• ঢাকা
  • শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল, ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১
ভুলের খেসারত দিতে হচ্ছে সরকারকে

এনসিটিবির ভেতরে ‘ভূত’


নিজস্ব প্রতিবেদক জানুয়ারি ১১, ২০১৭, ১১:৩৯ এএম
এনসিটিবির ভেতরে ‘ভূত’

ঢাকা : নতুন পাঠ্যপুস্তকে ভুলের জন্য দুই মন্ত্রণালয় একে অন্যের ওপর দোষ চাপাচ্ছে। কিন্তু বিনামূল্যের পাঠ্যবই মুদ্রণ, প্রকাশনা ও বিতরণের দায়িত্বে রয়েছে জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ড (এনসিটিবি)। শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের অধীন এই প্রতিষ্ঠানে বছরের পর বছর বিসিএস সাধারণ শিক্ষা ক্যাডারের কিছু কর্মকর্তা প্রেষণে বিভিন্ন পদ আঁকড়ে আছেন। পাঠ্যক্রম তৈরি, রচনা, মুদ্রণ বিষয়ে কোনো অভিজ্ঞতা ছাড়াই এসব কর্মকর্তা ঢাকায় থাকার জন্য এনসিটিবিতে পড়ে আছেন। অভিযোগ আছে, তদবিরের জোরে এনসিটিবিতে থাকা এসব সরকারি কলেজ শিক্ষকদের অযোগ্যতা, অবহেলার কারণে ভুলে ভরা পাঠ্যবই শিক্ষার্থীদের হাতে পৌঁছেছে।

তৃতীয় শ্রেণির ‘আমার বাংলা বই’তে ‘আদর্শ ছেলে’ কবিতাটি ভুলভাবে প্রকাশিত হয়েছে বলে সংবাদ সম্মেলনে স্বীকার করে নিয়েছেন শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ। এর আগে জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ড (এনসিটিবি) এই ভুলের বিষয়টিকে সুকৌশলে বাংলা একাডেমির ঘাড়ে চাপাতে চেয়েছিল। তাই এখন প্রশ্ন উঠেছে, মন্ত্রীর বক্তব্যের পর এর দায় এনসিটিবি নেবে কি না?

এর আগে কুসুমকুমারী দাশের লেখা বহুলপঠিত কবিতাটি বদলে দেয়ার কারণ জানতে চাইলে এনসিটিবির পক্ষ থেকে বলা হয়, ছাপা সংস্করণই শুদ্ধ। তখন আরো দাবি করা হয়, কবিতাটির আগের রূপটিকে বাংলা একাডেমির পরামর্শে পরিবর্তন করা হয়েছে। আগে যা ছাপার অক্ষরে ছিল সেটিই বরং ভুল। কুসুমকুমারী দাশের বিখ্যাত কবিতা ‘আদর্শ ছেলে’র আদি সংস্করণের প্রথম লাইনটি হলো ‘আমাদের দেশে হবে সেই ছেলে কবে’। তৃতীয় শ্রেণির বাংলা বইতে এই লাইনকে উল্টে লেখা হয়েছে ‘আমাদের দেশে সেই ছেলে কবে হবে’। কবিতার মধ্যেও রয়েছে নানা ধরনের শব্দগত পরিবর্তন।

কবিতার চতুর্থ লাইনে কুসুমকুমারী লিখেছেন, ‘মানুষ হইতে হবে’ এই তার পণ। বিকৃত রূপে ছাপা কবিতায় এই লাইনে ‘হইতে’ শব্দটিকে সম্পাদনা করে ‘হতেই’ লেখা হয়েছে। মূল কবিতার নবম লাইনে লেখা আছে, ‘সে ছেলে কে চায় বল কথায় কথায়’। এই লাইনের ‘চায়’ শব্দটিকে বদলে দেয়া হয়েছে ‘চাই’ শব্দটি দিয়ে। কবিতার একাদশ লাইনে কুসুমকুমারী দাশ লিখেছিলেন ‘হাতে প্রাণে খাট সবে শক্তি কর দান’। এই লাইনে ‘খাট’ শব্দটিকে বিকৃত করে লেখা হয়েছে ‘খাটো’। আর ‘হাতে প্রাণে’র বদলে লেখা হয়েছে ‘মনে প্রাণে’।

গতকাল সকালে পাঠ্যপুস্তকের ভুলসংক্রান্ত বিষয়ে ব্যাখ্যা দিতে গিয়ে শিক্ষামন্ত্রী কুসুমকুমারী দাশের কবিতা ভুল প্রকাশিত হওয়ার কথা স্বীকার করেন। তিনি বলেন, ‘না জানা থাকলে বিষয়টি জেনে নিতে পারত। এ ধরনের ভুল গ্রহণযোগ্য নয়।’

এদিকে শিক্ষামন্ত্রীর সংবাদ সম্মেলনের পর এনসিটিবির কর্মকর্তা আবদুল মান্নানের সঙ্গে টেলিফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, ‘একটু ঝামেলায় আছি, পরে কোনো সময় কথা বলব।’ যদিও এর আগে কবির লেখা মূল চরণ ও বিভিন্ন চরণের শব্দ বদলে দিলেও তিনি দাবি করছিলেন, এটাই শুদ্ধ। এর জন্য তিনি বন্দুক রাখেন বাংলা একাডেমির কাঁধে। ছাপা সংস্করণটি শুদ্ধ হলে এতদিন কবিতাটি ভুল পড়ানো হয়েছে কি না জানতে চাইলে এনসিটিবির এই সদস্য বলেন, ‘বাংলা একাডেমি আমাদের এই কবিতাটি সরবরাহ করেছে। প্রতিবছরের পরিমার্জনের অংশ হিসেবে এটি সংশোধিত হয়েছে।’ তার এই দাবি ঠিক নয় দাবি করে বাংলা একাডেমির মহাপরিচালক ড. শামসুজ্জামান খান বলেন, ‘উনারা কেউ আমাদের সঙ্গে যোগাযোগ করেননি।’

তাহলে এ বিষয়ে এখন কার কাঁধে দায় চাপাবে এনসিটিবি- এ প্রশ্নে আবদুল মান্নান হেসে হেসে বলেন, ‘এখন কথা বলছি না।’ এর আগে পাঠ্যবইয়ে দু-একটি প্রিন্টিং মিসটেক ছাড়া কোনো ভুল নেই বলে এ প্রতিবেদককে চ্যালেঞ্জ করেন তিনি। সেই চ্যালেঞ্জ মনে করিয়ে দিয়ে প্রতিক্রিয়া জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘এখন না।’ 

বাংলাদেশ মুদ্রণ শিল্প সমিতি: পাঠ্যবইয়ের ভুলের জন্য কোনো ক্রমেই মুদ্রণ প্রতিষ্ঠান তথা ঠিকাদার দায়ী নয় বলে দাবি করেছে বাংলাদেশ মুদ্রণ শিল্প সমিতি। সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক (মো. জহুরুল ইসলাম স্বাক্ষরিত এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে জানায়, এনসিটিবির সম্পাদনা শাখা হতে কার্যাদেশ প্রাপ্ত মুদ্রণ প্রতিষ্ঠানকে মুদ্রিতব্য পাঠ্য বইয়ের সিডি এবং প্রত্যেক বিষয়ের ডামি প্রদান করা হয়। এই সিডি থেকে প্লেট তৈরি করে মুদ্রণ কাজ হয়। এর কোনো পর্যায়ে কার্যাদেশ প্রাপ্ত মুদ্রণ প্রতিষ্ঠান একটি দাঁড়ি, কমা বা সেমিকোলন পর্যন্ত পরিবর্তন করতে পারে না। এনসিটিবি সরবরাহকৃত সিডিতে হাত দেয়ার কোনো অধিকার ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের নেই। সম্প্রতি পত্র পত্রিকায় উল্লেখিত ভুলে ভরা পাঠ্যপুস্তক সম্পর্কে যেসব বিষয়ের উল্লেখ করা হয়েছে এই বিতর্কিত বিষয় সংযোজন বা বিয়োজনের ক্ষমতা পাঠ্যপুস্তক বোর্ডের, মুদ্রণ প্রতিষ্ঠানের নয়।

সোনালীনিউজ/ঢাকা/এমটিআই

Wordbridge School
Link copied!