• ঢাকা
  • শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল, ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

ইন্টারনেট ব্যবহারে চরম বৈষম্য গ্রামাঞ্চলে!


বিশেষ প্রতিনিধি মার্চ ১৬, ২০১৭, ১০:৫০ পিএম
ইন্টারনেট ব্যবহারে চরম বৈষম্য গ্রামাঞ্চলে!

ঢাকা: বাংলাদেশে ইন্টারনেট ব্যবহারকারীর সংখ্যা ছয় কোটি ৭০ লাখ। এর একটা গুরুত্বপূর্ণ অংশই থাকে রাজধানীর বাইরে। কিন্তু ইন্টারনেট ব্যবহারে দামের ক্ষেত্রে গ্রাম-শহরের মধ্যে রয়েছে ব্যাপক ফারাক। রাজধানী ঢাকার চেয়ে দেশের অন্যান্য এলাকায় এর দাম চার গুণ বেশি। দাম কমানো নিয়ে রয়েছে নানা বাহানা আর কাগুজে প্রতিশ্রুতি। এতে ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ায় সরকারের প্রতিশ্রুতি বার বার হোঁচট খাচ্ছে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।

জানা গেছে, ডাক ও টেলিযোগাযোগ এবং তথ্য প্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রীর দফায় দফায় ঘোষণা সত্ত্বেও গ্রাহক পর্যায়ে ইন্টারনেটের দাম কমেনি। এমনকি মূল্য বেঁধে দেয়ার দু’প্রতিমন্ত্রীর আশ্বাসও কথার মধ্যে সীমাবদ্ধ রয়েছে। বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশনের চেয়ারম্যান প্রকৌশলী শাহজাহান মাহমুদ এ প্রসঙ্গে সম্প্রতি বলেছেন, ঢাকা এবং ঢাকার বাইরে ইন্টারনেটের মূল্যে যে তফাত রয়েছে তা কমানো উচিত। গ্রাহক পর্যায়ে এ ধরনের বৈষম্য কারো কাম্য নয়। তথ্য-প্রযুক্তির প্রসার বাড়াতে হলে দামের মধ্যে সমন্বয় থাকা বাঞ্ছনীয়।

এসোসিয়েশন অব মোবাইল অপারেটর অফ বাংলাদেশের মহাসচিব টি আই এম নুরুল কবির বলেন, ইন্টারনেট তো আর জিওগ্রাফিক্যাল দিয়ে বিবেচনা করা যায় না। ইন্টারনেট একটা গ্লোবাল প্লার্টফরম। আমাদের বাংলাদেশে নেটওয়ার্কটা ছড়িয়ে আছে। সেখানে গ্রাম এবং শহরকে আলাদা করে দেখার সুযোগ নেই।

ডাক ও টেলিযোগাযোগ মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা জানান, জীবনযাত্রার ব্যয় রাজধানী ঢাকায় অনেক বেশি। তবে, ইন্টারনেটের মূল্যে বিভাগীয় শহর ও গ্রামের তুলনায় ঢের কম। অথচ তথ্য-প্রযুক্তির প্রসার বাড়াতে দেশের সবখানেই ইন্টারনেটের মূল্য সর্বজনীন হওয়া উচিত। এখানে তার উল্টো।

প্রাপ্ত তথ্যমতে, এক এমবিপিএস ব্যান্ডউইথ ঢাকায় এক হাজার টাকায় মিললেও বাইরে তা বিক্রি হচ্ছে চার হাজার টাকায়। অর্থাৎ মূল্য বৃদ্ধির হার প্রায় চার গুণ বেশি। ব্যবসায়ীদের যুক্তি, ব্যান্ডউইথের ট্রান্সমিশন চার্জ বেশি বিধায় রাজধানীর চেয়ে চার গুণ বেশি দামে বিভাগীয় শহর অঞ্চলের মানুষের কিনতে হচ্ছে।

আইএসপিএবি সূত্রে জানা গেছে, আইআইজি (ইন্টারন্যাশনাল ইন্টারনেট গেটওয়ে) ও এনটিটিএনগুলোর ব্যান্ডউইথ, পরিবহন ও সেবাচার্জে ‘সিলিং’ করে না দিলে গ্রাহকপর্যায়ে ইন্টারনেটের দাম কমানো যাবে না।

ব্যান্ডউইথের দাম পর্যালোচনা করে দেখা গেছে, ২০০৭ সালে প্রতি মেগা ব্যান্ডউইথ বিক্রি হতো ৭২ হাজার টাকায়, ২০০৯ সালে ১২ হাজার টাকা, ২০১১ সালে ১০ হাজার টাকা, ২০১২ সালে আট হাজার টাকা এবং বর্তমানে ৬২৫ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। গত ১০ বছরে প্রতি মেগা ব্যান্ডউইথে দাম কমেছে ৭১ হাজার ৩৭৫ টাকা। ব্যান্ডউইথের মূল্য কমার প্রভাব পড়েনি ইন্টারনেটের বাজারে।

মূল্য না করার স্বপক্ষে ট্রান্সমিশন চার্জকে দায়ী করছেন সংগঠনটি। তবে ঢাকায় ইন্টারনেটের দাম কম তা স্বীকার করে বলেন, গ্রামে কমাতে হলে ঢাকায় দাম বাড়াতে হবে। এক্ষেত্রে শুধু ট্রান্সমিশন খরচ কমানোর বিকল্প কিছু নেই। বলেন, এখনই যদি ট্রান্সমিশন চার্জ ৫০ শতাংশ কমানো হয় তাহলে ইন্টারনেটের দাম ২০-২৫ ভাগ কমানো সম্ভব হবে।

ইন্টারনেট ব্যান্ডউইথ আমদানি করতে অন্তত ১৬টি পক্ষ জড়িত থাকে। এদের মধ্যে রয়েছে- ইন্টারনেট ট্রানজিট (আইপি ক্লাউড), বিদেশি ডাটা সেন্টারের ভাড়া, দেশি-বিদেশি ব্যাকহল চার্জ, ল্যান্ডিং স্টেশন ভাড়া, কেন্দ্রীয় সার্ভারের পরিবহন খরচ, গেটওয়ে ভাড়া, আইএসপি প্রতিষ্ঠানের মুনাফা, এনটিটিএন প্রতিষ্ঠানের নেটওয়ার্ক ভাড়া, ইন্টারনেট যন্ত্রাংশের ওপর জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের ধার্য করা ভ্যাট ও শুল্ক, বিটিআরসির রাজস্ব ভাগাভাগি ইত্যাদি।

শুধু ব্যান্ডউইথ নয়, এসব পক্ষগুলোর সেবাচার্জ আনুপাতিক হারে কমালেই কেবল ইন্টারনেটের দাম বর্তমানের চেয়ে আরো কমানো সম্ভব বলে ধারণা সংশ্লিষ্টদের। যদিও সরকারের পক্ষ থেকে বলা হয়, শিগগিরই ইন্টারনেটের দাম কমানো হবে।

বাংলাদেশের সরকারি হিসাবে, এ দেশে ইন্টারনেট ব্যবহারকারীর সংখ্যা বর্তমানে ছয় কোটি ৭০ লাখ, যা দেশের মোট জনসংখ্যার ৪০ শতাংশ। আর গবেষণার হিসাব বিবেচনায় নিলে বাংলাদেশের ১৬ কোটি জনসংখ্যার ১৩ শতাংশ ইন্টারনেট ব্যবহার করে। অর্থাৎ মোট জনসংখ্যার মধ্যে ইন্টারনেট ব্যবহারকারীর সংখ্যা মাত্র দুই কোটি। ইন্টারনেট ব্যবহার নিয়ে ‘ইনক্লুসিভ ইন্টারনেট ইনডেক্স: ব্রিজিং ডিজিটাল ডিভাইডস’ শীর্ষক এক গবেষণায় এমন তথ্য পাওয়া গেছে।

ইকোনমিস্ট ইন্টেলিজেন্স ইউনিটের র‌্যাঙ্কিংয়ে ৪৬ নম্বরে থাকা বাংলাদেশের সার্বিক স্কোর ৫৭ দশমিক ৮। এর মধ্যে ইন্টারনেট ব্যবহার সহজলভ্যতায় ৪৩ নম্বর নিয়ে বাংলাদেশ আছে ৫০ নম্বরে। ইন্টারনেটের ক্রয়ক্ষমতা সূচকে বাংলাদেশ রয়েছে ৩০ নম্বরে, স্কোর ৭৮। বাকি দুটি সূচকে বাংলাদেশের অবস্থান যথাক্রমে ৫৭ ও ৪৩। তবে ইন্টারনেট গ্রাহকদের ক্রয় ক্ষমতার মধ্যে না থাকায় অনেকেই ইচ্ছা সত্ত্বেও ব্যবহারে উৎসাহিত হন না।

কারণ মানুষের জীবনযাত্রার ব্যয় বাড়লেও সমানতালে বাড়ে না আয়। ফলে দৈনন্দিন থেকে কিছু টাকা সাশ্রয়ী করে এই খাতে ব্যবহার করার সুযোগ তৈরি হলে ইন্টারনেট ব্যবহারকারীর সংখ্যাও ক্রমান্বয়ে বাড়বে। পাশাপাশি ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ায় সরকারের প্রতিশ্রুত স্বপ্ন বাস্তবায়ন হবে বলেও জানিয়েছেন নীতিনির্ধারকরা।


সোনালীনিউজ/ঢাকা/জেডআরসি/আকন

Wordbridge School
Link copied!