• ঢাকা
  • শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল, ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

এবার জেদ করে বাসচাপায় পা গেল যুবকের


নিজস্ব প্রতিবেদক এপ্রিল ২৯, ২০১৮, ০১:৩৫ এএম
এবার জেদ করে বাসচাপায় পা গেল যুবকের

প্রাইভেটকার চালক রাসেলকে চাপা দিয়ে পালিয়ে যাওয়া বাসচালক কবিরকে আটক করে পুলিশ

ঢাকা : পেছন থেকে গাড়িতে ধাক্কা দেওয়ার প্রতিবাদ করায় এবার প্রাইভেটকার চালকের ওপর দিয়ে বাস চালিয়ে দিলেন গ্রিনলাইন পরিবহনের চালক। এতে বাঁ পা হারিয়েছেন ওই প্রাইভেটকার চালক।

শনিবার (২৮ এপ্রিল) বিকালে রাজধানীর যাত্রাবাড়ীতে হানিফ ফ্লাইওভারের ঢালে জেদের বশে এ ঘটনা ঘটান ‘অমানুষ’ এ বাসচালক। পা হারানো রাসেল সরকার (২৩) গাইবান্ধার পলাশবাড়ীর শফিকুল ইসলামের ছেলে। রাজধানীর আদাবর এলাকার সুনিবিড় হাউজিংয়ে থেকে স্থানীয় একটি ‘রেন্ট-এ-কার’-এর প্রাইভেটকার চালিয়ে জীবিকা নির্বাহ করতেন তিনি।

প্রত্যক্ষদর্শী নূর হোসেন সোহাগ ঘটনার বর্ণনা দিয়ে বলেন, দোলাইরপাড় ঢালে মেয়র হানিফ ফ্লাইওভারে ওঠার মুখে এ ঘটনা ঘটে। আমি তখন পাশের একটি টং-দোকানে বসে চা খাচ্ছিলাম। এমন সময় ব্রিজের ঢালে গ্রিনলাইন পরিবহনের একটি বাস থামে। একইসঙ্গে একটি প্রাইভেটকার এসে বাসটির পাশে দাঁড়ায়।

প্রাইভেটকার থেকে নেমে ড্রাইভার রাসেল বাসচালককে বলছিলেন, ‘ভাই গাড়ি থামান, ঝামেলা মিটমাট করেন।’ কিন্তু বাসচালক ধীরে ধীরে এগোতে থাকে। একপর্যায়ে বাসচালক বাস নিয়ে পালাতে চেষ্টা করেন। তখন রাসেল হাতে ইট নিয়ে বলেন, গাড়ি থামান, নয়তো গাড়ির গ্লাস ফাটায়া দিমু।’

তিনি আরো বলেন, ‘রাসেল ওই বাসের সামনে বাম পাশে দাঁড়ান, বাসচালক তাকে বাঁয়ে চাপ দেন, সেখান থেকে সরে তিনি ডানে এলে তখন আবার তাকে ডানে চাপ দিচ্ছিলেন। রাসেল আবার বাম পাশে যাওয়ার চেষ্টা করলে বাসচালক তার ওপর দিয়ে গাড়ি তুলে দেন। এতে ব্রিজের আইল্যান্ডে ধাক্কা খেয়ে বাসের নিচে পড়ে যান রাসেল, তখন তার বাম পায়ের ওপর বাসের চাকা উঠে যায় এবং পা ছিঁড়ে যায়।’
 
এ সময় বাসটি ধরতে মোটরসাইকেল নিয়ে পিছু নেন নূর হোসেন সোহাগ ও মাশরুর। প্রথমে হানিফ ফ্লাইওভারের টোলঘরের সামনে গিয়ে বাসটিকে ধরেন তারা। সেখানকার লোকদের দুর্ঘটনার বিষয়টি বলে সহযোগিতা চান তারা। টোলঘর থেকে জানায়, বাস আটকের এখতিয়ার তাদের নেই, সামনে থাকা পুলিশ সদস্যদের জানান। পরে চানখাঁরপুল মোড়ে থাকা পুলিশ সদস্যদের জানান তারা। সেখানে পুলিশ দেখে বাসচালক ফ্লাইওভার থেকে শাহবাগের দিকে মোড় নেয়। পরে তারা মোটরসাইকেল নিয়ে বঙ্গবাজার মোড় দিয়ে হাইকোর্ট মোড় পার হয়ে জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে কদম ফোয়ারা মোড়ে বাসটিকে থামান। পরে সেখানে থাকা পুলিশ সদস্যরা এসে গ্রিনলাইনের চালককে আটক করেন।

শাহবাগ থানার পরিদর্শক (তদন্ত) জাফর আলী বিশ্বাস বলেন, ‘এ ঘটনায় জড়িত গ্রিনলাইন বাস জব্দ ও এর চালক কবির হোসেনকে আটক করা হয়।’

ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ এসআই বাচ্চু মিয়া জানান, ঘটনার পর পথচারীরা রাসেলকে হাসপাতালে নিয়ে আসেন। পরে তাকে একটি প্রাইভেট হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়েছে।

বাস ও ট্রাকচালকদের বেপরোয়া আচরণে চলতি মাসেই ঘটেছে বেশ কয়েকটি ভয়ানক ঘটনা। রাজধানীর কারওয়ান বাজার এলাকায় গত ৩ এপ্রিল দুই বাসের চাপায় ডান হাত হারান রাজীব হোসেন। এ ঘটনায় মস্তিষ্কে গুরুতর আঘাত পাওয়া এ কলেজছাত্র দুই সপ্তাহ মৃত্যুর সঙ্গে লড়ে পাড়ি জমান না ফেরার দেশে। সেই বিচ্ছিন্ন হাতের ছবি দেশের পরিবহন সেক্টরের নৈরাজ্যের প্রতীক হয়ে উঠেছে। রাজীব চিকিৎসাধীন থাকার সময়ই গোপালগঞ্জে ট্রাকের সঙ্গে সংঘর্ষে ডান হাত হারান বাসযাত্রী খালিদ হাসান হৃদয় (৩০), যিনি আরেকটি বাসের হেলপার। কাছাকাছি সময়ে ফার্মগেট এলাকায় বাসচাপায় ডান পা হারান একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের কর্মী মাস্টার্স পাস রুনি আক্তার (২৭)।

এসব ঘটনা নিয়ে প্রতিবাদ ও সমালোচনার ঝড় বইলেও থামেনি বাস ও ট্রাকচালকদের দৌরাত্ব। গত ২০ এপ্রিল রাতে বনানীতে যাত্রীবাহী বিআরটিসি বাসের চাপায় পা হারান গৃহকর্মী রোজিনা আক্তার (২২)। ২২ এপ্রিল রংপুরে ট্রাকচাপায় ডান পা হারায় এক শ্রমিকের সাড়ে তিন বছরের কন্যাশিশু ও বগুড়ায় বাঁ হাত হারায় এক মুদি দোকানির আট বছরের কন্যাশিশু। রাজধানীতে গত ২৭ এপ্রিল দায়িত্ব পালনরত অবস্থায় বেপরোয় বাসের চাপায় পিষ্ট হন ট্রাফিক ইন্সপেক্টর দেলোয়ার হোসেন। যাত্রীসেবা নিশ্চিত করতে এখন তিনি লড়ছেন মৃত্যুর সঙ্গে।

তারপরও কোনোভাবেই চালকদের নৈরাজ্য থামছে না। মন্ত্রীও অসহায়ত্ব প্রকাশ করে হাত গুটিয়ে বসে আছেন বলে মনে হচ্ছে। আর কত হাত-পা-প্রাণ গেলে বন্ধ হবে বেপরোয়া বাসচালকদের খামখেয়ালিপনা।

সোনালীনিউজ/এমটিআই

Wordbridge School
Link copied!