অর্থ ও স্বর্ণলঙ্কার। এখন বেঁচে থাকার প্রয়োজনে ও নিজেদের আভিজাত্য বোধ বজায় রাখতে সঙ্গে থাকা স্বর্ণালংকারগুলো বিক্রি করে দিচ্ছেন তারা।

তাদের মতে, এসব বিক্রিতে তারা ঠকছেন। এটি যেনেও প্রয়োজনের তাগিদে ক্রয়কালীন দাম এবং চলমান বাজারের দামের অর্ধেকের চেয়েও কম দামে পণ্যটি হাতবদল করতে হচ্ছে তাদের।

টেকনাফ পৌর এলাকার মার্কেটগুলোতে খোঁজ নিয়ে জানা যায়, এখানকার বাজারে যেসব স্বর্ণের দোকান রয়েছে তা একসময় বর্তমান সাংসদ আব্দুর রহমান বদির পরিবারের লোকজন বা স্বজনদের নিয়ন্ত্রণে চলত। বর্তমানে তার পরিবারের লোকজন এসব ব্যবসায় না থাকলেও এ ব্যবসা তাদের নিয়ন্ত্রণে এমনটা প্রচার রয়েছে।

ফলে সেই সুবিধা গ্রহণ করেন অনেক দোকানি ও দালাল সিন্ডিকেট। তারা এভাবে ভ্রাম্যমাণ বিক্রি করতে আসা স্বর্ণ কেনার ক্ষেত্রে নির্ধারিত একটি রেট করে দিয়েছেন। তবে সাংবাদিক জানতে পেরে কেউ এ রেটটি প্রকাশ করেননি। তারা দেশীয় নিয়মেই স্বর্ণ কেনা হয় বলে উল্লেখ করেন।

টেকনাফ থানা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মাইন উদ্দিন খান সাংবাদিকদের বলেন, এমন খবর পাওয়ার পর কয়েক জায়গায় আমরা অভিযান চালিয়ে বেশ কয়েকজনকে ধরে সাজা দিয়েছি। এরপরও মানুষের লোভ নিজ থেকে সংবরণ না করলে ‘ঠক’ বাণিজ্য কমানো কষ্টকর। তবুও প্রশাসন সবখানে সতর্ক দৃষ্টি রাখছে।

সোনালীনিউজ/ঢাকা/প্রতিনিধি/আতা

Wordbridge School
Link copied!