• ঢাকা
  • শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল, ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

আইভী-সাখাওয়াতের বাকযুদ্ধে উত্তাপ


জেলা প্রতিনিধি নভেম্বর ২৪, ২০১৬, ১০:০০ পিএম
আইভী-সাখাওয়াতের বাকযুদ্ধে উত্তাপ

নারায়ণগঞ্জ: নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশন (নাসিক) নির্বাচনকে কেন্দ্র করে উত্তাপ বাড়ছে রাজনীতির মাঠ। আওয়ামী লীগ ও বিএনপির দুই প্রার্থীই বৃহস্পতিবার (২৪ নভেম্বর) তাদের নিজ নিজ মনোনয়নপত্র দাখিল করেছেন। এর মধ্যেই তারা লিপ্ত হয়েছেন রাজনৈতিক বাকযুদ্ধে। শুরু করেছেন পরস্পরবিরোধী কথাবার্তা। আর এর ঢেউ লেগেছে সারাদেশেও।

অবাধ, সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচন অনুষ্ঠানের লক্ষ্যে বিএনপির প্রার্থী অ্যাডভোকেট সাখাওয়াত হোসেন খান সেনাবাহিনী নিয়োগের কথা বলছেন। একই সঙ্গে তিনি মৃত্যুর আগ পর্যন্ত নির্বাচনের মাঠে থাকার ঘোষণা দিয়েছেন। অপরদিকে, ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের প্রার্থী সেলিনা হায়াৎ আইভী সেনা মোতায়েনের প্রস্তাব নাকচ করে দিয়ে বলছেন, এর কোনো প্রয়োজন নেই। পরিস্থিতি স্বাভাবিক, সেনা মোতায়েনের কোনো প্রয়োজনীয়তা তিনি অনুভব করছেন না।

তফসিল অনুযায়ী, বৃহস্পতিবার (২৪ নভেম্বর) ছিল মনোনয়নপত্র দাখিলের শেষ দিন। দুপুরের দিকে আইভি ও সাখাওয়াত পৃথকভাবে রিটার্নিং কর্মকর্তা মো. নুরুজ্জামান তালুকদারের কাছে তাদের মনোনয়নপত্র জমা দেন।
প্রথমে মনোনয়নপত্র জমা দেন আইভী। পরে জমা দেন সাখাওয়াত।

মনোনয়নপত্র যাচাই-বাছাই ২৬ ও ২৭ নভেম্বর। আগামী ৪ ডিসেম্বর প্রত্যাহারের শেষ তারিখ। ২২ ডিসেম্বর নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। আওয়ামী লীগ ও বিএনপির প্রার্থী ছাড়াও আরো দুটি দলের প্রার্থী এ নির্বাচনের মনোনয়নপত্র দাখিল করেছেন। তারা হলেন- বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির মাহবুবুর রহমান ইসমাইল এবং এলডিপির কামাল প্রধান।

দ্বিতীয়বারের মতো এই সিটি নির্বাচনে অংশ নেয়ার জন্য মেয়রের পদ থেকে বুধবার (২৩ নভেম্বর) পদত্যাগ করেন আইভী। বৃহস্পতিবার রিটার্নিং কর্মকর্তার কাছে মনোনয়নপত্র জমা দেয়ার পর সাংবাদিকদের কাছে এক প্রতিক্রিয়ায় বলেন, ‘এখন পর্যন্ত নির্বাচনের সুষ্ঠু পরিবেশ বজায় আছে। আমি এই সৌহার্দ্যপূর্ণ পরিবেশেই নির্বাচন করতে চাই। এখনই সেনা মোতায়েনের কোনো প্রয়োজনীয়তা দেখছি না। লাখো জনতাই আমার সেনাবাহিনী।’ এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, আইভী আর নৌকা কখনো বিচ্ছিন্ন ছিল না, আইভী আর নৌকা একই।

বিএনপি প্রার্থীর আচরণবিধি লঙ্ঘনের অভিযোগ নাকচ করে তিনি বলেন, ‘আমি কোনো আচরণবিধি লঙ্ঘন করিনি এবং করব না। গতবারও আমি কোনো ধরনের আচরণবিধি লঙ্ঘন করিনি, এবারও করব না।’

দলীয় মনোনয়ন সম্পর্কে আইভি বলেন, ‘আমার দল আমাকে প্রার্থী করেছে। তৃণমূল আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা এতে খুশি। তাদের আনন্দই আমার আনন্দ। সাধারণ মানুষের যে চাহিদা, সেই চাহিদার প্রতিফলন ঘটেছে। তাতে আমি খুশি, আমার সমস্ত লোকজন খুশি।’ তিনি বলেন, ‘আমি আশা করি, আগামী ২২ ডিসেম্বর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা মনোনীত নৌকা প্রার্থীর পক্ষেই নারায়ণগঞ্জবাসী গণরায় দেবেন। সেদিন নারায়ণগঞ্জবাসী তাদের অধিকার আদায় করে দেবে। নারায়ণগঞ্জের তৃণমূল আওয়ামী লীগ সবাই আমার সঙ্গে আছে। আশা করি, সামনেও সঙ্গে থাকবে।’

মনোনয়নপত্র জমা দেয়ার সময় তার সঙ্গে উল্লেখযোগ্য স্থানীয় আওয়ামী লীগের নেতারা কেউ ছিলেন না। এ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, নির্বাচন কমিশনের পক্ষ থেকে পাঁচজনের বেশি সঙ্গে আনা যাবে না মর্মে বিধিনিষেধ থাকায় তাদের তিনি সঙ্গে আনতে পারেননি।

মনোনয়ন জমা দেয়ার সময় আইভীর সঙ্গে ছিলেন জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি আবদুল হাই, সোনারগাঁ আসনের সাবেক এমপি আবদুল্লাহ আল কায়সার, সন্ত্রাস নির্মূল ত্বকী মঞ্চের আহ্বায়ক রাফিউর রহমান রাব্বি, বিশিষ্ট ব্যবসায়ী আবদুর রাশেদ রাসু।

আইভী ও সাখাওয়াত

এদিকে মৃত্যুর আগ পর্যন্ত নির্বাচনের মাঠে থাকার ঘোষণা দিয়েছেন সাখাওয়াত হোসেন খান। বৃহস্পতিবার দুপুর ১২টার দিকে নারায়ণগঞ্জ ক্লাব লিমিটেড মিলনায়তনে সিটি করপোরেশন নির্বাচনের রিটার্নিং অফিসারের কাছে মনোনয়নপত্র জমা দেয়ার পর সাংবাদিকদের এ কথা বলেন তিনি। সাখাওয়াত বলেন, ‘নারায়ণগঞ্জের মানুষ জেগে উঠেছে। তারা পরিবর্তন চায়। নারায়ণগঞ্জের মানুষ হারানো ভোটাধিকার ফিরে পেতে চায়। নৌকা গণতন্ত্র হরণের প্রতীক। গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারের জন্য মানুষ এবার ধানের শীষকে ভোট দেবে।’

বিএনপির এ প্রার্থী বলেন, ‘২০১১ সালের ৩০ অক্টোবর নির্বাচন সুষ্ঠুভাবে করতে নির্বাচন কমিশন সরকারের কাছে সেনাবাহিনী চেয়েও পায়নি। সে জন্য আমরা নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়াই। কিন্তু এবার আমাদের ধানের শীষ ও নৌকার মর্যাদার লড়াই। মৃত্যুর আগ পর্যন্ত আমি নির্বাচনের মাঠে থাকব। সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য এ প্রশাসনকে বদলি করতে হবে। আমাদের যেন হাত-পা বেঁধে ফেলা না হয়। লেভেলপ্লেয়িং কন্ডিশন বজায় রাখা দরকার। আমরা প্রতিযোগিতামূলক নির্বাচন চাই। অবৈধ অস্ত্রের পাশাপাশি বৈধ অস্ত্র জমা দিতে হবে।’

বিএনপি প্রার্থী সাখাওয়াত আরো বলেন, ‘ভোটাররা নিরাপত্তা বোধ করলে, তাদের মধ্যে স্বস্তি ও উচ্ছ্বাস থাকলে ভোটকেন্দ্রে যেতে উৎসাহবোধ করবে। তাই নির্বাচনকে নির্বিঘ্ন ও অবাধ করতে সেনাবাহিনী মোতায়েন প্রয়োজন। তিনি বলেন, নির্বাচন নিরপেক্ষ ও সুষ্ঠু হলে ধানের শীষ প্রতীকের বিজয় সুনিশ্চিত।’ এ সময় তার সঙ্গে ছিলেন জেলা বিএনপির সভাপতি তৈমূর আলম খন্দকার ও জেলা বিএনপির সেক্রেটারি কাজী মনিরুজ্জামানসহ অনেকে।

সোনালীনিউজ/এমএন

Wordbridge School
Link copied!