• ঢাকা
  • শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল, ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

আইডিবি থেকে চড়া সুদে ঋণ নিচ্ছে সরকার


বিশেষ প্রতিনিধি আগস্ট ৬, ২০১৬, ১২:১৪ পিএম
আইডিবি থেকে চড়া সুদে ঋণ নিচ্ছে সরকার

উচ্চ সুদে ১৪ প্রকল্পের জন্য ইসলামিক ডেভেলপমেন্ট ব্যাংক (আইডিবি) থেকে ঋণ নিচ্ছে সরকার। ২০১৬ থেকে ২০১৮ সাল পর্যন্ত তিন বছরে মোট ঋণ নেয়া হবে প্রায় সাড়ে ১৩ হাজার কোটি টাকা। সুদের হার ২ থেকে ৪ শতাংশের মধ্যে থাকবে। মেম্বার কান্ট্রি পার্টনারশিপ স্ট্র্যাটেজির (এমসিপিএস) আওতায় এ ঋণ দিচ্ছে সংস্থাটি। ইতিমধ্যেই প্রাথমিক প্রস্তুতি নেয়া হয়েছে। অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগ (ইআরডি) সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।

চড়া সুদে নেয়া ঋণের ব্যবহার নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন অর্থনীতিবিদরা। তারা বলছেন, ঋণ নিয়ে যদি কার্যকর ব্যবহার করা না যায় তাহলে এর কোনো যৌক্তিকতা নেই। বিশ্বব্যাংক দশমিক ৭৫ শতাংশ হারে সার্ভিস চার্জে ঋণ দিয়ে থাকে। সেখানে সরকার আইডিবি থেকে দুই থেকে চার শতাংশ সুদে ঋণ নিচ্ছে। অর্থনীতিবিদরা এজন্যই চড়া সুদ হিসেবে আখ্যায়িত করছেন।

এ প্রসঙ্গে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সাবেক অর্থ উপদেষ্টা ড. মির্জ্জা আজিজুল ইসলাম বলেন, কিছুটা বেশি সুদে ঋণ নেয়ায় দোষের কিছু নেই। কিন্তু টাকাটা কোন কাজে ব্যবহার হচ্ছে, এতে কতটা উপকার হবে সেটিই বড় প্রশ্ন। দেখতে হবে রফতানি বাড়ছে কি না। এছাড়া এই ঋণের প্রকল্পগুলো কতটা গুরুত্বপূর্ণ সেটাও দেখার বিষয়। এসব প্রকল্প দ্রুত বাস্তবায়নে গুরুত্ব দিতে হবে। অন্যথায় সুদের বোঝা বাড়বে। তবে ঋণ পরিশোধের ক্ষেত্রে আমাদের যে অর্থ ব্যয় হয় এতে খুব চিন্তার কোনো কারণ নেই। তবে প্রাধিকারপ্রাপ্ত প্রকল্প হলে প্রথমে বিশ্বব্যাংক, এডিবি ও জাইকা থেকে ঋণ নেয়ার চেষ্টা করা উচিত। তারপরই আইডিবি বা অন্য সংস্থার ঋণ।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে ইআরডির দায়িত্বশীল এক কর্মকর্তা বলেন, ১৩টি প্রকল্পে ঋণ নেয়ার বিষয়টি প্রায় চূড়ান্ত হলেও একটি প্রকল্পের বিষয়ে সংশ্লিষ্ট সংস্থার কাছে মত চাওয়া হয়েছে। বাংলাদেশের প্রস্তাবের পরিপ্রেক্ষিতে আইডিবি প্রকল্পের গুরুত্ব বিবেচনা করে এসব প্রকল্পে ঋণ দিতে সম্মত হয়েছে। বিভিন্ন ক্যাটাগরিতে এ ঋণ দেবে সংস্থাটি। যেমন লোন, লিজিং, ইসটিসনা, ইন্সটলমেন্ট সেল, লাইন অব ফাইনান্সিং ইত্যাদি।

ইআরডির সূত্র জানায়, মোট ঋণ হচ্ছে ১৬৯ কোটি ৭০ লাখ মার্কিন ডলার। স্থানীয় মুদ্রায় প্রতি ডলার ৮০ টাকা দরে এর পরিমাণ দাঁড়ায় প্রায় সাড়ে ১৩ হাজার কোটি টাকা। এর মধ্যে চলতি বছর পাঁচটি প্রকল্পের অনুকূলে ঋণ নেয়া হবে ৫২ কোটি ১০ লাখ মার্কিন ডলার। স্থানীয় মুদ্রায় ৮০ টাকা প্রতি ডলার ধরে যার পরিমাণ দাঁড়ায় প্রায় ৪ হাজার ১৬৪ কোটি টাকা। প্রকল্পগুলো হচ্ছে, এস্টাবলিশমেন্ট অব ইন্টারন্যাশনাল সেন্টার ফর ন্যাচারাল প্রডাক্ট রিসার্চ প্রজেক্ট। এতে নেয়া হবে ১ কোটি ৫০ লাখ মার্কিন ডলার।

৪০০ মেগাওয়াট আশুগঞ্জ ইস্ট পাওয়ার প্লান্ট ইফিসিয়েন্সি ইমপ্রুভমেন্ট প্রজেক্ট। এতে নেয়া হবে ২২ কোটি ডলার। প্রি-পেমেন্ট মিটারিং প্রজেক্ট ফর বিপিডিবিস ডিস্ট্রিবিউশন জোন, ফেজ-১। এ প্রকল্পে ২২ কোটি ডলার। রংপুর ডিভিশন এগ্রিকালচার অ্যান্ড রুরাল ডেভেলপমেন্ট প্রজেক্ট। নেয়া হবে ৪ কোটি ৬০ লাখ ডলার এবং ওয়াটার সাপ্লাই, স্যানিটেশন, ড্রেইনেজ অ্যান্ড সলিড ওয়েস্ট ম্যানেজমেন্ট ফর স্মল পৌরসভাস। এতে নেয়া হবে ২ কোটি ডলার।

আগামী ২০১৭ সালে মোট ঋণ নেয়া হবে ৪৯ কোটি ৪০ লাখ মার্কিন ডলার। স্থানীয় মুদ্রায় ৮০ টাকা প্রতি ডলার হিসেবে প্রায় ৩ হাজার ৯৫০ কোটি টাকা। প্রকল্পগুলো হচ্ছে- রুরাল হাউজিং প্রজেক্ট ইন ৬৬ উপজেলাস প্রজেক্ট। এতে নেয়া হবে ১০ কোটি ডলার। সাপোর্ট টু প্রাইভেট সেক্টর ইনফ্রাসট্রাকচার ইনভেসমেন্ট (ইডকল), এতে ২২ কোটি ৫০ লাখ ডলার। পাওয়ার ডিস্ট্রিবিউশন সিস্টেম ডেভেলপমেন্ট ইন কুমিল্লা। এতে ১৫ কোটি ডলার। এস্টাবলিশমেন্ট অব কোয়ালিটি কন্ট্রোল ল্যাবরেটরি ফর সেফ অ্যানিমেল ফুড অ্যান্ড ফুড প্রডাক্ট। এতে ১ কোটি ২০ লাখ ডলার এবং এস্টাবলিশমেন্ট অব স্কুল’স ফর নারায়ণগঞ্জ সিটি কর্পোরেশন। এতে নেয়া হবে ৭০ লাখ ডলার।

আগামী ২০১৮ সালে নেয়া হবে মোট ৬৪ কোটি ২৩ লাখ মার্কিন ডলার। স্থানীয় মুদ্রায় এর পরিমাণ দাঁড়াচ্ছে প্রায় ৫ হাজার ১৩৮ কোটি টাকা। প্রকল্পগুলো হচ্ছে প্রি-পেমেন্ট মিটারিং প্রজেক্ট ফর বিপিডিবি’স ডিস্ট্রিবিউশন জোন, ফেজ-২। এতে ২২ কোটি ৫০ লাখ ডলার। রিহ্যাবিলিটেশন অ্যান্ড ইনটেনসিফিকেশন অব ডিস্ট্রিবিউশন সিস্টেম ইন ফোর নদার্ন অ্যান্ড সাউদার্ন ডিভিশন আনআর আইবি এরিয়া। এতে ১০ কোটি ডলার। এস্টাবলিশমেন্ট অব উপজেলা টেকনিক্যাল ট্রেনিং সেন্টার ফর বেসিক লিটারেসি অ্যান্ড পোস্ট লিটারেসি লাভলিহুড স্কিল। এতে ২০ কোটি ডলার এবং পাওয়ার সাবস্টেশন ইন ডেসকো এরিয়া (৩৩/১১ কেভি অ্যান্ড ৩২/৩৩ কেভি)। এতে নেয়া হবে ১৫ কোটি ৭০ লাখ ডলার।

ইআরডি সূত্র জানায়, আইডিবির এ স্ট্র্যাটেজির আওতায় অর্থায়নের লক্ষ্যে অন্তর্ভুক্ত প্রকল্পগুলোর যৌক্তিকতা নিয়ে ২১ জুলাই ইআরডিতে পোর্টফলিও রিভিউ মিটিং অনুষ্ঠিত হয়। ওই সভার সিদ্ধান্ত অনুযায়ী সাপোর্ট টু প্রাইভেট সেক্টর ইনফ্রাসটাকচার ইনভেসমেন্ট (ইডকল) শীর্ষক প্রকল্প বাস্তবায়নের বিষয়ে ইডকলের অবস্থান জানতে বৃহস্পতিবার চিঠি দিয়েছে ইআরডি। এতে আগামী ৫ কার্য দিবসের মধ্যে মতামত জানাতে বলা হয়েছে। এরপরই চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেয়া হবে।

সূত্র জানায়, দেশের সামষ্টিক অর্থনীতির ভারসাম্য রক্ষায় ২০১০ সালে আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) কাছ থেকে প্রায় এক বিলিয়ন ডলার ঋণ নিয়েছিল বাংলাদেশ। বর্ধিত ঋণ সুবিধা (ইসিএফ) নামের ওই ঋণের জন্য ১৯টি শর্ত মেনে নিয়েছিল বাংলাদেশ। যার মধ্যে অন্যতম প্রধান শর্ত ছিল যে কোনো দাতা দেশ বা সংস্থার কাছ থেকে ঋণ নেয়ার ক্ষেত্রে ৩৫ শতাংশের বেশি গ্রান্ট এলিমেন্ট থাকতে হবে। সুদের হার, রেয়াত কাল ও পরিশোধের মেয়াদ হিসাব করে গ্রান্ট এলিমেন্ট ধরা হয়। আইএমএফের ওই শর্ত অনুযায়ী বিশ্বব্যাংক, জাইকা  এবং এডিবির ঋণ ৩৫ শতাংশের বেশি গ্রান্ট এলিমেন্ট থাকে।

সোনালীনিউজ/ঢাকা/এমএইউ

Wordbridge School
Link copied!