• ঢাকা
  • শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল, ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

কারাগারে ধারণক্ষমতার বেশি বন্দি, মানবিক বিপর্যয়ের আশঙ্কা


নিজস্ব প্রতিবেদক জুন ২৪, ২০১৬, ০৩:৩৪ পিএম
কারাগারে ধারণক্ষমতার বেশি বন্দি, মানবিক বিপর্যয়ের আশঙ্কা

দেশের কারাগারগুলোতে বর্তমানে ধারণক্ষমতার প্রায় আড়াই গুণ বেশি বন্দি সামাল দিতে হিমশিম খাচ্ছে কারা কর্তৃপক্ষ। তার দেখা দিয়েছে নানা সমস্যাও। তীব্র গরমে কারা অভ্যন্তরে বন্দিদের দুর্দশা প্রতিনিয়ত বাড়ছে। বাড়ছে গরমজনিত নানা রোগব্যাধিও। চিকিৎসাও মিলছে না যথাযথ। এ অবস্থায় কারাগারগুলোতে অনেকটা মানবিক বিপর্যয়ের আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। কারাগার সংশ্লিষ্ট সূত্রে এসব তথ্য জানা যায়।

সংশ্লিষ্ট সূত্র মতে, বর্তমানে দেশজুড়ে চলছে জঙ্গিবিরোধী বিশেষ অভিযান। প্রতিদিনই হাজার হাজার বন্দিকে কারাগারে পাঠানো হচ্ছে। কিন্তু অতিরিক্ত বন্দিতে ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারসহ সারা দেশের ৬৮ কারাগার উপচে পড়ার উপক্রম হয়েছে। কারন এমনিতেই কারাগারগুলোতে ধারণক্ষমতার চাইতে দ্বিগুণ বন্দি রয়েছে।

তারপর আবার দু’দফা বিশেষ অভিযানের নামে একসাথে বিপুলসংখ্যক লোক গ্রেফতারে কারাগারগুলোতে করুণ অবস্থা বিরজা করছে। প্রথম দফায় গত ৬ থেকে ১৩ই জুন পর্যন্ত বিশেষ অভিযান চালানো হয়েছে। এর মধ্যে গত ১০ই জুন থেকে শুরু হয়েছে জঙ্গিবিরোধী বিশেষ অভিযান। অভিযানে মাত্র শতাধিক জঙ্গি গ্রেফতার করা হলেও বাকিরা সবাই অন্যান্য পেন্ডিং মামলা ও নিয়মিত মামলার আসামি।

সূত্র জানায়, দেশের ৬৮ কারাগারের ধারণক্ষমতা মাত্র ৩৪ হাজার ৬৮১ জনের। কিন্তু বর্তমানে সেখানে ৭৫ হাজারেরও বেশি বন্দি রয়েছে। ধারণক্ষমতার দ্বিগুণেরও বেশি বন্দি থাকায় কারাগারগুলোতে বন্দিদেও  মানবেতর জীবন যাপন করতে হচ্ছে। ফলে কারাগারে বন্দিদের যে অধিকার তা প্রতিপালন করা সম্ভব হচ্ছে না। 

যা মানবাধিকার লঙ্ঘনের শামিল। কিন্তু কারা কর্তৃপক্ষের কিছুই করার নেই। কারণ এমনিতেই কারাগারগুলোতে দ্বিগুণেরও বেশি বন্দি রয়েছে। তার উপর বিশেষ অভিযানের কারণে গ্রেফতার চাপ বাড়ছে। এক্ষেত্রে কারা কর্তৃপক্ষ অসহায়। কারণ কারাগারে বন্দি পাঠানো হলে তা ফেরত পাঠানোর কোনো সুযোগ নেই। কর্তৃপক্ষকে যে কোনোভাবে তা ধারণ করতে হয়। 

ফলে বর্তমানে দেশের কারাগারগুলোতে ঠাঁই নাই অবস্থা বিরাজ করছে। বিশেষ অভিযানের ফলে বন্দিতে ঠাসা হয়ে উঠেছে কারাগারগুলো। প্রায় আড়াইগুণ বেশি বন্দি সামাল দিতে বেসামাল হয়ে পড়েছে কারা কর্তৃপক্ষ। তার সাথে দেখা দিয়েছে নানা সমস্যা। তীব্র গরমে কারা অভ্যন্তরে বন্দিদের দুর্দশা প্রতিনিয়ত বাড়ছে। বাড়ছে গরমজনিত নানা রোগব্যাধি। চিকিৎসাও মিলছে না যথাযথ। অনেকটা মানবিক বিপর্যয়ের আশঙ্কা দেখা দিয়েছে কারাগারগুলোতে।

সূত্র আরো জানায়, ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে বর্তমানে বন্দি ধারণক্ষমতা মাত্র ২ হাজার ৬৮২ জন। কিন্তু বন্দি রয়েছে ৭ হাজারেরও বেশি। সাম্প্রতিক বিশেষ অভিযানে প্রতিদিনই বন্দির সংখ্যা বাড়ছে। কর্তৃপক্ষ বিভিন্ন কৌশলে ওই বাড়তি চাপ সামাল দেয়ার চেষ্টা করছেন। জেলাসহ অন্য কারাগারগুলোর অবস্থাও ভয়াবহ। সেখানে বন্দির চাপে রীতিমতো যাচ্ছেতাই অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে। 

বর্তমানে সারাদেশে ছোট-বড় ৬৮টি কারাগারের মধ্যে ১৩টি কেন্দ্রীয় কারাগার। ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারের অধীনেই কাশিমপুরে দুটি হাই সিকিউরিটি সেল রয়েছে। বাকি ৫৫টি বিভিন্ন কারাগার রয়েছে বিভিন্ন জেলা সদরে। জেলা কারাগারগুলো আয়তন ও ধারণক্ষমতায় অনেক ছোট। বিশেষ অভিযানে ব্যাপক হারে গ্রেফতারের ফলে ওসব কারাগারের অবস্থা সবচেয়ে নাজুক হয়ে দাঁড়িয়েছে।

এদিকে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী নিয়মিত গ্রেফতারের পাশাপাশি বেশি বেশি মোবাইল কোর্ট অভিযানও পরিচালনা করছে। রাজধানী ঢাকা থেকে শুরু করে সকল মেট্রোপলিটন এলাকা ও জেলাগুলোতেই মোবাইল কোর্ট পরিচালিত হচ্ছে। তাতে মাদক ব্যবসাসহ বিভিন্ন অপরাধে সরাসরি জেল-জরিমানা করা হচ্ছে। তাতেও কারাগারের ওপর চাপ বাড়ছে। 

কারণ নিয়মিত মামলার আসামিরা জামিনে বেরিয়ে গেলেও মোবাইল কোর্টের স্বল্পসময়ের দণ্ডপ্রাপ্ত আসামিরা বন্দি হিসেবেই ভেতরে থাকছেন। ওই কারণে চাপ বেড়ে যায় কয়েকগুণ। তাছাড়া বর্তমানে সাধারণ ও জঙ্গিবিরোধী দু’দফা অভিযানে সারাদেশে ধরপাকড় চলছে। তাতে দেশের কারাগারগুলোর নির্ধারিত সেলগুলোতে বন্দিদের ঠাঁই হচ্ছে না।

বাধ্য হয়ে কারা কর্তৃপক্ষ কারাভ্যন্তরের বিভিন্ন গোডাউন, বড় সেলের বারান্দা, এমনকি যেসব সেলের বাথরুমগুলো বড়- সেগুলোকেও পরিবর্তন করে সেল বানানো হয়েছে। তারপরও বন্দিদের গাদাগাদি করে থাকতে হচ্ছে। মাঝে মধ্যেই এক কারাগার থেকে আরেক কারাগারে বন্দিদের অদল-বদল করে ভারসাম্য রক্ষা করা হচ্ছে। 

বন্দির সংখ্যা দিন দিন বাড়তে থাকলে কারাগারের ভেতরে পরিবেশ অস্থির হয়ে উঠবে বলে মনে করছেন কারা সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা। কিন্তুএক্ষেত্রে কারাকর্তৃপক্ষের কিছুই করার নেই। কারণ আদালত থেকে কারাগারে পাঠানো আসামি তারা কখনোই ফেরত পাঠাতে পারেন না। তা যে কোনোভাবেই কারাগারের ভেতরে রাখতে হয়।

অন্যদিকে এ পরিস্থিতিতে মানবাধিকার কর্মীরা বলছেন- দেশের কারাগারগুলোতে এমনিতেই বন্দির বাড়তি চাপ রয়েছে। তাছাড়া কারাবন্দিদের সুযোগ-সুবিধাও খুব ক্ষীণ। কোনো কোনো ক্ষেত্রে অমানবিকও। কিন্তু তারপরও কারাগারগুলোতে বন্দির সংখ্যা ক্রমাগত বেড়েই চলেছে।  

বর্তমানে চলমান বিশেষ অভিযানে গ্রেফতারের সংখ্যা এখন যা আছে তা সামলানো হয়তো সম্ভব হবে। কিন্ত এই ধারাবাহিকতা যদি চলতে থাকে বা গ্রেফতারের সংখ্যা যদি ২০ হাজার ছাড়িয়ে যায় তাতে মারাত্মক মানবিক বিপর্যয় দেখা দেয়ার আশঙ্কা রয়েছে।

সোনালীনিউজ/ঢাকা/এএম

Wordbridge School
Link copied!