• ঢাকা
  • শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল, ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

ওয়ার্ডব্রিজ স্কুল ঘুরে এসে টেবিলে...


হৃদয় আজিজ নভেম্বর ২২, ২০১৭, ০৫:৪৬ পিএম
ওয়ার্ডব্রিজ স্কুল ঘুরে এসে টেবিলে...

ঢাকা: পড়েছি বগুড়ার একটি সরকারি কলেজে, স্বাভাবিকভাবেই ইংলিশ মিডিয়াম স্কুল সম্পর্কে ধারণা কম। যা ছিল তাও আবার নেতিবাচক ধারণা। অফিস থেকে অ্যাসাইনমেন্ট দেয়া হলো- ‘ইংলিশ মিডিয়াম স্কুল সম্পর্কে প্রতিবেদন করতে হবে।’ ঠাণ্ডাজনিত রোগের কারণে রাতে তেমন ধারণাও নিতে পারলাম না। পরদিন অর্থাৎ সোমবার (২০ নভেম্বর) রাজধানীর জিগাতলার ওয়ার্ডব্রিজ স্কুলে গেলাম। সেখানে গিয়ে ধারণা সম্পূর্ণ পাল্টে গেল।

সকাল ১১টা ২৫ মিনিট জিগাতলা বাসস্ট্যান্ডে পৌঁছলাম। সেখানে আগে থেকেই উপস্থিত ছিলেন আমার সহকর্মী নূর-ই- মোহম্মদ রওশন জামিল (নিয়ন জামিল)। তিনিই আমাকে নিয়ে গেলেন স্কুলটিতে। 

বাসস্ট্যান্ড থেকে ১’শ গজ পশ্চিমে হাঁটলেই ডান পার্শ্বে ৬২ (নতুন) নং বাড়ির সুদৃশ্য সবুজ রঙের গেট। সেখানে লেখা ‘ওয়ার্ডব্রিজ’, প্লে শ্রেণি থেকে ‘এ-লেভেল’ পর্যন্ত পড়ানো হয়। 

দারোয়ানকে পরিচয় দিতেই ভেতরে যাওয়ার অনুরোধ করলেন। গেট পেরুলেই স্কুলের আঙ্গিনা। যেখান থেকে কানে এল একদল ছেলে-মেয়ের কলরব। ভালোভাবে দেখলে চোখে পড়বে হালকা নীল শার্ট-সালোয়ার কামিজ গায়ে এবং খাকি প্যান্ট-পাজামা, পায়ে সাদা জুতা পরে কেউ বা দল বেঁধে গল্প করছে, আবার কেউ ব্যাডমিন্টন খেলছে।

পাশেই পাঁচতলা বিল্ডিং, এটাই মূলত ‘ওয়ার্ডব্রিজ’ স্কুলের একাডেমিক ও প্রশাসনিক ভবন। দারোয়ান আমাদের নিচতলার অভ্যার্থনা কক্ষে নিয়ে গেলেন। সেখানে বেশকিছু নারীকে দেখলাম বসে কথা বলছেন, তারা অভিভাবক। টেবিলের অপর পাশের একজন তরুণী আমাদের দেখে পাশে চেয়ারে বসতে বললেন। তার সঙ্গে কথা সেরে, গেলাম পাশের ক্লাসরুমের দিকে। জানালা দিয়ে দেখা গেলো কিছু শিক্ষার্থী শিক্ষকের ডায়াসের কাছে জড়ো হয়ে কথা বলছে; কেউ হাসছে, বুঝার উপায় নেই- এখানে ক্লাস হচ্ছে। দরজা খুলে ভেতরে ঢুকতেই এসির বাতাস, সঙ্গে ফুলের সৌরভ! বুঝা গেল শিক্ষার্থীরা শিক্ষকের সঙ্গে মজা করে ক্লাস করছে। 

সিঁড়ি বেয়ে দ্বিতীয় তলায় উঠতেই ডান পাশে চোখে পড়ল টিচার্স রুম (শিক্ষক কক্ষ), রুমের ভিতর দিয়েই যেতে হলো প্রিন্সিপালের অফিসে। আমাদের দেখেই হাস্যোজ্জল মুখে প্রিন্সিপাল সেবা তাসনিম হক বসতে বললেন।  

এরপর প্রায় দেড় ঘণ্টা কথা হয় তার সঙ্গে। এরই ফাঁকে চায়েও চুমুক দেয়া হয়। জানা হয়, বাংলাদেশের শিক্ষা ব্যবস্থা ও ইংলিশ মিডিয়ামের দূরত্ব, বিদেশে মেধা পাচারের বিষয় সম্পর্কে।

এরপর একজন ক্লাস টিচারের সঙ্গে পুরো স্কুল ঘুরে দেখা- প্রথমেই দ্বিতীয় তলার সিঁড়ির বাম পাশের করিডোরে ঢোকা হলো, আসলে এটা প্লে থেকে পঞ্চম শ্রেণির শিক্ষার্থীদের জন্য প্লে গ্রাউন্ড হিসেবে ব্যবহার হয়। এরপরই হাতের ডানে তিনটি ক্লাস রুম। প্রথম ক্লাস রুমে অবশ্য কোনো শিক্ষার্থী ছিল না; তবে সারপ্রাইজড হলাম। জীবনের প্রথম কোনো ক্লাস রুম দেখা যেখানে ছোটদের জন্য প্লে-গ্রাউন্ড মনে হলো। আমাদের সাথে থাকা টিচার জানালেন, এটা প্লে শ্রেণির ক্লাস রুম! সেখানে ছোট ছোট দুইটি গোল টেবিল, প্রত্যেকটির চার পাশেই পাঁচটি করে আকর্ষণীয় রঙের ছোট চেয়ার। এছাড়াও পুরো ক্লাস রুম আকর্ষণীয় করে সাজানো। আমার বিশ্বাস যেকোনো শিশুই ক্লাসরুমে গিয়ে খেলতে শুরু করবে। এবার গেলাম পরের রুমে দেখালাম এক শিক্ষিকা কোনো এক প্রোগ্রামের জন্য খুবই ব্যস্ত। এরপর পরের রুমে। চার জন শিক্ষার্থীকে পাঠদান দিচ্ছেন এক শিক্ষিকা। সেখানে তাসনিম নামের বছর পাঁচেকের এক শিক্ষার্থীকে জিজ্ঞাস করলাম- তোমাকে তোমার ম্যাম মার দেয় না? তার উত্তর শুনে চমকে গেলাম- ‘আমাকে কেনো মারবে আমিতো ক্লাসেই সব পড়া করি!’

এরপর আবারো প্লে গ্রান্ডে সেখানে একটি টয় ঘোড়ার উপর বসে দুলছে ছোট্ট একটি মেয়ে। ওখানে কিছু সময় দিয়ে শিশুদের লইব্রেরি, ল্যাব ঘুরে- তৃতীয় ও চতুর্থ তলায় গেলাম। প্রতিটি তলায়ই রয়েছে আলাদা আলাদা বিভাগ- কোনো তলায় রিডিং রুম, কোনো তলায় নামাজ ঘর, ছেলে ও মেয়েদের জন্য আলাদা কমনরুম। এছাড়াও ক্যান্টিও রয়েছে।

এই ঘোরাঘুরির ফাঁকে কথা হয় শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের সঙ্গে। মাসরুফ আমিন নামে এক শিক্ষার্থীকে জিজ্ঞেসা করি, ‘স্কুলের পরিবেশ তোমার কেমন লাগে?’ উত্তরে শান্তভাবেই বলে, ‘ভেরি গুড। টিচার্স আর ফ্রেন্ডলি।’  আমি বললাম, বাংলা তোমার মাতৃভাষা তো ইংরেজিতে উত্তর কেন?  মাসরুফ বলল, ওহ্ সরি! 

তুমি কী ইংরেজিতে বলতেই ভালোবাস নাকি বাংলা?, ‘অবশ্যই বাংলা, এটা আমার মাতৃভাষা। তবে মাঝে মাঝে গুলাইয়া ফেলি (ভুল করি)!’

প্রায় আড়াই ঘণ্টা পর স্কুলের আঙ্গিনায় এসে দেখা হলো আখি আখন্দ নামের এক অভিভাবকের সঙ্গে। জানতে চাইলাম, আপনি কেন ওয়ার্ডব্রিজে আপনার সন্তানকে পড়তে দিলেন। ঢাকায় তো অনেক নামি দামি স্কুল রয়েছে।

তিনি জানান, স্কুলের পরিবেশ, এখানকার টিচারর্সরা (শিক্ষকরা) আর গুড! দেন সিকিউরিটি ভেরি ওয়েল!

আপনার মেয়েকে স্কুলে দেয়ার পর কেমন পরিবর্তন দেখলেন? হ্যাঁ, ওর অনেক পরিবর্তন হয়েছে। আগে স্পোকেনে অনেক দুর্বল ছিল, এখন অনেক স্মুথলি কথা বলে।

স্কুলের সার্বিক ব্যবস্থাপনা আপনার কেমন মনে হয়, ‘অলসো গুড’। ম্যাডামকে দেখে বলছেন নাতো (আমার পাশে ছিলেন স্কুলের একজন শিক্ষিকা, যিনি স্কুল ঘুরে দেখাচ্ছিলেন)! একটু হেসে বললেন- ‘না- না।’

ইংরেজি মাধ্যমে পড়ে ছেলে মেয়েরা বাংলা বলতে ভুলে যায় সেক্ষেত্রে কী বলবেন?, ‘না এখানে ইংরেজি পড়ানোর পাশাপাশি বাংলা চর্চার জন্য গুরুত্ব দেয়া হয়, অনেক অনুষ্ঠানও করা হয়। তাছাড়া বাড়িতে গেলে মেয়েকে বাংলা চার্চার জন্য তাগিদ দেই।’

স্কুলের পরিবেশ কেমন?, ‘খুব ভালো।’ কেন বললেন?, ‘এখানকার পরিবেশ, ব্যাবস্থাপনা ও শিক্ষকরাও বন্ধুসুলভ আচারণ করে। তাছাড়া, নিরাপত্তা ব্যবস্থাও ভালো।’

পাশেই ছিলেন জারিন তাসনিম নামের একজন। তিনিও জানান, ‘ভালো। খুবই ভালো।’ এভাবেই কথা বলতে বলতে ঘড়ির কাটা সোয়া একটায়। এরপর পথ ধরি অফিসের...

অফিসের আসার পথে সহকর্মী নিয়ন জামিলের সঙ্গে নানান কথা হচ্ছিল। কিন্তু, মাথায় ঘুরপাক খাচ্ছিল। বাংলাদেশের শিক্ষা ব্যাবস্থার সঙ্গে ইংলিশ মিডিয়াম স্কুলের কারিকুলামের দূরত্ব দূর করতে সরকার ব্যবস্থা নিচ্ছে না কেন। একপর্যায়ে নিয়ন জামিলকে বললাম, ‘সরকার এই দূরত্ব যদি দূর করতে না পারে তাহলে এটা (ইংলিশ মিডিয়াম স্কুল) রাখে কেন?

সোনালীনিউজ/এআই/জেএ

Wordbridge School
Link copied!